আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থার পুনঃনির্বাচনে লন্ডনে বাংলাদেশের প্রার্থিতা ঘোষণা

শহিদুল ইসলাম
শহিদুল ইসলাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১৭:৪৪:১৬
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থার পুনঃনির্বাচনে লন্ডনে বাংলাদেশের প্রার্থিতা ঘোষণা

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থা (IMO) কাউন্সিলের আসন্ন নির্বাচনে পুনঃনির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) লন্ডনে সংস্থাটির সদর দপ্তরে এ প্রার্থিতা উপস্থাপন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।

বাংলাদেশ যে ক্যাটাগরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেটি হলো ‘সি ক্যাটাগরি’, যেখানে এ বছর মোট ২৭টি দেশ অংশ নিচ্ছে এবং এর মধ্যে ২০টি দেশ নির্বাচিত হবে। IMO কাউন্সিলের তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে: ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে সাধারণত সামুদ্রিক পরিবহন ও নৌচলাচলের প্রতি আগ্রহী দেশগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়। প্রতিটি নির্বাচিত দেশ দুই বছরের জন্য সদস্য পদে থাকে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাড়াও নির্বাচিত হয়েছিল বাহামা, চিলি, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, মিশর, ফিনল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, জ্যামাইকা, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মাল্টা, মেক্সিকো, মরক্কো, পেরু, ফিলিপাইন, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর এবং তুরস্ক।

প্রার্থিতা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং IMO-তে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আবিদা ইসলাম, সংস্থাটির মহাসচিব আর্সেনিও ডমিনগুয়েজ এবং IMO-তে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা।

সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত একটি সামুদ্রিক জাতি হিসেবে বাংলাদেশ তার ঐতিহ্য ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ করে আসছে। তিনি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং নির্মাণাধীন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৬ সালে IMO-তে সদস্যপদ লাভের পর থেকে বাংলাদেশ সবসময় নিরাপদ, সুরক্ষিত ও টেকসই নৌপরিবহনকে সমর্থন করে এসেছে। বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ খাতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং বর্তমানে ২১,০০০-এর বেশি বাংলাদেশি নাবিক আন্তর্জাতিক জাহাজে কর্মরত রয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেক নারীও রয়েছেন। এছাড়া পরিবেশবান্ধব জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে অগ্রগামী, যেখানে বৈশ্বিক সক্ষমতার প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশ জোগান দিচ্ছে।

এ সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে IMO কাউন্সিলের সদস্যপদে পুনঃনির্বাচিত হলে কয়েকটি অঙ্গীকার তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সামুদ্রিক অনুশীলনকে উৎসাহিত করা, পরিবেশবান্ধব জাহাজ ভাঙা খাতকে সমর্থন করা, সামুদ্রিক খাতে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করা।

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থা বা IMO হচ্ছে জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা, যার মূল দায়িত্ব জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলে জাহাজ থেকে সৃষ্ট দূষণ প্রতিরোধ করা। IMO এর কার্যক্রম জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাহাজের নকশা, নির্মাণ, অপারেশন, নিরাপত্তা, ইকো-ফ্রেন্ডলি প্রযুক্তি, জ্বালানি দক্ষতা ও জনবল ব্যবস্থাপনা—সবই এই সংস্থার কর্মপরিধির অন্তর্ভুক্ত।

বর্তমানে IMO-এর সদস্য সংখ্যা ১৭৬টি দেশ এবং তিনটি সহযোগী সদস্য রয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৭৬ সালে এ সংস্থার সদস্য হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আশা করছে, আগের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবারও বাংলাদেশ IMO কাউন্সিলে সদস্যপদ পুনরায় লাভ করবে এবং বৈশ্বিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর অবদান রাখবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ