হুথিদের ‘সায়াদ’ ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় ইসরাইলি বাণিজ্য জাহাজ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৭:০৩:৩৯
হুথিদের ‘সায়াদ’ ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় ইসরাইলি বাণিজ্য জাহাজ

ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী নতুন একটি দীর্ঘপাল্লার নৌ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে, যার নাম ‘সায়াদ’। এটি ইসরাইলসহ সমুদ্রপথে চলাচলকারী প্রতিপক্ষের বাণিজ্যিক ও সামরিক জাহাজের জন্য নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা লোহিত সাগর, আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগরের বিস্তৃত অঞ্চলে কার্যকর হামলা চালাতে সক্ষম।

হুথি কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘সায়াদ’ এখন থেকে সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হবে এবং এটি উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন রাডার এড়িয়ে চলতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি নীচু উচ্চতায় উড়ে গিয়ে চলমান লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত হানতে পারায় এটি শনাক্ত ও প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈশিষ্ট্য একে প্রতিপক্ষের জন্য গুরুতর হুমকিতে পরিণত করেছে।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইয়েমেনের রাজধানী সানার আল-সাবমি স্কয়ারে এক সামরিক কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো ‘সায়াদ’ ক্ষেপণাস্ত্র জনসম্মুখে প্রদর্শিত হয়। সে সময় এটিকে মধ্যম পাল্লার একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, যা স্থির ও চলমান উভয় ধরনের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে, সায়াদ ক্ষেপণাস্ত্রটির দৈর্ঘ্য ৬.৮ মিটার এবং ব্যাস ০.৫ মিটার। এতে রয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ কেজি বিস্ফোরক বহনের ক্ষমতা। মোবাইল গ্রাউন্ড লঞ্চার থেকে ছোড়া এই ক্ষেপণাস্ত্র ভবিষ্যতে নৌকা বা জাহাজ থেকেও উৎক্ষেপণ করার মতো সংস্করণে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে স্যাটেলাইট এবং ইনারশিয়াল গাইডেন্স প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। এর গতি সাবসনিক পর্যায়ে (মার্ক ৭–৯) হলেও নিচু উড়ানের জন্য এটি খুব সহজে ধরা যায় না।

২০১৫ সালে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানের পর হুথি গোষ্ঠী নিজেদের সামরিক প্রযুক্তিকে ধাপে ধাপে উন্নত করেছে। শুরুতে তাদের অস্ত্রভাণ্ডারে সোভিয়েত যুগের কিছু পুরনো অস্ত্র থাকলেও ২০১৭ সালে কুদস ওয়ান ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত হওয়ার পর পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন আসে।

‘সায়াদ’ তার পূর্বসূরী কুদস ওয়ান ও সাম্মাদ সিরিজের তুলনায় অনেক বেশি পাল্লাধারী ও নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। যেখানে সাম্মাদ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার, সেখানে সায়াদ পৌঁছাতে পারে ৮০০ থেকে ১,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত।

হুথি সূত্রে জানা যায়, তারা প্রতিবছর নিজস্ব ভূগর্ভস্থ কারখানায় ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। বর্তমানে তাদের কাছে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র থাকার কথা জানানো হয়।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, সায়াদ শুধু হুথিদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ায়নি, বরং এটি এখন আক্রমণাত্মক প্রতিরোধের প্রতীক। সমুদ্রপথে চলাচলকারী শত্রুপক্ষের জাহাজগুলোকে এটি সরাসরি হুমকির মুখে ফেলেছে, এমনকি এই অস্ত্র যুদ্ধের কৌশলগত চিত্রও পাল্টে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া, এই ক্ষেপণাস্ত্রটির নকশা ইরানের কাদিয়ে-৩৮০ ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। তবে এটি কোথা থেকে এবং কীভাবে হুথিদের হাতে এসেছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও একথা স্পষ্ট যে, ইয়েমেন এখন প্রতিরক্ষা ছাড়িয়ে সক্রিয় প্রতিরোধে প্রস্তুত।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ