ইরান- ইসরায়েল সংঘাত
ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসন: চূড়ান্ত লক্ষ্য কী?

ইরান, গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেন পাঁচটি ফ্রন্টে সরব যুদ্ধনীতি নিয়ে সামনে এসেছে ইসরাইল। ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলা এবার সরাসরি ইরানকে লক্ষ্য করে। এই ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য আরেকবার প্রবল উত্তেজনার মুখে দাঁড়িয়েছে, আর বিশ্লেষকদের সামনে উঠে এসেছে এক বড় প্রশ্ন: ইসরাইলের চূড়ান্ত লক্ষ্য আসলে কী?
ইসরাইলি সামরিক সূত্র জানাচ্ছে, এই হামলা ‘পূর্বাভাসভিত্তিক’ বা প্রি-এম্পটিভ স্ট্রাইক হিসেবে চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই দাবির স্বপক্ষে এখনো ইসরাইল কোনো স্বতন্ত্র প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)—এখনো নিশ্চিত করে বলেনি যে ইরান অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং তাদের মতে, ২০০৩ সালেই ইরান পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের পরিকল্পনা ত্যাগ করেছিল।
ইরান, একটি পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT)-অনুগত দেশ হিসেবে, বরাবরই শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অধিকার দাবি করে আসছে। এর বিপরীতে, ইসরাইল এখনো NPT-তে সই করেনি, এবং ধারণা করা হয় তাদের কাছে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে।
হামলার ঠিক আগের দিন, ১২ জুন, IAEA জানায় যে ইরান দুই দশকে প্রথমবারের মতো পরমাণু সমৃদ্ধিকরণে NPT বাধ্যবাধকতা ভেঙেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা অস্ত্র নির্মাণে ব্যবহারযোগ্য। বর্তমানে ইরানের কাছে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম রয়েছে, তা দিয়ে অন্তত নয়টি পারমাণবিক বোমা বানানো সম্ভব এমন তথ্যই আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কেন্দ্রে।
এই প্রেক্ষাপটে, ইসরাইল হামলা চালায় ইরানের নাতানজ ও ইসফাহান পরমাণু স্থাপনায়। আরও লক্ষ্যবস্তু হয়েছে সামরিক ঘাঁটি, জ্বালানি অবকাঠামো, প্রশাসনিক ভবন এবং বেসামরিক আবাসন এলাকা। তবে এখনো ইরানের ফরদো স্থাপনায় হামলা হয়নি কারণ এটি পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত, যেখানে আঘাত হানার জন্য প্রয়োজন বিশেষ ‘বাংকার বোম্ব’, যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রাগারে রয়েছে।
ইসরাইলি হামলার জবাবে ইরান পাল্টা হামলা চালিয়েছে। তারা একে ‘আগ্রাসী যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আত্মরক্ষার অধিকার দাবি করেছে। ইরান সতর্ক করে বলেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি যুক্ত হয়, তাহলে তারা শুধু ইসরাইল নয়, মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতেও আঘাত হানবে।
এই অবস্থায় ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লেবাননের ইরানঘনিষ্ঠ মিলিশিয়াদের সক্রিয়তা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরাইল বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরমাণু কর্মসূচি থাকলেও, সংঘাত এখন রাজনৈতিক, কৌশলগত ও আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে।
-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান