মাইলস্টোন দুর্ঘটনা

মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, তদন্তের দাবি নানা মহলের

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৪ ০৮:৩৩:৪৫
মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, তদন্তের দাবি নানা মহলের
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আসায় ব্যাপক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি একাধিক সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে তথ্যবিভ্রাট দেখা যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বুধবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা জানানো হয়েছে ২৯ জন। তবে আইএসপিআর জানায়, এ সংখ্যা ৩১। আর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে নিহতের সংখ্যা ৩২ জন বলা হয়েছে, যার মধ্যে ছয় জনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত নয়।

এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে দাবি করছেন, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরও বেশি, এমনকি শতাধিক। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, নিহতদের লাশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে বা গুম করা হয়েছে—যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট ছড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল হোসেনের সই করা পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বুধবার দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ২৯ জন। আর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন ৬৯ জন।

মারা যাওয়া ২৯ জনের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১১ জন, সিএমএইচে ১৫ জন, ঢাকা মেডিক্যালে ১ জন, লুবানা জেনারেল হাসপাতালে ১ জন এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন ছিলেন।

চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ৪৪ জন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে, ২১ জন সিএমএইচে, বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান মন্তব্য করেছেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হতে পারে। তাঁর বক্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে সরকারের তথ্য নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

দুর্ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে স্কুলমাঠে উদ্ধার অভিযান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা এবং হেলিকপ্টার ওঠানামা দেখেই উৎসুক জনতা ও অভিভাবকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন ওঠে। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, স্কুলমাঠ থেকে হেলিকপ্টারে লাশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এমন দাবিকে ঘিরেই কিছু অভিভাবক ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যা পরে মিটে যায়।

ফেসবুক, এক্স এবং ইউটিউবে অনেকে পোস্টে দাবি করছেন, সরকার হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা লুকাতে চাইছে। কেউ কেউ ‘গুম’ এবং ‘লাশ সরিয়ে ফেলা’র মতো গুরুতর অভিযোগ করছেন।

সাইবার বিশেষজ্ঞ মেহরাব হোসেন বলেন, ‘ছবির খণ্ডাংশ, অডিও ক্লিপ ও ভুল তথ্য ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো সহজ হয়ে উঠেছে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষিকা বিলকিস আরা আইরিন বলেন, “স্কুলে কোন বাচ্চা ক্লাস করেছে তা খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়। তাই সংখ্যাগত বিভ্রান্তির সুযোগ থাকার কথা না।”

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তথ্যে পার্থক্য থাকলেও সেগুলো সমন্বয় করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, “বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা সম্ভব নয়। নিখোঁজের তথ্য হাসপাতাল ও পরিবার থেকে সরাসরি আসে, তাই তথ্য গোপনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, অপপ্রচার রোধে সরকার, সেনাবাহিনী, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে কাজ করছে। নিখোঁজ কেউ থাকলে তা বিদ্যালয়ের রেজিস্টার খাতা ও উপস্থিতির তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত করা হবে।

স্কুল কর্তৃপক্ষও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. জিয়াউল আলম এবং সদস্যরা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে হতাহতদের তালিকা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন জমা দেবেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ দাবি করেছেন, “তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।” তিনি বলেন, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ ও নিহতদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ না করলে নাগরিকদের মধ্যে সরকারের ওপর আস্থা দুর্বল হবে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ