হাসিনার বাবুর্চির 'আলাদিনের চেরাগ'- দিনমজুর থেকে কোটিপতি!

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৪ ১০:২১:৩১
হাসিনার বাবুর্চির 'আলাদিনের চেরাগ'- দিনমজুর থেকে কোটিপতি!

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলের সময় তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ এখন প্রকাশ্যে আসছে। দুর্নীতির সেই তালিকায় এবার উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ নাম প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত বাবুর্চি মো. মোশারফ শেখ। সাধারণ এক দিনমজুরের সন্তান থেকে প্রভাবশালী ক্ষমতার বলয়ে প্রবেশ করে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়া মোশারফের বিরুদ্ধে এখন জমি দখল, নিরীহ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ উঠেছে।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের বড় কামদিয়া গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান মোশারফ শেখ। শোনা যায়, তার শৈশব কেটেছে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে। বাবার রেখে যাওয়া ৫ শতাংশ জমিই ছিল তার একমাত্র সম্পদ। ১৯৯০-এর দশকে ঢাকায় এক হোটেলে বাবুর্চির কাজ দিয়ে জীবন শুরু করেন মোশারফ। ভাগ্য বদলে যায় ১৯৯৬ সালে, যখন তিনি তৎকালীন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাবুর্চি হিসেবে নিয়োগ পান।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের রান্নাঘরে দীর্ঘ ২৮ বছর দায়িত্ব পালনের পর মোশারফ যেন হয়ে ওঠেন "অদৃশ্য ক্ষমতার ধারক"। অভিযোগ রয়েছে, এই সময়ের মধ্যেই তিনি সরকারি পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে নিজের এলাকায় প্রভাব খাটাতে থাকেন এবং সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে মোশারফ শেখের বিরুদ্ধে জমি দখলের গুরুতর অভিযোগ করেছেন বড় কামদিয়া গ্রামের কৃষক মো. চাঁনমিয়া ফকির ও তার পরিবার। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় চাঁনমিয়া ফকিরের ৪৩ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন মোশারফ। শুধু তাই নয়, জমি ছাড়ার অনুরোধ করায় তাদের হুমকি-ধমকি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

চাঁনমিয়ার ভাতিজা সেন্টু ফকির বলেন, “আমার চাচা গরিব কৃষক মানুষ। তিনি সরকারের কাছে গেলে কোনো বিচার পাননি। বরং প্রতিবাদ করলেই আমাদের ভয় দেখানো হতো।” তিনি আরও বলেন, মোশারফ তাদের জমিতে নির্মিত বাড়ির ছাদে ‘নৌকার’ প্রতীক ঝুলিয়ে রাখতেন যা স্থানীয়ভাবে ভীতির প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

মোশারফের প্রতিবেশী জামাল শেখ জানান, বাবুর্চি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই মোশারফ যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়ে যান। কামদিয়া গ্রামে দুই বিঘা জমিতে নির্মিত তার বাড়ি ছাড়াও ফরিদপুর শহরের হাড়োকান্দি ও রাজবাড়ী মোড় এলাকায় রয়েছে একাধিক বাড়ি। রয়েছে ঢাকায় ফ্ল্যাট, জমি এবং বিলাসবহুল গাড়িও। এসব সম্পদের উৎস নিয়ে কোনো হিসাব নেই। এলাকাবাসীর দাবি এমন অবৈধ সম্পদের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

যদিও দুর্নীতি দমন কমিশনে মোশারফের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখনও নেয়া হয়নি, সালথা থানার ওসি মো. আতাউর রহমান নিশ্চিত করেছেন, জমি দখলের একটি অভিযোগ পেয়েছেন এবং তা তদন্তাধীন রয়েছে।

সরকার পরিবর্তনের পর মোশারফ শেখ গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তার মোবাইল ফোন বন্ধ এবং বাড়িতেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়রা মনে করছেন, তিনি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা হারানোর আশঙ্কায় আত্মগোপনে চলে গেছেন।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত