ভারতকে শুল্কের চাপে ফেললেন ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ১০:৪৭:৫৮
ভারতকে শুল্কের চাপে ফেললেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে অগ্রগতি না হলে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাঁচ দফা আলোচনা শেষে এখনও চুক্তির কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ বাড়ছে। তবে সব সংকটের মাঝেও নয়াদিল্লি একটি বিস্তৃত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আশাবাদী।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, "হ্যাঁ, আমার মনে হয় ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ সম্ভব", যা স্পষ্টত ভারতের জন্য এক কঠোর বাণিজ্য হুঁশিয়ারি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তবে ভারত সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে ধরে নিয়েও দেশটি এখনও আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা অর্জনে আশাবাদী। ওই কর্মকর্তা বলেন, "আগামী আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল দিল্লি সফর করবে। ইতোমধ্যেই আমরা আলোচনায় ভালো অগ্রগতি করেছি।"

তার ভাষ্যমতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চিঠির মাধ্যমে ২০ বা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিতে পারেন, কিন্তু সেটিকে ভারত সাময়িক ও কৌশলগত চাপের কৌশল হিসেবে দেখছে।

একই দিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, পৃথক বাণিজ্য চুক্তি না থাকা দেশগুলোর জন্য তাঁর প্রশাসন ‘বিশ্ব শুল্ক’ নামে নতুন একটি হার চালু করবে, যেখানে অধিকাংশ রপ্তানিকারক দেশকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হতে পারে। বর্তমানে গড় শুল্কহার ১০ শতাংশ হলেও তা কয়েক মাসের মধ্যেই দ্বিগুণের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।

এই নীতির আওতায় বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশকে নতুন শুল্ক কাঠামোর বিষয়ে জানানো হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিতে, দ্রুত নয় বরং ‘ভালো ও লাভজনক চুক্তি’ অর্জনই মুখ্য।

ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল আলোচনাকে ‘গঠনমূলক ও ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "ভারত কয়েকটি পণ্যে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে এবং অশুল্ক বাধা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়েও কাজ করছে।"

তবে কিছু স্পর্শকাতর খাতে ভারত আপস করতে নারাজ। যেমন: কৃষি ও দুগ্ধ খাত। জিন-পরিবর্তিত ভুট্টা বা সয়াবিন আমদানির বিষয়ে ভারত এখনও অনড়, এবং দুগ্ধ খাত উন্মুক্ত করার ব্যাপারেও আপত্তি রয়েছে।

২০২৪ সালে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভারতীয় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার যা ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে ভারসাম্যহীন।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকি এবং রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ও ডি-ডলারাইজেশনের মতো ভূরাজনৈতিক ইস্যুকে মাথায় রেখে ভারত এখন চুক্তিতে আরও কৌশলগত দৃষ্টি রাখছে। এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, "আমরা এমন একটি বাণিজ্য চুক্তি চাই, যা ভারতের রপ্তানিকারকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করবে।"

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, চুক্তি না হলে ভারতীয় রপ্তানি পণ্য গড়ে ২৬ শতাংশ শুল্কের সম্মুখীন হতে পারে যা ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, জাপান কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের তুলনায় অনেক বেশি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ