গাজা সংকট
গাজা সঙ্কটে নতুন মাত্রা: সাহায্যপ্রার্থী ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তীব্রতর

গাজার মধ্যাঞ্চলের সালাহ আল-দিন সড়কে বুধবার ভোরে ইসরায়েলি আগ্নেয়াস্ত্রের হামলায় অন্তত ৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে ২৯ জন ছিলেন খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষারত, যাদের ওপর আচমকা চালানো হয় এই প্রাণঘাতী হামলা। এ ঘটনায় আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। স্থানীয় চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, তারা সবাই ত্রাণ সংগ্রহ করতে এসেছিলেন এবং কোনো ধরনের সশস্ত্র প্রতিরোধ বা হুমকির লক্ষণ তাদের মধ্যে ছিল না।
এই ঘটনা ছাড়াও গাজার দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরে টেন্টে বসবাসরত উদ্বাস্তুদের ওপর চালানো ইসরায়েলি ড্রোন ও ট্যাংক হামলায় আরও ৮ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। একই ধরনের হামলা ঘটে গাজা শহরের জেইতুন অঞ্চলে, যেখানে একটি বাড়িতে বিমান হামলায় নিহত হন ৮ জন। আরেকটি ভয়াবহ হামলা হয় মাঘাজি শিবিরে—একটি পরিবারের পুরো সদস্যসহ ১০ জন প্রাণ হারান।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস এসব হামলাকে ‘সিস্টেমেটিক যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, “ক্ষুধার্তদের হত্যাকাণ্ড, উদ্বাস্তু শিবিরে বোমাবর্ষণ এবং তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’-এর অপ্রতুলতা সবই ইসরায়েলের চালানো গণনিধনের অংশ।” তারা আরও অভিযোগ করে যে, বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) কর্তৃক পরিচালিত সাহায্য বিতরণকেন্দ্রে এসব হামলা ইচ্ছাকৃত।
আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠনগুলো ও জাতিসংঘ GHF-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই সংস্থা ইসরায়েলি সামরিক উদ্দেশ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তব মানবিক চাহিদাকে উপেক্ষা করছে এবং দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাওয়া নিরপেক্ষ সংগঠনগুলোকে পাশ কাটিয়ে চলেছে।
এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির এক মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরেন আহমেদ গাহবেন। তিনি বলেন, “আমার ভাগ্নে শুধু তার সন্তানদের জন্য একটি আটার বস্তা আনতে গিয়েছিল। সে আর জীবিত ফেরেনি। সে কোনো যোদ্ধা ছিল না। তার অপরাধ ছিল ক্ষুধা।”
আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম জানান, ইসরায়েলি সেনারা শুধুমাত্র খাদ্যের জন্য অপেক্ষারত বেসামরিকদের নিশানা করছে। ড্রোন, ট্যাংক ও পাহাড়ের ওপর থেকে মোতায়েন স্নাইপারদের মাধ্যমে এসব মানুষদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করছে, এই ভিড় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, কিন্তু তারা এর কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ এখনও উপস্থাপন করতে পারেনি।
মঙ্গলবারও একই ধরনের সহিংসতায় ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যা এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মে মাসের শেষ থেকে শুরু হওয়া খাদ্য বিতরণ কার্যক্রমে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৩৯৭ জন সাহায্যপ্রার্থী নিহত এবং ৩,০০০-এর বেশি আহত হয়েছেন।
মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে যে, জ্বালানির অভাবে গাজার কিছু মাত্র চালু থাকা হাসপাতালও তিন দিনের মধ্যে কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো ও জাতিসংঘকে ‘রেড জোন’ বলে চালিয়ে হাসপাতালের জন্য সংরক্ষিত জ্বালানি পৌঁছানোর পথও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।
এদিকে, ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার মধ্যে আন্তর্জাতিক মনোযোগ কিছুটা সরলেও, ইয়েমেনের হুতি সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাত ঘোষণা করেছেন, “গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ ও অবরোধ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের সহায়তা বন্ধ করবো না।”
এই বাস্তবতায়, গাজায় প্রতিদিনকার বেঁচে থাকা হয়ে উঠেছে এক রক্তাক্ত যুদ্ধ। খাদ্য ও চিকিৎসার মতো মৌলিক মানবাধিকার আজ শিকার হয়েছে রাজনৈতিক হিসাবনিকাশের, যেখানে সাহায্য প্রার্থনাও জীবন ঝুঁকির প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- সাজ্জাদ, ডেস্ক রিপোর্টার।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!