স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক যতীন সরকার আর নেই

২০২৫ আগস্ট ১৩ ১৬:১৫:৪০
স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক যতীন সরকার আর নেই
অধ্যাপক যতীন সরকার। ছবি : সংগৃহীত

স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে ৯০ বছর বয়সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী জাগো নিউজকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

জানা যায়, যতীন সরকার পলি আর্থ্রাইটিসে ভুগছিলেন এবং কয়েক মাস আগে তার শরীরে একটি অস্ত্রোপচারও করা হয়। সুস্থ হয়ে তিনি নেত্রকোনায় নিজ বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু গত ৫ জুন নিজের শোওয়ার ঘরের সামনে পড়ে গিয়ে তার ডান পায়ের ফিমার নেক ফ্যাকচার হয়। এরপর তাকে প্রথমে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সম্প্রতি উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।

১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন যতীন সরকার। তিনি ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বাম রাজনীতি, প্রগতিশীল আন্দোলন এবং মননশীল সাহিত্যচর্চায় সক্রিয় ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

যতীন্দ্রনাথ সরকার ২০১০ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৫ সালে প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হন। শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি নিজের শেকড়ের টানে নেত্রকোনার চন্দপাড়া গ্রামে ফিরে যান। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’, ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দর্শন’, ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’ এবং ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’।

/আশিক


স্বাধীনতা পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিক যতীন সরকারের প্রয়াণে জাতির শোক

২০২৫ আগস্ট ১৩ ১৬:১০:৪১
স্বাধীনতা পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিক যতীন সরকারের প্রয়াণে জাতির শোক
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রগতিশীল চেতনা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই। জীবনের নব্বইতম বছরে এসে তিনি শেষ বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। ১৩ আগস্ট, মঙ্গলবার বিকেল পৌনে তিনটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক ডা. লেলিন চৌধুরী।

দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। বহু বছর ধরে পলি আর্থ্রাইটিসের কষ্টও তাঁকে ভোগাতে থাকে। সম্প্রতি একাধিক শারীরিক জটিলতার কারণে তাঁর দেহে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। কিছুটা সুস্থতা ফিরে পেলে তিনি নিজ জেলা নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে অবস্থিত বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু গত জুন মাসে শোওয়ার ঘরের সামনের বারান্দা থেকে পত্রিকা আনতে গিয়ে তিনি পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এতে তাঁর ডান পায়ের উরুর হাড়ের গলার অংশ (রাইট ফিমার নেক) ভেঙে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে শেষ পর্যন্ত তাঁর জীবনাবসান ঘটে।

অধ্যাপক যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনের পর তিনি ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালন করেন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতার মাধ্যমে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে জ্ঞান, যুক্তিবাদ ও মানবিকতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। কেবল শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, মননশীল সাহিত্যচর্চা, বামপন্থী রাজনীতি এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত ছিলেন।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্বপালনকারী একজন সাহসী সাংস্কৃতিক সংগঠক। তাঁর প্রজ্ঞা, লেখনী ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনে গভীর ছাপ রেখে গেছে।

লেখক হিসেবে যতীন সরকার ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সাহিত্যে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১০ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন। এর আগে ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৫ সালে প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হন।

২০০২ সালে ৪২ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু অবসর মানেই তাঁর কাছে ছিল শেকড়ে ফেরা। স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে তিনি স্থায়ীভাবে চলে যান জন্মভূমি নেত্রকোনায় এবং সেখান থেকেই অব্যাহত রাখেন তাঁর লেখালেখি, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’, ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দর্শন’, ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’, ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’ প্রভৃতি। এই গ্রন্থগুলো কেবল সাহিত্য ও ইতিহাসে নয়, সমাজচিন্তায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

-ইসরাত


চীনের হারানো ব্যবসা ধীরে ধীরে জায়গা নিচ্ছে বাংলাদেশে

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ০৯:৩৪:৩২
চীনের হারানো ব্যবসা ধীরে ধীরে জায়গা নিচ্ছে বাংলাদেশে

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ, যা শীর্ষ ১০ সরবরাহকারীর মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সময় চীনের রপ্তানি কমেছে ১১১ কোটি ডলার। এ প্রবণতা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতির কারণে তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র চীনসহ বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন শুল্কহার অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ, ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। তবে রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনার কারণে ভারতের পণ্যে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায়, তাদের মোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস (OTEXA)-এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-জুন সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৪২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪০ কোটি ডলার। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫.১৩ শতাংশ।

শুধু রপ্তানি বৃদ্ধিই নয়, বাজারে বাংলাদেশের হিস্যাও বেড়েছে। গত বছর এটি ছিল ৯.২৬ শতাংশ, যা ২০২৫ সালের জুন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে।

অন্যদিকে, এই সময়ে চীনের রপ্তানি ৫৭৩ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। ফলে দেশটির মার্কেট শেয়ারও কমে দাঁড়িয়েছে ১৮.৮৮ শতাংশে। বিপরীতে ভিয়েতনাম ৭৭৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯.৭৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক চাপ এবং পাল্টা শুল্কের কারণে ক্রয়াদেশ ধীরে ধীরে স্থানান্তর হচ্ছে। একাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মতে, গত ৬-৮ মাস ধরে চীনের হারানো অর্ডার ধীরে ধীরে বাংলাদেশে আসছে। বিশেষ করে কম মূল্যের পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে।

তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল জানান, সেপ্টেম্বর থেকে গ্রীষ্মকালীন পোশাকের অর্ডার আসতে শুরু করবে। তিনি বলেন, "আমরা তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছি। শুধু মার্কিন নয়, ইউরোপীয় ক্রেতারাও বাড়তি অর্ডার দিচ্ছেন।"

ভবিষ্যতে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "চীন থেকে স্থানান্তরিত অর্ডার বাংলাদেশে আসছে এবং এই ধারা চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসায় ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে আমরা সদস্যদের মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে শুল্ক ভাগাভাগি না করার নির্দেশনা দিয়েছি।"

ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের রপ্তানিও এ সময় বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হয়েছে ২২৬ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশ। ভারত রপ্তানি করেছে ২৮৪ কোটি ডলারের পোশাক, প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ।

সামগ্রিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে তৈরি পোশাক আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৭৬ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধির পেছনে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

/আশিক


কাঁদিস নে গোপনে

আশিকুর রহমান
আশিকুর রহমান
২০২৫ জুলাই ২৭ ২১:৫১:১৫

মানবজাতির মন বোঝা বড়ই জটিল আর কষ্টসাধ্য।

কারো সাথে আঁকড়ে থাকলেও, একদিন জানবে অনেক দূরে।

সে নিজেও জানতো না, কী পেতে চেয়েছিল তোমার থেকে।

কোনো এক অজানা কারণ দেখিয়ে হতাশায় চলে যায় দূরে।

যা আছে তাতে যে খুশি না, সে কোথাও গিয়েও হবে না সুখী।

তা যদি সে জেনেও থাকে, তবুও যাবে তোমার থেকে দূরে।

তুমি তো ছিলে তার জীবনের এক খণ্ড নাটকের অংশবিশেষ।

তুমি থাকো তোমার মতো, এভাবেই যদি তোমার জীবন চলে বেশ।

তুমি যদি দিয়ে দাও তোমার সবটুকু স্নিগ্ধতা আর সর্বস্ব,

দিবা-রাত্রি কষবে সে হিসাব, কী দিলে তারে এত বালুকণা মাত্র।

কোথায় শান্তি, কোথায় সুখ—এ খোঁজেই তো মানুষ প্রতিনিয়ত চলে।

নদীর ওপার যাওয়ার পরে, আবার এপারে কেন ফিরে আসে চলেই?

ওরে, মানবজীবনের খাতায় শুরু জোয়ারে, আর শেষ হয় ভাটায়।

এ ঘাটে ও ঘাটে না ঘুরে, তোর তালে সাতর রে তুই মানুষ।

বুঝে-শুনে ফেলিস পা, বিপদে আর সংকটে পথ যেন না হারাস।

মানুষ, আপন মানুষ হারিয়ে তুই কাঁদিস নে গোপনে।


 আজ কিংবদন্তি কবি আল মাহমুদের ৮৯তম জন্মদিন

২০২৫ জুলাই ১১ ১০:৫৩:১৪
 আজ কিংবদন্তি কবি আল মাহমুদের ৮৯তম জন্মদিন

আজ ১১ জুলাই, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি, আধুনিক কাব্যধারার অনন্য নির্মাতা আল মাহমুদের ৮৯তম জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ, যিনি পরবর্তীতে শুধু ‘আল মাহমুদ’ নামেই হয়ে ওঠেন বাংলা ভাষার চিরকালীন কাব্যচরিত্র। ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পরপারে পাড়ি জমালেও তাঁর সাহিত্য, তাঁর ভাষা, তাঁর কবিতা আজও বাংলা সাহিত্যে দীপ্ত হয়ে জ্বলছে অন্ধকারে আলোর মতো, নিস্তব্ধতায় উচ্চারণের মতো।

সাহিত্যে নতুন ধারা: মাটি ও মানুষের কণ্ঠস্বর

আল মাহমুদের কাব্যবিশ্বের প্রধান উপাদান ছিল বাংলার মাটি, কৃষকজীবন, নদী, ঋতু, প্রেম এবং ইতিহাসবোধ। নগরায়ণের বিপরীতে গ্রামীণ আবহমান জীবন, লোকজ সংস্কৃতি ও ইসলামি চেতনার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণে তাঁর কবিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’ বাংলা কবিতায় নতুন ঢেউ তোলে। এরপর ‘কালের কলস’, ‘সোনালি কাবিন’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’ তাঁকে নিয়ে যায় পাঠকহৃদয়ের গভীরে।

বিশেষ করে ‘সোনালি কাবিন’ কাব্যগ্রন্থ বাংলা আধুনিক কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। এই গ্রন্থে প্রেমিক কবি, গ্রামবাংলার কবি, ইতিহাসসচেতন কবি—সব মিলিয়ে এক আল মাহমুদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। কবি রফিক আজাদের কথায়, “তিনি ছিলেন গ্রাম থেকে শহরে আসা এক আত্মপ্রত্যয়ী কবি।”

বহুমাত্রিক সাহিত্যচর্চা

কবিতার পাশাপাশি আল মাহমুদ গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং শিশুসাহিত্যে রেখেছেন শক্তিশালী উপস্থিতি।

উপন্যাসে তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • কবির মৃত্যু
  • দ্বিতীয় ভাঙন
  • উপমাহীন উপকূল
  • যেভাবে বেড়ে উঠি

জনপ্রিয় ছোটগল্প:

  • লোকটি
  • মায়া
  • তোমার চোখে আলো দেখে

তাঁর প্রবন্ধ ও কলামে ফুটে উঠেছে ধর্ম, ইতিহাস, সাহিত্য এবং জাতিসত্তার গাঢ় অনুধ্যান। বিশেষ করে ইসলামের ইতিহাস ও আত্মানুসন্ধানের দিক তাঁর লেখায় প্রখর হয়ে উঠেছে—যা অনেকের কাছে রক্ষণশীলতার প্রতীক হলেও সাহিত্যিক সৌন্দর্যে তা সবসময়ই ছিল উদার ও হৃদয়গ্রাহী।

সাংবাদিকতা ও কর্মজীবন

শুধু সাহিত্যিক নন, আল মাহমুদ ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ সাংবাদিক ও গবেষক। ১৯৫৪ সালে সাপ্তাহিক কাব্য পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করে পরবর্তীতে দৈনিক মিল্লাত, ইত্তেফাক, কর্ণফুলী ও গণকণ্ঠে কাজ করেন। দৈনিক গণকণ্ঠে তিনি ছিলেন সম্পাদক। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক হিসেবে যোগ দিয়ে পরবর্তীতে পরিচালক হিসেবে অবসর নেন ১৯৯৭ সালে।

সাহিত্যজীবনে সম্মাননা ও পুরস্কার

বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আল মাহমুদ পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮)
  • একুশে পদক (১৯৮৭)
  • ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার
  • নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার
  • ত্রিকাল সাহিত্য পুরস্কার (কলকাতা)

এক কবির উত্তরাধিকার

আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যে এমন এক নাম, যিনি সাহিত্যের ভেতর দিয়ে সমাজের গভীর সত্তাকে উন্মোচন করেছেন। তাঁর কবিতা শুধু প্রেম বা প্রকৃতি নয় তা ছিল আত্মজিজ্ঞাসা, ইতিহাসপাঠ, জাতির জাগরণ এবং একটি ধর্মীয় সংস্কৃতির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইও।

তিনি ছিলেন একাধারে প্রেমিক, বিপ্লবী, ধর্মচিন্তক, ইতিহাসসন্ধানী এবং আত্মার কবি। তাঁর কাব্যভাষা ছিল সাবলীল, চিত্রাত্মক, একান্ত নিজস্ব। তাঁর লেখায় যেভাবে ‘সোনালি কাবিন’ আবেগের আকাশে পতাকা তুলে দেয়, সেভাবেই তাঁর উপন্যাসে দেখা মেলে বেদনার রূপকল্প, বঞ্চনার ইতিহাস।

জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আজ তাঁর ৮৯তম জন্মদিনে সাহিত্যপিপাসু মানুষ, তরুণ লেখক, পাঠক, গবেষক সবাই তাঁকে স্মরণ করছেন গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায়। তাঁর সাহিত্যের আলো আজও প্রজন্মের চিন্তা ও কল্পনায় দীপ্ত।

“সোনালি কাবিনের ছায়া পড়ে আছে আজও কবিতার প্রতিটি সোনার পাতায়।”- এই কবিতার জন্মকারিগর আল মাহমুদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও কাব্যিক ভালবাসা।


একা মানুষ

রুবা, টুংটাং
রুবা, টুংটাং
২০২৫ জুন ২৭ ১৬:৪৭:০৮

যদিও পৃথিবী পূর্ণ মানুষে, তবুও মানুষ একা।

এমন কিছু ক্ষত থাকে যা, কখনও যায় না দেখা।

স্বার্থের টানে সরে যায় দূরে, স্বার্থেই কাছে আসে।

তবে কি মানুষ চির দিন আপন, স্বার্থকে ভালবাসে?

কত যত্নে সুনিপুণ ভাবে, হৃদয়ে আঘাত করে।

কখনও দেখে না সে আঘাতে, কতটা রক্ত ঝরে।

কত সুমধুর ছলনা করে, মায়াবী বাঁধনে বাঁধে।

মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করে, মায়া কান্না কাঁদে।

আলোর আশায় আলেয়ার দিকে, মানুষ ছুটে চলে।

বোঝেনা তো তারা ডুবে যেতে থাকে, অথই সাগর তলে।

মানুষ বড় এক কেন্দ্রীক, আর কারো কথা ভাবেনা।

নিজের জন্য স্বর্গ গড়তে, অন্যকে দেয় বেদনা।

স্নেহ, ভালবাসা, আদর, মমতা, সব পেছনে ফেলে।

সুখের খোঁজে দুঃখের আগুনে, ধুকে ধুকে শুধু জ্বলে।

অজানা নেশায় অস্থির হয়ে, ছুটে চলে রাত দিন।

মৃত্যূ এসে ম্লান করে সব, করে সব অর্থহীন।

যে অমূল্য সম্পদ আছে, ভালবাসার মাঝে।

তা কি কখনও পাওয়া যায় বল, ঐশ্বর্যের কাছে?

লাভ কি হবে জীবনটাকে, জটিল করে আর?

সবাই মিলে গাই চল গান,মানবঐক্যতার।


সৃষ্টির সেরা জীব 

রুবা, টুংটাং
রুবা, টুংটাং
২০২৫ জুন ২৭ ১৬:২৫:২৬

মানুষ করেছে কত কি সৃষ্টি, কত যে আবিষ্কার।

সৃষ্টির সেরা জীব এই মানুষ, প্রমাণিত বারংবার।

যুগে যুগে এই মানব জাতি, গড়ে চলেছে কত সভ্যতা।

প্রস্তর অগ্নি লোহ তাম্র, মেনেছে তাদের বসতা।প্রতিকূলতা পেছনে ঠেলে, মানুষ এগিয়ে চলে।

বাধা সংকট নিরসন করে, আপন গ্যেনের বলে।

মহাকাশ থেকে সাগর তলায়, মানুষের বিচরণ।

কত রহস্য আর অজানাকে, করছে উন্মোচন।

সর্ব গুনে শ্রেষ্ঠ মানুষ, হয়না তাদের তুলনা।

হিংসা নিন্দা যুদ্ধ করা, মানবজাতিরশাজেনা।

পাঠকের মতামত: