বিদেশি কর্মী নিয়োগে 'ইউ-টার্ন' সৌদির,কমছে বেতন ও সুবিধা

সৌদি আরব বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের পুরোনো নীতি থেকে সরে আসছে। একটা সময় দেশটি উচ্চ বেতনের আকর্ষণীয় প্রস্তাব বা 'স্যালারি প্রিমিয়াম' দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চ দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করত। কিন্তু এখন সেই বাস্তবতার পরিবর্তন হচ্ছে। রোববার (১৬ নভেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
রয়টার্স চারজন নিয়োগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছে, সৌদি আরব এখন খরচ কমানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে এবং তাদের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারগুলো নতুন করে সাজাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের মতো উদার প্রস্তাব আর দেওয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে নির্মাণ, উৎপাদন এবং দেশটির বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোতে এই পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক এই দেশটি তাদের 'ভিশন ২০৩০' নামের একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো তেলের ওপর থেকে দেশের নির্ভরতা কমিয়ে আনা। একইসঙ্গে পর্যটন, রিয়েল এস্টেট, খনন ও আর্থিক খাতের মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরি করা। এই লক্ষ্য পূরণে দেশটি এরই মধ্যে শত শত বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করেছে। তবে, রয়টার্সের মতে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি, যা এখনকার এই ব্যয় সংকোচনের একটি কারণ হতে পারে।
নিয়োগ খাতের প্রতিনিধিরা বলছেন, আগে এমন একটা সময় ছিল যখন কেউ সৌদিতে চাকরি নিয়ে গেলে তার বর্তমান বেতনের চেয়ে ৪০ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ পর্যন্ত বেশি বেতন পাওয়াটা খুবই সাধারণ ব্যাপার ছিল। কিন্তু এখনকার প্রস্তাবগুলো অনেক বেশি সংযত।
বয়ডেন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ম্যাগদি আল জায়েন বলেন, এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, সৌদি অর্থনীতি এখন খরচ কমাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, প্রচুর সংখ্যক আন্তর্জাতিক প্রার্থী সৌদিতে কাজ করতে আগ্রহী। এই সুযোগে কোম্পানিগুলো তাদের বেতন কাঠামো নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ পাচ্ছে।
দুবাইভিত্তিক টাস্কান মিডল ইস্টের সিইও হাসান বাবাত একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আরও পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যিনি ৬০ হাজার ডলার বেতনে ম্যানেজারের চাকরি করতেন, তিনিই সৌদিতে অনায়াসে ১ লাখ ডলারের চাকরির প্রস্তাব পেতেন। কিন্তু এখন সেই সুযোগ আর নেই।
তবে, বেতন কমানোর এই প্রবণতার মধ্যেও মধ্যপ্রাচ্যের বাইরের দেশগুলো থেকে আসা প্রার্থীদের জন্য সৌদি আরব এখনও একটি আকর্ষণীয় বাজার। দেশটির অর্থনীতি ২০২৫ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, সরকার দেশের নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকেও ব্যাপক মনোযোগ দিয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বেসরকারি খাতে সৌদি নাগরিকদের অংশগ্রহণ ৩১ শতাংশ বেড়েছে এবং দেশটিতে বেকারত্বের হার ঐতিহাসিকভাবে কমে এসেছে।
ম্যাচেস ট্যালেন্টের সিইও লুইস নুটসন এই পরিবর্তনকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, এখনকার বেতন প্যাকেজগুলো বাস্তব বাজার দর, কর্মীর পারফরম্যান্স এবং তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ঠিক করা হচ্ছে। বাইরে থেকে এটাকে 'সংকোচন' মনে হলেও, এটি আসলে সৌদি আরবের বাজার 'পরিপক্ক' হয়ে ওঠার লক্ষণ।
তিনি আরও বলেন, এখন সৌদিতে সেরা প্রতিভাদের আকর্ষণ করতে হলে কোম্পানিগুলোকে শুধু বেশি বেতনের প্রস্তাব দিলেই হবে না, বরং পারিবারিক জীবনযাপনের ভারসাম্য, জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর সুবিধা এবং প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে হবে।
যুদ্ধের দাবদাহ ও ক্ষমতার রদবদল: ২০২৫ সালের আলোচিত সব ঘটনা
শান্তির বারতা নিয়ে ২০২৫ সাল শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তা সংঘাত আর মানবিক সংকটের এক কালো অধ্যায় হিসেবেই ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের তপ্ত মরুভূমি থেকে শুরু করে ইউরোপের তুষারশুভ্র প্রান্তর—২০২৫ সালে পৃথিবীর কোনো প্রান্তই বারুদের গন্ধ থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। গত এক বছরে সভ্যতা যে ভয়াবহ বর্বরতার সাক্ষী হয়েছে, তা আধুনিক বিশ্বকে এক গভীর অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
সবচাইতে বড় মানবিক ট্র্যাজেডি হিসেবে ২০২৫ সালেও অব্যাহত ছিল গাজার আর্তনাদ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরাইলি বর্বরতা এ বছরও গাজাবাসীকে এক মুহূর্তের জন্য স্বস্তি দেয়নি। যদিও অক্টোবরে কাগজে-কলমে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে উপত্যকাটিতে রক্তপাত পুরোপুরি থামেনি। গাজার গণ্ডি ছাড়িয়ে ইসরাইলি আগ্রাসন ছড়িয়ে পড়ে লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়ায়। বিশেষ করে জুন মাসে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের সেই সরাসরি সংঘাত পৃথিবীকে এক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার হুমকিতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে বড় ধরণের মহাপ্রলয় থেকে রক্ষা পায় মধ্যপ্রাচ্য।
ইউরোপের বুকে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন ২০২৫ সালেও কোনো সমাধান খুঁজে পায়নি। যুদ্ধের তিন বছর পার হলেও দুই পক্ষই এখন পর্যন্ত শান্তি চুক্তিতে একমত হতে পারেনি। অন্যদিকে, আফ্রিকা মহাদেশে সুদান ও কঙ্গোর গৃহযুদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম বড় মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। অনাহার ও মহামারীতে সেখানে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ৪ দিনের সেই খণ্ডযুদ্ধ ও আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাত অঞ্চলটিকে বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় অস্থির করে রেখেছিল।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ২০২৫ সাল ছিল ‘শুল্ক যুদ্ধের’ বছর। ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরেই বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোর ওপর বিশাল অংকের শুল্ক আরোপ করেন। এর প্রভাবে বিশ্ব বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে। এছাড়া দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে নেপাল থেকে বুলগেরিয়া পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ৭০টি দেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে, যার ফলে পতন ঘটেছে একাধিক পরাক্রমশালী সরকারের। প্রকৃতির রুদ্ররোষও এ বছর কম ছিল না; ভয়াবহ ভূমিকম্প ও বন্যার তান্ডবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে কোটি কোটি মানুষ। সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল ছিল এক অস্থির পৃথিবী ও লড়াকু মানবতার নীরব সাক্ষী।
২০২৬ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা
দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রক্রিয়া আবারও বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী থিঙ্কট্যাঙ্ক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স (সিএফআর)। সংস্থাটির ‘কনফ্লিক্টস টু ওয়াচ ইন ২০২৬’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে আগামী বছরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের জোরালো ঝুঁকি রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে করা এক বিশেষ জরিপের ভিত্তিতে এই উদ্বেগজনক মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ২০২৫ সালের মে মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠে। এর জবাবে ৭ মে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি ভূখণ্ডে ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করে, যেখানে ১০০ জনের বেশি জঙ্গি নিহত হওয়ার দাবি করে ভারত। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে ভারতের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালালে পরিস্থিতি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে ১০ মে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান হয়নি।
সিএফআরের বিশ্লেষণে আরও উঠে এসেছে যে, কেবল ভারত-পাকিস্তান নয়, বরং পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তও এখন অগ্নিগর্ভ। চলতি বছরের অক্টোবরে কাবুলে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) প্রধান নূর ওয়ালি মেহসুদকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের বিমান হামলার পর থেকে কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে। আফগানিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা অব্যাহত থাকলে ২০২৬ সালে এই দুই দেশের মধ্যেও ‘মাঝারি মাত্রার’ সশস্ত্র সংঘাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই বর্তমানে তুরস্ক ও চীনের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ড্রোন এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহ করে নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে। ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে ইউক্রেন ও গাজা সংঘাত নিরসনে ব্যস্ত থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ায় যেকোনো মুহূর্তের একটি ছোট স্ফুলিঙ্গ পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীকে আবারও যুদ্ধের ময়দানে নামিয়ে দিতে পারে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।
এস জয়শঙ্কর ও ইসহাক দার ঢাকা আসছেন কাল
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া–এর জানাজাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর উভয়েই জানাজায় অংশ নিতে বাংলাদেশে আসছেন। এই সফরগুলোকে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিসরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন যে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে বুধবার ঢাকায় পৌঁছাবেন। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার প্রতি সম্মান জানাতেই পাকিস্তানের এই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। সফরটি সংক্ষিপ্ত হলেও এটি দুই দেশের কূটনৈতিক সৌজন্য ও পারস্পরিক রাজনৈতিক গুরুত্বকে প্রতিফলিত করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, ভারতীয় হাইকমিশনের কার্যালয় থেকেও জানানো হয়েছে যে, জানাজা উপলক্ষে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই উপস্থিতিকে একটি আনুষ্ঠানিক শোকজ্ঞাপন ও কূটনৈতিক সৌহার্দ্যের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে এটি বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের ধারাবাহিক যোগাযোগ ও রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার দিকটিও তুলে ধরছে।
সব মিলিয়ে, খালেদা জিয়ার জানাজায় পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষ কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ শুধু একটি ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় শোকানুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং এটি আঞ্চলিক রাজনীতি ও কূটনৈতিক বার্তার ক্ষেত্রেও বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
পারমাণবিক শক্তি হবে সীমাহীন: কিম জং উনের নতুন নির্দেশে কাঁপছে বিশ্ব
বিশ্ব রাজনীতির উত্তপ্ত মঞ্চে দাঁড়িয়ে উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উন আবারও তাঁর সমর শক্তির জানান দিলেন। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) পিয়ংইয়ংয়ের কাছে সুনান এলাকা থেকে দীর্ঘপাল্লার কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি বড় ধরণের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সরাসরি তদারকি করেন তিনি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, কিম জং উন কেবল এই পরীক্ষার সাফল্য দেখে সন্তোষ প্রকাশই করেননি, বরং দেশের পারমাণবিক যুদ্ধক্ষমতাকে ‘সীমাহীন ও ধারাবাহিকভাবে’ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কোরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম দিকের সমুদ্রপথ ধরে উড়ে গিয়ে নিখুঁতভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
কিম জং উন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, বর্তমান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধক্ষমতা নিয়মিত পরীক্ষা করা একটি ‘দায়িত্বশীল পদক্ষেপ’। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং পারমাণবিক যুদ্ধশক্তি আরও শক্তিশালী করতে সব ধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পাশাপাশি কিম একটি নির্মাণাধীন পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনও পরিদর্শন করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরির পরিকল্পনাকে উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি উল্লেখ করে তিনি জানান, সিউলের প্রতিটি পদক্ষেপের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের এই তৎপরতা অত্যন্ত উদ্বেগের। তারা সতর্ক করেছে যে, নতুন বছরের শুরুতে ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসের আগে উত্তর কোরিয়া আরও বড় ধরণের উস্কানিমূলক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রতিরক্ষা কৌশল নির্ধারণের আগে কিম জং উনের এই কঠোর অবস্থান আদতে আন্তর্জাতিক মহলে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করার একটি প্রয়াস।
তথ্যসূত্র : আলজাজিরা।
সিরিয়ার সার্বভৌমত্বে ইসরায়েলের বড় আঘাত
সিরিয়ার উত্তর কুনেইত্রা প্রদেশের তারাঞ্জা গ্রামে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অনুপ্রবেশের ফলে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি এখন অগ্নিগর্ভ। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সানার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার ছয়টি উন্নত সামরিক যান নিয়ে গঠিত একটি ইসরায়েলি ইউনিট তুলুল আল-হুমর অঞ্চল দিয়ে সিরিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এই সামরিক বহরটি বেইত জন্ন ও হাদার এলাকার মধ্যবর্তী পথ অতিক্রম করে সরাসরি তারাঞ্জা গ্রামে ঢুকে পড়ে এবং সেখান থেকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জাবাথা আল-খাশাব শহরের উপকণ্ঠের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
তদন্তকারী সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী জাবাথা আল-খাশাবের দক্ষিণ প্রান্তে একটি উঁচু টিলায় অবস্থান নিয়েছে, যেখান থেকে পুরো শহরটির ওপর নজরদারি চালানো সম্ভব। এই অনুপ্রবেশের সময় আকাশজুড়ে ইসরায়েলি ড্রোনের কড়া নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। পরবর্তীতে ইসরায়েলি বাহিনী উফানিয়া গ্রামের দিকে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। এর মাত্র একদিন আগেই দক্ষিণ কুনেইত্রার পূর্ব তেল আল-আহমার এলাকায় তিনটি ভারী গোলা এবং মাঝারি পাল্লার মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণ করে ইসরায়েলি সেনারা, যা এই আগ্রাসনের পূর্বপ্রস্তুতি ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ১৯৭৪ সালের ডিসএঙ্গেজমেন্ট এগ্রিমেন্ট বা অনাক্রমণ চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে সিরিয়ার ভূখণ্ডে তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের শেষে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় ইসরায়েলি হস্তক্ষেপ কয়েক গুণ বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন সিরিয়ার ভেতরে ঢুকে ঘরবাড়ি তল্লাশি করছে এবং বুলডোজার দিয়ে জমি দখল করে নতুন নতুন চেকপোস্ট বসাচ্ছে। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কুনেইত্রার বিভিন্ন শহরে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করলেও ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
সিরিয়ার নতুন প্রশাসন এই অনুপ্রবেশকে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নালিশ জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই অভিযানকে 'নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ' ও 'ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীর তৎপরতা বন্ধের' অজুহাত দেওয়া হলেও সাধারণ মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কুনেইত্রার এই অস্থিতিশীলতা পুরো অঞ্চলে একটি বড় ধরনের সশস্ত্র সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বিমান হামলা
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে দেশটিতে বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। নাইজেরিয়া সরকারের সরাসরি অনুরোধে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প জানান যে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে তাঁর আদেশে নাইজেরিয়ায় আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এই ‘শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী’ হামলা চালানো হয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, এই জঙ্গিরা নিরীহ মানুষ, বিশেষ করে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে এমন ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল যা আধুনিক ইতিহাসে বিরল।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে নাইজেরিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণ সমন্বয়ের মাধ্যমে সকোতো অঙ্গরাজ্যে আইএসের একাধিক ঘাঁটিতে এই হামলা চালানো হয়। পেন্টাগন থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই অভিযানের সফলতায় নাইজেরিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক্সে লিখেছেন— ‘আরও আসছে’। বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে গত অক্টোবরে খ্রিষ্টানদের নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাম্প যে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছিলেন, এটি তারই চূড়ান্ত বাস্তবায়ন।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হিসেবে এই নির্ভুল বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠীর অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তবে নাইজেরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা ভিন্ন সুরও পাওয়া গেছে। তারা জানিয়েছে যে দেশটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মুসলিম ও খ্রিষ্টান—উভয় সম্প্রদায়কেই সমানভাবে লক্ষ্যবস্তু করে। শুধুমাত্র একটি বিশেষ ধর্মের ওপর জোর দেওয়া হলে দেশের জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
আফ্রিকার এই জনবহুল দেশটির উত্তরাঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের অস্থিরতায় ভুগছে। হামলার দিনই নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় পাঁচজন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এই অস্থিতিশীলতার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু বড়দিনের বার্তায় সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সিরিয়ার পর নাইজেরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে জঙ্গি দমনে আগের চেয়েও অনেক বেশি আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করছে।
পুতিনের মৃত্যু নিয়ে জেলেনস্কির বিস্ফোরক উক্তি
পবিত্র বড়দিনের উৎসবের আবহেও থামেনি ইউক্রেন-রাশিয়া রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। বড়দিন উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক বিশেষ শুভেচ্ছা বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরাসরি নাম উচ্চারণ না করে তাঁর চরম পরিণতি বা মৃত্যু কামনা করেছেন। জেলেনস্কি তাঁর বার্তায় বলেন যে ইউক্রেনীয়দের জন্য রাশিয়া অবর্ণনীয় দুর্ভোগ বয়ে আনলেও তাঁরা ইউক্রেনীয়দের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ—পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস এবং ঐক্য কেড়ে নিতে পারেনি। তিনি দাবি করেন যে রাশিয়া ভূমি দখল করতে পারলেও ইউক্রেনীয়দের মন ও সাহস জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
জেলেনস্কি তাঁর বক্তব্যে এক গভীর আক্ষেপ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে আজ প্রতিটি ইউক্রেনীয় নাগরিকের মনে একটিই স্বপ্ন এবং একটিই অভিন্ন প্রত্যাশা তা হলো— ‘তাঁর (পুতিনের) ধ্বংস বা মৃত্যু হোক’। বড়দিনের ঠিক আগ মুহূর্তে ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে রাশিয়া ব্যাপক মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায়। এতে অন্তত তিনজন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান এবং ইউক্রেনের বিশাল একটি অংশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে ডুবে যায়। উৎসবের দিনে এমন নৃশংস হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে জেলেনস্কি রাশিয়াকে ‘ধর্মহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রুশ বাহিনীর এই সাম্প্রতিক হামলার চিত্র তুলে ধরে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন যে বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় রাশিয়া আবারও বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন করেছে। রুশ সেনারা শত শত শহীদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং ভয়ংকর কিনঝাল মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের নির্দেশে শুরু হওয়া এই পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযানের প্রায় তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এই দীর্ঘ সময়ে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী, তবে জেলেনস্কি তাঁর বার্তায় জয়ী হওয়ার দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে জেলেনস্কির এই সরাসরি ‘ধ্বংস’ কামনার সুর ইঙ্গিত দিচ্ছে যে যুদ্ধ এখন এক চরম সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে যেখানে সমঝোতার পথ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। রাশিয়ার ক্রমাগত বিমান হামলার মুখেও ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধের শক্তিই এখন কিয়েভের একমাত্র ভরসা। জেলেনস্কি বিশ্বাস করেন যে আকাশপথে বোমা হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস করা গেলেও ইউক্রেনের স্বাধীনতার চেতনাকে দমানো অসম্ভব। বড়দিনের এই বার্তা কেবল একটি আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা নয় বরং বিশ্বমঞ্চে পুতিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে এক তীব্র কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
নাইজেরিয়ায় রক্তাক্ত মাগরিব: নামাজের সিজদায় থাকা অবস্থায় বিস্ফোরণ
নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বর্নো প্রদেশের রাজধানী মাইদুগুরিতে মাগরিবের নামাজের সময় এক আত্মঘাতী বা আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) হামলায় অন্তত সাতজন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় গাম্বোরু মার্কেট এলাকার একটি মসজিদে এই বিস্ফোরণ ঘটে। প্রাদেশিক পুলিশের মুখপাত্র নাহুম দাসো জানিয়েছেন যে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান এবং অন্তত ৩৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় মিলিশিয়া নেতারা জানিয়েছেন যে বিস্ফোরণের সময় মসজিদটি মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। মাওলানা আবুনা ইউসুফ নামক এক ইমাম এএফপিকে জানিয়েছেন যে নিহতের সংখ্যা আটজনে পৌঁছাতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে যে বিস্ফোরণের পরপরই মার্কেট এলাকায় ব্যাপক ধুলোবালি ও ধোঁয়া ওড়ছে এবং আতঙ্কিত মানুষজন প্রাণভয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি করছেন। হামলার পরপরই পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশি শুরু করে।
মাইদুগুরি শহরটি প্রায় দুই দশক ধরে কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম এবং আইএস পশ্চিম আফ্রিকা প্রদেশের (আইএসডব্লিউএপি) প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সালে এই অঞ্চলে ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বোকো হারামের সশস্ত্র অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যদিও ২০২১ সালের পর থেকে মাইদুগুরি শহরটি তুলনামূলক শান্ত ছিল তবে গত রাতের এই হামলা ফের বড় ধরণের জঙ্গি তৎপরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
এখন পর্যন্ত কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী এই ন্যাক্কারজনক হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে বর্নো প্রদেশে জনাকীর্ণ স্থানে এ ধরণের হামলার ধরণটি মূলত বোকো হারামের চিরচেনা কৌশল। জাতিসংঘের হিসেবে গত ১৫ বছরে এই সহিংসতা নাইজেরিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী নাইজার, চাদ ও ক্যামেরুনেও ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সামরিক অভিযানের পরও এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী জনবহুল এলাকাগুলোতে প্রাণঘাতী হামলা চালানোর সক্ষমতা ধরে রাখায় সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পুরো এলাকা জুড়ে কড়া নিরাপত্তা জারি করেছে এবং হামলাকারীদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করেছে।
ইমরান খানের দলের সাথে শর্তসাপেক্ষ সংলাপে রাজি শাহবাজ শরিফ
পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই-এর সাথে আলোচনার আহ্বান গ্রহণ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানী ইসলামাবাদে ফেডারেল মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এই ঘোষণা দেন। তবে এই সংলাপের জন্য তিনি পিটিআই-এর সামনে বিশেষ শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে বিরোধী দল যদি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় সত্যিকার অর্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় এবং সংলাপে আন্তরিক থাকে তবেই সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে শাহবাজ শরিফ স্পষ্ট করে বলেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বা সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধীদের সাথে আলোচনা এগিয়ে নিতে চান। এর আগেও তিনি একাধিকবার ইমরান খানের দলের প্রতি আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে এবার তিনি কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে সংলাপের নামে কোনো ধরণের অবৈধ দাবি কিংবা সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণ করা হবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে এই সংলাপ সফল হলে পাকিস্তানে গত কয়েক বছর ধরে চলা চরম উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে এবং আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে।
বৈঠকে কেবল রাজনীতি নয় বরং দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠনেও দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য নেওয়া প্রতিটি ইতিবাচক উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানাবেন তবে তা অবশ্যই জাতীয় স্বার্থে হতে হবে। সংস্কারের অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স বা পিআইএ-এর বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া শুরুকে তিনি এক ঐতিহাসিক ধাপ হিসেবে অভিহিত করেন। এই প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শাহবাজ শরিফ জানান যে সর্বোচ্চ দরদাতাকেই সফল ঘোষণা করা হবে যাতে জনগণের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
বর্তমানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পিটিআই এবং সরকারের মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে তা নিরসনে এই সংলাপের প্রস্তাবকে একটি ইতিবাচক মোড় হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক মহল। শাহবাজ শরিফ পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন যে দেশের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার স্বার্থে সরকার আলোচনার পথ সবসময় খোলা রেখেছে। এখন বল মূলত পিটিআই-এর কোর্টে যে তারা শাহবাজের শর্ত মেনে সংলাপে ফিরবে কি না। যদি দুই পক্ষ একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে তবে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত:
- নগরকান্দায় এলজিইডি প্রকৌশলীর ঘুষের ভিডিও ভাইরাল
- জানুয়ারি–জুন: ২০২৬ সালের ক্রীড়া সূচি
- কত টাকার মালিক হাসনাত? সম্পদের হিসাব প্রকাশ
- প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন বাড়ানোর সেরা খাবার
- মৃত্যুর পর মানবদেহে কী ঘটে, জানাচ্ছে বিজ্ঞান
- জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন: মানিক মিয়ার পথে বেগম জিয়া
- ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে কলেজে দীর্ঘ ছুটির নতুন সূচি
- মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীর ব্যাপক চাহিদা: নতুন আবেদনের সময় জানুন
- পুঁজিবাজারে তিন প্রতিষ্ঠানের রেটিং আপডেট
- মাতৃতুল্য অভিভাবক: ক্রীড়াঙ্গনে খালেদা জিয়ার না বলা সব গল্প
- বিনিয়োগকারীদের জন্য জরুরি বার্তা: আজ ডিএসই বন্ধ
- যুদ্ধের দাবদাহ ও ক্ষমতার রদবদল: ২০২৫ সালের আলোচিত সব ঘটনা
- জাতি এক মহান অভিভাবককে হারাল: প্রধান উপদেষ্টা
- ৩১ ডিসেম্বরের হালনাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার দর
- হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় রেকর্ড গড়ল গোপালগঞ্জ
- সোনার বাজারে সুখবর! কমল দাম যত
- প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার নতুন তারিখ জানুন
- শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য তারেক রহমানের বাসায় নেতাকর্মীদের ভিড়
- ফুলকপি খাওয়ার যত উপকারিতা
- ২০২৬ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা
- জানাজার নিয়ত, দোয়া ও তাকবির: সহজ নির্দেশনা
- জানাজার নিয়ত, দোয়া ও তাকবির: সহজ নির্দেশনা
- জনসমুদ্রে পরিণত সংসদ ভবন,চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
- আজ ঢাকার যেসব রাস্তা এড়িয়ে চলবেন
- আজ ৩১ ডিসেম্বরের নামাজের সময়সূচি
- জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে বিশেষ ঘোষণা
- জেনে নিন আজকের আবহাওয়ার হালচাল
- আজ দিনভর গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে যেসব এলাকায়
- টিভির পর্দায় আজকের সব খেলার সূচি
- কুয়াশা না কি বৃষ্টির ঝাপটা? রাজশাহীতে শীতের কামড়ে ঘরবন্দি লাখো মানুষ
- খালেদা জিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আজ ঢাকায় আসছেন যেসব দেশের মন্ত্রী
- বাদ জোহর স্বামীর কবরের পাশেই শায়িত হচ্ছেন খালেদা জিয়া
- স্ট্রোক হওয়ার কয়েক দিন আগেই পাওয়া যায় সিগন্যাল: ৫টি লক্ষণ চিনুন
- প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত: নতুন সম্ভাব্য তারিখ জানাল অধিদপ্তর
- খালেদা জিয়া শুধু দলের নয় বরং পুরো দেশের নেতা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- মেঘ আর কুয়াশায় ঢাকা সূর্য: কবে দেখা দেবে সোনালী রোদ জানাল অধিদপ্তর
- থার্টি ফার্স্ট নাইটে মুসলিমদের করণীয় নিয়ে যা বলেন ইসলামি স্কলাররা
- ফুরিয়ে আসছে ২৪ ঘণ্টার দিন, ঘড়ির কাঁটায় যোগ হচ্ছে নতুন সময়
- দাঁত সাদা করার ঘরোয়া টোটকা কি বিপদ ডেকে আনছে: যা বলছেন চিকিৎসকরা
- এবার এনসিপি প্রার্থী ডা. মিতুকে হত্যার হুমকি
- ভোটের মাঠে বাবার মুখোমুখি হান্নান মাসউদ
- প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে এক বিশাল হৃদয়: খালেদা জিয়ার মানবিক দর্শনের আড়ালে যা ছিল
- দল থেকে ছিটকে গেলেন রুমিন ফারহানা
- একঝাঁক বিশ্বনেতারা কাল ঢাকায় আসছেন খালেদা জিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে
- ২০২৬ সালের বার্ষিক বৃত্তিসহ সব পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ
- এস জয়শঙ্কর ও ইসহাক দার ঢাকা আসছেন কাল
- বছরের শেষ দিনে ডিএসইতে মিশ্র চিত্র, লেনদেন ৩৫৪০ কোটি
- বছরের শেষ কার্যদিবসে শীর্ষ গেইনার শেয়ার
- বছরের শেষ কার্যদিবসে শীর্ষ লোকসানি শেয়ার
- প্রতিদিনের প্লেটেই লুকিয়ে আছে সুস্থ ভবিষ্যৎ
- আজ ঢাবির ভর্তি যুদ্ধ: আছে এমআইএসটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ খবর
- আজকের স্বর্ণের দাম: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
- আজ থেকে কার্যকর স্বর্ণের নতুন মূল্য
- পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের জন্য বড় সুখবর
- আজ থেকে শুরু বিপিএলের দ্বাদশ আসর, জানুন পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী
- আজকের স্বর্ণের দাম: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
- বাবার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবে কেঁদেছেন তারেক রহমান
- ঢাকা-১৫ জামায়াত আমিরের বিপক্ষে নামলেন যে বিএনপি প্রার্থী
- সাধারণের নাগালের বাইরে সোনার বাজার: মধ্যবিত্তের সোনা কেনার স্বপ্ন কি তবে শেষ
- ২০২৬ সালে স্কুলে ছুটি কমলো ১২ দিন, দেখে নিন তালিকা
- এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পিছাল, নতুন তারিখ ঘোষণা
- ই-রিটার্ন দাখিলে আর বাধা নেই: বড় সুখবর দিল রাজস্ব বোর্ড আজ
- ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা: আজই দেখে নিন রুটিন
- জামায়াত-চরমোনাই দ্বিমুখী লড়াই: সংকটে ইসলামী জোট
- হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা থেকে মুক্তি কবে? যা জানাল আবহাওয়া অফিস








