ইসলাম ও জীবন

জুমার দিনে মুসলিম উম্মাহর জন্য ৬টি বিশেষ আমল

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৬ ১০:৪০:২৮
জুমার দিনে মুসলিম উম্মাহর জন্য ৬টি বিশেষ আমল

সত্য নিউজ: জুমার দিন মুসলিমদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “এ দিনটি আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।” (সুনানে ইবনে মাজা) এটি শুধু একটি সাধারণ দিন নয়, বরং এক পবিত্র দিন যেখানে মুসলমানদের জন্য রয়েছে বিশেষ সওয়াব ও বরকত লাভের সুযোগ। এ দিনটি একদিকে যেমন ইবাদতের সুযোগ দেয়, তেমনি তা একজন মুসলমানের আত্মিক শুদ্ধতা এবং আল্লাহর কাছে নিকটবর্তী হওয়ার একটি মাধ্যম।

এখানে জুমার দিনে পালনীয় বিশেষ আমলগুলো তুলে ধরা হলো, যা মুসলিমদের জন্য একাধিক সাওয়াব ও বরকত লাভের সুযোগ এনে দেয়:

১. জুমার নামাজ: পাপ মোচনের উপায়

জুমার নামাজ মুসলিমদের জন্য এক বিশেষ ইবাদত যা সাপ্তাহিক পাপ মোচনের সুযোগ দেয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে” (মুসলিম)। এটি শুধু নামাজ নয়, বরং এক সপ্তাহের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি মহান সুযোগ। নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর নিকট তার সব ছোট পাপ মাফ করিয়ে নিতে পারেন এবং আত্মিক শুদ্ধতার পথে পা বাড়াতে পারেন।

২. গোসলের গুরুত্ব: শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতা

রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালোভাবে গোসল করে, দ্রুত মসজিদে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে” (আবু দাউদ)। জুমার দিনে গোসল করা মুসলিমদের জন্য একটি পবিত্রতার প্রতীক। এটি শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়, আত্মিক শুদ্ধতারও প্রকাশ। গোসলের মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের আত্মাকে আল্লাহর কাছে আরো পবিত্র করে, জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। এই আমলটি তাদের জীবনে আরও বরকত ও সওয়াব এনে দেয়।

৩. সুরা কাহাফ পড়ার ফজিলত: আলোকিত হওয়ার পথ

রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে আলোকিত হয়ে থাকবে” (আল মুসতাদরাক)। সুরা কাহাফের পাঠ শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক আলোকিততার পথই নয়, বরং এটি মুসলিমের জীবনে রহমত ও বরকতের ধারাকে প্রবাহিত করে। বিশেষ করে, দাজ্জালের আগমনের সময় সুরা কাহাফের শেষ ১০ আয়াত পাঠ করা একজন মুসলিমকে তার ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে। জুমার দিন এই সুরা পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে বিশেষ রহমত দান করেন।

৪. দরুদ শরিফ পাঠ: রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা

রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো, কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়” (আবু দাউদ)। জুমার দিনে দরুদ শরিফ পাঠ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি তাদের রাসুল (সা.)-এর প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশের একটি উপায়। এ আমলটি মুসলিমদের জন্য আল্লাহর নিকট শাফায়াত লাভের একটি মাধ্যম। রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ তাদের জীবনে বিশেষ রহমত নেমে আসেন।

৫. দোয়ার মুহূর্ত: আল্লাহর কাছে প্রার্থনা

হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে তা দেন” (আবু দাউদ)। জুমার দিনে আল্লাহর বিশেষ রহমত প্রাপ্তির জন্য একটি সময় রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হয়। এই সময়টি সাধারণত আছরের পর হয়ে থাকে এবং এটি মুসলিমদের জন্য একটি দয়ালু সুযোগ। এই সময়ে আল্লাহর কাছে নিজেদের চাওয়া-পাওয়া প্রার্থনা করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৬. মসজিদে প্রথম যাওয়া: সওয়াবের অমূল্য সুযোগ

রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে প্রথম মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল” (বোখারি)। মসজিদে প্রথম যাওয়া জুমার দিনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। যারা প্রথম মসজিদে যান, তারা বেশি সওয়াব লাভ করেন। এটি মুসলিমদের জন্য আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের একটি সুযোগ, যা একদিকে যেমন তাদের আল্লাহর কাছে নিকটবর্তী করে, তেমনি তাদের জীবনে বরকত ও সওয়াব বৃদ্ধি করে।

নারীদের জন্য বিশেষ আমল

নারীরা, যদিও জুমার নামাজে মসজিদে উপস্থিত হতে না পারেন, তবুও তারা জুমার দিনের অন্যান্য আমল পালন করতে পারেন এবং পূর্ণ সওয়াব লাভ করতে পারেন। নারীরা যেমন:

গোসল করা: নারীদের জন্য গোসল করা, পুরুষদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে।

দরুদ শরিফ পাঠ করা: নারীরা জুমার দিনে রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে সওয়াব লাভ করতে পারেন।

সুরা কাহাফ পড়া: নারীরা সুরা কাহাফ পড়তে পারেন, যা তাদের আলোকিত করবে এবং দুই জুমার মধ্যে তাদের জীবনে আল্লাহর রহমত নেমে আসবে।

দোয়া করা: নারীরা জুমার দিনে আল্লাহর কাছে তাদের দোয়া করতে পারেন, যা কবুল হবে।

জোহরের নামাজ: নারীরা মসজিদে না গিয়ে ঘরেই জোহরের নামাজ আদায় করতে পারেন। হাদিসে বলা হয়েছে, “নারীদের নামাজের উত্তম স্থান হলো তাদের ঘরের নির্জন কোণ।” (মুসনাদে আহমদ)

জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বিশেষ দিন, যা তাদের আত্মশুদ্ধি, পাপ মাপ ও সওয়াব লাভের পথ করে দেয়। এই দিনটিকে গুরুত্ব দিয়ে যারা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত ও ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণ করবেন, তারা আল্লাহর রহমত ও শান্তি লাভ করবেন। নারী-পুরুষ উভয়েই এসব আমল পালন করতে পারেন এবং তাদের জীবনকে আলোকিত ও সওয়াবপূর্ণ করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র দিনটি সঠিকভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ