যুদ্ধবিরতির পরও কী কমেছে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের শঙ্কা?

সত্য নিউজ: গত চার দিনের মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ একটি নতুন স্তরে পৌঁছেছিল, যেখানে আধুনিক সামরিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সীমান্তে তীব্র যুদ্ধের ফলে পরিস্থিতি অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, দুই দেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি এবং সামরিক উত্তেজনা এখনো দৃঢ়ভাবে রয়ে গেছে। এই সংঘর্ষে যে নতুনত্ব ছিল তা হলো ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার, যা আকাশপথের যুদ্ধকে আরও জটিল ও ভয়াবহ করেছে।
নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি ও ড্রোনের ব্যবহার
এবারের সংঘর্ষের বৈশিষ্ট্য হলো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার, যা পূর্বের যেকোনো সংঘর্ষের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক এবং প্রযুক্তিগতভাবে চমকপ্রদ ছিল। দুদেশের সেনাবাহিনী আকাশপথে একযোগে শত্রু ভূখণ্ডে হামলা চালাতে ড্রোন ব্যবহার করে, যেগুলো কোনো পাইলটের ঝুঁকি ছাড়া নজরদারি ও আক্রমণ করতে সক্ষম ছিল। ভারতের বিমানঘাঁটি এবং পাকিস্তানের সেনা স্থাপনাগুলোর ওপর আক্রমণ চালানো হয়, যেখানে সঠিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয় এবং দূরপাল্লার গোলাবর্ষণের মাধ্যমে সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
এছাড়া, প্রথমবারের মতো, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র সীমান্ত পেরিয়ে দুই দেশের অভ্যন্তরে আঘাত হানে, যা যুদ্ধের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই হামলায় ভারতের বিমানঘাঁটি ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলি লক্ষ্যবস্তু হয়, এবং দুই পক্ষই একে অপরকে ভয়াবহ পাল্টা আঘাতের হুমকি দেয়।
আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং চাপ
যখন যুদ্ধের পরিস্থিতি শীর্ষে পৌঁছেছিল, তখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির চাপ বেড়ে যায়। অতীতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ শীতল করতে তৃতীয় পক্ষের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, তবে এবারের পরিস্থিতি ছিল কিছুটা ভিন্ন। বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনভাবে আবর্তিত হয়েছিল যে, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা উদ্যোগ এবং কূটনীতির চাপ ছিল আরও দুর্বল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্ব শক্তি বিশেষ করে সৌদি আরব, উপসাগরীয় দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল যে, যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে চলে যেতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই নিজেদের সামরিক শক্তি প্রতিস্থাপন করতে এবং একে অপরকে বাধ্য করতে চাইছে। ভারত বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখছে যাতে পাকিস্তান যেন নিজেদের অবাধে পাল্টা আঘাত করতে না পারে, যা উত্তেজনার সূচনা হতে পারে।
সামরিক তৎপরতা এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা
পাকিস্তান বর্তমানে একটি সামরিক শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে সশস্ত্র বাহিনী শক্তিশালী এবং বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলি অনেকাংশেই শাসনাধীন। এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে কট্টরপন্থী সেনা জেনারেলরা, যাদের রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী। অন্যদিকে, ভারতের শাসকদল ও সরকার হিন্দু জাতীয়তাবাদী মনোভাবকে আরও দৃঢ় করে তোলার চেষ্টা করছে, যা পাকিস্তান নিয়ে তার নরম মনোভাব সৃষ্টির কোনো সুযোগ রেখেছে বলে মনে হচ্ছে না।
এই কারণেই দুই দেশের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি। ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, এবং সামরিক উত্তেজনা এখনও রয়েছে।
ভবিষ্যতের দিক
এ পরিস্থিতিতে, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শীতল হওয়া সত্ত্বেও, কেউই তাদের অবস্থান থেকে এক চুলও সরে আসছে না। ভারতের পক্ষ থেকে কাশ্মীরের পানি নিয়ে কোনো শিথিলতার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না, যা পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামাবাদ বারবার জানিয়ে দিয়েছে যে, ভারত যদি সিন্ধু নদী চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘন করে, তা যুদ্ধ ঘোষণার সমান হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতএবং পাকিস্তান এখন নিজেদের অবস্থানে আরও কঠোর হয়ে উঠেছে, এবং দুই দেশের মধ্যে বর্তমান সংঘর্ষের সাপেক্ষে ভবিষ্যতে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাকিস্তান আজও সামরিক কর্তৃত্বে পরিচালিত একটি রাষ্ট্র, যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে, এবং ভারতের রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো নরম মনোভাব প্রদর্শন করার কোনো সুযোগ তারা দেখছে না।
যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, তবে দুই দেশের মধ্যে যে সামরিক উত্তেজনা রয়ে গেছে, তা শিগগিরই কমার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষত, পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে যে নিরাপত্তার চরম হুমকি বিরাজ করছে, তা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা অনুসারে, পরবর্তী সংঘাতের সম্ভাবনা একেবারে বাতিল করা যায় না, এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির তৎপরতা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট নয় বলে মনে হচ্ছে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার্জ দাখিল, বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার
- চীন না ভারত? উন্নয়ন না আনুগত্য? বুলেট ট্রেন বলছে স্পষ্ট জবাব
- অবশেষে বিসিবি সভাপতি ফারুককে নিয়ে মুখ খুললেন আসিফ
- বিশ্বশক্তির নজর এখন বাংলাদেশে: খনিজ ভাণ্ডারের নতুন মানচিত্র
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান: রাষ্ট্র নির্মাণের এক উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি
- নতুন বিসিবি সভাপতিবুলবুলের কাছে আশরাফুলের চাওয়া
- হালদা নদীতে ডিম ছাড়ল রুই জাতীয় মা মাছ, সংগ্রহ প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম
- ঈদের দিন বৃষ্টি হবে কি?
- চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন ভোর: দক্ষিণ এশিয়ার তেলের ‘রাজসিংহাসন’ দখলের পথে বাংলাদেশ?
- জবি’র সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় সুত্রাপুরে আটক
- ধ্বংস থেকে নেতৃত্ব: ৫ আগস্ট থেকে যেভাবে শুরু হলো অর্থনীতির পুনর্জাগরণ
- ভারতের গর্ব এস-৪০০ ধ্বংস: বাস্তবতা নাকি প্রচারযুদ্ধ?
- ধর্ম-সংস্কৃতি উপেক্ষা নয়: সংবিধান সংশোধনে ১৮০ শিক্ষকের সরব প্রতিবাদ
- সোনাক্ষীর ‘নিকিতা রায়’-এর মুক্তি পেছাল, ঘোষণা দিলেন নতুন তারিখ
- দেশের ৬ জেলায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা, নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা