নবী ইউসুফ (আ.)-এর জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: কোরআনের আলোকে এক বিস্ময়কর যাত্রা

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ১২:৫১:৪৭
নবী ইউসুফ (আ.)-এর জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: কোরআনের আলোকে এক বিস্ময়কর যাত্রা
ছবি: সংগৃহীত

নবী ইউসুফ (আ.) ছিলেন ইয়াকুব (আ.)-এর পুত্র, যিনি ছিলেন ১২ সন্তানের মধ্যে অন্যতম ও প্রিয়তম। তাঁর জীবন কোরআনে বর্ণিত হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরায়—সূরা ইউসুফ। এই সূরায় তাঁর জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, শিক্ষা এবং ঘটনাবলি বর্ণিত হয়েছে সুসংহতভাবে।

ইয়াকুব (আ.)-এর প্রথম স্ত্রী লাইয়ার ঘরে জন্ম হয় তাঁর প্রথম ১০ পুত্রের। পরবর্তীতে লাইয়ার বোন রাহিলকে বিয়ে করলে তাঁর ঘরে জন্ম নেন ইউসুফ (আ.) ও বেনিয়ামিন। জন্ম থেকেই ইউসুফ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে, ছোটবেলায় ইউসুফ (আ.) একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে ১১টি তারা, সূর্য ও চন্দ্র তাঁকে সিজদা করছে। এই স্বপ্ন ছিল তাঁর নবুয়তের ইঙ্গিত। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৪)

বাবা ইয়াকুব (আ.) ইউসুফ (আ.)-কে বিশেষভাবে স্নেহ করতেন, যা অন্য ভাইদের মধ্যে ঈর্ষার জন্ম দেয়। হিংসাবশত একদিন ভাইয়েরা তাঁকে একটি কুয়ার মধ্যে ফেলে আসে এবং বাবাকে বলেন, ইউসুফ (আ.) মারা গেছে। এই মিথ্যা খবরে শোকে-বেদনায় দৃষ্টিশক্তি হারান ইয়াকুব (আ.)। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১৮)

পরে এক কাফেলা কুয়া থেকে ইউসুফ (আ.)-কে উদ্ধার করে মিসরে নিয়ে যায় এবং সেখানকার আজিজ কিতফির তাঁকে কিনে নেন। কিতফিরের প্রাসাদেই বড় হয়ে ওঠেন ইউসুফ (আ.)। তাঁর সৌন্দর্য, সততা ও চরিত্র ছিল সকলের কাছে বিস্ময়কর।

কিন্তু কিতফিরের স্ত্রী জুলেখা তাঁর প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। একদিন তিনি ইউসুফ (আ.)-কে খারাপ কাজে প্রলুব্ধ করতে চাইলে ইউসুফ (আ.) আল্লাহর ভয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। দরজা বন্ধ করে পাপের আহ্বান জানানো হলে ইউসুফ (আ.) দৌড়ে বের হয়ে আসেন। দরজা খুলে যায় এবং সেখানেই উপস্থিত হন কিতফির। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক উঠলে জামার দিক দেখে সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ করা হয়। জামা পেছন থেকে ছিঁড়েছিল বলে প্রমাণিত হয় ইউসুফ (আ.)-ই নির্দোষ। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ২৬-২৮)

তবুও সম্মান রক্ষায় ইউসুফ (আ.)-কে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি অন্য বন্দিদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতেন এবং আল্লাহর পথে আহ্বান করতেন। এ সময় মিসরের বাদশাহ এক জটিল স্বপ্ন দেখেন, যার ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেননি। ইউসুফ (আ.) জেল থেকে সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে বাদশাহকে সন্তুষ্ট করেন।

এই ব্যাখ্যার ফলে বাদশাহ তাঁকে মুক্তি দেন এবং মিসরের ধনভাণ্ডার ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। কোরআনের ভাষায়, তাঁকে ‘মর্যাদাশীল ও বিশ্বস্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৪-৫৬)

জুলেখার প্রতি ইউসুফ (আ.)-এর কোনো প্রেম ছিল না। বরং জুলেখা একতরফাভাবে তাঁকে ভালোবাসতেন। কোরআনে তাদের বিয়ের বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি, তবে কিছু তাফসির মতে কিতফিরের মৃত্যুর পর এবং তাওবার পর জুলেখার সঙ্গে ইউসুফ (আ.)-এর বিয়ে হয়েছিল।

ইউসুফ (আ.)-এর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় থেকে শিক্ষা নেওয়ার মতো অসংখ্য বিষয় রয়েছে—বিশ্বাস, ধৈর্য, সততা ও আল্লাহর ওপর নির্ভরতা—যা আজও মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ