পাবনার আমিনপুরে কবরস্থানে চাঞ্চল্য: রাতের আঁধারে উধাও ২১টি কঙ্কাল, আতঙ্কে এলাকাবাসী

এম এস রহমান
এম এস রহমান
স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা
সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৫ ০৯:১৭:৩৬
পাবনার আমিনপুরে কবরস্থানে চাঞ্চল্য: রাতের আঁধারে উধাও ২১টি কঙ্কাল, আতঙ্কে এলাকাবাসী

পাবনার সুজানগর উপজেলার আমিনপুরে ঘটেছে এক অভূতপূর্ব ও রীতিমতো ভয়াবহ কাণ্ড। স্থানীয় বিরাহিমপুর কবরস্থান থেকে রাতের আঁধারে চুরি হয়ে গেছে অন্তত ২১টি কবরের কঙ্কাল ও মাথার খুলি। শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোররাতে সংঘটিত এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।

সকালবেলা ফজরের নামাজ শেষে স্বজনদের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে প্রথমে বিষয়টি টের পান স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা দেখতে পান—কবরগুলোর উপরের মাটি খোঁড়া, বাঁশের চরাট সরে আছে, এবং ভেতরে কোনো কঙ্কাল নেই। পরে চারদিক ছড়িয়ে পড়ে খবর, যা আতঙ্কে ফেলে পুরো জনপদকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।

jj

স্থানীয়দের ধারণা: সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ

বিরাহিমপুর এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন ও মনিরুল ইসলাম জানান, “আমাদের আত্মীয়স্বজন এই কবরস্থানেই শায়িত। আমরা প্রতি শুক্রবার সকালে জিয়ারতে আসি। আজ এসে দেখি কিছু কবর খোঁড়া, বাঁশের বেড়া সরানো, আর ভেতরে কিছুই নেই। বেশিরভাগ কবর থেকে মাথার খুলি পর্যন্ত গায়েব। আমাদের দৃঢ় ধারণা, এটি কোনো সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ যারা মাথার খুলি ও কঙ্কাল চুরি করে নিয়ে গেছে।”

পুলিশ বলছে, গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে

আমিনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “খবর পেয়ে আমরা কবরস্থানটি পরিদর্শন করেছি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি এবং চক্রটিকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।” তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেনি।

পূর্বেও ঘটেছে এমন চুরি

উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘটনা কোনো একক বিচ্ছিন্ন চুরি নয়। এর আগে সুজানগরের খাস আমিনপুর ও সাঁথিয়া উপজেলার রাজাপুর কবরস্থান থেকেও এ রকম কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটেছিল। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, এই এলাকায় একটি সক্রিয় মানবদেহের অস্থিচালান সিন্ডিকেট কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞ মত: কী উদ্দেশ্যে কঙ্কাল চুরি?

এই ধরনের কঙ্কাল চুরির পেছনে উদ্দেশ্য হতে পারে নানা রকম—জাদুবিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত অবৈধ ব্যবসা, কিংবা বিদেশে মানবদেহের হাড়ের কালোবাজার। বিশেষ করে মাথার খুলি ও পুর্ণাঙ্গ কঙ্কালের আন্তর্জাতিক বাজারে রয়েছে উচ্চমূল্য, যা একাধিক অপরাধচক্রকে এই কাজে যুক্ত করে তুলতে পারে।

জনমনে শঙ্কা ও দাবি

এই ভয়াবহ ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ দুটোই বাড়ছে। তারা দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা চায়, কবরস্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হোক এবং প্রতি রাতে পাহারার ব্যবস্থা চালু করা হোক।

এমন ঘটনা দেশের ধর্মীয়, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর বড় আঘাত বলেই মনে করছেন স্থানীয় সমাজ বিশ্লেষকেরা। সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এই পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের অবসান চান সকলে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ