হজ শেষে নজর দিন নিজের ওপর—কতোটা বদলেছেন আপনি?

জীবনযাপন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১১ ১৭:২৯:৫৯
হজ শেষে নজর দিন নিজের ওপর—কতোটা বদলেছেন আপনি?

অনেকেই মনে করেন, হজ করার পর সব গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং এরপর তারা ইচ্ছামতো জীবন যাপন করতে পারেন। এই ধারণা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর। সহিহ হাদিস অনুযায়ী, যে ব্যক্তি “হজে মাবরুর” সম্পাদন করেন, তার আগের জীবনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। তবে এটি শুধু তাদের জন্য, যাদের হজ শুদ্ধ নিয়ত, শুদ্ধ আচরণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যেই সম্পাদিত হয়।

হজে মাবরুর হলো এমন একটি হজ, যার পর একজন মুসলমানের জীবন আমূল বদলে যায় তার চিন্তায়, বিশ্বাসে ও নৈতিকতায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসে। একজন প্রকৃত হজযাত্রী হজ থেকে ফিরে এসে কখনোই পাপ ও অন্যায় আচরণে জড়িয়ে পড়তে পারেন না। হজের পর কোনো ব্যক্তি যদি আবারও অন্যায় ও অশোভন কাজে লিপ্ত হন, তাহলে তা হজে মাবরুর না হওয়ারই ইঙ্গিত বহন করে।

ইবাদতের মর্যাদা যেন শুধু সফরেই সীমাবদ্ধ না থাকে

রমজান এবং হজের মতো ইবাদতের মৌসুমগুলো একজন মুমিনের আত্মিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য এক মহৎ অনুশীলন। এই সময়গুলো মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসে। হজ শেষে ঘরে ফেরার সময় অনেক হজযাত্রী এখনও ইহরাম পরে থাকেন, যদিও ইসলামি বিধান অনুযায়ী ১০ জিলহজের পর হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে ইহরাম খুলে স্বাভাবিক পোশাক পরা সুন্নাহ। ইহরাম ধরে রাখার মধ্যে অনর্থক কষ্ট ও আত্মপ্রদর্শনের সম্ভাবনা থেকে যায়, যা হজের বিনয় ও আন্তরিকতার মূল শিক্ষা পরিপন্থী।

‘হাজি সাহেব’ টাইটেল: পরিচয়ের গর্ব, না অহংকারের প্রকাশ?

কেউ হজ সম্পন্ন করার পর সমাজে ‘হাজি সাহেব’ নামে পরিচিত হতে পারেন এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে কারো প্রতি জোর করে এ উপাধি প্রয়োগ করা, নিজেকে বড় করে দেখানো কিংবা হজের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। অহংকার ও আত্মপ্রদর্শন ইসলামের মূল শিক্ষার পরিপন্থী এবং ইবাদতের উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করে।

মন্দ আচরণে ফিরে যাওয়া হজের প্রকৃত শিক্ষা পরিপন্থী

হজ একজন মুসলমানকে শুধু বাহ্যিকভাবে পরিবর্তন করে না, বরং তার ভেতরেও এক গভীর রূপান্তর ঘটায়। হজের পরও যদি কেউ পুরনো অভ্যাসে ফিরে যান, যেমন নম্রতার অভাব, নিয়মিত নামাজ ত্যাগ, অন্যের প্রতি দুর্ব্যবহার ইত্যাদি, তবে তা তার হজের কবুল না হওয়ারই আলামত হতে পারে।

শপথ শুধু আল্লাহর নামেই—নবীজির কবরের সামনে শপথ নয়

মদিনায় গিয়ে অনেকেই আবেগের বশে নবীজির (সা.) কবর স্পর্শ করে বা তাঁর নাম করে শপথ নেন। যেমন “আমি সেই নবীর কসম করে বলছি, যার কবর আমি ছুঁয়েছি।” অথচ ইসলামে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শপথ কেবল আল্লাহর নামেই করা যাবে। এমনকি রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই বলেন, “যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করে, সে কুফর বা শিরকে লিপ্ত হয়।”

হজ যেন হয় জীবনের রূপান্তর

হজের আসল উদ্দেশ্য হলো আত্মার পরিশুদ্ধি, গুনাহ থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। তাই হজ যেন শুধু ছবি তোলা, গল্প করার কিংবা ‘হাজি সাহেব’ উপাধি নেওয়ার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ না থাকে। হজ হওয়া উচিত এমন একটি রূপান্তরমূলক অভিজ্ঞতা, যা একজন মুসলমানকে পুরো জীবনের জন্য সৎ, পরহেজগার, বিনয়ী ও আল্লাহভীরু করে তোলে।

হজ জীবনের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক, যেখানে অতীতের সকল গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় মানুষ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু এই মুক্তি তখনই প্রকৃত অর্থে পাওয়া সম্ভব, যখন হজ শেষে মানুষ তাঁর জীবনে একটি স্থায়ী পরিবর্তন ঘটায়। হজ যেন হয় আল্লাহর পথে দৃঢ় প্রত্যাবর্তনের এক প্রতিশ্রুতি, এবং আমাদের প্রতিদিনের জীবনে তার প্রতিফলন ঘটে তবেই তা হবে ‘হজে মাবরুর’।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত