গ্রেটা থুনবার্গের ফ্লোটিলা আটক, গাজা অবরোধ প্রশ্নে উত্তাল ইউরোপ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৯ ২২:৫৩:২২
গ্রেটা থুনবার্গের ফ্লোটিলা আটক, গাজা অবরোধ প্রশ্নে উত্তাল ইউরোপ

সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক জলসীমায় গাজামুখী মানবিক সহায়তা নৌকা ‘ম্যাডলিন’-এ ইসরায়েলি নৌবাহিনীর অভিযান এবং এর ফলে গ্রেফতার হন সুইডিশ জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ফরাসি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান সহ আরও ১২ জন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী। গাজার কঠোর অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো এবং চরম মানবিক সংকটে থাকা এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে খাদ্য ও ওষুধ পাঠানোর লক্ষ্যে ফ্লোটিলা যাত্রাটি সংগঠিত করেছিল Freedom Flotilla Coalition। অভিযানটির উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়ার মাধ্যমে গাজার সঙ্কট আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা।

সংগঠনের দাবি অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় বেআইনিভাবে নৌকাটি আটক করে, সক্রিয় অস্ত্রহীন কর্মীদের অপহরণ করে এবং তাদের বহনকৃত ত্রাণ সামগ্রী—including শিশু খাদ্য, ঔষধ ও শুকনো খাবার—জব্দ করে। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, “এই অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল একটি মানবিক মিশনের ওপর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ করেছে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।”

অন্যদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযানকে ‘জনসংযোগের ছলচাতুরি’ হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে লেখে—“সেলিব্রিটিদের ‘সেলফি ইয়ট’ নিরাপদে ইসরায়েলের উপকূলের দিকে এগোচ্ছে।” তারা জানায়, আটক কর্মীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং জব্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী গাজার অনুমোদিত চ্যানেলের মাধ্যমে পৌঁছানো হবে।

তবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর প্রতিক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্পেন, যার নাগরিক সের্হিও তোরিবিও ছিলেন এই মিশনে, ইসরায়েলের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। স্পেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইওলান্দা দিয়াস একে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ইসরায়েলের সঙ্গে থাকা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পর্যালোচনার আহ্বান জানান।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো আটক ফরাসি নাগরিকদের জন্য অবিলম্বে কনস্যুলার সহায়তা এবং দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বামপন্থী জোট এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডকে "ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখার কৌশল" বলে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, "এই অভিযান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী এবং এর বিরুদ্ধে ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।" ইতোমধ্যে বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, পর্তুগাল ও নেদারল্যান্ডস ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনার প্রস্তাব তুলেছে।

‘ম্যাডলিন’ গত সপ্তাহে ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে যাত্রা শুরু করে। যাত্রাপথে এটি লিবিয়ার জলসীমার কাছাকাছি চারজন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে, যারা লিবীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক হওয়ার ভয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিল। মিশনের মানবিক প্রকৃতি ছিল সুস্পষ্ট। গ্রেটা থুনবার্গ এক প্রাক-রেকর্ডকৃত বার্তায় বলেন, “আমরা অস্ত্র নয়, খাদ্য নিয়ে এসেছি। আমাদের লক্ষ্য গাজার শিশুদের জন্য দুধ ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া।” তিনি তার মুক্তির জন্য সুইডিশ সরকারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এই অভিযানে আটক আরেকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন ফ্রান্সের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান, যিনি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এবং ইসরায়েলের ফিলিস্তিনবিরোধী নীতির কঠোর সমালোচক। তিনি বলেন, “এই মানবিক মিশনকে সামরিকভাবে থামিয়ে ইসরায়েল দেখিয়ে দিল যে তারা আন্তর্জাতিক সহানুভূতির প্রতিও শত্রুতা পোষণ করে।”

ইসরায়েলি পক্ষের যুক্তি, গাজার উপর তাদের নৌ-অবরোধ হামাসের কাছে অস্ত্র প্রবাহ রোধের জন্য জরুরি। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এটি মূলত গাজার সাধারণ জনগণের ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করার হাতিয়ার। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছে যে, অবরোধের কারণে গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রানচেস্কা আলবানিজে বলেন, “যদি সরকারগুলো এই অবরোধ তুলে না নেয়, তবে নাগরিক সমাজের উচিত সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধে নামা।” একইসঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফ্যাম, এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযানের নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানায়।

বর্তমানে ‘ম্যাডলিন’ ইসরায়েলি নৌবাহিনীর নজরদারিতে আশদোদ বন্দরের দিকে এগোচ্ছে। আটককৃতদের আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে ইসরায়েলি সূত্র জানিয়েছে। তবে ইউরোপীয় কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে এবং এই আটক-পর্ব wider কূটনৈতিক উত্তেজনার দিকে গড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে—গাজায় সহায়তা পাঠানো কি অপরাধ, নাকি মানবিক কর্তব্য? এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি এবার নিন্দার গণ্ডি পেরিয়ে কার্যকর পদক্ষেপে যাবে? সময়ই বলবে, তবে এ ঘটনা নিশ্চিতভাবেই গাজার সংকটকে আরেক ধাপ আন্তর্জাতিকীকরণ করলো—এবার বিশ্বনন্দিত গ্রেটা থুনবার্গ ও ইউরোপীয় রাজনীতিকদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে।


বিরল ‘মস্তিষ্ক-খেকো’ অ্যামিবার বিস্তার, কেরালায় স্বাস্থ্য সতর্কতা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ২১:২৮:৫৮
বিরল ‘মস্তিষ্ক-খেকো’ অ্যামিবার বিস্তার, কেরালায় স্বাস্থ্য সতর্কতা
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় বিরল ‘মস্তিষ্ক-খেকো’ অ্যামিবার (নেগলেরিয়া ফাওলেরি) সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ায় স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় রাজ্যজুড়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

সংক্রমণের হার বৃদ্ধি ও সতর্কতা

এই বছর কেরালায় এই অ্যামিবার সংক্রমণে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ৭২ জনের মস্তিষ্কে সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৬টি সংক্রমণ ও ৯ জনের মৃত্যু। রোগের বিস্তার ঠেকাতে একটি সরকারি টাস্ক ফোর্স কাজ করছে। সরকারি টাস্ক ফোর্সের চিকিৎসক আলতাফ আলী এএফপিকে বলেন, “রোগ শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার জন্য রাজ্যজুড়ে বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা পরিচালনা করা হচ্ছে।”

‘মস্তিষ্ক-খেকো অ্যামিবা’ কী?

মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) অনুসারে, এই অ্যামিবা সাধারণত ‘মস্তিষ্ক-খেকো অ্যামিবা’ নামে পরিচিত। এটি মস্তিষ্ককে সংক্রামিত করে এবং মস্তিষ্কের টিস্যু ধ্বংস করে। সিডিসি জানায়, এই সংক্রমণ অত্যন্ত বিরল হলেও ‘প্রায় সবসময়ই মারাত্মক’। আক্রান্তদের ৯৫ শতাংশেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

এই অ্যামিবা সাধারণত উষ্ণ হ্রদ ও নদীতে বাস করে এবং দূষিত পানি নাকে প্রবেশ করলে এটি মানবদেহে প্রবেশ করে। এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায় না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এই সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, জ্বর এবং বমি। খুব দ্রুতই তা খিঁচুনি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন, হ্যালুসিনেশন এবং কোমায় রূপ নিতে পারে। ১৯৬২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এই অ্যামিবার সংক্রমণে মাত্র প্রায় ৫০০টি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ায়।


গাজার পর এবার পূর্ব জেরুজালেমকে ঘিরে ফেলছে ইসরায়েল

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ২০:৫৯:৪১
গাজার পর এবার পূর্ব জেরুজালেমকে ঘিরে ফেলছে ইসরায়েল
ছবি: সংগৃহীত

গাজায় অব্যাহত হামলার মধ্যেই এবার ফিলিস্তিনের পূর্ব জেরুজালেমের দিকে নজর দিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন- সেখানে সামরিক চেকপোস্ট ও লোহার গেট দিয়ে ঘিরে ফেলছে ইসরায়েল। তারা জানিয়েছেন, শহরের ভেতর এবং আশপাশে ইতোমধ্যেই ৮৮টি ব্যারিয়ার বসানো হয়েছে, যা সাধারণ নিরাপত্তা নয় বরং সুপরিকল্পিত দমননীতির অংশ।

বুধবার এক বিবৃতিতে জেরুজালেম গভর্নরের দপ্তর জানায়, এসব অবকাঠামোর উদ্দেশ্য হলো শহরটিকে ফিলিস্তিনি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সেখানকার বাসিন্দাদের ওপর বৈষম্যমূলক নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া।

সর্বশেষ যেসব চেকপোস্ট বসানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে উত্তর-পূর্ব জেরুজালেমের মিখমাস ও আল রাম শহর এবং পূর্বাঞ্চলের আল আইজারিয়া এলাকা। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এসব উদ্যোগ আসলে জেরুজালেমকে ‘ইহুদিকরণ’ এবং শহরের আরব-ইসলামি পরিচয় মুছে ফেলার প্রক্রিয়া।

ফিলিস্তিনি কোলোনাইজেশন অ্যান্ড ওয়াল রেজিস্ট্যান্স কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরো পশ্চিম তীরে স্থায়ী চেকপোস্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০৪টি। এর মধ্যে শুধু জেরুজালেম ও আশপাশের গ্রামগুলোতেই রয়েছে অন্তত ৮৮টি। ফিলিস্তিনি পক্ষের অভিযোগ, এভাবে মানুষের চলাচলের স্বাধীনতাকে প্রকাশ্যে লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল।

এ অবস্থায় জাতিসংঘ ও মানবাধিকার পরিষদের প্রতি জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে তারা। বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরায়েলকে বাধ্য করতে হবে যাতে এ ধরনের দমননীতি অবিলম্বে বন্ধ হয়।

ফিলিস্তিনিরা বরাবরই পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবও ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের দখল এবং ১৯৮০ সালে একতরফা সংযুক্তিকরণকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি


মোদি সরকারের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ২০:৩৯:০১
মোদি সরকারের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ
ছবিঃ সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে গণবিক্ষোভ যে শাসক শক্তির ভিত কাঁপিয়ে দেয়, তা নতুন নয়। বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন বারবার রাজনৈতিক পালাবদলের জন্ম দিয়েছে, নেপালে জনগণের ক্ষোভ রাজতন্ত্রকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, আর শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ একসময়ের শক্তিশালী প্রেসিডেন্টকেও গদি ছাড়তে বাধ্য করেছে। এসব অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে সাধারণ মানুষের ক্রোধের সামনে ক্ষমতাসীনদের স্থায়ীভাবে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন। সেই একই আগুনের ঝলক এখন ভারতেও দৃশ্যমান হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের নানা প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে জনবিক্ষোভ বিস্ফোরিত হচ্ছে। এতে একদিকে বিরোধী দলগুলো নতুন করে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে উঠছে।

সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মণিপুরে। টানা দুই বছরের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে আড়াইশরও বেশি মানুষ। ষাট হাজারেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ এখনো শিবিরে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছেন। এই অচলাবস্থা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক গভীর সংকটের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। বিরোধী শিবির অভিযোগ তুলেছে, মোদি সরকার ইচ্ছে করেই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন বজায় রেখেছে এবং একটি নিরপেক্ষ সমাধান দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, মণিপুরে মানুষ মরছে, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, অথচ সরকার কেবল ভোটের সমীকরণ নিয়েই ব্যস্ত।

প্রিয়াংকা গান্ধী প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যদি অন্তত একদিনও মণিপুরে গিয়ে মানুষের দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করতে না পারেন, তবে সেই সরকার কেবল নিজের দলের, সাধারণ মানুষের নয়। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের কথায়, সরকার উন্নয়নের নামে প্রকল্প উদ্বোধন করতে পারে, কিন্তু রক্তাক্ত মণিপুরের পাশে দাঁড়ানোর রাজনৈতিক ও নৈতিক সাহস তাদের নেই।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতিবাদের আগুন এবার আসামেও ছড়িয়ে পড়েছে। নাগরিকপঞ্জি (NRC) ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) নিয়ে মানুষের আশঙ্কা বহুদিন ধরেই প্রবল। বিশেষ করে বাংলাভাষী পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার ভয় তাদের প্রতিদিন গ্রাস করছে। ফলে সামাজিক-রাজনৈতিক উত্তেজনা এক নতুন মাত্রা পাচ্ছে, যা ভারতের রাজনীতিকে আরও অস্থির করে তুলছে।

-রফিক


বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় ভারতেরও ব্যাপার: নির্বাচন নিয়ে শ্রিংলার কড়া বার্তা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ১২:১৩:৩৫
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় ভারতেরও ব্যাপার: নির্বাচন নিয়ে শ্রিংলার কড়া বার্তা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের পরবর্তী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভারতের নীতিনির্ধারক ও বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে (আইআইসি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারতের করণীয় নিয়ে বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন। এই আলোচনায় ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় আমলা জহর সরকার, সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গবেষক শ্রীরাধা দত্ত অংশ নেন।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি মানতে হবে: জহর সরকার

প্রসার ভারতী বোর্ডের সাবেক সিইও জহর সরকার মনে করেন, বাংলাদেশের ক্ষমতা হঠাৎ করে পরিবর্তিত হওয়ায় ভারত অনেকটা ‘শকড’ হয়েছিল। এখন এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে যে, বাংলাদেশের জনগণ যাকে শাসক হিসেবে বেছে নেবে, ভারতকেও তাকেই মেনে নিতে হবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতি আমাদের মানতে হবে, বুঝতে হবে। বোঝার থেকেও বেশি কথা হলো মানতে হবে।” এই মুহূর্তে কোনো ধরনের প্ররোচনায় পা না দিয়ে ভারতের উচিত হবে নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

যদি বাংলাদেশের নতুন সরকার ভারতবিরোধী হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে জহর সরকার বলেন, “এগুলো পরের কথা… কে আসবে কে যাবে, কেউ জানে না।” তিনি বলেন, কিছু ক্ষ্যাপা লোকের মন্তব্যের ভিত্তিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো ঠিক নয়। তার মতে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত নির্বাচন সম্পন্ন করা, অহেতুক বেশি কথা বলা বা বিতর্ক সৃষ্টি করা নয়।

‘ভারতের স্বার্থ জড়িত, তাই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না’

তবে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা মনে করেন, বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে ভারতের পক্ষে তাদের পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, কারণ এতে ভারতের নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ জড়িত। তিনি বলেন, “যদি ভুল একটি সরকার সত্যিই ক্ষমতায় এসে যায়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের জন্য তার পরিণতি কী হতে পারে সেটা ভেবে আমি সত্যিই দ্বিধান্বিত।”

শ্রিংলা বলেন, “যেই জিতুক আমরা তাদের সঙ্গেই কাজ করব—এটা বলা সহজ, কিন্তু সেই ‘যেই হোক’ যদি আপনার স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, তখন তো আপনাকে অবহিত থাকতে হবে।” তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, অভিন্ন সীমান্ত থাকা দেশের পরিস্থিতিকে ভারতের পক্ষে কখনোই ‘অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বলে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।

জামায়াত কি বদলাচ্ছে?

আলোচনায় অংশ নেওয়া গবেষক শ্রীরাধা দত্ত সম্প্রতি ঢাকা সফর করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার মতে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং ভারতের উচিত এই বাস্তবতা মেনে নেওয়া। তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে ভারত যেভাবে নীরব সমর্থন দিয়েছে, তাতে তাদের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে। তাই এখন ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশের জনগণের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো।

তবে জামায়াতে ইসলামীর শক্তিবৃদ্ধি নিয়ে তিনি সতর্ক মন্তব্য করেন। তিনি জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, জামায়াত নেতারা তাদের একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন এবং দাবি করেছেন যে, ক্ষমতায় গেলে তারা শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করবেন না। তবে শ্রীরাধা দত্তের উপসংহার, “ওরা আসলে দারুণ ‘চার্ম অফেনসিভ’, কথায় আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। কিন্তু আসলে ওরা বাস্তবে কী করছে সেটা অবশ্য অন্য গল্প!”

এ বিষয়ে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, জামায়াত আসলে মুসলিম ব্রাদারহুডের অংশ। তিনি বলেন, “চিতাবাঘ আসলে কখনোই তাদের গায়ের ডোরা বদলায় না। জামায়াতও আসলে কখনোই পাল্টাবে না।”


জাতিসংঘে আজ গাজা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট, ভেটো ইস্যুতে নজর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ১১:০৭:৩১
জাতিসংঘে আজ গাজা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট, ভেটো ইস্যুতে নজর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে
ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র এমন প্রস্তাবে ভেটো দিলেও এবার সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

খসড়া প্রস্তাব ও ভেটোর আশঙ্কা

জাতিসংঘের ১০টি অস্থায়ী সদস্য দেশ গত আগস্টের শেষ দিক থেকে এই খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করে। এই আলোচনার সূত্রপাত হয়, যখন জাতিসংঘ গাজায় দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দেয়। প্রাথমিকভাবে খসড়া প্রস্তাবে শুধুমাত্র মানবিক সহায়তা প্রবেশের ওপর থেকে বাধা তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলো মনে করেছিল, শুধু মানবিক দিক নিয়ে প্রস্তাব পাস করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র তাতে ভেটো দিতে পারে।

তাই, বৃহস্পতিবার ভোটে যাওয়া নতুন খসড়ায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, সব জিম্মিকে অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে মুক্তি দেওয়ার দাবিও করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে তাদের মিত্র ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়েছিল।

আন্তর্জাতিক চাপ ও ক্ষোভ

এবারের এই প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার হুমকিকে অগ্রাহ্য করার একটি স্পষ্ট বার্তা বলে জানিয়েছেন ইউরোপের এক কূটনীতিক। তিনি বলেন, 'যদি আমরা চেষ্টা না করি, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জবাবদিহিতাই থাকে না এবং ১৪টি সদস্য রাষ্ট্র ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।' তিনি আরও বলেন, এই প্রচেষ্টা হয়তো গাজার ফিলিস্তিনিদের কষ্ট লাঘব করবে না, কিন্তু অন্তত এইটুকু দেখানো যাবে যে তারা চেষ্টা করছেন।

গতবার যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৪ সদস্যের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। তারা প্রকাশ্যে বলছেন যে, ইসরায়েলকে চাপ দিতে নিরাপত্তা পরিষদ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

এদিকে, গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন তাদের স্বাধীন বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। সেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় 'গণহত্যা' চালানো এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে 'ধ্বংস' করার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই বিষয়টি আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের বার্ষিক সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে পারে।


পাকিস্তান ও সৌদি আরবের নতুন সামরিক জোট: কী আছে এই চুক্তিতে?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ১০:৩৯:৩২
পাকিস্তান ও সৌদি আরবের নতুন সামরিক জোট: কী আছে এই চুক্তিতে?
ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান এবং সৌদি আরব একটি যুগান্তকারী কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেখানে কোনো একটি দেশের ওপর আগ্রাসনকে উভয় দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হবে। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশ একে অপরকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সৌদি আরব সফরের সময় এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তির বিস্তারিত

আল-ইয়ামামা প্রাসাদে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান শেহবাজ শরীফকে স্বাগত জানান। এরপর চুক্তি স্বাক্ষরের পর উভয় দেশের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, "ভ্রাতৃত্ব, ইসলামিক সংহতি ও অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থের ভিত্তিতে এবং প্রায় আট দশকের দীর্ঘ অংশীদারত্বের ওপর দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।"

বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তিকে 'ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন অগ্রগতি' হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এটি দুই দেশের সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিতে উন্নীত করেছে। এই চুক্তি শুধু পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্কই দৃঢ় করবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের জন্যও এর তাৎপর্য রয়েছে। এটি পাকিস্তানকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে সক্ষম মুসলিম শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে।

ইসরায়েলকে বার্তা

বিশ্লেষকরা বলছেন, কাতারে ইসরায়েলের হামলার কয়েক দিন পরেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা এর তাৎপর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক আঞ্চলিক অস্থিরতা, ইসরায়েলের হামলা এবং আরব বিশ্বে সার্বভৌমত্ব নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে এই চুক্তি প্রমাণ করে যে, সৌদি আরব পাকিস্তানকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বিশ্বাস করছে।

যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, এই চুক্তি দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তিতে অবদান রাখার যৌথ অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে। এটি যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্য রাখে।

এ সময় পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: জিও নিউজ


বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে আলোচনা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ০৯:৫৬:৩২
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে আলোচনা
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দিল্লিতে এক বিশেষ আলোচনা সভায় অংশ নেন ভারতের সাবেক আমলা, কূটনীতিক ও গবেষকরা। সেখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। ভারতের সাবেক শীর্ষ আমলা ও প্রসার ভারতী বোর্ডের প্রাক্তন সিইও জহর সরকার বিশ্বাস বলেন, হঠাৎ রাজনৈতিক পালাবদলে দিল্লি যেন শক খেয়েছিল, তবে এখন ভারতের স্বীকার করা উচিত যে বাংলাদেশের জনগণ যাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে তাকেই মেনে নিতে হবে।

তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্ররোচনায় না গিয়ে নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করাই ভারতের জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে এখনকার সরকার একটি কেয়ারটেকার সরকার, তাই তাদের প্রতি অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি বা অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করার কোনো প্রয়োজন নেই।

ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা আলোচনায় বলেন, যদি বাংলাদেশে ভুল সরকার ক্ষমতায় আসে, তবে সেটি ভারতের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তার মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের সীমান্ত জড়িত থাকলে সেসব দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার ভারতের কাছেও অভ্যন্তরীণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি মনে করেন, শুধু “যে কেউ ক্ষমতায় আসুক আমরা কাজ করব” বললেই চলবে না; যদি সেই সরকার ভারতের স্বার্থবিরোধী হয়, তবে দিল্লিকে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে।

ওপি জিন্দাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারছে না এবং ভারতকে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ২০১৪, ২০১৮ বা ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভারত অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দাবি জানায়নি, তবে এখন কেন বলছে? তার মতে, পূর্বের নির্বাচনে ভারত যেভাবে নীরব অনুমোদন দিয়েছে, সেটাই আজ তাদের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করেছে। তাই বাংলাদেশের জনগণ যাকে বেছে নেবে, ভারতকে সেই সিদ্ধান্ত সম্মান করতে হবে, যদিও তা দিল্লির পছন্দসই নাও হতে পারে।

আলোচনায় জামায়াতের প্রসঙ্গও উঠে আসে। সাম্প্রতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তাদের সাফল্যকে অনেকে জামায়াতের নতুন রূপ বা ‘জামায়াত ২.০’ বলে উল্লেখ করছেন। শ্রীরাধা দত্ত জানান, ঢাকায় জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে তারা কি শরিয়া আইন চালু করবে? উত্তরে তাহের বলেন, তারা কখনো এমন কিছু বলেননি। মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়েও তিনি দাবি করেন, শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন এবং সেটি তারা স্বীকার করেছেন। দত্তের মতে, জামায়াত কথায় মুগ্ধ করতে পারলেও তাদের প্রকৃত কার্যকলাপ ভিন্ন হতে পারে, তাই ভারতকে সতর্কভাবে তাদের দিকে তাকাতে হবে।

অন্যদিকে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ভিন্ন অবস্থান নেন। তিনি বলেন, জামায়াত আসলে মুসলিম ব্রাদারহুডের অংশ, যারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও মিশরসহ বিভিন্ন দেশে সক্রিয়। তার মতে, যেমন চিতাবাঘ তার দাগ বদলায় না, তেমনি জামায়াতও তাদের মূল অবস্থান পরিবর্তন করবে না।

-রফিক


ট্রাম্পের তালিকায় ভারত–পাকিস্তান ‘মাদক পাচারকারী’ রাষ্ট্র

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ০৯:৪৪:৪৭
ট্রাম্পের তালিকায় ভারত–পাকিস্তান ‘মাদক পাচারকারী’ রাষ্ট্র
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ২৩টি দেশকে প্রধান মাদক উৎপাদক ও পাচারকারী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মার্কিন কংগ্রেসে জমা দেওয়া এক ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিটারমিনেশন’ প্রতিবেদনে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে আফগানিস্তান, বাহামা, বেলিজ, বলিভিয়া, বার্মা (মিয়ানমার), চীন, কলোম্বিয়া, কোস্টা রিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডর, এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, হাইতি, হন্ডুরাস, ভারত, জ্যামাইকা, লাওস, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, পানামা, পেরু ও ভেনেজুয়েলার নাম রয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ভৌগোলিক অবস্থান, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক রুট ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় এই দেশগুলো মাদক বা কাঁচামাল উৎপাদন ও পাচারের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তবে তালিকায় থাকা মানে এই নয় যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না বা মাদকবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে না।

প্রতিবেদনে বিশেষভাবে আফগানিস্তান, বলিভিয়া, মিয়ানমার, কলোম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলাকে মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, গত এক বছরে এ দেশগুলো আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী চুক্তির শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

চীনের ব্যাপারে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রিকার্সার কেমিক্যাল রপ্তানিকারক, যা অবৈধ ফেন্টানাইল উৎপাদনে সহায়তা করছে। পাশাপাশি চীন নিতাজিনস, মেথঅ্যামফেটামিনসহ বিভিন্ন সিনথেটিক মাদক উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আফগানিস্তান প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, তালেবান প্রশাসন মাদক উৎপাদন ও ব্যবসার ওপর আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাস্তবে সেখানে উৎপাদন ও মজুত অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে মেথঅ্যামফেটামিন উৎপাদন বেড়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র ও সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অর্থায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই তালিকা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে চাপ সৃষ্টির একটি হাতিয়ার হলেও একই সঙ্গে এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সংকট এবং সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে নতুন করে সামনে এনেছে।

-শরিফুল


ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ০৯:৩৮:৩৩
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের অব্যাহত সামরিক অভিযানের কারণে ফিলিস্তিনের গাজা এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শিকার। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল ক্রমেই দুর্বল ও কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। একসময়কার ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও এখন ইসরায়েলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

গাজায় আগ্রাসনকে অনেক দেশ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করছে এবং এর নিন্দা জানাচ্ছে। একসময় ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসা অনেক দেশ এখন দ্বিধাগ্রস্ত। এই পরিস্থিতির মধ্যে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশ স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ধাক্কা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফ্রান্স, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোও গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

লুক্সেমবার্গের কঠোর অবস্থান ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা

এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের শীর্ষ ধনী দেশ লুক্সেমবার্গ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রিডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেল পার্লামেন্টারি কমিশনকে এই তথ্য জানিয়েছেন। চলতি সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি বিল প্রস্তাব করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেল আরও জানান, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন না থামালে দেশটির বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। প্রতি বছর ইসরায়েলের সঙ্গে লুক্সেমবার্গের ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। যদিও বাণিজ্যের পরিমাণ কম, লুক্সেমবার্গ ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে লুক্সেমবার্গের এই কঠোর অবস্থান ইসরায়েল-লুক্সেমবার্গ সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে, যা ইসরায়েলের জন্য ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ আরও কঠিন করে তুলবে।

মিত্রদের সমর্থন হারানো এবং আন্তর্জাতিক চাপ

আন্তর্জাতিক মহলের চাপ উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক মিত্র দেশ এখন ভিন্ন পথে হাঁটছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে একটি বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে ফ্রান্স। দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়েও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থামাতে না পারার হতাশা থেকেই ফ্রান্স এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, বেলজিয়াম এবং যুক্তরাজ্যের মতো মিত্র দেশগুলোর সমর্থনও হারাচ্ছে ইসরায়েল। এসব দেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৪৭টি সদস্য দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলকে কঠিন চাপের মুখে ফেলেছে।

পাঠকের মতামত: