ভারতীয় পণ্যে পাকিস্তানের পথে ‘নো এন্ট্রি’

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ০৫ ১২:২৬:২৭
ভারতীয় পণ্যে পাকিস্তানের পথে ‘নো এন্ট্রি’

সত্য নিউজ:পাকিস্তান সরকার দেশটির ভূখণ্ড, আকাশ ও জলসীমা ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের ওপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রোববার (৫ মে) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে জানায় পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি তৃতীয় কোনো দেশ থেকে পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতে পণ্য পরিবহন বা ভারতে তৈরি পণ্য পাকিস্তানের মাধ্যমে অন্য দেশে পাঠানোর পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার কারণ ও পরিসর

পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে "জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ" রক্ষার স্বার্থে। তবে যেসব ভারতীয় পণ্যের জন্য এর আগেই ঋণপত্র (এলসি) ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না—অর্থাৎ এসব চালান যথারীতি সম্পন্ন করা যাবে।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় এখন থেকে—

  • পাকিস্তানের স্থলপথ, সামুদ্রিক রুট ও আকাশপথ ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ।

  • তৃতীয় কোনো দেশের পণ্য পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে ভারতে পাঠানো যাবে না।

  • ভারত থেকে উৎপাদিত পণ্যও পাকিস্তান হয়ে অন্য দেশে যেতে পারবে না।

সামুদ্রিক নিষেধাজ্ঞাও জারি

এর আগে, গত শনিবার পাকিস্তান সরকার আলাদাভাবে ঘোষণা দেয় যে, পাকিস্তানের কোনো বন্দরে ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে না। একইভাবে, পাকিস্তানি জাহাজগুলোও ভারতের কোনো বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না। এই পদক্ষেপগুলো মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের ‘পোর্টস অ্যান্ড শিপিং উইং’ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। তারা জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য পাকিস্তানের সামুদ্রিক সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

পটভূমি: কাশ্মীর হামলা ও দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা

এই নিষেধাজ্ঞার মূল প্রেক্ষাপট ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, যেখানে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়। ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, পাকিস্তান তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে।

দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে এমন উত্তেজনা নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক এই বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে এক নতুন চাপ তৈরি করেছে।

বিশ্লেষণ: নিষেধাজ্ঞার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য সীমিত হলেও পাকিস্তানের এই নিষেধাজ্ঞা কেবলমাত্র ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককেই নয়, বরং দক্ষিণ এশীয় ট্রানজিট ও আঞ্চলিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে তৃতীয় দেশের পণ্য চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় সেন্ট্রাল ও ওয়েস্ট এশিয়া থেকে ভারতের সংযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

এছাড়া আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প যেমন—চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC) এবং ভারত-মধ্য এশিয়া ট্রানজিট প্রকল্প—এসব উদ্যোগের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার জেরে নেওয়া বাণিজ্যিক ও পরিবহন নিষেধাজ্ঞা দু'দেশের মধ্যকার বিদ্যমান শীতল সম্পর্ককে আরও তীব্র করে তুলেছে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে নিষেধাজ্ঞার বড় অর্থনৈতিক প্রভাব সীমিত থাকতে পারে, তবুও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য এটি একটি উদ্বেগজনক পদক্ষেপ, যা বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ও কূটনীতিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ