অবশেষে ঘনিয়ে এল প্লট জালিয়াতি মামলায় শেখ হাসিনা,শেখ রেহানা ও টিউলিপের রায়ের দিনক্ষণ

২০২৫ নভেম্বর ২৫ ১৪:০৪:১৭
অবশেষে ঘনিয়ে এল প্লট জালিয়াতি মামলায় শেখ হাসিনা,শেখ রেহানা ও টিউলিপের রায়ের দিনক্ষণ
ছবিঃ সংগৃহীত

প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের করা এক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানাসহ ১৭ জনের রায়ের জন্য ১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ ৪ এর বিচারক রবিউল আলম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ দিন ধার্য করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায় শেখ রেহানার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি মামলা দায়ের করেন দুদক এর উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।

এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন রাজউক এর সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম তন্ময় দাস মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন মেজর ইঞ্জি. সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী অব. সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম উপ পরিচালক নায়েব আলী শরীফ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। এদের মধ্যে আসামি খুরশীদ আলম বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।

এর আগে গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৪ এর বিচারক রবিউল আলম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন। বিচার চলাকালে আলোচিত এই মামলায় মোট ৩২ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালত এখন রায় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন।


চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি নিয়ে রিটকারীর পেছনে ভোমা বিড়াল বসে আছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

২০২৫ নভেম্বর ২৫ ১৮:১৬:৫৯
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি নিয়ে রিটকারীর পেছনে ভোমা বিড়াল বসে আছে: অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বা এনসিটি পরিচালনায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিদেশি কোম্পানির চুক্তির বৈধতা নিয়ে রিটকারীর পেছনে ভোমা বিড়াল বসে আছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। মঙ্গলবার ২৫ নভেম্বর রিটের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন যিনি এই রিট করেছেন তিনি একজন ফ্যাট ক্যাট বা ভোমা বিড়াল। তিনি ফ্যাট ক্যাটের পক্ষে এসেছেন। মানে পেছনে কোনো ভোমা বিড়াল বসে আছে টাকা পয়সা নিয়ে। তিনি আরও যোগ করেন পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রেখে সামনে তারা জনস্বার্থের কথা শোনাচ্ছেন যেটাকে আইন পরিভাষায় বলা হয় ফ্যাট ক্যাট। তারা জনস্বার্থের বিষয়ে আসেননি বরং তারা কিছু ভোমা বিড়ালের স্বার্থ রক্ষার জন্য এসেছেন।

অনেক রাজনৈতিক নেতারাও মিছিল করছেন এবং কথা বলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন তারা তাদেরটা করতে পারেন তবে আমরা আমাদের আইনি যুক্তি তুলে ধরেছি।

এর আগে সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিদেশি কোম্পানির চুক্তির বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে এ বিষয়ে আগামী ৪ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।

রিট আবেদনের শুনানিতে রিটকারীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ ও ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।

উল্লেখ্য গত ১৩ নভেম্বর আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছিলেন রুলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এনসিটি বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে না। এর আগে গত ৩০ জুলাই এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তির প্রক্রিয়া কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।


শুধু আওয়ামী লীগ করার কারণে যেন বিচার না হয়: আইনজীবী আমির হোসেন

২০২৫ নভেম্বর ২৫ ১২:৩৮:২৮
শুধু আওয়ামী লীগ করার কারণে যেন বিচার না হয়: আইনজীবী আমির হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কুষ্টিয়ার ছয়জনকে হত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজন আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালের কাছে বিশেষ আর্জি জানিয়ে বলেন, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ করা বা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে যেন বিচার না হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিচারিক কার্যধারায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পর এই বক্তব্য দেন তিনি।

বেলা ১১টা ৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল নিয়ে বৈঠক শুরু করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ট্রাইব্যুনালের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মঞ্জুরুল বাছিদ। প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সূচনা বক্তব্যে মামলার ঘটনাপ্রবাহ, হত্যাকাণ্ডের বিবরণ, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি, তদন্তের ফলাফল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনের আলোচ্য বিধানগুলো তুলে ধরেন। তিনি জানান, জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে কুষ্টিয়ায় নিরীহ ছাত্র জনতার ওপর হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করা হয়েছিল এবং এসব অপরাধের সুনির্দিষ্ট ও অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।

প্রসিকিউটর আরও বলেন, আসামিরা পলাতক থাকলেও তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার করার আইনি বিধান আওয়ামী লীগ সরকারই প্রণয়ন করেছে। এ মন্তব্যের পর ট্রাইব্যুনাল আইনটির বিধান স্মরণ করিয়ে দেন এবং স্পষ্ট করেন যে এই ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক পক্ষ নিরপেক্ষতা বা প্রতিশোধের জায়গায় দাঁড়িয়ে বিচার করছে না, বরং প্রত্যেক অভিযুক্তের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করাই মূল উদ্দেশ্য।

রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি চাইলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের বক্তব্যের কয়েকটি অংশের সঙ্গে তিনি একমত হলেও তাঁর প্রধান উদ্বেগ হলো রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেন পক্ষপাতমূলক আচরণ না হয়। উত্তরে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আল্লাহকে হাজির নাজির মেনে তারা ন্যায়বিচারের দায়িত্ব নিয়ে বসেছেন, কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন বিচারের মুখোমুখি না হন সেই নিশ্চয়তা দিতে ট্রাইব্যুনাল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এই মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৩৮ জন, যার মধ্যে শহীদ পরিবারের সদস্য, প্রত্যক্ষদর্শী, আহত ব্যক্তি, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, পুলিশ, সাংবাদিক, জব্দতালিকা প্রণেতা, বিশেষজ্ঞ এবং তদন্ত কর্মকর্তারা রয়েছেন। আজ সাক্ষ্যগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন তারিখ ৮ ডিসেম্বর ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

মাহবুবউল আলম হানিফ ছাড়াও মামলার অন্য তিন আসামি হলেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর উদ্দিন খান, জেলা সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী এবং শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা। চারজনই বর্তমানে পলাতক।

মামলার তদন্তে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালানো হয়। এতে শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী এবং চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয় এবং তদন্ত কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ প্রমাণসহ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে উসকানিমূলক বক্তব্য, সংগঠিত ষড়যন্ত্র এবং হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভিযোগ।

-শরিফুল


মেজর সিনহা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে উঠে এল সেই রাতের রোমহর্ষক বর্ণনা

২০২৫ নভেম্বর ২৩ ২১:১৬:০১
মেজর সিনহা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে উঠে এল সেই রাতের রোমহর্ষক বর্ণনা
ছবিঃ সংগৃহীত

সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায় ঘোষণার প্রায় পাঁচ মাস পর রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৭৮ পৃষ্ঠার এই রায়টি প্রকাশ করা হয়। রাষ্ট্র বনাম মো. লিয়াকত আলী এবং অন্যান্য শিরোনামে এই রায়টি লিখেছেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

রায়ে সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিশদ বিবরণ এবং সেই রাতের নৃশংসতার চিত্র উঠে এসেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওসি প্রদীপ মরণাপন্ন সিনহার বুকে লাথি মেরেছিলেন এবং বুট জুতা দিয়ে গলা চেপে ধরেছিলেন।

ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে রায়ে বলা হয় ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার পর সিনহা ভ্রমণবিষয়ক ইউটিউব চ্যানেল জাস্ট গো এর জন্য তথ্যচিত্র বানাতে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। সেখানে ভিডিও তৈরির কাজের সময় তিনি ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের কাছ থেকে নানা অভিযোগ পান। এ নিয়ে তিনি ওসি প্রদীপের কাছে জানতে চাইলে প্রদীপ ক্ষিপ্ত হন এবং সিনহার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এলাকা ছাড়তে বলেন।

হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে রায়ে উল্লেখ করা হয় ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে সিনহা ও তাঁর সঙ্গীরা ভিডিও ধারণ শেষে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে গাড়ি থামানোর পর সিনহা হাত উঁচু করে নিজের পরিচয় দেন। ঠিক তখনই লিয়াকত আলী শ্যুট শ্যুট বলে সিনহাকে লক্ষ্য করে পরপর চার রাউন্ড গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ সিনহা মাটিতে পড়ে গেলে তাঁকে হাতকড়া পরানো হয়। এ সময় সিনহা পানি চাইলে লিয়াকত তাঁকে গালি দেন এবং কোমরে লাথি মারেন।

এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। উপুড় হয়ে পড়ে থাকা মরণাপন্ন সিনহার কাছে গিয়ে প্রদীপ বলেন অনেক টার্গেট করে তোকে মেরেছি। তখন সিনহা প্রদীপের কাছেও পানি চান। কিন্তু পানি না দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে প্রদীপ সিনহার বাঁ বুকে কয়েকটি লাথি মারেন এবং বুট জুতা দিয়ে তাঁর গলার বাঁ দিকে চেপে ধরেন। এতে সিনহার শরীর কাঁপতে কাঁপতে এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায়। এভাবেই ওসি প্রদীপ মেজর সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেছিলেন বলে ঘটনার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য চলতি বছরের ২ জুন বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায় বহাল রেখে এই রায় দিয়েছিলেন। এর আগে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি বিচারিক আদালত ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল খারিজ করে সেই দণ্ডই বহাল রাখা হয়েছে।


শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না

২০২৫ নভেম্বর ২৩ ১২:১১:০৩
শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না
ছবি: সংগৃহীত

গুম, খুন, নির্যাতন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। রোববার (২৩ নভেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ ঘোষণা দেন।

ট্রাইব্যুনালে আগমনের পর জেড আই খান পান্না বলেন, একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়াতে চান। তার ভাষায়, “প্রতিটি আসামির ন্যায়বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। উচ্চপর্যায়ের মামলা হলেও আইনের চোখে সবই সমান। আমি মনে করি, আদালতে তার পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবী হিসেবে আমার পেশাগত ও নৈতিক দায়িত্ব।”

তিনি আরও বলেন, মামলাগুলো অত্যন্ত গুরুতর এবং দেশ-বিদেশে আলোচিত হওয়ায় সঠিক আইনি প্রক্রিয়া ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা উপস্থাপন করা প্রয়োজন। তিনি ট্রাইব্যুনালের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন জানাবেন।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সংঘটিত অভিযোগসমূহ নিয়ে সাক্ষ্য–প্রমাণ সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবৃতি গ্রহণ এবং তদন্ত প্রতিবেদন পেশের কাজ জোরদার হয়েছে। মামলাগুলোর ব্যাপ্তি, চরিত্র এবং প্রভাব বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জেড আই খান পান্নার এই ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপই এখন গভীর মনোযোগের কেন্দ্রে, এবং এই মামলাগুলোর রায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।

আইনজীবী পান্না বলেন, “আইনই সর্বোচ্চ। ন্যায়বিচারই আমার লক্ষ্য। আদালতে প্রমাণের ভিত্তিতেই সব সিদ্ধান্ত হবে এটাই আমাদের সাংবিধানিক পথ।”

বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং শিগগিরই পরবর্তী শুনানির তারিখ ঘোষণা করা হবে।

-শরিফুল


নাসা চেয়ারম্যানকে কালো দরবেশ ডেকে আদালতে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল

২০২৫ নভেম্বর ২০ ২১:৪৯:০৮
নাসা চেয়ারম্যানকে কালো দরবেশ ডেকে আদালতে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল এম আসাদুজ্জামান। ছবি : পুরোনো

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জোরপূর্বক সম্পত্তি দখল এবং মালিককে গুম করার মতো গুরুতর অভিযোগে দায়ের করা মামলার রিভিউ আবেদন মঞ্জুর করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর ফলে গুলশানের একটি বাড়ি জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে করা মামলাটির আইনি কার্যক্রম আবারও সচল হলো। আপিল বিভাগ জানিয়েছে, আগের রায়ের বিরুদ্ধে এখন পুনরায় শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

আদালতে শুনানিকালে অ্যাটর্নি জেনারেল এম আসাদুজ্জামান অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম মজুমদারকে ‘কালো দরবেশ’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি মন্তব্য করেন, দেশে দুজন দরবেশের অস্তিত্ব ছিল—একজন সাদা এবং একজন কালো। এই মামলার নজরুল ইসলাম মজুমদার হলেন সেই ‘কালো দরবেশ’, যিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে ‘অলিগার্ক’ বা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এদের কারণেই দেশের আজকের এই অবস্থা।

মামলার শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল আদালতকে জানান, তিনি মূল মামলার আইনজীবী ছিলেন। কিন্তু তাকে অন্ধকারে রেখে বাদীর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন, বাদীকে গুম করে এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছিল। আরেক সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম এই বক্তব্যের সমর্থন করে বলেন, পিটিশনার বা বাদীকে কুখ্যাত ‘আয়নাঘরে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে অস্ত্রের মুখে তাকে দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের কাগজে সই করানো হয়। অপমান ও ভয়ের কারণে পরে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

মামলার প্রেক্ষাপট থেকে জানা যায়, রাজধানীর বনানীর বাসিন্দা আনোয়ারুল কবির খান ‘এ আর এ জুট ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেড’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তার বাবা অগ্রণী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন এবং এর বিপরীতে গুলশানের বাড়িটি বন্ধক ছিল। ঋণ খেলাপি হওয়ার পর নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নজর পড়ে ওই সম্পত্তির ওপর। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে একটি ভুয়া সমঝোতা দলিল তৈরি করেন, যেখানে বিদেশে থাকা পরিবারের সদস্যদেরও স্বাক্ষর দেখানো হয়।

ভুক্তভোগী আনোয়ারুল কবির খান গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে দেওয়া অভিযোগে জানান, জালিয়াতির বিরুদ্ধে তিনি দুদক ও আদালতে গিয়েছিলেন। বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকাকালে নজরুল ইসলাম মজুমদার তাকে মামলা না চালানোর জন্য হুমকি দিতে থাকেন। এক রাতে তাকে তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের চেম্বারে এবং পরে হাইকোর্টের নিচতলায় নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিভিন্ন কাগজে সই নেওয়া হয়। তাকে বলা হয়েছিল, এগুলো মামলা প্রত্যাহারের আবেদন। সবশেষে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে, তাদের অনুমতি ছাড়া তিনি যেন দেশ ত্যাগ না করেন। আজকের আদেশের ফলে দীর্ঘদিনের সেই অন্যায়ের বিচার পাওয়ার পথ নতুন করে উন্মুক্ত হলো।


জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণা, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

২০২৫ নভেম্বর ১৯ ১৭:১২:০৭
জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণা, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
ছবিঃ সংগৃহীত

জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, সেটিকে ‘ঐতিহাসিক রিপোর্ট’ বা দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই রায়টি প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে অভ্যুত্থান চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের দেওয়া প্রতিবেদনটিকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ এই বিষয়ে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। সেই রিটের রুল শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের এবং বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় প্রদান করেন। রায়ের বিস্তারিত অংশে জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনটিকে জাতীয় ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালত তার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটিকে ‘জুলাই বিপ্লব-২০২৪’ শিরোনামে সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাসের সাক্ষ্য পৌঁছে দিতে জাতীয় আর্কাইভ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি পাবলিক লাইব্রেরিসহ সব রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগারে এটি সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, একাডেমিক বা শিক্ষাজীবনে গবেষণা এবং আইনি প্রয়োজনে যাতে এই দলিলটি সহজে পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে প্রতিবেদনটি সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্রটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষিত হবে।


সময়সীমা পার হলে কী হবে? শেখ হাসিনার আপিল নিয়ে প্রসিকিউটরের ব্যাখ্যা

২০২৫ নভেম্বর ১৮ ২১:৪৮:০৬
সময়সীমা পার হলে কী হবে? শেখ হাসিনার আপিল নিয়ে প্রসিকিউটরের ব্যাখ্যা
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। ছবি- সংগৃহীত

জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায় ঘোষণার পর দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল করার আইনি সময়সীমা ও প্রক্রিয়া নিয়ে আজ মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।

প্রসিকিউটর জানান, রায় ঘোষণার দিন থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যেই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল করার সুযোগ রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল আইনের ২১(৩) ধারায় বিষয়টি স্পষ্ট করা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল দাখিল করতে হবে। এই নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলে আর কোনো আপিল গ্রহণ করা হবে না। এছাড়া আইনের ২১(৪) ধারা অনুযায়ী, আপিল দায়ের করার পর তা ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে।

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা যদি ৩০ দিনের মধ্যে দেশে না ফেরেন এবং তিন মাস পর ফিরে এসে আপিল করতে চান, তবে তা সম্ভব হবে কি না? জবাবে প্রসিকিউটর ব্যাখ্যা দেন যে, সাধারণ ফৌজদারি আইনে সময়সীমা পার হয়ে গেলে 'ডিলে কন্ডোনেশন' বা বিলম্ব মওকুফ করার সুযোগ থাকে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল আইন একটি বিশেষ আইন। এখানে সময়সীমা কঠোরভাবে নির্ধারিত থাকায় বিলম্ব মওকুফের কোনো সুযোগ নেই। তাই ৩০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে আপিলের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তারা যখনই গ্রেফতার হবেন বা আত্মসমর্পণ করবেন, তখনই রায় কার্যকর হবে।

তিনি আরও স্পষ্ট করেন, আইন অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্তদের যা আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার, তা এই ৩০ দিনের ভেতরেই নিতে হবে। এই সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া রায় চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং তা কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আপিল বিভাগের 'কমপ্লিট জাস্টিস' বা পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষমতা থাকলেও, বিশেষ আইনে নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করার পর আবেদন গ্রহণের সুযোগ থাকে না।

সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এখন জামিন চাইতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে গাজী মোনাওয়ার জানান, ট্রাইব্যুনাল একবার দণ্ড ঘোষণা করার পর এই আদালতে আসামিদের আর কোনো আবেদন করার সুযোগ থাকে না। এখন তারা কেবল রায়ের বা সাক্ষ্য-নথির সার্টিফাইড কপি (অনুলিপি) সংগ্রহ করতে পারবেন। এরপর এই নথিগুলো নিয়ে আপিল বিভাগে আপিল করার সময়ই কেবল জামিনের আবেদন করা যাবে।

অন্যদিকে, সাবেক আইজিপি মামুনের পাঁচ বছরের সাজাকে 'অপ্রতুল' বা কম মনে করছেন জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে প্রসিকিউটর জানান, সংক্ষুব্ধ পক্ষ বা বাদীরাও চাইলে আইন মেনে ওই ৩০ দিনের মধ্যেই আপিল বিভাগে যেতে পারবেন।


হাসিনার আইনজীবীর বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি

২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১০:৩৯:৪৫
হাসিনার আইনজীবীর বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি
ছবি: সংগৃহীত

মানবতাবিরোধী অপরাধের বহুল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণার ঘণ্টাখানেক আগে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পলাতক ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই মামলার বিচার স্বচ্ছভাবে হয়েছে এবং শেখ হাসিনা খালাস পেলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। তার ভাষায়, একজন আইনজীবী হিসেবে নিজের মক্কেলের খালাস চাওয়া স্বাভাবিক প্রত্যাশা।

সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি কোনো যোগাযোগের চেষ্টা করেননি এবং আইনি কাঠামো অনুযায়ী তার সেই সুযোগও নেই। আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা কিংবা তার পক্ষ থেকে কেউ কোনো ধরনের সহায়তাও করেননি। প্রচ্ছন্ন সহায়তাও পাননি। এমনকি চাইলে করাও যেত না, কারণ বিচার-প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এমন যোগাযোগের বিধান নেই।

আইনজীবী আমির হোসেন জানিয়েছেন, দীর্ঘ মাস ধরে তিনি নিজের মক্কেলের জন্য লড়েছেন এবং সেই কারণে তার একমাত্র প্রত্যাশা হলো শেখ হাসিনার খালাস। তার ভাষায়, একজন আসামির জন্য যতদিন মামলা লড়েছেন, সেই ব্যক্তির খালাস পাওয়ার আনন্দ তার নিজের জন্যও বিশেষ এক তৃপ্তি হবে।

রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, মামুন তার মক্কেল নন এবং তিনি তাকে নিয়ে মন্তব্য করবেন না। আইনগত নৈতিকতার কারণে তিনি শুধুমাত্র নিজের ক্লায়েন্ট সম্পর্কে কথা বলতে চান বলে জানান।

সাক্ষীদের জেরা, দালিলিক প্রমাণ, তদন্ত প্রতিবেদন ও রাষ্ট্র–ডিফেন্স উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আজ রায় ঘোষণা হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমে তার দেওয়া সাক্ষাৎকার এবং ডিফেন্সের যুক্তি পরস্পরের সঙ্গে কোথাও কোথাও মিলে গেছে কিনা—এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আমির হোসেন বলেন, উভয় পক্ষ তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। বিচার করবে ট্রাইব্যুনাল।

এদিকে শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা কয়েক স্তরে বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন, বিজিবি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তৎপর। জননিরাপত্তার কারণে দোয়েল চত্ত্বর থেকে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। জনসচেতনতা বিবেচনায় চলাচল সীমিত করা হয়েছে পুরো এলাকায়।

এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয় গত মে মাসে। ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং জেরা শেষ হয়। ৯ কার্যদিন ধরে চলে ডিফেন্স–প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক ও পাল্টা যুক্তিখণ্ডন। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন শেষ বক্তব্য উপস্থাপনের পর বিচারপতিরা রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন।

প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের সর্বোচ্চ সাজার আবেদন করেছে। অন্যদিকে রাজসাক্ষী হওয়ায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের রায় ট্রাইব্যুনালের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আইনজীবী খালাস চেয়েছেন। ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন অবশ্য আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন যে শেখ হাসিনা ও কামাল খালাস পাবেন বলে তিনি মনে করেন।

এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। মোট ৮৪ জনকে সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।

-রফিক


শেখ হাসিনাদের রায় সরাসরি দেখতে পাবেন যেভাবে

২০২৫ নভেম্বর ১৬ ১২:৩২:৫২
শেখ হাসিনাদের রায় সরাসরি দেখতে পাবেন যেভাবে
ছবি: সংগৃহীত

চব্বিশের জুলাই–আগস্টে সংঘটিত ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থান দমন করতে গিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে দায়ের করা বহুল আলোচিত মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা হবে আগামীকাল সোমবার। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) রায়টি সরাসরি সম্প্রচার করবে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

গত ১৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এই রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন। তার সঙ্গে বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আগস্ট-পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এই রায়কে দেশ–বিদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন প্রসিকিউশন। প্রসিকিউটরদের মতে, রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষ, ছাত্রসমাজ এবং নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গুম, নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালানো হয়েছিল।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন আসামিদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই আসামিদের সম্পূর্ণ খালাস প্রদান ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই।

এ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হন। তিনি আদালতে ঘটনাবলির সত্যতা, প্রশাসনের ভেতরে থেকে পরিচালিত নির্দেশাবলি এবং দমননীতি বাস্তবায়নের নানা দিক সম্পর্কে বিস্তৃত জবানবন্দি দেন। তার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এস এইচ তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি ও আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ দলীয় আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তারা সাক্ষ্য, নথিপত্র, ভিডিও প্রমাণ, ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও গণঅভ্যুত্থানকালীন ঘটনাবলি তুলে ধরে আদালতকে জানায় যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতা, নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনরা, আহত বিক্ষোভকারীরা এবং প্রত্যক্ষদর্শী নাগরিকরা। স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। তাদের সাক্ষ্য এই মামলার রায়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দলীয় ক্যাডার, সরকারি প্রশাসনের একটি অংশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও নির্বিচার হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই প্রেক্ষাপটেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অভিযোগের বিচার চলমান রয়েছে।

-রফিক

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত