ইরান- ইসরায়েল সংঘাত
'পুরো অঞ্চল হবে নরক' - ইরানের কড়া হুঁশিয়ারি

ইরান-ইসরায়েল সরাসরি সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। এই উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের পাশে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা গোটা অঞ্চলকে ‘নরকে পরিণত করবে’ বলে হুঁশিয়ার করেছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খতিবজাদে বলেন, “এটি আমেরিকার যুদ্ধ নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি এই যুদ্ধে জড়ান, তাহলে ইতিহাসে তিনি সেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্মরণীয় হবেন, যিনি এমন এক যুদ্ধে প্রবেশ করেছিলেন যেখানে তার কোনো স্থান ছিল না।”
এই বিবৃতি আসে এমন এক সময়, যখন ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতালের পাশের একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে। ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ওই হামলায় অন্তত ৭১ জন আহত হয়েছে। যদিও ইরানি মিডিয়া জোর দিয়ে বলেছে, হামলার লক্ষ্য ছিল সামরিক স্থাপনা, হাসপাতাল নয়।
জবাবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের আরাক হেভি ওয়াটার রিয়্যাক্টর ও নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যদিও ইরান এখনও এই হামলায় হতাহতের নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
খতিবজাদে স্পষ্ট করে বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত বোমাবর্ষণ বন্ধ না হয়, ততক্ষণ আলোচনায় বসা সম্ভব নয়। কূটনীতি আমাদের প্রথম পছন্দ হলেও, আত্মরক্ষার অধিকার জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদে নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং আমরা সেটিই করেছি।”
তিনি আরও দাবি করেন, ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যাতে শীর্ষস্থানীয় জেনারেল ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হন। “আমরা তখনও পরমাণু চুক্তি পুনরায় স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে ছিলাম, ওমানের মাসকাটে ষষ্ঠ দফা আলোচনার প্রস্তুতি চলছিল। ইসরায়েলি হামলাই পুরো প্রক্রিয়া বানচাল করে দেয়।”
খতিবজাদে কড়া ভাষায় ট্রাম্পের বক্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টের সমালোচনা করে বলেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, “যদি ইরান পরমাণু চুক্তি মেনে নিত, তবে এই যুদ্ধ হতো না।” এর জবাবে খতিবজাদে বলেন, “এমন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে কেউ নিজের দায় এড়াতে পারে না।”
শান্তিপূর্ণ আলোচনায় ফেরার সম্ভাবনা?রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে কয়েকবার টেলিফোনে কথা হয়েছে। তবে ইরান স্পষ্ট জানিয়েছে—যতক্ষণ ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করে, তারা আলোচনায় ফিরবে না।
তবে জি-৭ সম্মেলনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একটি নতুন বৈঠকের প্রস্তাব এসেছে, যা জেনেভায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। খতিবজাদে জানিয়েছেন, “আমরা আলোচনায় আগ্রহী, এখন সময় এসেছে টেবিলে বসে সমাধান খোঁজার।”
ইসরায়েলের অভিযোগ, ইরান সম্প্রতি ইউরেনিয়াম মজুতের মাধ্যমে ‘অস্ত্রায়ন প্রক্রিয়া’ শুরু করেছে। তবে ইরান তা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে, ইরান এখন ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে যা অস্ত্র বানানোর ৯০ শতাংশ সীমার কাছাকাছি।
খতিবজাদে বলেন, “আমরা যদি বোমা বানাতে চাইতাম, অনেক আগেই বানিয়ে ফেলতাম। আমাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, এটাই আমাদের অবস্থান।”
খতিবজাদের বক্তব্য, ইসরায়েলি হামলা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তহীনতা এই তিনটি উপাদান এখন মধ্যপ্রাচ্যকে একটি অনিশ্চিত, বিপজ্জনক মোড়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কূটনীতি এখনো টেবিলে থাকলেও, বোমার শব্দ ও প্রতিশোধের আগুনে তা চাপা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান