রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে সুরক্ষা পরীক্ষায় সফলতা: প্রথম ইউনিট চালুর পথে অগ্রগতি

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৬ ১৬:৩৯:০১
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে সুরক্ষা পরীক্ষায় সফলতা: প্রথম ইউনিট চালুর পথে অগ্রগতি

পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট এখন চূড়ান্ত প্রস্তুতির পর্যায়ে। বুধবার (২৫ জুন) প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটম।

সংস্থার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর কম্পার্টমেন্টের কন্টেইনমেন্ট বা সুরক্ষা ব্যুহের অভেদ্যতা ও দৃঢ়তা যাচাইয়ের পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, কন্টেইনমেন্ট কাঠামোটি নকশা অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরাপত্তামান রক্ষা করতে সক্ষম। এই ধাপে সফলতা মানে, প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রযুক্তিগত পরীক্ষার দিকে এগিয়ে যাওয়ার আরেকটি মাইলফলক।

কী পরীক্ষা করা হয়েছে?পরীক্ষায় একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কম্প্রেসরের মাধ্যমে কন্টেইনমেন্টের অভ্যন্তরে চাপ বৃদ্ধি করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, কোনোরকম অস্বাভাবিক বা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে কন্টেইনমেন্টের দৃঢ়তা কতটুকু তা যাচাই করা। এই পরীক্ষা জ্বালানি লোডিংয়ের আগে একটি বাধ্যতামূলক ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ যে কোনো কল্পিত দুর্ঘটনার সময় কন্টেইনমেন্টই শেষ প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে কাজ করে।

কন্টেইনমেন্ট কীভাবে কাজ করে?রূপপুরের কন্টেইনমেন্ট তৈরি করা হয়েছে প্রিস্ট্রেসড রিইনফোর্সড কংক্রীট দিয়ে, যার অভ্যন্তরে রয়েছে ইস্পাতের আবরণ। এটির নকশা এমনভাবে তৈরি যাতে রিয়্যাক্টরের ভেতরে থাকা তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাইরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এমনকি বড় ধরনের বাহ্যিক আঘাতেও এই অবকাঠামো অটুট থাকে। এটি আন্তর্জাতিক মানের পারমাণবিক নিরাপত্তা নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

পরবর্তী ধাপে কী?পরীক্ষার পরবর্তী পর্যায়ে চালানো হবে ‘হট মিডিয়া টেস্ট’, যেখানে কুল্যান্ট সার্কিটকে নির্ধারিত তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে বাষ্প উৎপাদন পরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া সক্রিয় অবস্থায় বিভিন্ন নিরাপত্তা যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা, বিশেষ করে বাষ্প নির্গমনকারী ডিভাইসের সক্ষমতা যাচাই করা হবে।

রোসাটম জানিয়েছে, এই পরীক্ষার সময় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ হতে পারে যা একেবারে স্বাভাবিক এবং পূর্ব নির্ধারিত। এতে স্থানীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা আশ্বস্ত করেছে, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নিরাপদ এবং সংস্থাটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মান বজায় রেখেই কাজ করছে।

প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতিরাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় নির্মিত রূপপুর প্রকল্পে দুটি ৩+ প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ চুল্লী স্থাপিত হয়েছে, প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১,২০০ মেগাওয়াট। রোসাটমের প্রকৌশল শাখা প্রকল্পটির প্রধান কন্ট্রাকটর হিসেবে কাজ করছে।

এই সফল পরীক্ষা শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নয়, বরং দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গর্বের বিষয়ও বটে। কারণ রূপপুর প্রকল্প শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের নয়, বরং বিজ্ঞান, নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ