স্বাস্থ্য কথন

ম্যালেরিয়া: কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০২ ২২:০১:৩৯
ম্যালেরিয়া: কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

ম্যালেরিয়া একটি মশাবাহিত জীবন-হুমকিপূর্ণ রোগ, যার কার্যকারক জীব প্লাজমোডিয়াম নামে পরজীবী। সংক্রামিত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে এই পরজীবীমানুষের দেহে প্রবেশ করে এবং এক জটিল জীবনচক্রের মাধ্যমে লিভার ও লোহিত রক্তকণিকায় বংশবৃদ্ধি করে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে রোগটি তুলনামূলকভাবে কম হলেও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে এটি এখনও জনস্বাস্থ্যের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। নিচের অংশগুলোতে আমরা ম্যালেরিয়ার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থেকে শুরু করে উপসর্গ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, প্রতিরোধ, বিশেষ পরিস্থিতি, এমনকি আহার ও স্ব-যত্ন পর্যন্ত সবকিছু ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছি।

প্লাজমোডিয়াম প্রজাতি ও রোগতত্ত্বের সারসংক্ষেপ

মানুষে ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী প্রধান পাঁচটি প্লাজমোডিয়াম প্রজাতি হলো প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, প্লাজমোডিয়াম ভিভ্যাক্স, প্লাজমোডিয়াম ওভালে, প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরিয়ে এবং প্লাজমোডিয়াম নলেসি।

ফ্যালসিপেরাম সর্বাধিক মারাত্মক এবং আফ্রিকায় বেশি দেখা যায়। ভিভ্যাক্স এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় বেশি, লিভারে সুপ্ত থেকে বারবার রিল্যাপ্স ঘটাতে পারে। ওভালে তুলনামূলক বিরল, পশ্চিম আফ্রিকায় দেখা যায় এবং দীর্ঘদিন সুপ্ত থাকতে পারে। ম্যালেরিয়ে সাধারণত মৃদু কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ দিতে পারে। নলেসি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মানব ও ম্যাকাক প্রাইমেট থেকে জোনোটিক সংক্রমণ ঘটায় এবং দ্রুত জ্বর-চক্র সৃষ্টি করতে সক্ষম।

সংক্রমণ ও জীবনচক্রকে সহজভাবে বোঝা

সংক্রামিত মশা কামড়ালে স্পোরোজোয়েট রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে প্রথমে লিভারের হেপাটোসাইটে প্রবেশ করে অযৌন বংশবৃদ্ধি করে। দিন কয়েক পর লিভার থেকে মেরোজোয়েট রক্তে ফিরে আসে এবং লোহিত কণিকায় ঢুকে চক্রাকারে বংশবৃদ্ধি করে। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার অন্তর কোষ ভেঙে নতুন মেরোজোয়েট ছড়িয়ে পড়ে, ফলে জ্বর, কাঁপুনি, ঘাম এই পর্যায়ভিত্তিক উপসর্গচক্র তৈরি হয়। কিছু পরজীবী গ্যামেটোসাইটে রূপ নিয়ে আবার মশায় প্রবেশ করলে মশার দেহে যৌন প্রজননের পর নতুন স্পোরোজোয়েট গঠিত হয়।

রোগের ভার ও অর্থনৈতিক প্রভাব

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বহু দেশে ম্যালেরিয়া শিশুগর্ভবতীনারীরঅসুস্থতাএবং মৃত্যুর বড় কারণ। কর্মঘণ্টা হ্রাস, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি এবং শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ায় ম্যালেরিয়া দরিদ্রতা ও রোগের এক দুষ্টচক্র তৈরি করে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও জনসংখ্যার চলাচল বেড়ে যাওয়ায় ঐতিহ্যগতভাবে কম-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতেও মাঝে মাঝে ইম্পোর্টেড কেস দেখা যায়।

ঝুঁকির কারণ ও উচ্চঝুঁকির গোষ্ঠী

উচ্চ আর্দ্রতা, স্থির পানির আধিক্য ও মাঝারি উষ্ণতা মশার বংশবৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল। সাহারা-উপসাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অংশবিশেষ উচ্চঝুঁকিপূর্ণ।

বিশেষ ঝুঁকিতে থাকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নারী ও তাদের অনাগত সন্তান, ম্যালেরিয়া-অপ্রচলিত এলাকা থেকে আগত ভ্রমণকারী, দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং যারা বাইরে বেশি কাজ করেন যেমন কৃষক, বনকর্মী বা খনি শ্রমিক।

বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটের চা-বাগান এলাকা এবং ভারতমিয়ানমার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বেশি দেখা যায়। দেশের মোট ৬৪ জেলার মধ্যে প্রায় এক ডজন এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। আক্রান্তদের মধ্যে চা-বাগানের শ্রমিক, পাহাড়ি ও সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠী, শিশু এবং গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

উপসর্গ: জটিলতা অনুযায়ী বিভাজন

অনাক্রমিক বা তুলনামূলক জটিলতাহীন ম্যালেরিয়া:হালকা থেকে মাঝারি জ্বর, কাঁপুনি, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, পেশী ব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, অবসাদ, কখনও ডায়রিয়া। এই উপসর্গ ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা স্থায়ী হয়ে প্রতি দুই বা তিন দিন অন্তর চক্রাকারে ফিরে আসতে পারে।

জটিল বা গুরুতর ম্যালেরিয়া:উচ্চ জ্বরের সঙ্গে চেতনা-হ্রাস, বিভ্রান্তি, বারবার খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত গভীর শ্বাস, লিভার-কিডনির কর্মহানি, ক্লিনিক্যাল জন্ডিস, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, তীব্র রক্তাল্পতা, অস্বাভাবিক রক্তপাত ইত্যাদি। সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া হলে মস্তিষ্কে ফোলা বা ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসা না হলে দ্রুত প্রাণঘাতী হতে পারে।

রোগ নির্ণয়: দ্রুততা এখানে জীবন বাঁচায়

ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলেই অবিলম্বে রক্তপরীক্ষা জরুরি।

১) থিক ও থিন ব্লাড স্মিয়ার মাইক্রোস্কোপি পরজীবীর উপস্থিতি, ঘনত্ব ও প্রজাতি শনাক্ত করতে স্বর্ণমান।

২) র‌্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট অ্যান্টিজেন সনাক্ত করে দ্রুত ফল দেয়। ইতিবাচক ফল মাইক্রোস্কোপি দ্বারা নিশ্চিত করা উত্তম।

৩) প্রয়োজন অনুযায়ী পূর্ণ রক্তকণিকা গণনা, লিভার-কিডনি ফাংশন, রক্তে শর্করা, আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাস ইত্যাদি জটিলতা মূল্যায়নে সাহায্য করে।

চিকিৎসা: প্রজাতি, জটিলতা ও প্রতিরোধক্ষমতার উপর নির্ভরশীল

চিকিৎসা শুরুর সময়ই রোগীর ভৌগোলিক এক্সপোজার, সম্ভাব্য ওষুধ-প্রতিরোধ এবং রোগের তীব্রতা বিবেচ্য।

অনাক্রমিক ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া: আর্টেমিসিনিন-ভিত্তিক কম্বিনেশন থেরাপি যেমন আর্টেমেথার-লুমেফ্যান্ট্রিন অথবা অ্যাটোভাকোন-প্রোগুয়ানিল প্রচলিত।

ভিভ্যাক্স বা ওভালে: তাত্ক্ষণিক রক্তধাপের চিকিৎসার পর প্রাইমাকুইন বা টাফেনোকুইনদিয়ে হাইপনোজোয়েট নির্মূল করে রিল্যাপ্স প্রতিরোধ করা হয়। গ্লুকোজ-৬-ফসফেট ডিহাইড্রোজেনেজ ঘাটতি থাকলে এই ওষুধ বিপজ্জনক, তাই আগে স্ক্রিনিং দরকার।

গুরুতর ম্যালেরিয়া: হাসপাতালভিত্তিক শিরায় আর্টেসুনেট প্রথম পছন্দ। নিবিড় পর্যবেক্ষণে তরল-ইলেক্ট্রোলাইট সাম্য, রক্তে শর্করা, খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ, রক্তাল্পতা ও অঙ্গ-অসফলতার ব্যবস্থাপনা করা হয়।

অন্যান্য ওষুধ: ক্লোরোকুইন এখনও কিছু অঞ্চলে ভিভ্যাক্সের জন্য কার্যকর। মেফ্লোকুইন নির্বাচিত ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য হলেও স্নায়বিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারঝুঁকি বিবেচ্য। কুইনাইন বর্তমানে সীমিত নির্দেশনায় ব্যবহৃত হয়।

গর্ভাবস্থায়: প্রথম ত্রৈমাসিকে ওষুধনির্বাচন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়। প্রতিরোধ ও চিকিৎসা উভয় ক্ষেত্রেই মা ও ভ্রূণের নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পায়, তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অপরিহার্য।

ভ্রমণকারীর জন্য প্রতিরোধমূলক ওষুধ

ভ্রমণের স্থান, সময়কাল, প্রতিরোধ-নকশা ও ব্যক্তিগত অবস্থা দেখে প্রফিল্যাক্সিস নির্ধারিত হয়। প্রচলিত বিকল্পের মধ্যে আছে অ্যাটোভাকোন-প্রোগুয়ানিল, ডক্সিসাইক্লিন ও মেফ্লোকুইন। যেকোনো কোর্স সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে শুরু ও শেষ করা জরুরি। একই সাথে কামড়-এড়ানোর ব্যবস্থা অপরিহার্য।

কামড়-এড়ানো ও ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ: ABCD নিয়ম মনে রাখুন

Awareness বা ঝুঁকিসচেতনতা, Bite prevention বা কামড় প্রতিরোধ, Chemoprophylaxis বা প্রফিল্যাক্সিস প্রয়োজন হলে তা গ্রহণ এবং Diagnosis বা উপসর্গ হলেই দ্রুত পরীক্ষা এই চারটি স্তম্ভই প্রতিরোধের ভিত্তি।

বাস্তবে যা করবেন

  • সূর্যাস্তের পর ঢিলেঢালা লম্বা হাতা পোশাক পরুন, উন্মুক্ত ত্বকে DEET বা অন্যান্য অনুমোদিত রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনে মশারি ব্যবহার করুন
  • দরজা-জানালায় স্ক্রিন, এয়ার কন্ডিশনিং বা ফ্যানের ব্যবহার
  • ঘর-বাসার চারপাশে স্থির পানি অপসারণ করে মশার প্রজননস্থল নষ্ট করুন
  • উচ্চঝুঁকির এলাকায় ইনডোর রেসিডুয়াল স্প্রে ও কীটনাশক-প্রক্রিয়াজাত মশারি কার্যকর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা

টিকা সম্পর্কিত কথা

ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে টিকা বর্তমানে কিছু অঞ্চলে ধাপে ধাপে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং শিশুদের ভার কমাতে সহায়তা করছে। টিকা জনস্বাস্থ্য প্যাকেজেরএকটিউপাদান, তবেএটি কামড়-এড়ানো ও প্রফিল্যাক্সিসের বিকল্প নয়। স্থানীয় গাইডলাইন ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুসরণ করুন।

বিশেষ পরিস্থিতি: গর্ভাবস্থা, শিশু ও সহ-রোগ

গর্ভাবস্থায় ম্যালেরিয়া প্লাসেন্টাল ম্যালেরিয়া, রক্তাল্পতা, কম ওজনের শিশুজন্মসহ জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। শিশু ও নবজাতকে রোগটি দ্রুত জটিল হতে পারে। ডায়াবেটিস, অপুষ্টি, এইচআইভি বা ক্যান্সার-থেরাপির মতো সহ-অবস্থায় দ্রুত শনাক্তকরণ ও নিবিড় তদারকি প্রয়োজন।

ডায়েট ও স্ব-যত্ন: সুস্থতায় সহায়ক

  • অসুখ চলাকালে অল্প অল্প করে বারবার সহজপাচ্য খাবার খান।
  • পর্যাপ্ত পানি, ওরাল রিহাইড্রেশন, ডাবের পানি, ফলের রস
  • শক্তির চাহিদায় ভাত ও অন্যান্য সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট
  • প্রোটিনের উৎস হিসেবে স্যুপ, ডিম, ডাল, মাছ-মুরগি
  • ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ ফল-সবজি
  • খুব চর্বিযুক্ত, অতিমশলাদার খাবার ও ক্যাফেইন পরিহার করুন

এসব ডায়েটারি টিপস চিকিৎসারবিকল্পনয়, বরং চিকিৎসার সঙ্গে সুস্থতায় সহায়তা করে।

করণীয় ও বর্জনীয়

করণীয়

  • জ্বর শুরু হলেই ভ্রমণ-ইতিহাসসহ দ্রুত পরীক্ষা করান
  • নির্ধারিত অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ঠিকভাবেএবংকোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যান
  • কামড়-এড়ানোর প্রতিটি নিয়ম বাস্তবায়ন করুন

বর্জনীয়

  • উপসর্গ কমে গেলেই ওষুধ বন্ধ করবেন না
  • নিজে নিজে ওষুধ পাল্টাবেন না
  • শিশু ও গর্ভবতীর ক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়া কোনো ওষুধ শুরু করবেন না

২০০০ সালেরপরম্যালেরিয়াবাংলাদেশেব্যাপকআকারধারণ করলেও সরকারের জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (NMCP), এনজিও ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিনামূল্যে কীটনাশক মশারি বিতরণ, র‌্যাপিড ডায়াগনস্টিকটেস্টের ব্যবহার এবং কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই অগ্রগতির প্রধান কারণ।

তবে চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো কঠিন, ভিভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার পুনরাবৃত্তি রোগীদের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করছে, আর সীমান্তবর্তী এলাকায় ওষুধ প্রতিরোধী পরজীবীর ঝুঁকিও বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বেড়ে নতুন এলাকায় ম্যালেরিয়া ছড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

ঘন ঘন জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

ম্যালেরিয়া কি মানুষে মানুষে ছড়ায়?

-না, স্বাভাবিকসংস্পর্শেছড়ায়নারক্তসঞ্চালন, সূঁচ ভাগাভাগি বা বিরলভাবে গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে, তবে প্রধানত মশার কামড়ই মাধ্যম।

প্রতিরোধী ট্যাবলেট খেলেও কি সংক্রমণ হতেপারে?

-হ্যাঁ, শতভাগ সুরক্ষা দেয় না। তবে ঝুঁকি অনেক কমে এবং তীব্রতা সাধারণত কম থাকে। তাই কামড়-এড়ানোর ব্যবস্থা অপরিহার্য।

লক্ষণ না থাকলে কি পরীক্ষা দরকার?

-উচ্চঝুঁকির এলাকায় জ্বর হলেই পরীক্ষা জরুরি। কিছু প্রজাতি দেরিতে উপসর্গ দিতে পারে, তাই ভ্রমণ-পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস সতর্ক থাকুন।

দ্রুত সহায়তা কেন গুরুত্বপূর্ণ

ম্যালেরিয়া খুব দ্রুত গুরুতর হতে পারেতাইজ্বর, কাঁপুনি, মাথাব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট, বিভ্রান্তির মতো উপসর্গ দেখা দিলে অপেক্ষা না করে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিনশিশু, গর্ভবতী নারী এবং সহ-রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিটি ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ।

ম্যালেরিয়াপ্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য। সচেতনতা, কামড়-এড়ানো, সঠিক প্রফিল্যাক্সিস, দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং গাইডলাইন-ভিত্তিক চিকিৎসাএই পাঁচ স্তম্ভে আস্থা রাখলেই ব্যক্তিগত ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি নাটকীয়ভাবে কমানোসম্ভবনিজের স্বাস্থ্যসচেতন অভ্যাস, পরিবারের সুরক্ষা এবং কমিউনিটি-স্তরের ভেক্টর নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ মিলে আমরা ম্যালেরিয়ামুক্ত ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারি।


কোমল পানীয় থেকে মাছের ডিম, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় যে ৯ খাবার

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৬ ২০:৩৯:৩২
কোমল পানীয় থেকে মাছের ডিম, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় যে ৯ খাবার
ছবিঃ সংগৃহীত

অনিয়মিত জীবনধারা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাসের কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বিশ্বজুড়ে বাড়ছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই হৃদরোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবারে থাকা অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি এবং কোলেস্টেরল আমাদের ধমনিতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এর পাশাপাশি, ধূমপানের অভ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন—এই বিষয়গুলোও হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

পুষ্টিবিদদের মতে, বিশেষ করে অতিরিক্ত লবণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার হৃদযন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। তারা এমন ৯টি খাবারের একটি তালিকা দিয়েছেন, যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে এড়িয়ে চলা উচিত।

অনেকেই পেট ভরে খাওয়ার পর কোমল পানীয় বা সোডাজাতীয় পানীয় পান করেন। কিন্তু পুষ্টিবিদরা সতর্ক করছেন, প্রতি ১২ আউন্স এই ধরনের পানীয়তে প্রায় ১০ চা চামচ চিনি থাকে। নিয়মিত এসব পানীয় পান করলে একদিকে যেমন ওজন বাড়ে, তেমনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় কৃত্রিম চিনির ব্যবহারের সঙ্গে ক্যানসারের মতো রোগেরও সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

একইভাবে, সাদা ব্রেড বা পাউরুটিও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এর উচ্চ কার্বোহাইড্রেট এবং উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রক্তে খুব দ্রুত চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রাথমিক কারণ। এর সাথে যোগ হয় অতিরিক্ত লবণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি রক্তনালির ক্ষতি করে এবং ব্লক বা বাধা তৈরি করতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত মাংস, যেমন সসেজ বা হট ডগ, হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও লবণ থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র একদিন প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৪২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। ফাস্টফুডকেও হৃদরোগজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হয়, কারণ এতে একসাথেই উচ্চ মাত্রায় চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোলেস্টেরল এবং প্রচুর ক্যালোরি থাকে। একইভাবে, জনপ্রিয় খাবার পিৎজাও এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এতে থাকা ফ্যাট, লবণ এবং প্রক্রিয়াজাত মাংসের উচ্চ মাত্রা হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে।

তালিকায় আরও আছে আইসক্রিম। পরিশোধিত চিনি, ফ্যাটযুক্ত দুধ এবং কোলেস্টেরলে ভরপুর হওয়ায় আইসক্রিম শরীরে ক্যালোরির মাত্রা বাড়ায়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করে। পুষ্টিবিদরা প্রাণীর কিছু বিশেষ অংশ এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেন। যেমন, কলিজা, মগজ এবং হাড়ের মজ্জা (যা দিয়ে নেহারি জাতীয় খাবার তৈরি হয়) – এই অংশগুলোতে খুব বেশি পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে। তাই যারা এরই মধ্যে হৃদরোগে ভুগছেন, তাদের এসব খাবার পুরোপুরি বর্জন করা উচিত। সবশেষে, মাছের মাথা ও মাছের ডিমকেও ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। এই খাবারগুলো রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে এলডিএল বা 'ক্ষতিকর' কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখা কঠিন কিছু নয়। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুললেই এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন আনাই হতে পারে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের প্রধান উপায়।

সূত্র : হার্ভার্ড হেল্থ, কোয়ান্টাম মেথড, ওয়েবএমডি


ডেঙ্গু বা ভাইরাসের পর দুর্বলতা? প্লেটলেট বাড়বে যা খেলে

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৬ ১৬:০০:৪৪
ডেঙ্গু বা ভাইরাসের পর দুর্বলতা? প্লেটলেট বাড়বে যা খেলে
ছবিঃ সংগৃহীত

রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা কমে গেলে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে কোনো ক্ষত সারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে। প্লেটলেট কমে যাওয়ার কিছু সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে হঠাৎ রক্তক্ষরণ, শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগা এবং বারবার সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়া। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু, বিভিন্ন ভাইরাল সংক্রমণ কিংবা অস্থি মজ্জা বা বোন ম্যারোর সমস্যার কারণেও রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে। তাই এই সমস্যা দেখা দিলে তা অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ এতে ঝুঁকি বাড়তে পারে।

তবে চিকিৎসকদের মতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা এবং জীবনযাত্রায় কিছু জরুরি পরিবর্তন আনার মাধ্যমে প্লেটলেটের মাত্রা বাড়ানো সম্ভব।

এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ওপর জোর দেন। ভিটামিন-সি প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করে। কমলা, লেবু, কিউই, পেঁপে, স্ট্রবেরি এবং বেল পেপারের মতো খাবারে থাকা ভিটামিন-সি প্লেটলেটকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং সংক্রমণের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

প্লেটলেট বাড়াতে ফোলেট বা ভিটামিন বি-৯ সমৃদ্ধ খাবারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উপাদানটি কোষ বিভাজনে এবং নতুন প্লেটলেট তৈরিতে সহায়তা করে। নিয়মিত পালং শাক, শিম, মুসুর ডাল, বিট এবং অ্যাভোকাডো খেলে শরীরে ফোলেটের ঘাটতি পূরণ হতে পারে, যা প্লেটলেটের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

অনেক সময় শরীরে ভিটামিন বি-১২ এবং আয়রনের অভাব হলেও প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যেতে পারে। পুষ্টিবিদরা এই ঘাটতি মেটাতে ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি এবং কুমড়ার বীজ খাদ্য তালিকায় রাখার পরামর্শ দেন। তবে কারও শরীরে এগুলোর ঘাটতি বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করা যেতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরেই প্লেটলেট বাড়ানোর একটি ঘরোয়া উপায় হিসেবে পেঁপে পাতার রস ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, কাঁচা পেঁপে পাতা সরাসরি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এর পরিবর্তে, বাজারে পাওয়া যায় এমন স্ট্যান্ডার্ডাইজড বা প্রস্তুতকৃত রস তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তবে সেটিও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই গ্রহণ করা উচিত।

খাবারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনধারাও প্লেটলেট বাড়াতে সহায়ক। শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকলে তা রক্তের ভলিউম বা পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বোন ম্যারোর ক্ষতি এড়াতে অ্যালকোহল বা মদপান কমিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। এর পাশাপাশি, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত বিশ্রাম এবং হালকা ব্যায়াম শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করে এবং মানসিক চাপ কমায়। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এসব খাবার যুক্ত করা এবং একটি সঠিক জীবনধারা অনুসরণ করলে রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হতে পারে।


ধূমপান ছাড়ার পর শরীর যেভাবে নিজেকে 'মেরামত' করে, জানুন বিস্তারিত

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৫ ২১:৩৮:৪২
ধূমপান ছাড়ার পর শরীর যেভাবে নিজেকে 'মেরামত' করে, জানুন বিস্তারিত
ছবি : সংগৃহীত

ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে প্রায় সবাই অবগত। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর শরীর অত্যন্ত দ্রুত নিজেকে সারিয়ে তুলতে শুরু করে। চিকিৎসকরা বলছেন, ধূমপান বন্ধ করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই শরীর মেরামতের কাজ শুরু করে দেয় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্বাস্থ্যে চোখে পড়ার মতো ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।

অ্যানেস্থেশিয়া ও পেইন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কুনাল সুধ জানিয়েছেন, ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্ষতি করে না, এটি ধীরে ধীরে ফুসফুসকে শক্ত এবং কম নমনীয় করে ফেলে। এর ফলে ফুসফুস ঠিকমতো প্রসারিত হতে পারে না, যা শ্বাস-প্রশ্বাসকে কঠিন করে তোলে। দীর্ঘদিন ধরে ধূমপানের অভ্যাস থেকে দীর্ঘস্থায়ী কাশি, ফুসফুসে মিউকাস বা শ্লেষ্মা জমে থাকা, ব্রঙ্কাইটিস এবং এমফিসেমার মতো জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। এর পাশাপাশি, ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকিও বহুগুণ বেড়ে যায়।

ডা. সুধ আরও বলেন, ধূমপান ফুসফুসের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দুর্বল করে দেয়। একারণে ধূমপায়ীরা প্রায়ই বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হন, তাদের সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে এবং শারীরিক শক্তিও কমে যেতে থাকে।

তবে ডা. সুধের মতে, স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার জন্য ধূমপান পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়াই হলো সবচেয়ে শক্তিশালী একটি সিদ্ধান্ত। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ধূমপান বন্ধ করার মুহূর্ত থেকেই শরীর তার ভেতরের ক্ষতিগুলো সারাতে শুরু করে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি ঘটে, ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়তে থাকে এবং শরীরে রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া আগের চেয়ে ভালো হয়।

তবে ধূমপান ছাড়ার এই প্রক্রিয়া ধরে রাখতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনে পেশাদার চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত কার্ডিও ব্যায়াম এবং প্রতিদিন শ্বাস-প্রশ্বাসের বিশেষ ব্যায়াম করা খুবই উপকারী। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবারের ওপরও জোর দিয়েছেন ডা. সুধ। তিনি 'গাট-লাং অ্যাক্সিস' বা অন্ত্র ও ফুসফুসের সংযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, স্বাস্থ্যকর খাবার অন্ত্রকে ভালো রাখে, যা শরীরের সার্বিক প্রদাহ কমায় এবং শ্বাসতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

ধূমপান শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের, বিশেষ করে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে সবচেয়ে আশার কথা হলো, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীর দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর কাজ শুরু করে দেয়। তাই, যত দ্রুত সম্ভব এই অভ্যাস ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়াই হতে পারে নিজের ফুসফুস, হৃদযন্ত্র তথা ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার সর্বোত্তম উপায়।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস


গলায় সাদা দানা? এটি খাবারের টুকরো নয়, হতে পারে টনসিল স্টোন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৫ ১১:৩৫:২৭
গলায় সাদা দানা? এটি খাবারের টুকরো নয়, হতে পারে টনসিল স্টোন
ছবি: সংগৃহীত

স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা সমস্যার মধ্যে ‘টনসিল স্টোন’ বা টনসিলে জমে থাকা শক্ত দানার কথা অনেকেই শুনে থাকেন না। অথচ একেবারে ছোট ও সাধারণ মনে হলেও এই দানাগুলো অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী মুখের দুর্গন্ধ, গিলতে অস্বস্তি বা গলায় আটকে থাকার অনুভূতির মতো বিরক্তিকর অবস্থার জন্ম দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় Tonsillolith, যা টনসিলের গহ্বর বা tonsillar crypt–এ জমে থাকা উপাদানগুলো ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে গঠিত হয়।

টনসিলের দুটি পাশে থাকা palatine tonsil–এ অসংখ্য ক্ষুদ্র গর্ত থাকে, যেগুলি ব্যাকটেরিয়া, মৃত কোষ ও খাবারের ক্ষুদ্র কণাগুলোকে আটকে রাখে। সময়ের সাথে এগুলো ক্যালসিয়ামের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে শক্ত পাথরের মতো রূপ নেয়, যাকে বলা হয় টনসিল স্টোন। সাধারণত সাদা বা হলুদচে রঙের এই দানাগুলো দেখতে ছোট হলেও এর ভেতরের জৈব-রাসায়নিক উপাদান মুখে তীব্র দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, টনসিল স্টোন থাকা ব্যক্তির সবসময় দৃশ্যমান উপসর্গ পাওয়া যায় না। অনেক সময় আয়নার সামনে দাঁড়ালে টনসিলের ভেতর ছোট সাদা দানার মতো কিছু দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু ব্যক্তি নিজে কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন না। তবে যাদের উপসর্গ থাকে, তাদের ক্ষেত্রে মুখে বাজে গন্ধ, গলায় আটকে থাকার অনুভূতি, হালকা গলা ব্যথা বা কথা বলতে অস্বস্তির মতো সমস্যা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা মনে করেন গলায় কোনো খাবার আটকে আছে, কিন্তু বাস্তবে এটি টনসিল স্টোন।

টনসিল স্টোনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব হলো মুখে তীব্র দুর্গন্ধ বা এক ধরনের সালফারের মতো গন্ধ। ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদিত Volatile Sulfur Compounds (VSCs) এই দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ। ফলে রোগীরা সাধারণত ব্রাশ করেও মুখের বাজে গন্ধ দূর করতে পারেন না, কারণ দুর্গন্ধটি দাঁতে নয়, টনসিলের খাঁজে জমে থাকা স্টোন থেকেই উৎপন্ন হয়।

এই সমস্যার প্রতিরোধে চিকিৎসকরা মুখের নিয়মিত পরিচর্যার ওপর জোর দেন। প্রতিদিন সঠিকভাবে ব্রাশ করা, জিহ্বা পরিষ্কার করা, মুখ শুকনো হয়ে যায় এমন অভ্যাস (যেমন ধূমপান) এড়িয়ে চলা এবং নিয়মিত গার্গল করা টনসিল স্টোন গঠনের সম্ভাবনা কমাতে পারে। মুখের ভেতর পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় রাখা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করাও গুরুত্বপূর্ণ। দুর্গন্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে বলা হয়।

চিকিৎসকরা জানান, অনেক রোগী টনসিল স্টোন দূর হওয়ার পর এক ধরনের আরাম ও স্বস্তি অনুভব করেন। কোনো রোগী চিকিৎসা শেষে মন্তব্য করেছেন –“ভেবেও বুঝতে পারিনি এমন ছোট দানা থেকেও এত দুর্গন্ধ হতে পারে। এখন গলা অনেক স্বাভাবিক লাগে এবং বাজে গন্ধও নেই।”এ ধরনের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, ছোট কিন্তু অবহেলিত স্বাস্থ্যসমস্যা কখনও কখনও জীবনযাত্রার মানে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, টনসিল স্টোন উপেক্ষা করা ঠিক নয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে টনসিলের প্রদাহ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সেকেন্ডারি সংক্রমণের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। তাই গলার ভেতর সাদা দানা দেখা গেলে বা মুখে স্থায়ী দুর্গন্ধ টের পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

স্বাস্থ্যসচেতনতার অংশ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক বার্তা দিচ্ছেন –“গলায় সাদা দানা বা মুখে বাজে গন্ধকে কখনো হালকাভাবে নেবেন না। এটি কেবল খাবারের টুকরো নয়; এটি টনসিল স্টোন হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।”


ডিম কি সত্যিই কোলেস্টেরল বাড়ায়? নতুন গবেষণার চমক

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৪ ১৩:০১:১১
ডিম কি সত্যিই কোলেস্টেরল বাড়ায়? নতুন গবেষণার চমক
ছবি: সংগৃহীত

ঘরে মাছ–মাংস না থাকলে ডিমই প্রথম ভরসা। সহজলভ্য, দ্রুত রান্না করা যায় এবং সব বয়সী মানুষের জন্য সমান পুষ্টিকর। শিশুর বৃদ্ধি, বয়স্কদের শারীরিক সক্ষমতা এবং শীতের রোগ প্রতিরোধে ডিমের ভূমিকা অনন্য। প্রতিদিন কতটি ডিম খাওয়া উচিত এ প্রশ্নের উত্তর জানতে বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক সময়ে নানা গবেষণা করেছেন।

ডিম প্রকৃত অর্থেই পুষ্টির ভাণ্ডার। ভিটামিন ডি, বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, বায়োটিন, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, উচ্চমানের প্রোটিন, সেলেনিয়ামসহ অসংখ্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ডিমে পাওয়া যায়। বিশেষ করে শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত করতে এবং শরীর উষ্ণ রাখতে ডিম অত্যন্ত কার্যকর।

২০২৩ সালে আমেরিকান লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়া হৃদরোগ, স্ট্রোক কিংবা মৃত্যুহার বাড়ায় না। বরং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন ১–২টি ডিম পুরোপুরি নিরাপদ এবং উপকারী।

ডিম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা উচ্চমানের প্রোটিন অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। শীতে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকে, আর ডিমের কুসুম এই ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হয়।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত ডিম খেলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, চোখের সমস্যা, মনে রাখার ক্ষমতা হ্রাস ও পেশি দুর্বলতার মতো ঝুঁকি কমে। কুসুমে থাকা ‘ভালো কোলেস্টেরল’ শরীরের জন্য উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখকে ক্ষতিকর আলো থেকে রক্ষা করে। ডিমে থাকা জিঙ্ক শীত–বিষয়ক অসুখ কাটাতেও সহায়তা করে।

তবে ডিমে অ্যাভিডিন নামের একটি উপাদান আছে, যা বায়োটিনের শোষণ কমাতে পারে। তাই অতিরিক্ত ডিম খাওয়া সবার জন্য উপযুক্ত নয়।সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ১–২টি ডিমই যথেষ্ট, শীতকালে এই পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে। কিন্তু হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরল আছে এমন ব্যক্তি সপ্তাহে ৪–৭টির বেশি ডিম খাবেন না এমন পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে খাদ্যতালিকা তৈরি করা উচিত।


বুকে জ্বালাপোড়া সামান্য নয়, কখন বুঝবেন এটি প্রাণঘাতী সমস্যার সংকেত?

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৩ ১১:০১:৪৯
বুকে জ্বালাপোড়া সামান্য নয়, কখন বুঝবেন এটি প্রাণঘাতী সমস্যার সংকেত?
ছবিঃ সংগৃহীত

বুকে জ্বালাপোড়া বা হার্টবার্ন হলো এক ধরনের সাধারণ হজমজনিত সমস্যা, যা প্রায়শই মশলাদার বা তেলযুক্ত খাবারের কারণে হয়। এটি ঘটে যখন অম্লীয় পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসে। হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সৌরভ সেথি সতর্ক করেছেন যে হার্টবার্ন সাধারণত গুরুতর নয়, তবে দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বিপজ্জনক জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

হার্টবার্ন ও এসোফেজিয়াল ক্যানসার

ডা. সেথি বলেন, তিনি সম্প্রতি এমন এক রোগী দেখেছেন যিনি দীর্ঘস্থায়ী হার্টবার্ন ভুগছিলেন এবং পরে এসোফেজিয়াল ক্যানসার হয়েছে।

কারণ হার্টবার্ন হয় যখন নিচের খাদ্যনালী স্ফিঙ্কটার (Lower Esophageal Sphincter) ঠিকভাবে বন্ধ হয় না এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসে।

বিপজ্জনক জটিলতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অম্লীয় অ্যাসিডের পুনরাবৃত্ত এক্সপোজার খাদ্যনালীর লাইনে প্রদাহ ও ক্ষতি সৃষ্টি করে, যা বারেট’স এসোফাগাস নামক প্রাক-ক্যানসার পদার্থ তৈরি করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী হার্টবার্ন প্রায়শই গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD)-এর সঙ্গে যুক্ত থাকে।

প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার কৌশল

সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এসোফেজিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব এবং হার্টবার্নের উপসর্গও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। ডা. সৌরভ সেথির গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলো নিম্নরূপ:

১. শোয়ার ভঙ্গি মাঝে মাঝে হার্টবার্ন হলে বাম পাশে শুতে চেষ্টা করুন। বালিশ দিয়ে মাথা উঁচু রাখলে রাতের রিফ্লাক্স কমে।

২. খাবারের সময় রাতের খাবার ঘুমের ৩-৪ ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত। খাওয়ার পর কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা পরে শুতে যান।

৩. অল্প খাবার কম পরিমাণে কিন্তু ঘনঘন খেলে পাকস্থলীর চাপ কমে।

৪. ডায়েট হার্টবার্ন সৃষ্টি করা খাবার চিহ্নিত করে এড়িয়ে চলুন। ফল, শাক-সবজি এবং হোল গ্রেইনের উপর জোর দিন।

৫. বর্জন মদ ও ক্যাফেইন সীমিত করুন, কারণ এগুলো রিফ্লাক্স বাড়ায়। ধূমপান ত্যাগ করুন।

৬. ওজন স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা হার্টবার্ন কমাতে সাহায্য করে।

৭. ওষুধ প্রয়োজনে ওভার-দ্যা-কাউন্টার অ্যান্টি-অ্যাসিড ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে নতুন ওষুধ শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন

ডা. সেথি সতর্ক করেছেন, “যদি হার্টবার্ন স্থায়ী হয়, বিশেষ করে যদি খাওয়ার সময় গিলে খাওয়ায় সমস্যা বা খাদ্য আটকে থাকার অনুভূতি থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।” তিনি মনে করিয়ে দেন, সব রোগীর ক্ষেত্রেই ক্যানসার হয় না।

দ্রষ্টব্য এই তথ্য পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। সর্বদা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।


শীতে অতিরিক্ত শীত লাগে কোন ভিটামিন কম থাকলে এই সমস্যা বাড়ে জানেন কি

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১১ ২০:৫৪:০০
শীতে অতিরিক্ত শীত লাগে কোন ভিটামিন কম থাকলে এই সমস্যা বাড়ে জানেন কি
ছবিঃ সংগৃহীত

শীতকাল এলে অনেকেই অনুভব করেন, কম্বল বা চাদরের নিচে থাকা সত্ত্বেও হাত ও পা সারা সময় ঠাণ্ডা থাকছে। এমন অবস্থায় হাতে-পায়ে কাঁপুনিও দেখা দিতে পারে, এবং সাধারণ ধারণা শীতের কারণেই এমনটা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যাটি শুধুমাত্র শীতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি হতে পারে শরীরে ভিটামিন বি-১২ সহ অন্যান্য ভিটামিনের অভাবের কারণে।

গবেষণা এবং চিকিৎসকদের মতে

শরীরে ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি থাকলে অতিরিক্ত শীত অনুভূত হয়। বিশেষ করে হাত ও পা তেমনভাবে গরম হয় না।

এছাড়া আয়রনের অভাবও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে। তাই কেবল শীতকে দায়ী করা ঠিক নয়।

ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের উপায়

শরীরে ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি পূরণের জন্য খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন জরুরি।

বি-১২ এর উৎস: মাছ, মাংস এবং ডিমের কুসুম নিয়মিত খেলে ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি দূর করা সম্ভব।

ওমেগা-থ্রি: সামুদ্রিক মাছ খেলে শরীরে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও পৌঁছায়, যা ভিটামিন বি-১২ এর কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ভিটামিন ডি: এছাড়া দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার শরীরে ভিটামিন ডি পূরণের জন্য সহায়ক।

ঝিনঝিন ভাব ও করণীয়

শীতের সময় হাত-পা ঠাণ্ডা হওয়া ছাড়াও যদি ঝিনঝিন ভাব অনুভূত হয়, তবে সেটিও ভিটামিন ঘাটতির নির্দেশ দিতে পারে। তাই এই সমস্যা উপেক্ষা না করে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও প্রয়োজনীয় পরামর্শের মাধ্যমে শীতের সময়ে হাত-পা ঠাণ্ডা থাকার সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। শরীরের এই সতর্ক সংকেতগুলো জানার মাধ্যমে সহজেই সমস্যাটি প্রতিরোধ করা যায়।


থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে ৫টি ঘরোয়া পানীয় ক্লান্তি দূর করে ওজন রাখবে স্বাভাবিক

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১১ ১৯:১৫:৩৪
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে ৫টি ঘরোয়া পানীয় ক্লান্তি দূর করে ওজন রাখবে স্বাভাবিক
ছবিঃ সংগৃহীত

অল্প কাজেই ক্লান্তি, সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব, ওজন বেড়ে যাওয়া কিংবা হঠাৎ কমে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলো দেখলে অনেকেই সমস্যার উৎস বুঝতে পারেন না। চিকিৎসকদের মতে, এগুলো থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সাধারণ উপসর্গ। শরীরের বিপাকক্রিয়া থেকে শুরু করে হরমোন নিঃসরণ পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে এই ছোট্ট থাইরয়েড গ্রন্থি।

থাইরয়েড গ্রন্থিটি কখনো অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে, আবার কখনো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। ফলে নিয়মিত ওষুধের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করা জরুরি, যা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

পুষ্টিবিদদের মতে, কিছু সহজ ঘরোয়া পানীয় নিয়মিত পান করলে থাইরয়েডের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই ৫টি কার্যকর পানীয় সম্পর্কে।

১. ঈষদুষ্ণ পানিতে লেবুর রস ও এক চিমটে সৈন্ধব নুন

প্রতিদিন সকালে ঈষদুষ্ণ পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে হজমশক্তি উন্নত হয়। থাইরয়েডের রোগীরা প্রায়ই শরীরের আর্দ্রতা ও ক্লান্তিজনিত সমস্যায় ভোগেন। এই পানীয় আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং বিপাকক্রিয়া সচল রাখে। অন্যদিকে সৈন্ধব নুনে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়ক।

২. সজনে পাতার চা

সজনেপাতা বা মোরিঙ্গা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, জিঙ্ক এবং আয়রনের একটি চমৎকার উৎস। এই উপাদানগুলো থাইরয়েড হরমোনের সমতা বজায় রাখে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। নিয়মিত সজনেপাতার চা পান করলে হরমোনের অসামঞ্জস্যজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়।

৩. জিরে-ধনে-মৌরি ভেজানো পানি

পেট পরিষ্কার ও লিভার সুস্থ রাখতে জিরে, ধনে ও মৌরি ভেজানো পানি অনেক উপকারী। এই মিশ্রণ শরীরের টক্সিন দূর করে ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। লিভারের কার্যকারিতা সঠিক থাকলে থাইরয়েড হরমোনের T3 ও T4-এর মাত্রাও সঠিক থাকে।

৪. ডাবের পানিতে এক চিমটে দারচিনি

ডাবের পানি শরীরকে ঠান্ডা রাখে ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। এর সঙ্গে এক চিমটে দারচিনি মিশিয়ে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতাও উন্নত হয়। এটি একটি সতেজ ও প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক হিসেবেও কাজ করে।

৫. অশ্বগন্ধা গাছের ছাল ভেজানো পানি

আয়ুর্বেদে অশ্বগন্ধা বহু যুগ ধরে হরমোন ভারসাম্য এবং মানসিক চাপ কমাতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমায়। ফলে শরীর থাকে উদ্যমী ও মন থাকে প্রশান্ত।

হরমোনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ঘুম, সঠিক খাবার এবং মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি এই পানীয়গুলোকে দৈনন্দিন রুটিনে যুক্ত করা যেতে পারে। তবে যেকোনো ঘরোয়া উপায় গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভালো।

সূত্র : এই সময়


৬০ দিনে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি: জীবনযাত্রার চাপ কমাতে ৫টি বিশেষ খাবার

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১০ ১৮:৩৪:৫৬
৬০ দিনে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি: জীবনযাত্রার চাপ কমাতে ৫টি বিশেষ খাবার
ছবিঃ সংগৃহীত

আজকের ব্যস্ত জীবনধারা এবং সেডেন্টারি লাইফস্টাইলের কারণে মানবদেহে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। জাঙ্কফুডের বৃদ্ধি এবং চলাফেরার অভাবে লিভারের ওপর চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ফ্যাটি লিভার বা লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার সমস্যা এখন ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যেও ব্যাপক হারে দেখা যাচ্ছে। অথচ লিভার আমাদের শরীরের বিপাক হার নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টি শোষণ এবং টক্সিন নিঃসরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে। লিভারের যত্ন না নিলে শরীরের স্বাস্থ্য দ্রুত বিঘ্নিত হয়।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, খাদ্যতালিকায় ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টিতে সমৃদ্ধ কিছু খাবার নিয়মিত রাখলে লিভারের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তারা বলছেন, মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে লিভারের ফ্যাট গলানো যেতে পারে।

লিভারের যত্নে কার্যকর ৫টি খাবার

১. গ্রিন টি

গ্রিন টিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যাটেচিন রয়েছে, যা লিভারের ফ্যাট কমাতে বিশেষভাবে সহায়ক। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মলিকুলার সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার সারাতে গ্রিন টি দারুণ কার্যকর। দিনে দুই থেকে তিন কাপ গ্রিন টি নিয়মিত খেলেই লিভারের স্বাস্থ্য বজায় থাকে।

২. বিটের রস

বিটের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক যৌগ লিভারের কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। এটি লিভারে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করতে এবং লিভারের সামগ্রিক কার্যকারিতা উন্নত করতে অত্যন্ত সহায়ক।

৩. হলুদ

হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এটি লিভারসহ শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। নিয়মিত রান্নার খাবারে হলুদ রাখলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে।

৪. শাকসবজি

মৌসুম অনুযায়ী তাজা শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখা লিভারের জন্য অপরিহার্য। এই সময়ে বাজারে পাওয়া পালংশাক, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, বিনস ও ক্যাপসিকামের মতো সবজিগুলো লিভারের প্রদাহ কমায়, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করে এবং ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।

৫. রসুন

রসুনে আছে সালফার সমৃদ্ধ যৌগ, যা শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে এবং লিভারের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। নিয়মিত রসুন খেলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পাঁচটি খাবার সঠিক খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করলে মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব।

সূত্র : এই সময়

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত