ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসন: চূড়ান্ত লক্ষ্য কী?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ১৭:৪৬:৩৯
ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসন: চূড়ান্ত লক্ষ্য কী?

ইরান, গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেন পাঁচটি ফ্রন্টে সরব যুদ্ধনীতি নিয়ে সামনে এসেছে ইসরাইল। ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলা এবার সরাসরি ইরানকে লক্ষ্য করে। এই ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য আরেকবার প্রবল উত্তেজনার মুখে দাঁড়িয়েছে, আর বিশ্লেষকদের সামনে উঠে এসেছে এক বড় প্রশ্ন: ইসরাইলের চূড়ান্ত লক্ষ্য আসলে কী?

ইসরাইলি সামরিক সূত্র জানাচ্ছে, এই হামলা ‘পূর্বাভাসভিত্তিক’ বা প্রি-এম্পটিভ স্ট্রাইক হিসেবে চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই দাবির স্বপক্ষে এখনো ইসরাইল কোনো স্বতন্ত্র প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)—এখনো নিশ্চিত করে বলেনি যে ইরান অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং তাদের মতে, ২০০৩ সালেই ইরান পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের পরিকল্পনা ত্যাগ করেছিল।

ইরান, একটি পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT)-অনুগত দেশ হিসেবে, বরাবরই শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অধিকার দাবি করে আসছে। এর বিপরীতে, ইসরাইল এখনো NPT-তে সই করেনি, এবং ধারণা করা হয় তাদের কাছে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে।

হামলার ঠিক আগের দিন, ১২ জুন, IAEA জানায় যে ইরান দুই দশকে প্রথমবারের মতো পরমাণু সমৃদ্ধিকরণে NPT বাধ্যবাধকতা ভেঙেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা অস্ত্র নির্মাণে ব্যবহারযোগ্য। বর্তমানে ইরানের কাছে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম রয়েছে, তা দিয়ে অন্তত নয়টি পারমাণবিক বোমা বানানো সম্ভব এমন তথ্যই আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কেন্দ্রে।

এই প্রেক্ষাপটে, ইসরাইল হামলা চালায় ইরানের নাতানজ ও ইসফাহান পরমাণু স্থাপনায়। আরও লক্ষ্যবস্তু হয়েছে সামরিক ঘাঁটি, জ্বালানি অবকাঠামো, প্রশাসনিক ভবন এবং বেসামরিক আবাসন এলাকা। তবে এখনো ইরানের ফরদো স্থাপনায় হামলা হয়নি কারণ এটি পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত, যেখানে আঘাত হানার জন্য প্রয়োজন বিশেষ ‘বাংকার বোম্ব’, যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রাগারে রয়েছে।

ইসরাইলি হামলার জবাবে ইরান পাল্টা হামলা চালিয়েছে। তারা একে ‘আগ্রাসী যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আত্মরক্ষার অধিকার দাবি করেছে। ইরান সতর্ক করে বলেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি যুক্ত হয়, তাহলে তারা শুধু ইসরাইল নয়, মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতেও আঘাত হানবে।

এই অবস্থায় ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লেবাননের ইরানঘনিষ্ঠ মিলিশিয়াদের সক্রিয়তা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরাইল বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরমাণু কর্মসূচি থাকলেও, সংঘাত এখন রাজনৈতিক, কৌশলগত ও আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত