কারা কর্মকর্তার বহিষ্কার, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে চলছিল দাপট

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৬ ২১:০৪:০৭
কারা কর্মকর্তার বহিষ্কার, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে চলছিল দাপট

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি’ হিসেবে পরিচিত কারা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলামকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি সর্বশেষ কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার (উপতত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-প্রিজন) জান্নাত-উল-ফরহাদ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, মাহাবুবুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ–সংবলিত চিঠি অধিদপ্তরে এসে পৌঁছেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ১৮ জুন জারি হওয়া এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই বরখাস্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়, যার ওপর ১৬ জুন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাক্ষর করেন জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি।

কারা অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে মাহাবুবুল গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় কারাগারগুলোর দায়িত্বে ছিলেন। বিশেষ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর প্রভাবশালী অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। নিয়ম বহির্ভূতভাবে টানা সাত বছর তিনি ওই কারাগারে জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই বন্দীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে আর্থিক লেনদেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাব খাটানো এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তোলা ছবি দীর্ঘদিন ধরে শোভা পেত।

২০০৩ সালের ৫ আগস্ট পিরোজপুর কারাগারে ডেপুটি জেলার হিসেবে মাহাবুবুল ইসলামের চাকরিজীবনের সূচনা হয়। ২০০৫ সালের নভেম্বরে তিনি বদলি হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন। ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময় শেখ হাসিনাকে যখন সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ কারাগারে রাখা হয়, তখন মাহাবুবুল সেখানে ডেপুটি জেলার ছিলেন। এ সময় থেকেই তিনি নিজেকে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত করতে শুরু করেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং সর্বশেষ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল হন। এই পুরো সময়জুড়ে তিনি ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে সহকর্মীদের উপেক্ষা ও নানা সুযোগ-সুবিধা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০২৪ সালের ৩ আগস্ট মধ্যরাতে ‘অত্যন্ত জরুরি পারিবারিক সমস্যা’র কথা বলে কর্মস্থল ত্যাগ করেন মাহাবুবুল ইসলাম। তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ককে জানান, পরদিন সকালে কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু আর ফেরেননি। বরং ডাকযোগে তিন মাসের অর্জিত ছুটির আবেদন পাঠান। এরপর থেকে তিনি পলাতক। একাধিকবার তাঁর ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় কারা অধিদপ্তর। এমনকি স্থায়ী ঠিকানায় চিঠিও পাঠানো হয়।

এরপর ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়নের’ অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। সরকারি কর্ম কমিশনও এই বরখাস্তের সিদ্ধান্তে সম্মতি জানায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলামকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো। বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত এখন দেশের প্রশাসনিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ