পুরুষের সাজে নারী, নারীর সাজে পুরুষ: ইসলামে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও লানতের বার্তা

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ১১:০৮:২১
পুরুষের সাজে নারী, নারীর সাজে পুরুষ: ইসলামে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও লানতের বার্তা

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক পরিচয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত রয়েছে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেই ধারাবাহিকতায় ইসলাম ব্যক্তি পরিচয়ে লিঙ্গ বিভ্রান্তি তৈরি করে এমন সাজসজ্জা, পোশাক বা আচরণকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। বিশেষ করে কোনো পুরুষ যদি নারীর পোশাক, অলংকার কিংবা সাজসজ্জা ধারণ করে, কিংবা কোনো নারী যদি পুরুষের পোশাক ও ভঙ্গি অবলম্বন করে, তাহলে তা শরিয়তের দৃষ্টিতে গুরুতর গুনাহ এবং অভিশপ্ত কাজ হিসেবে বিবেচিত।

এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে স্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন পুরুষদের ওপর লানত করেছেন, যারা নারীর সাজ-পোশাক পরিধান করে এবং সেই নারীদের ওপরও, যারা পুরুষের সাজ-পোশাক ধারণ করে। আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত এ হাদিসটি সুনানে আবু দাউদে স্থান পেয়েছে, যা ইসলামের বিধিবদ্ধ পোশাকনীতি ও সামাজিক মূল্যবোধের একটি শক্ত দলিল।

ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এখানে নিছক কাপড়-চোপড়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে, লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়ের স্বচ্ছতা রক্ষা করা এবং নারী-পুরুষের মধ্যে আল্লাহপ্রদত্ত প্রাকৃতিক ব্যবধানকে শ্রদ্ধা জানানো। সামাজিক প্রেক্ষাপটে যেসব পোশাক ও সাজসজ্জা একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গের জন্য স্বীকৃত, ইসলাম তা অনুসরণের নির্দেশ দেয়। অর্থাৎ, যে দেশে বা সমাজে কোনো পোশাক পুরুষদের জন্য বিশেষায়িত, সেই অঞ্চলের নারীদের তা পরিধান থেকে বিরত থাকতে হবে। আবার যেসব পোশাক নারীদের জন্য চিহ্নিত, সেগুলো পুরুষদের জন্য পরিহারযোগ্য। তবে কোনো পোশাক বা সাজসজ্জা যদি স্থানীয় সংস্কৃতিতে উভয় লিঙ্গের মধ্যেই সমভাবে গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে তাতে ধর্মীয় দৃষ্টিতে আপত্তি থাকে না।

শুধু পোশাকেই নয়, কথাবার্তা, হাঁটাচলা, অঙ্গভঙ্গি এবং সামাজিক আচরণেও নারীসুলভ ভঙ্গিতে পুরুষদের নিজেকে উপস্থাপন কিংবা পুরুষসুলভ ভঙ্গিতে নারীদের নিজেদের তুলে ধরা ইসলাম সমর্থন করে না। বুখারি শরিফে বর্ণিত একটি হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের মধ্যে যারা নারীসুলভ আচরণ করে এবং নারীদের মধ্যে যারা পুরুষদের ভঙ্গি ধারণ করে, তাদের ওপর অভিশাপ দিয়েছেন।

তবে এই নির্দেশনাগুলো চূড়ান্তরূপে প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করে। যারা জন্মগতভাবে শারীরিক বা আচরণগতভাবে কিছুটা বিপরীত লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য বহন করে, তাদের ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত আচরণ বা প্রকৃতিগত দুর্বলতা গুনাহের পর্যায়ে পড়ে না। বরং ইসলাম তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে এবং চায় তারা চিকিৎসা, মানসিক শক্তি ও ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের প্রকৃত জৈবিক পরিচয়কে রক্ষা করার চেষ্টা করবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ