চীনে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি: 'অপারেশন সিঁদুর' ও ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১০ ০৮:২০:১৪
চীনে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি: 'অপারেশন সিঁদুর' ও ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক

সত্য নিউজ: ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে চীনের সামাজিক মাধ্যমে শুরু হওয়া আলোচনা পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে নতুন মাত্রা নিয়েছে। চীনের সংবাদমাধ্যম এবং বিশ্লেষকরা পাকিস্তানের সামরিক শক্তির উন্নতির ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন, বিশেষ করে পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ নিয়ে। চীনের সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েইবোতে ‘Pakistan_shoots_down_6_Indian_jets’ নামক হ্যাশট্যাগটি মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৯ কোটির বেশি বার দেখা হয়েছে, যা এই আলোচনা আরও তীব্র করেছে।

চীনের সংবাদমাধ্যমের এমন মনোভাবের ফলে পাকিস্তানকে এখন আরও শক্তিশালী একটি সামরিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যেমন গুয়ানচা নামক পত্রিকা জানিয়েছে, ‘পাকিস্তান ৬টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ৩টি রাফাল’ এবং ‘প্রথম লড়াইতেই পাকিস্তানের জয়’ এমন মন্তব্য শেয়ার করেছে। এসব প্রতিবেদনে পাকিস্তানকে ভারতের সমান এক সামরিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, যা চীনের সামরিক সহায়তার কারণে সম্ভব হয়েছে। পূর্বে পাকিস্তানকে চীন দুর্বল দেশ হিসেবে দেখত, কিন্তু এখন তাকে এক শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে মান্য করা হচ্ছে।

চীনের বিশ্লেষকরা পাকিস্তানের সামরিক ক্ষমতাকে আরও বেশি প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক এবং দক্ষ হিসেবে দেখছেন। বিশেষত, পাকিস্তানের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান ও চীনে তৈরি পিএল-১০ মিসাইলের সমন্বয়ে তাদের সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন বহু বছর ধরে সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও, তারা পাকিস্তানকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, এবং এই সহযোগিতা পাকিস্তানের সামরিক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করছে।

চীনের বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের পরিস্থিতি একেবারে শান্ত ছিল না, বিশেষত পেহেলগামের জঙ্গি হামলার পর। তারা মনে করেন, পাকিস্তান এখন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালাতে সক্ষম। চীনের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের সামরিক প্রস্তুতির তুলনায় পাকিস্তান এখন অধিক কৌশলগত ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তবে চীনা বিশ্লেষকরা ভারতের সামরিক শক্তির দুর্বলতাও দেখছেন, বিশেষ করে ভারতের বাহিনীতে সমন্বয়ের অভাবের কারণে।

পাকিস্তান যে আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে, তা ভারতের যুদ্ধবিমানের আধুনিকীকরণের সরাসরি জবাব হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার সময় পাকিস্তান একটি ভারতীয় মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং এর পাইলটকে আটক করে। চীনা বিশ্লেষকরা এই ঘটনাটিকে পাকিস্তানের জন্য একটি বড় সফলতা হিসেবে দেখছেন, যা তার সামরিক ক্ষমতার প্রমাণ।

চীন পাকিস্তানকে কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছে, যেহেতু ভারতের সাথে সীমান্ত বিরোধ এখনও মেটেনি। চীনের বহু বছর ধরে পাকিস্তানকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার পটভূমি রয়েছে, এবং তারা পাকিস্তানকে ভারতের সামরিক শক্তির পাল্টা শক্তি হিসেবে দেখতে চায়। বিশেষত, পাকিস্তান যে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারতকে সমীহ করতে পারছে, তা চীনের জন্যও এক সামরিক শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তবে কিছু চীনা বিশ্লেষক স্বীকার করছেন, পাকিস্তানের স্থলবাহিনী এখনো ভারতের তুলনায় দুর্বল। বিশেষ করে ভারতের আধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি ও স্থলবাহিনীর উন্নতির দিকে তাদের নজর রয়েছে। তবে চীনের দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা এবং পাকিস্তানের নিজস্ব আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া তাকে এক সময় ভারতীয় সামরিক শক্তির সাথে সমান তালে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সামগ্রিকভাবে, চীনের বিশ্লেষণগুলো পাকিস্তানকে তার সমর্থন দিয়ে ভারতের সঙ্গে সামরিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে দেখছে। তবে, এ আলোচনা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যদি পাকিস্তান এবং ভারত এর পরবর্তী সামরিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ