যুদ্ধ হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার? ভারত-পাকিস্তানের নীতিমালা কী বলে?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১০ ১৭:৩৩:০০
যুদ্ধ হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার? ভারত-পাকিস্তানের নীতিমালা কী বলে?

সত্য নিউজ: ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যখন পাকিস্তান আজ সকালে একাধিক ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর দাবি করেছে। ইসলামাবাদ জানিয়েছে, ভারত আগে তিনটি পাকিস্তানি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। পাল্টাপাল্টি হামলাগুলি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং অনেকেই উদ্বিগ্ন যে এই সংঘাত অবশেষে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিতে পারে। বিশেষত, দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার এবং তাঁদের পারমাণবিক নীতিমালা। দুই দেশই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও মজুতের ক্ষেত্রে বিরতিহীনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আর তাদের নীতিমালাগুলি এই অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শঙ্কা সৃষ্টি করছে।

ভারত-পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার:

ভারত ১৯৭৪ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে নিজেকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে, এবং পরে ১৯৯৮ সালে একাধিক পরীক্ষা চালিয়ে পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান আরো দৃঢ় করে। বর্তমানে ভারত প্রায় ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেডের মালিক। ভারত তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি সুসংগঠিত নীতিমালা অনুসরণ করে, যেখানে 'প্রথমে ব্যবহার নয়' নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত কেবল তখনই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে যদি তার ওপর পারমাণবিক হামলা হয়।

অন্যদিকে, পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন শুরু করার পর ১৭০টির বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরি করেছে। পাকিস্তানের অস্ত্রভাণ্ডারে স্বল্প এবং মাঝারিপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম। পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পারমাণবিক নীতিমালা প্রকাশ করেনি, তবে ২০০১ সালে পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) খালিদ আহমেদ কিদওয়াই পারমাণবিক নীতির চারটি মূল ট্রিগার চিহ্নিত করেছিলেন—স্থানগত, সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সীমা। এই সীমা অতিক্রম করলে পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

ভারতের পারমাণবিক নীতি:

ভারতের পারমাণবিক নীতির মূল ভিত্তি হলো 'প্রতিরোধ ক্ষমতা' এবং 'প্রথমে ব্যবহার নয়'। এই নীতিতে বলা হয়েছে, ভারত কোনো দেশকে পারমাণবিক হামলা করতে উৎসাহিত করবে না, তবে যদি ভারত বা তার বাহিনীর ওপর পারমাণবিক হামলা হয়, তখন পাল্টা প্রতিশোধ নেবে। ভারতের পারমাণবিক কৌশল একটি নির্ভরযোগ্য ন্যূনতম প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির দিকে মনোযোগী, যা শত্রুপক্ষকে ভয়াবহ পরিণতির জন্য সতর্ক করে।

পাকিস্তানের পারমাণবিক কৌশল:

পাকিস্তান, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো লিখিত পারমাণবিক নীতিমালা প্রকাশ করেনি, তবে ২০০১ সালে খালিদ আহমেদ কিদওয়াই তার পারমাণবিক নীতির কৌশলগত দিকগুলো প্রকাশ করেন। পাকিস্তান চারটি মূল ট্রিগার নির্ধারণ করেছে, যেগুলি হল: বড় অংশের ভূখণ্ডের ক্ষতি, সামরিক বাহিনীর ক্ষতি, অর্থনীতির ক্ষতি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানাননি যে কী পরিমাণ ক্ষতি হলে এসব ট্রিগার সক্রিয় হবে।

পরিণতি ও ভবিষ্যত:

ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, এবং তারা একে অপরকে পারমাণবিক হামলার হুমকি দিতে পারে, তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল–জাজিরাকে বলেছেন, "পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা কম, তবে তা একেবারে অসম্ভব নয়।"

এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের সামরিক নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ২০১৯ সালে বলেছিলেন, "যদি পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়, তবে আমরা আমাদের 'প্রথমে পারমাণবিক হামলা না করার' নীতি পুনর্বিবেচনা করতে পারি।" পাকিস্তানও সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা 'প্রথমে পারমাণবিক হামলা না করার' নীতিতে বিশ্বাসী নয়, এবং তাদের ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার উইপনসের (টিএনডব্লিউ) ব্যবহার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনার আরও বৃদ্ধির ফলে একটি বড় প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে: "কি হতে পারে যদি এই সংঘাত আরও উসকে ওঠে?" তবে বিশ্ববাসী তাকিয়ে রয়েছে যেন কোনো ধরনের পারমাণবিক সংঘাতের সৃষ্টি না হয়, যা মানবতার জন্য অপ্রত্যাশিত পরিণতি ডেকে আনবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত