কাপ্তাই বাঁধে ১৬ গেট খোলা: কর্ণফুলীতে তীব্র পানি প্রবাহ

কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত পানি ছাড়তে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বাঁধের ১৬টি স্পিলওয়ে গেট একযোগে খুলে দিয়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ পানি এখন কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে এবং এর প্রভাবে রাঙামাটি শহর ও আশপাশের নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যেই প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, বুধবার ভোররাত ৩টায় প্রতিটি গেট সাড়ে তিন ফুট উঁচু করে খোলা হয়। বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬৩ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বুধবার সকাল ৮টায় কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১০৮ দশমিক ৯০ ফুট মীন সি লেভেল (এমএসএল)। অথচ হ্রদের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট এমএসএল। পানির স্তর যাতে বিপদসীমা অতিক্রম না করে, সেজন্যই গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবাহ আরও বাড়লে পানির নিষ্কাশনের মাত্রাও সমন্বয় করা হবে।
এদিকে, বাড়তি পানির প্রবাহে রাঙামাটি শহরের বেশ কয়েকটি নিচু এলাকা এবং আশপাশের উপজেলাগুলো আংশিকভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হ্রদের পানি বাড়তে থাকায় অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ও জমিজমা ডুবে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ পাহাড়ি ঢল নামলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা দ্রুত বেড়ে যায়। এ সময় বাঁধের নিরাপত্তা রক্ষায় ও নিচের দিকে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্পিলওয়ে গেট খোলা ছাড়া বিকল্প থাকে না। তবে অতিরিক্ত পানি প্রবাহে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি বাড়ে।
-সুত্রঃ বি এস এস
মহেশখালী-মাতারবাড়ি: পর্যটন ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল মহেশখালী ও মাতারবাড়ি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং শিল্প ও পর্যটনের সম্ভাবনা নিয়েও দ্রুত আলোচনায় আসছে। সরকার ইতিমধ্যেই দ্বীপাঞ্চলটির উন্নয়নে একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে মহেশখালীকে দেশের পরবর্তী শিল্পকেন্দ্র ও ইকো-ট্যুরিজম হাবে রূপান্তরের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই পরিকল্পনায় শুধু শিল্পায়ন নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইকো-ট্যুরিজম পার্ক, সংরক্ষণ এলাকা ও সবুজ করিডর গড়ে তোলা হবে, যাতে একদিকে পর্যটন বাড়ে, অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের জন্য টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। সম্প্রতি মহেশখালী ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (মিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এ পরিকল্পনা প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে উপস্থাপন করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, মাতারবাড়ির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় করছেন। কেউ গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প এলাকায় ঘুরতে যাচ্ছেন, কেউ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করছেন, আবার অনেকে বিকেলে শুধু সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা সানাউল্লাহ মুস্তাফা জানান, সরকারিভাবে পর্যটন জোন তৈরি হলে মাতারবাড়ি দ্রুত জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে, মহেশখালীর বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মনে করেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শুধু পর্যটনই নয়, বরং স্থানীয়দের জন্য বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তার মতে, কক্সবাজারের মতো প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক পর্যটক মহেশখালী-মাতারবাড়ি ভ্রমণে আসবেন। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার পর্যটক মহেশখালী ভ্রমণে আসেন, যা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বহুগুণে বাড়বে।
সরকারের ধারণা, এ উদ্যোগ সফল হলে কক্সবাজারের পর্যটন খাত অন্তত ১.৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। নতুন হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, পরিবহন ও গাইডিং সেবা চালু হলে কর্মসংস্থানও বাড়বে বহুগুণ।
ঢাকায় মিডার সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, ইকো-ট্যুরিজমের পাশাপাশি বনায়ন কার্যক্রমকেও গুরুত্ব দিতে হবে। “আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে—ভবিষ্যতে কেমন বন চাই,” তিনি মন্তব্য করেন।
প্রকল্পটি তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে: ২০২৫ থেকে ২০৩০, ২০৩০ থেকে ২০৪৫ এবং ২০৪৫ থেকে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত। ইতিমধ্যে মিডার ১২০ দিনের কর্মপরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে, আর পুরো মাস্টারপ্ল্যান ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রস্তুত হওয়ার কথা।
স্থানীয় রিকশাচালক আব্দুর রহিম বলেন, প্রতিদিন মহেশখালী ঘাট থেকে তিনি প্রায় হাজারখানেক পর্যটক বহন করেন। তার আশা, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আয় ও কাজের সুযোগ আরও বাড়বে।
সব মিলিয়ে মহেশখালী-মাতারবাড়ি কেবল শিল্প ও অবকাঠামো নয়, বরং পর্যটন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিলনস্থল হিসেবে গড়ে উঠতে যাচ্ছে। এ পরিকল্পনা সফল হলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অর্থনীতি নতুন গতি পাবে।
-এম জামান
ইইউ সংলাপ: ঢাকার অগ্রাধিকার বাণিজ্য, ইউরোপের নজর অনিয়মিত অভিবাসনে
বাংলাদেশে অভিবাসন ইস্যু নিয়ে নিয়মিত সংলাপে অংশ নিতে ইউরোপীয় কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় পৌঁছেছে। এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাইকেল শটার, যিনি ইউরোপীয় কমিশনের মাইগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাসাইলাম বিভাগের পরিচালক।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এ সংলাপে বাংলাদেশ পক্ষ মূলত বাণিজ্য বিষয়ক এজেন্ডা জোরালোভাবে তুলে ধরবে, অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বেশি গুরুত্ব দেবে অনিয়মিত অভিবাসন ও এর প্রতিকূল দিকগুলোতে। প্রতিনিধি দল আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
এদিকে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির (ডিআরওআই) চেয়ারম্যান মুনির সাতৌরির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি পৃথক প্রতিনিধি দল আগামী ১৫ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, সফরকালে তারা প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, এবং ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিশনের ভাইস-চেয়ার প্রফেসর আলী রিয়াজের সঙ্গে বৈঠক করবেন। একই সঙ্গে তারা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন।
প্রতিনিধি দল কক্সবাজারও সফর করবে, যেখানে তারা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সঙ্গে মতবিনিময় করবে এবং রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করবে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও এর মানবাধিকার উপকমিটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সুরক্ষা, উন্নয়ন এবং প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে এ সফর শুধু কূটনৈতিক সংলাপ নয়, বরং মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্নেও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
-সুত্রঃ বি এস এস
খুনের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধি: দেরিতে দায়ের হওয়া মামলার প্রতিফলন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৩ মাসের অপরাধের চিত্র আজ প্রকাশ করেছে সরকার। এতে দেখা গেছে, এ সময়ে খুনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি মনে হলেও এর বড় অংশ আসলে পূর্ববর্তী ১৬ বছরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, যেগুলোর মামলা ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের’ পর দায়ের করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তত ১,১৩০টি খুনের মামলা, যা শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলো দীর্ঘদিন গোপন রাখা হয় এবং পুলিশের নিরুৎসাহের কারণে মামলা করা যায়নি। কিন্তু শাসন পরিবর্তনের পর এসব মামলা আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালের অপরাধের বিভিন্ন সূচক কিছুটা উঁচু মনে হলেও এটি নতুন কোনো সহিংসতার ঢেউ নয়; বরং দেরিতে বিচারপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া। এখন সাধারণ নাগরিকরা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ভয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন না, ফলে তারা অপরাধের মামলা করতে পারছেন নির্ভয়ে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ডাকাতির ঘটনা ২০২৪ সালের ১,৪০৫ থেকে ২০২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১,৩১৪-তে। তবে ২০২৩ সালের আগের সময়ের তুলনায় এটি এখনো বেশি। এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হলো—পুলিশি হস্তক্ষেপমুক্ত পরিবেশে এখন সব ডাকাতির মামলা নিবন্ধিত হচ্ছে এবং নাগরিকরা আরও বেশি সচেতন হয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন।
এছাড়া, দ্রুত বিচার আইনে অপরাধের মামলা ২০২৪ সালের ১,২২৬ থেকে ২০২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৫১-এ। একই সময়ে দাঙ্গা মামলার সংখ্যা ১২৫ থেকে কমে ৫৯-এ এবং চুরির মামলা ৮,৬৫২ থেকে নেমে এসেছে ৬,৩৫৪-এ।
প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “যদিও খুনের সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে, বাস্তবে এটি নতুন সহিংসতা নয়, বরং পূর্বের দমন করা মামলার প্রকাশ।” অনেক হত্যাকাণ্ডের মামলা এমনকি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পুরোনো সময়ের।
সরকারের দাবি, এখন ভুক্তভোগীরা রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভয় পাচ্ছেন না। পুলিশও আর মামলা নিতে বাধা দিচ্ছে না। ফলে খুনের মতো গুরুতর অপরাধের তথ্য সামনে আসছে, আবার সাধারণ অপরাধ যেমন চুরি, ডাকাতি ও দাঙ্গার ঘটনা কমছে।
এভাবে অপরাধের চিত্র নতুন বাস্তবতাকে তুলে ধরছে—একদিকে দেরিতে হলেও ন্যায়বিচারের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
-সুত্রঃবি এস এস
নেপালে অস্থিরতা: বাংলাদেশি নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দূতাবাসের
নেপালে ব্যাপক অস্থিরতা ও সহিংস বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে কাঠমান্ডুস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সকল বাংলাদেশি নাগরিককে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। দূতাবাসের জারি করা জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের হোটেল বা বর্তমান আবাসস্থল থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এ মুহূর্তে নেপালে ভ্রমণ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশি নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দুটি হেল্পলাইন নম্বর চালু রাখা হয়েছে—সাদেক (+৯৭৭ ৯৮০৩৮৭২৭৫৯) এবং সারদা (+৯৭৭ ৯৮৫১১২৮৩৮১)।
নেপালে চলমান এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয় সরকারের সিদ্ধান্তে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করার পর, যেগুলো নতুন নিয়ন্ত্রক নীতির আওতায় নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ‘জেনারেশন জেড প্রোটেস্ট’ নামে পরিচিত বিক্ষোভে দেশজুড়ে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নামে। মূলত ছাত্র-যুবকরাই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়, যেখানে দুর্নীতি, কর্মসংস্থানের অভাব, শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং ডিজিটাল সেন্সরশিপ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
পরিস্থিতি দ্রুত ভয়াবহ রূপ নেয়। কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। এটি গত কয়েক দশকের মধ্যে নেপালের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা বলে উল্লেখ করছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। সহিংসতা ঠেকাতে রাজধানীসহ কয়েকটি বড় শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের এই সতর্কবার্তা বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
-সুত্রঃ বি এস এস
যে ভোট রাতেই করা যায়, সেটা দিনে টেনে রাখা কেন?- ফারুকী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে এবং বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। দীর্ঘ বিরতির পর আয়োজিত এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
নির্বাচনের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ও খ্যাতনামা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ভোট শুরুর পরপরই নিজের পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, “ডাকসুর মধ্য দিয়ে ইলেকশনের ট্রেনে উঠে গেল বাংলাদেশ। এরপর আসবে জাতীয় নির্বাচনের ট্রেন। সবাইকে নির্বাচন মোবারক।”
ফারুকী আরও লেখেন, “যে ভোট রাতারাতি করে ফেলা যায়, সেটি দিনের বেলায় পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখা হলো কেন? সময়মতো কাজ না করার প্রবণতা আমাদের জাতির বড় দুর্বলতা।”
তার মন্তব্যে ইঙ্গিত করা হয়, নির্বাচনকে সময়োপযোগী ও সুষ্ঠু আয়োজনের প্রতি জাতীয় মানসিকতার অভাব আজও প্রবলভাবে বিদ্যমান।
এদিকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই ইঙ্গিত করেছেন, দেশের ইতিহাসে সংঘটিত বিভিন্ন বিতর্কিত ও অশুভ রাজনৈতিক ঘটনার দায়ে অভিযুক্ত শক্তিগুলো আজ নির্বাচনী সংস্কৃতির স্বচ্ছতায় কথা বলার অবস্থায় নেই। তারা উল্লেখ করেছেন, লাইলাতুল ইলেকশনের জননী, ব্যাংক লুটের দায়ীরা, গুমের মাস্টারমাইন্ডরা, বিডিআর-পিলখানা ও জুলাই হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনাকারীরা এই শক্তিগুলোই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় বাধা ছিল।
তাদের মতে, যারা গণতন্ত্রকে রাতের আঁধারে বন্দি করে রেখেছিল, তারাই এখন নির্বাচনের প্রশ্নে নীরব থেকেছে। ইতিহাসের আলোকে এসব নীরবতা আসলে প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্দশার পেছনে তাদের ভূমিকা কতটা ভয়াবহ ছিল।
-রফিক
ভারতে ১২০০ টন ইলিশ পাঠাচ্ছে সরকার
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ১২.৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি-২ শাখার উপসচিব এস এইচ এম মাগফুরুল হাসান আব্বাসী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগ্রহী রপ্তানিকারকদের আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের (বিকেল ৫টা) মধ্যে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ইআরসি, আয়কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট, বিক্রয় চুক্তিপত্র এবং মৎস্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
রপ্তানি কমার কারণ কী?
গত বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা পরে ২ হাজার ৪২০ টনে নামিয়ে আনা হয়েছিল। এবার সেই পরিমাণ আরও কমে ১ হাজার ২০০ টন করা হলো।
যেসব রপ্তানিকারক এর আগে আবেদন করেছিলেন, তাদেরও নতুনভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
দুর্গাপূজা নিরাপত্তা নিয়ে কড়া বার্তা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
দুর্গাপূজা উপলক্ষে সন্ধ্যা ৭টার আগেই প্রতিমা বিসর্জন শেষ করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই, তবে নাশকতারোধে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা প্রস্তুত করেছে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এবার সারা দেশে ৩৩ হাজার মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে মণ্ডপগুলোতে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসার নিয়োগ করা হবে। তিনি বলেন, “পূজার সময় আশপাশের মেলায় মদ ও গাঁজার আসর বসানো যাবে না।”
নিরাপত্তায় ১৮ দফা নির্দেশনা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুত করা ১৮ দফা নির্দেশনার কিছু উল্লেখযোগ্য দিক নিচে দেওয়া হলো:
নিরাপত্তা জোরদার: পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবির দৃশ্যমান টহল এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে।
বিসর্জন ও মণ্ডপ ব্যবস্থাপনা: সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন শেষ করতে হবে। বিসর্জনস্থলে পর্যাপ্ত আলো ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল স্ট্যান্ডবাই থাকবে।
পর্যবেক্ষণ: প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক পাহারা ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ছাত্র-জনতাকে নিয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে।
সামাজিক পরিবেশ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো বক্তব্য বা গুজব ছড়ানো যাবে না। পটকা ও আতশবাজি পোড়ানো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারী নিরাপত্তা: পূজামণ্ডপে আসা নারীদের উত্ত্যক্ত করা ও ইভটিজিং রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “সীমান্ত এলাকায় বিজিবিকে পূজামণ্ডপের দায়িত্ব দেওয়া হবে। ঢাকায় লাইন করে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।”
‘প্রতিযোগিতা বাড়িয়েই উন্নত হবে সেবা’—উপদেষ্টা এস কে বশির
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) বহুল প্রতীক্ষিত তৃতীয় টার্মিনাল চালুর প্রাক্কালে যাত্রীসেবা নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা এস কে বশির। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, নতুন টার্মিনালে যাত্রীসেবা হবে মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক মানের, যা শিগগিরই আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ মানদণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সংস্থার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের বিষয়ে সরকার ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে বিমানের পাশাপাশি দ্বিতীয় একটি আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য প্রতিযোগিতা তৈরি করে সেবার মান উন্নত করা। সমন্বিতভাবে সবার সামর্থ্য কাজে লাগিয়েই আমরা যাত্রীসেবা বাড়াতে চাই। বিমানের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা ক্ষুণ্ন না করে, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যাতে যাত্রীসেবা কোনোভাবেই কমে না যায়।”
অন্যদিকে, নতুন টার্মিনালের কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) ও একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে তিন দিনের আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম দুটি অধিবেশন সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হলেও শেষ অধিবেশন পরিচালনা করবেন উপদেষ্টা বশির। আলোচনায় আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা আইএফসি-সহ সব অংশীজন অংশ নিচ্ছে।
সিএএবি সূত্র জানায়, আগে বিমানের জন্য দুই বছরের একচেটিয়া গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অধিকারের সিদ্ধান্ত কনসোর্টিয়ামের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছিল। তারা আরও বিস্তৃত কার্যকরী ক্ষমতা ও রাজস্ব ভাগাভাগির সুযোগ চাইছে। পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে বিমান ও টার্মিনালের বেসরকারি অপারেটরের মধ্যে একটি সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) সই হবে। যদি বিমান নির্ধারিত মানদণ্ডে ব্যর্থ হয়, তবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকবে।
বাংলাদেশে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কিত বিষয়। একমাত্র বিমানই বর্তমানে এ দায়িত্ব পালন করে আসছে এবং বছরে প্রায় ১,০০০ থেকে ১,২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। তবে যাত্রী ও বিদেশি এয়ারলাইন্সের অভিযোগ রয়েছে—বিলম্ব, দক্ষতার ঘাটতি, এমনকি মাঝে মধ্যে চুরির মতো সমস্যাও ঘটে থাকে। ফলে কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইন্স নিজেদের কর্মী নিয়োগ করেও সেবার মান রক্ষা করে, যদিও বিমানের ফি পরিশোধ করতে হয় তাদের।
বিমান অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে ৫৭ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনার গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করেছে। গত এক বছরে ৩,৬০০ নতুন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট (জিএসই) সংগ্রহে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলছে, আরও সরঞ্জাম আসছে বলেও জানানো হয়। বিমানের দাবি, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের হাতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দিলে জাতীয় রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্যদিকে, ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টার্মিনাল প্রকল্পের বড় অংশ অর্থায়ন করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। টার্মিনালটির মাধ্যমে বছরে ২ কোটি ৪০ লাখ যাত্রী ও ১২ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা তৈরি হবে।
২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই টার্মিনালে থাকছে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি প্রস্থানের ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি আগমনের ইমিগ্রেশন ডেস্ক ও তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক। সব মিলিয়ে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক বিমানবন্দর টার্মিনাল, যা বাংলাদেশের আকাশপথে নতুন যুগের সূচনা করবে।
-নাজমুল হাসান
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে নতুন রূপরেখা চূড়ান্ত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠছে জুলাই জাতীয় সনদ। দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। কমিশনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলো—সনদের যেসব প্রস্তাব সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেগুলো বাস্তবায়িত হবে রাষ্ট্রপতির বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে। অন্যদিকে সংবিধান সংশোধন ছাড়াই যেসব প্রস্তাব কার্যকর করা সম্ভব, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে সরকারের নির্বাহী আদেশ, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বা প্রাসঙ্গিক বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে। একই সঙ্গে পুরো সনদকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যদিও এটি তফসিল আকারে থাকবে নাকি অন্য কোনোভাবে যুক্ত হবে—সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে কমিশন সর্বসম্মতভাবে এ বিষয়ে একমত হয়েছে যে সনদকে সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ করতেই হবে।
গত রোববার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক দীর্ঘ বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা কমিশনের সঙ্গে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরিফ ভূইয়া ও ইমরান সিদ্দিক। তাঁরা সাংবিধানিক, আইনি ও রাজনৈতিক বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত উপায়। তাঁদের মতে, এই প্রক্রিয়ায় সংস্কার বাস্তবায়ন করা গেলে তা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বৈঠক শেষে জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যেকটি পরামর্শ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। কমিশনের লক্ষ্য হলো এমন একটি প্রস্তাব তৈরি করা যা শুধু আইনি ও সাংবিধানিক দিক থেকেই নয়, রাজনৈতিক বাস্তবতার দিক থেকেও গ্রহণযোগ্য হয়। কমিশন চাইছে, জুলাই সনদকে ঘিরে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে কোনো ধরনের বিতর্ক বা অচলাবস্থা তৈরি না হয়ে বরং এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার ভিত্তি হয়ে উঠুক।
তবে বাস্তবায়নের সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট। বিএনপির অবস্থান হলো, সংবিধান সংশোধনমূলক সংস্কার আগামী জাতীয় সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা হোক। বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ কয়েকটি দল জোর দাবি তুলেছে যে, আগামী নির্বাচনের আগেই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াত প্রস্তাব করেছে রাষ্ট্রপতির ঘোষণা বা গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার কার্যকর করার, আর এনসিপি বলছে গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সংস্কার আনতে হবে। আবার অন্তত ১০টি দল পরামর্শ দিয়েছে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নেওয়ার। তবে বিশেষজ্ঞরা এই পদ্ধতিকে কার্যকর নয় বলে মত দিয়েছেন এবং এর নেতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন।
জুলাই সনদের খসড়া ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। এতে তিনটি অংশ রাখা হয়েছে—প্রথমত সনদের পটভূমি, দ্বিতীয়ত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং তৃতীয়ত বাস্তবায়নের জন্য সাত দফা অঙ্গীকারনামা। অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ আছে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, বিদ্যমান আইনের পরিবর্তন, নতুন আইন প্রণয়ন, প্রাসঙ্গিক বিধি-প্রবিধির সংস্কার, শহীদদের স্বীকৃতি প্রদান, ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়।
চূড়ান্ত খসড়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমে সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেওয়ার প্রস্তাব ছিল, কিন্তু বিএনপির আপত্তির কারণে এটি বাদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সুপ্রিম কোর্টকে সনদের একমাত্র ব্যাখ্যাকারীর দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাবও বাতিল করা হয়েছে। আবার আদালতে সনদের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ না করার ধারাটি পরিবর্তন করে বলা হয়েছে—রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই এ ধরনের প্রশ্ন তুলবে না এবং বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
জুলাই সনদকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবের মূল দর্শন হলো, জনগণের অভিপ্রায়ই হবে সর্বোচ্চ আইন। রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো সম্মিলিতভাবে আলোচনার মাধ্যমে জনগণের অভিপ্রায়ের যে সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি তৈরি করেছে, সেটিই জুলাই সনদ। তাই এটি সংবিধানের তফসিল আকারে অথবা অন্য কোনো উপায়ে যুক্ত করা হবে। এভাবে সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলই হবে না, বরং এটি পাবে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় বৈধতা।
সবশেষে, সনদের অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়েছে যে দীর্ঘ ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এবং বিশেষ করে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। শহীদদের মর্যাদা রক্ষা, নিহত ও নিখোঁজদের ন্যায়বিচার, পরিবারগুলোর সহায়তা এবং আহতদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে। এভাবে সনদ শুধু ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারই নয়, বরং অতীত সংগ্রামের ন্যায়বিচার ও স্মৃতিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও বহন করছে।
পাঠকের মতামত:
- কাপ্তাই বাঁধে ১৬ গেট খোলা: কর্ণফুলীতে তীব্র পানি প্রবাহ
- জরায়ুর যত্নে সচেতনতা: নারীর সুস্থ জীবনের অপরিহার্য শর্ত
- মহেশখালী-মাতারবাড়ি: পর্যটন ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত
- ডোপ টেস্ট কী, কেন করা হয়, কেন এত এখন জরুরি
- একীভূতকরণ প্রসঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের ব্যাখ্যা
- বিজয়ের পর শিবিরের তিনটি কাজের নির্দেশ
- ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমকে নিয়ে জুলকারনাইন সায়েরের বার্তা
- স্বাস্থ্য জটিলতায় স্ত্রীকে নিয়ে বিদেশে বিএনপি মহাসচিব
- মাত্র ২৪ ঘণ্টায় নতুন প্রধানমন্ত্রী
- আসন পুনর্বিন্যাসে উত্তাল ফরিদপুরের ভাঙ্গা
- ইসরায়েলের হামলা, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
- ঢাবি ডাকসু: ভিপি–জিএস–এজিএস পদে শিবিরের দাপট
- ডাকসু নির্বাচনের ভোট শেষ, ফলাফলের আগে অস্থির ঢাবি—পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত পরিবেশ
- নিরাপদ কাতারেও হামলা! দোহায় ইসরাইলি হামলায় তোলপাড় আরব বিশ্ব
- ইইউ সংলাপ: ঢাকার অগ্রাধিকার বাণিজ্য, ইউরোপের নজর অনিয়মিত অভিবাসনে
- খুনের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধি: দেরিতে দায়ের হওয়া মামলার প্রতিফলন
- নেপালে অস্থিরতা: বাংলাদেশি নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দূতাবাসের
- বিক্ষোভে রক্তক্ষয়, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
- ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে, নির্বাচন স্বচ্ছ দাবি ঢাবি ভিসির
- টিএসসি কেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় ৩৫% ভোট
- অল্প সময়েই ছয় দফা বৃদ্ধি: স্বর্ণের বাজারে আগুন
- আবারও যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ইরান: সেনাপ্রধান হাতামির হুঁশিয়ারি
- থাকসিন শিনাওত্রার কারাদণ্ড: রাজনৈতিক বংশপরিচয়ের পতনের আভাস
- বার্মিংহামে বলিউডের ‘ওজিজি’ রানী: কারিনা কাপুর খানের সিলভার শাড়ি
- ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস: পোশাক নয়, স্টাইলের প্রদর্শনী
- বলিউডে বহিরাগতদের প্রতি ক্ষোভ, ‘নেপো বেবি’দের পক্ষ নিলেন তনিশা মুখার্জি
- মেক্সিকোতে ভয়াবহ ট্রেন-বাস সংঘর্ষে ১০ নিহত, আহত ৪১
- ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য
- বিদায় নিশ্চিত, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩
- উয়েফার নিয়ম মানতে প্রস্তুত হ্যারি কেইন ও দল
- পরিচালকের শেয়ার কেনা সম্পন্ন
- যে ভোট রাতেই করা যায়, সেটা দিনে টেনে রাখা কেন?- ফারুকী
- মহাবিশ্বে নতুন দৈত্য কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান
- বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে জোহরান মামদানি, নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচনে প্রগতিশীল ঢেউ
- গাজা অভিমুখী শান্তিপূর্ণ মিশনে হামলা
- প্রথমবার আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী বিদায়, ইতিহাস গড়ল ফ্রান্স
- জাতিসংঘ ক্ষুব্ধ, স্পেন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি—গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসযজ্ঞ তীব্রতর
- পাকিস্তান–চীন যৌথ অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত
- রজনীকান্ত–কমল হাসান আবারও একসঙ্গে বড় পর্দায়
- জাকসু নির্বাচন: প্রার্থীদের জন্য আজ বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট
- ভারত-নেপাল সীমান্তে সতর্কতা জারি
- ডাকসু নির্বাচন: ৪৭১ প্রার্থী, ৩৯ হাজার ভোটার, টানটান নিরাপত্তায় উৎসবমুখর ভোটযুদ্ধ
- ভারতে ১২০০ টন ইলিশ পাঠাচ্ছে সরকার
- স্ত্রীর কাছে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চাইলেন শরিফ ওসমান বিন হাদী, পেলেন শর্ত
- অনুমোদনের অপেক্ষায় রাশিয়ার ক্যান্সার ভ্যাকসিন
- নেপালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল রাজপথ
- খালেদা জিয়ার অসুস্থতার নাম ভাঙিয়ে ১৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি
- আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা’ মডেল? পুত্র জয় ও কন্যা পুতুলের দিকেই ইঙ্গিত
- নুরের শর্ট টাইম মেমোরি লস: ঢামেক পরিচালকের মন্তব্যে কাটল ধোঁয়াশা
- ডিএসই’র বাজার প্রতিবেদন: এক নজরে আজকের লেনদেন
- যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আস্থার শীর্ষে এএইচজেড
- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ভ্যালু, ভলিউম ও ট্রেডে শীর্ষ ২০ কোম্পানি
- ডাকসু নির্বাচনের ভোট শেষ, ফলাফলের আগে অস্থির ঢাবি—পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত পরিবেশ
- ডিএসই–৩০ সূচকের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর লেনদেনের চিত্র
- ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০২৪ সালের নগদ লভ্যাংশ বিতরণ সম্পন্ন
- শেয়ারবাজারে ফিরল স্বস্তি, শীর্ষে থাকা কোম্পানির তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- গোয়ালন্দে কবর অবমাননার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র নিন্দা
- নোয়াখালীর সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুরের অবৈধ সম্পদের পাহাড়
- দেড় বছর পর ঢাকায় স্থায়ী রাষ্ট্রদূত পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
- “তারেক রহমানের নেতৃত্বেই ঐক্য সম্ভব”
- ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- বাংলাদেশি ওষুধের সাফল্য: যুক্তরাজ্যে রেনেটার নতুন পদচারণা
- ডাকসু নির্বাচন: ৪৭১ প্রার্থী, ৩৯ হাজার ভোটার, টানটান নিরাপত্তায় উৎসবমুখর ভোটযুদ্ধ
- সৌদি রাজতন্ত্রের অজানা অধ্যায়: ক্ষমতার জন্য বাবা ও ভাইদের ছাড় দিলেন না মোহাম্মদ বিন সালমান