ক্যান্সার দূরে রাখুন ছয়টি বিজ্ঞানসম্মত অভ্যাসে

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ১১:৫২:২৪
ক্যান্সার দূরে রাখুন ছয়টি বিজ্ঞানসম্মত অভ্যাসে
ছবি: সংগৃহীত

ক্যান্সার এমন একটি জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ যা মানবদেহের কোষগুলোকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত করে টিউমারের জন্ম দেয় এবং ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। যদিও বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অনেক ক্যান্সার চিকিৎসাযোগ্য, তবু সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য নয় বলে একে প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ।

এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের জীববিজ্ঞান, জেনেটিক্স এবং জৈবরসায়ন বিভাগের গবেষক অধ্যাপক টমাস এন. সেইফ্রিড গত তিন দশক ধরে ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণায় নিবিষ্ট রয়েছেন। তাঁর গবেষণালব্ধ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যাভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি দাবি করেছেন। নিচে তাঁর উল্লেখিত ছয়টি কৌশল তুলে ধরা হলো—

১. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন

অত্যধিক রক্তে গ্লুকোজের উপস্থিতি ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়, যা পরোক্ষভাবে ক্যান্সারের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। সাদা রুটি, চিনিযুক্ত পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় এবং ইনসুলিন নিঃসরণকে উদ্দীপ্ত করে, যা ক্যান্সার কোষকে সক্রিয় করে তুলতে পারে। তাই এসব খাদ্য থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি।

২. কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ কমান

সাদা ভাত, সাদা আটা ও চিনিযুক্ত খাদ্য অতিরিক্ত ইনসুলিন ক্ষরণ ঘটায়, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সার সেল ইনসুলিন নির্ভর তাই রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট বর্জন করলেই এই কোষগুলোর বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ নষ্ট হয়।

৩. নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম

প্রতিদিন সামান্য হাঁটা, সাইকেল চালানো, গৃহস্থালির কাজ বা সাঁতার কাটা যেকোনো ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। গবেষণায় প্রমাণিত, শারীরিক ব্যায়াম অন্তত ১৩ ধরনের ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে পারে, যার মধ্যে স্তন, কোলন ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার অন্যতম।

৪. রোজা বা উপবাসের অভ্যাস

পর্যায়ক্রমিক রোজা বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শরীরের কোষীয় মেরামত প্রক্রিয়া সক্রিয় করে এবং টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, রোজার মাধ্যমে শরীর ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে অধিক কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।

৫. মানসিক চাপমুক্ত থাকা

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ হরমোন ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটিয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল করে এবং প্রদাহ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে সক্রিয় করে তুলতে পারে। ধ্যান, প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।

৬. প্রদাহ-বিরোধী খাদ্য গ্রহণ

শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়, যার মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, জলপাই তেল ইত্যাদি প্রদাহ বিরোধী উপাদান সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে শরীর নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় রাখতে পারে।

অধ্যাপক সেইফ্রিডের গবেষণালব্ধ এই জীবনধারা ভিত্তিক উপদেশগুলো কেবল ক্যান্সার প্রতিরোধে নয়, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে কার্যকর। মূল কথা হলো- খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক সচেতনতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে একটি সুস্থ ও ক্যান্সার-প্রতিরোধী জীবন গঠন করা সম্ভব।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ