বাংলাদেশের জন্য আবার সুসংবাদ দিল বিশ্বব্যাংক

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২১ ১৪:২৬:৩৭
বাংলাদেশের জন্য আবার সুসংবাদ দিল বিশ্বব্যাংক

চলতি জুন মাসে বাংলাদেশে বৈদেশিক সহায়তার প্রবাহ নতুন গতি পেয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীরা সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার ও কাঠামোগত উন্নয়নে আস্থা রাখায় কয়েকটি বড় প্রকল্পে ঋণ অনুমোদন ও অর্থছাড় হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার চারটি প্রকল্পে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আর শনিবার (২১ জুন) বিশ্বব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে নতুন করে ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ। মোট ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের এসব ঋণ বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।

প্রতি ডলার সমান ১২২ টাকা ২২ পয়সা হিসেবে এডিবির চার প্রকল্পে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। এই ঋণ মূলত অবকাঠামো উন্নয়ন, নগর ব্যবস্থাপনা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি খাতে ব্যবহৃত হবে। এতে দেশের টেকসই প্রবৃদ্ধির ভিত মজবুত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও সেবার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার।

বিশ্বব্যাংক যে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছে, তা বরাদ্দ দেওয়া হবে সরকারি খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ৩৭ পয়সা হিসেবে এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।

এই ঋণের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থা, শাসন কাঠামো ও আর্থিক খাতের সংস্কারে সহায়তা করা হবে, যা টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করবে।

বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার যেসব উচ্চাভিলাষী সংস্কার হাতে নিয়েছে, এই অর্থায়ন সেগুলোর সফল বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে। এসব সংস্কার দেশের প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং জনসেবা প্রদানের সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, “সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে তারা জনগণের সেবায় আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে। এই অর্থায়ন নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির ভিত্তি গড়তে সহায়তা করবে।”

বর্তমানে, মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম, যা সরকারের জনসেবার সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত করে। বিশ্বব্যাংকের নতুন কর্মসূচি এই ঘাটতি পূরণে কর প্রশাসন ও নীতিকে আরও স্বচ্ছ, আধুনিক এবং দক্ষ করতে সংস্কার সমর্থন করছে।

বিশেষভাবে, কর ছাড় ব্যবস্থাপনাকে সংসদীয় অনুমোদনসাপেক্ষ ও নিয়মতান্ত্রিক করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে করে কর কাঠামো আরও দায়বদ্ধ ও জনবান্ধব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা বলেন, “এই অর্থায়ন শুধুমাত্র আর্থিক নয়, বরং নৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নাগরিকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।” তিনি আরও বলেন, “এটি সরকারের সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকরভাবে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করবে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ধাক্কা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়।”

এই সহায়তা ছাড়াও চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের মোট প্রতিশ্রুত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার পর থেকে সংস্থাটি বাংলাদেশকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও ছাড়মূলক ঋণ দিয়েছে, যা দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত