জরুরি অবস্থা নিয়ে নতুন নিয়ম, ক্ষমতা আর একক নয়

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৪:৩৬:০৪
জরুরি অবস্থা নিয়ে নতুন নিয়ম, ক্ষমতা আর একক নয়

জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা যেন আর একক রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত না হয়—এই লক্ষ্যেই নতুন সংবিধানিক বিধান তৈরিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায়, গত রোববার (১৩ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই ঐকমত্যে পৌঁছায় তারা। সংলাপের এটি ছিল ১২তম দিন।

বর্তমান সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের মতো পরিস্থিতিতে অনধিক ১২০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। তবে এ ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত অনুমোদন আবশ্যক। কিন্তু আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো এই বিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। তাদের প্রস্তাবিত নতুন ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে যে জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারির মতো পরিস্থিতিতে হুমকি দেখা দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে তিনি অনধিক ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। তবে এ ঘোষণার বৈধতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার পূর্বানুমোদন গ্রহণ বাধ্যতামূলক হবে।

সংলাপে এ-ও প্রস্তাব করা হয় যে, জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকদের কিছু মৌলিক অধিকার যেন অক্ষুণ্ণ থাকে। বিশেষ করে, জীবন রক্ষার অধিকার এবং নির্যাতন বা অমানবিক ও মর্যাদাহানিকর আচরণ থেকে মুক্ত থাকার অধিকার যেন সংরক্ষিত থাকে—তা নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে নাগরিক অধিকার খর্ব হওয়ার ঝুঁকি কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে, ‘জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে’—এই প্রস্তাব ঘিরে দলগুলোর মধ্যে কিছুটা মতবিরোধ দেখা দেয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রস্তাব করেন, শুধু মন্ত্রিসভার নয় বরং একটি সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আহমদ আবদুল কাদেরও এ প্রস্তাবে সুর মিলিয়ে বলেন, জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মন্ত্রিসভার পাশাপাশি বিরোধীদলের অংশগ্রহণ থাকা প্রয়োজন।

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আলোচনার এক পর্যায়ে প্রস্তাব দেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বা নেত্রীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এতে সমর্থন জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন প্রশ্ন তোলেন—যদি বিরোধীদলীয় নেতা উপস্থিত না থাকেন, তবে কে বৈঠকে থাকবেন? তখন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার ব্যাখ্যা দেন যে, বিরোধীদলীয় উপনেতাও মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগদানের যোগ্য এবং তাঁর মর্যাদা মন্ত্রী পর্যায়ের।

সবশেষে আলোচনা শেষে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো হয়। সিদ্ধান্ত হয়, জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য এখন থেকে প্রধানমন্ত্রীর নয়, বরং মন্ত্রিসভার অনুমোদনই হবে চূড়ান্ত। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করা হবে যে, ওই মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা, অথবা তাঁর অনুপস্থিতিতে উপনেতা উপস্থিত থাকবেন। ফলে এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে জরুরি অবস্থা ঘোষণাকে আর একক ক্ষমতার ইচ্ছাধীন করে রাখবে না, বরং তা হবে একটি যৌথ ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ