ইম্ফলে আগুন, পাঁচ জেলায় কারফিউ: কী ঘটছে মণিপুরে?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৮ ১৬:১১:৩৯
ইম্ফলে আগুন, পাঁচ জেলায় কারফিউ: কী ঘটছে মণিপুরে?

ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য মণিপুরে ফের নতুন করে জাতিগত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন আরামবাই টেঙ্গোলের নেতা কানান সিংকে গ্রেপ্তারের জেরে রাজধানী ইম্ফলসহ আশপাশের পাঁচটি জেলায় বিক্ষোভ, অবরোধ, সংঘর্ষ এবং আত্মাহুতির হুমকিতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। প্রশাসন কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

গত শনিবার রাতে নিরাপত্তা বাহিনী কানান সিংকে গ্রেপ্তার করার পরপরই ইম্ফল শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। মেইতেই সম্প্রদায়ের যুবকরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কালো টি-শার্ট পরা একদল যুবক পেট্রলের বোতল হাতে নিয়ে আত্মাহুতির হুমকি দিচ্ছেন। একজনকে বলতে শোনা যায়—“আমরা অস্ত্র সমর্পণ করেছি, বন্যায় ত্রাণ দিয়েছি, অথচ আমাদেরই এখন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে! আমরা নিজেদের মেরে ফেলব।”

ঘটনার পরপরই প্রশাসন ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, থৌবাল ও কাকচিং জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে এবং পাঁচ দিনের জন্য মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। মণিপুর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা এটিকে দমনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে।

কে এই কানান সিং? তিনি এক সময় মণিপুর পুলিশের কমান্ডো ইউনিটে হেড কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ময়রাংথেম অমিতের বাড়িতে হামলা ও অপহরণচেষ্টার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সে সময় তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে তিনি মেইতেই স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন আরামবাই টেঙ্গোলে যোগ দেন, যেখানে তিনি নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান।

আরামবাই টেঙ্গোল নিজেদের একটি সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও, অনেকেই এটিকে একটি র‌্যাডিক্যাল মেইতেই মিলিশিয়া বলে মনে করেন। বিশেষ করে কুকি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা এই সংগঠনের বিরুদ্ধে পাহাড়ি অঞ্চলের কুকি গ্রামগুলোতে হামলা চালানোর অভিযোগ করে আসছে। ২০২৩ সালের জাতিগত সহিংসতার শুরুর দিকে এই সংগঠন অস্ত্র হাতে নিয়ে ‘গ্রাম রক্ষার’ নামে প্রকাশ্যে উপস্থিত হয়। যদিও চলতি বছরের শুরুর দিকে রাজ্যের গভর্নরের আহ্বানে সংগঠনটি অস্ত্র সমর্পণ করে এবং সাম্প্রতিক বন্যায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে, যা তাদের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করে।

তবে কানান সিংয়ের গ্রেপ্তার এই ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রশাসন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একপাক্ষিকভাবে মেইতেইদের টার্গেট করছে। এদিকে, কুকি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এর উল্টো দাবি তোলা হচ্ছে—তারা অভিযোগ করছে, সরকার মেইতেইদের প্রশ্রয় দিয়ে কুকিদের দমন করছে। ফলে মণিপুরে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘিরে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।

মণিপুরে গত বছরের মে মাস থেকে চলমান জাতিগত সহিংসতায় এ পর্যন্ত ২৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তদন্তকারীরা যখনই কোনো পক্ষের সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালান, তখনই অপর পক্ষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখে পড়েন।

বিশ্লেষকদের মতে, কানান সিংয়ের গ্রেপ্তার কেবল একটি আইন প্রয়োগের ঘটনা নয়—এটি বহুমাত্রিক সংকটের প্রতিচ্ছবি, যেখানে রাজনীতি, প্রশাসন, জাতিগোষ্ঠী ও ইতিহাস মিলেমিশে রয়েছে। এমন একটি সংবেদনশীল রাজ্যে, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী পর্যন্ত বিভক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে কোনো একটি পক্ষের বিরুদ্ধে কঠোরতা সহজেই জাতিগত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে মণিপুরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের স্বপ্ন আরও দীর্ঘস্থায়ী সংকটে পড়তে পারে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত