মুহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক

ভোটের আগে বৈঠক: কী ইঙ্গিত দিচ্ছে তারেক-ইউনূস যুগলবন্দী?

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১১ ১০:১৫:৩০
ভোটের আগে বৈঠক: কী ইঙ্গিত দিচ্ছে তারেক-ইউনূস যুগলবন্দী?

যুক্তরাজ্যে সফররত বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১৩ জুন, শুক্রবার সকাল লন্ডনের স্থানীয় সময় অনুযায়ী হোটেল ডোরচেস্টারে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে সরকারের সঙ্গে বিএনপির টানাপোড়েন তীব্র অবস্থায় রয়েছে, বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত ইস্যুতে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই বৈঠকের উদ্যোগ মূলত সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের আগ্রহের পরেই বিএনপির পক্ষ থেকে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। তবে শুরুতে বিএনপি এই বৈঠকে অনাগ্রহী ছিল, কিন্তু নির্বাচনের সময়সূচী নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনায় দলটি অবশেষে রাজি হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই সাক্ষাৎটি একপ্রকার সৌজন্যতার অংশ এবং এটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার জন্য একটি সুযোগ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও অংশ নেন। বৈঠকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে এই বৈঠকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। বৈঠকটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই বৈঠককে দুই পক্ষের মধ্যে চলমান আস্থার সংকট দূর করার একটি গুরুত্বপুর্ণ উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্লেষক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, দেশের স্বার্থে সরকারের সঙ্গে বিএনপির মধ্যকার আস্থাভঙ্গ অবিলম্বে কাটিয়ে উঠতে হবে এবং এই বৈঠক সেই পথিকৃৎ হতে পারে।

বৈঠকের পটভূমিতে রয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে আসছে, যা সরকারের ঘোষণা করা ২০২৬ সালের এপ্রিলের নির্বাচনের পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের কথা ঘোষণা করার পর বিএনপি তীব্র আপত্তি জানায়। ফলে নির্বাচনের তারিখ ও প্রস্তুতি নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে ওঠে।

বিএনপির অবস্থান এখনও অনড়, তবে এই বৈঠকের পর নির্বাচনের সময়সূচী নিয়ে কোনরূপ সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনাও বিশ্লেষকরা উন্মোচিত করছেন। মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, রোজার মাস ও ঈদের পরপর নির্বাচন করাটা রাজনৈতিক ও জনসাধারণের জন্য দুর্ভোগজনক হবে, তাই বাস্তবতার আলোকে সময়ের পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠক বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ও সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। এটি ভবিষ্যতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

সার্বিকভাবে, অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের এই বৈঠক শুধু একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতি ও সরকার-বিএনপি সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আগামী নির্বাচনের পথপ্রদর্শনে এটি একটি মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত