টেকসই ভবিষ্যতের পথে পাবিপ্রবি'তে প্রথম জাতীয় সম্মেলন

বাংলাদেশে টেকসই অর্থনীতি, রাজনৈতিক সংস্কার ও সমাজ-সাংস্কৃতিক রূপান্তরের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত হলো প্রথম জাতীয় সম্মেলন। ‘Towards a Sustainable Future: Economic Stability, Political Reforms and Socio-Cultural Transformation in Bangladesh’ শীর্ষক এ সম্মেলন শনিবার (২৮ জুন) দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের গ্যালারী-২-এ অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনের আয়োজন করে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শামীম আহসান।

সম্মেলনের মূল বক্তা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন পাবিপ্রবির মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মীর খালেদ ইকবাল চৌধুরী।

সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের দেশে টেকসই উন্নয়ন হয়নি, ভালো নেতৃত্ব পাইনি। গত ১৭-১৮ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এতে করে টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়েছে। আমাদের মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তি ও সম্ভাবনা রয়েছে, যা কাজে লাগাতে পারলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম মানবিক অনুষদের আয়োজনে এমন একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে শুধুমাত্র ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ একটি বিজনেস কনফারেন্স আয়োজন করেছিল। আমরা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করবো।”

সম্মানিত অতিথি অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, “এ ধরনের আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশে বিশাল ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথও সুগম হবে। কোথায় কোথায় আমাদের দুর্বলতা রয়েছে, কীভাবে তা দূর করা যায়, এই আয়োজন সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেবে।”

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, “এই সম্মেলন শুধু একটি দিনব্যাপী অনুষ্ঠান নয়—এটি ভবিষ্যতের গবেষণা, চিন্তা-ভাবনার একটি প্ল্যাটফর্ম। এর ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাডেমিক সংযোগ গড়ে উঠবে।”

মূল বক্তা ড. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, “বিশ্ব প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, গবেষক ও বিজ্ঞানীদের একত্রে কাজ করতে হবে সমাজের উন্নয়নে। আমাদের প্রকৃতি রক্ষা করতে হবে, দুর্নীতি হ্রাস ও দারিদ্র্য দূর করতে হবে, তাহলেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।”

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, গবেষণা পদ্ধতি, মানোন্নয়ন এবং গঠনমূলক উপস্থাপনা কৌশল সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জনের এই সুযোগ তাদের অনুপ্রেরণা দেবে।

এই সম্মেলনে দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ জন গবেষক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সকল শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক নিশাত তাবাসসুম এবং ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক সাবিহা আফরিন বাঁধন।