ঘরে ফেরা নয়, যেন ধ্বংসের মধ্যে ফেরার যাত্রা—তেহরানে যুদ্ধের পরের দৃশ্য

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ১১:৩২:৫৮
ঘরে ফেরা নয়, যেন ধ্বংসের মধ্যে ফেরার যাত্রা—তেহরানে যুদ্ধের পরের দৃশ্য

ইসরায়েলের সঙ্গে তীব্র সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিরে আসা মানুষদের হৃদয়ে রয়ে গেছে গভীর দুশ্চিন্তা ও অজানা আতঙ্ক। ১২ দিনের ভয়াবহ যুদ্ধের পর ছিন্নভিন্ন নগরীর দিকে ফিরছে বাসিন্দারা—কিন্তু তাদের চেনা শহর আর আগের মতো নেই।

আল-জাজিরার শুক্রবার (২৭ জুন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যুদ্ধ শেষে ইরানিদের ঘরে ফেরার বেদনাবিধুর চিত্র। শহরের প্রবেশমুখে এখন আবার যান চলাচল শুরু হয়েছে, গাড়িতে রয়েছে পরিবার, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর একরাশ অনিশ্চিত আশাবাদ।

তেহরানের যে সব এলাকা ইসরায়েলের বিমান হামলার শিকার হয়েছে, সেখানে ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষজন ফিরছেন নিজেদের ভাঙাচোরা ঘরে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন—এই ফিরে আসা কতটা নিরাপদ? এই যুদ্ধবিরতি কি সত্যিই স্থায়ী হবে?

৩৩ বছর বয়সী গ্রাফিক ডিজাইনার নিকা বলেন, “এতদিন পর নিজের বিছানায় ঘুমাতে পারা যেন স্বর্গে ফিরে আসা। তবে জানি না এই শান্তি কতক্ষণ থাকবে।” তিনি ও তাঁর স্বামী রাজধানী থেকে প্রায় ২৮৬ কিলোমিটার দূরে আত্মীয়ের বাড়িতে কাটিয়েছেন পুরো যুদ্ধকাল।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাবা জানান, “যুদ্ধের আগে জীবন ছিল দৌঁড়ের ওপর—চাকরি, পড়াশোনা, একা থাকা—সব কিছুই সামলে নিচ্ছিলাম। হঠাৎ সব থেমে গেল। রুটিন যেন বালুর ওপর লেখা হয়ে গিয়েছিল।”

যুদ্ধের ভয়াবহতায় তেহরান থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে গিয়েছিল হাজারো মানুষ। ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েলের বিমান হামলা দিয়ে যুদ্ধের সূচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একে ‘পারমাণবিক স্থাপনায় প্রতিরোধমূলক আঘাত’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। এরপর ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু হয় ছয় শতাধিক ইরানির, বাস্তুচ্যুত হন অগণিত।

এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও আতঙ্ক কমছে না। সংঘাত চলাকালে ইসরায়েলের হয়ে ‘গোপনে কাজ’ করার অভিযোগে ইরানে শুরু হয়েছে গণগ্রেপ্তার। অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার করে শাস্তি কার্যকর করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় বাড়ছে ভয় ও অনিশ্চয়তা।

ইরানের শীর্ষ আলেমরা বলছেন, "যুদ্ধ আমাদের ইমানি শক্তি বাড়িয়েছে", কিন্তু সাধারণ মানুষ বলছে, এই শক্তি অর্জনের মূল্য ছিল ভয়ানক।

—সত্য প্রতিদিন/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ