জেনেভায় মুখোমুখি ইরান ও পশ্চিমারা, কূটনীতি না কৌশল? ইরান কি ফাঁদে পা দিচ্ছে?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ১১:৩৬:৫৭
জেনেভায় মুখোমুখি ইরান ও পশ্চিমারা, কূটনীতি না কৌশল? ইরান কি ফাঁদে পা দিচ্ছে?

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আজ শুক্রবার (২০ জুন) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইরান ও ইউরোপের তিন প্রধান শক্তি জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বৈঠক। এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি, ব্রিটেনের ডেভিড ল্যামি, ফ্রান্সের জঁ-নোয়েল বারো, জার্মানির ইয়োহান ভ্যাডেফুল, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান কাইজা কালাস। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সামরিক উত্তেজনা প্রশমিত করা এবং এই সংঘাতের একটি কূটনৈতিক সমাধান বের করা।

এই আলোচনার পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক একাধিক ভয়াবহ হামলার প্রেক্ষাপট। ইসরায়েল গত সপ্তাহে ইরানের একাধিক পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, যার মধ্যে আরাকের একটি ‘নিষ্ক্রিয়’ পারমাণবিক চুল্লি এবং নাতানজের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ছিল। এর পাল্টা জবাবে ইরান ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। দু’পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো এই মুহূর্তে দ্বন্দ্ব নিরসনে যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছে, তা ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তির (JCPOA) প্রেক্ষাপটেই গঠিত। ঐ সময় ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করেছিল এবং এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে আসায় উত্তেজনা আবারও বৃদ্ধি পায়।

বর্তমানে মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান কিছুটা অনিশ্চিত। হোয়াইট হাউসের বিবৃতি অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সরাসরি যুক্ত হবে কিনা। এই অনিশ্চয়তা শুধু ইউরোপ নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউরোপীয় নেতারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িত হয়ে পড়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে এবং যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।

জার্মান কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই আলোচনায় না থাকলেও সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করছে এবং বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত থাকবে। মূলত ইউরোপীয় নেতারা ইরানকে এই বার্তাই দিতে চাচ্ছেন যে, আন্তর্জাতিক সমাজ ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে স্বাগত জানালেও, অস্ত্রায়নের সম্ভাবনা বরদাশত করবে না।

অন্যদিকে, ইরান বারবারই দাবি করে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও শক্তি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে, এবং অস্ত্র তৈরির কোনো ইচ্ছা বা কার্যক্রম তারা পরিচালনা করছে না। ইরান বলছে, জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা আত্মরক্ষার্থে হামলা চালিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক একটি সম্ভাব্য শান্তি প্রক্রিয়ার সূচনা করতে পারে, যদি উভয় পক্ষ বিশেষ করে ইরান কূটনৈতিক সমঝোতায় প্রস্তুত থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, বৈঠকের পর বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কারিগরি ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা শুরু হবে, যা ভবিষ্যতের কোনো চুক্তির ভিত্তি রচনায় সহায়ক হতে পারে।

সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলা ও ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক মহলকে কৌশলগতভাবে বিভক্ত করে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একদিকে চাইছে ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস করতে, অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চাইছে, কূটনৈতিক পথেই এই সমস্যা সমাধান করা হোক।

সুতরাং, আজকের জেনেভা বৈঠক শুধু সাময়িক উত্তেজনা কমানোর একটি প্রচেষ্টা নয়, বরং এটি ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তার কাঠামো নির্মাণে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। আন্তর্জাতিক সমাজ এখন তাকিয়ে রয়েছে এই আলোচনায় সত্যিকার কোনো অগ্রগতি হয় কি না, আর ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধের পথে যাবে, না কি শান্তির টেবিলে ফিরে আসবে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত