রাজু ভাস্কর্যে গর্জে উঠল জাতীয় সংগীত

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৩ ০৮:০৬:৫০
রাজু ভাস্কর্যে গর্জে উঠল জাতীয় সংগীত

সত্য নিউজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে সোমবার সন্ধ্যায় আকাশে-বাতাসে প্রতিধ্বনিত হলো জাতীয় সংগীত—‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা একযোগে জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতীয় পতাকার মর্যাদা প্রশ্নে কোনো আপস নয়।

ঘটনার পটভূমি

১০ মে শাহবাগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কিছু ব্যক্তিকে জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার প্রতিবাদেই সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমবেত কণ্ঠে গেয়ে উঠেন জাতীয় সংগীত।

উপস্থিত সংগঠন ও পরিবেশ

সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে রাজু ভাস্কর্য চত্বরে আয়োজিত এই প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নেয় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। সংগীত পরিবেশনের আগে ও পরে ক্যাম্পাস জুড়ে প্রতিধ্বনিত হয় বিভিন্ন স্লোগান—‘তুমি কে আমি কে, বাংলাদেশি বাংলাদেশি’, ‘একাত্তরের বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘গর্জে ওঠো আরেকবার’ ইত্যাদি।

আয়োজকদের বক্তব্য: ‘বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি ছাড়া বিকল্প নেই’

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, “বাংলাদেশে কোনো পাকিস্তানপন্থা, ভারতপন্থা নয়—শুধু বাংলাদেশপন্থী রাজনীতিই চলবে।" তিনি প্রশ্ন তোলেন, “গোলাম আযম এই বাংলার কে? যারা একাত্তরে বিরোধিতা করেছে, তারা কখনোই এই বাংলার অংশ হতে পারে না।”

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা জানান, “জাতীয় সংগীত গাওয়াটাও আজ একপ্রকার রাজনৈতিক প্রতিবাদ। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনো সক্রিয়ভাবে একাত্তরের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করছে।” তিনি শাহবাগে সংগীত গাওয়ার সময় বাধা দেওয়ার ঘটনাকে ‘সাম্প্রতিককালের অন্যতম গুরুতর রাজনৈতিক সংকেত’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, “একাত্তর আমাদের অস্তিত্বের জায়গা—এ বিষয়ে আমরা কোনো আপস করব না।”

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, “যে ঐক্যে জাতীয় সংগীত গাওয়ার স্বাধীনতা থাকবে না, সে ঐক্য চূড়ান্তভাবে বাতিলযোগ্য। আমরা গণহত্যাকারীদের ‘স্পেস’ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক একতা চাই না।”

উপস্থিতি ও বার্তা

আন্দোলনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন না, যা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী রাজনৈতিক অবস্থানগত পার্থক্য নির্দেশ করে। আন্দোলনের মূল বার্তা ছিল—একাত্তরের চেতনায় বিশ্বাসী ছাত্রসমাজ আজও সক্রিয়, এবং তারা সব ধরনের মৌলবাদী বা স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে।

রাজু ভাস্কর্যে গাওয়া এই জাতীয় সংগীত ছিল কেবল একটি সাংস্কৃতিক কর্মসূচি নয়; এটি ছিল এক প্রজন্মের কণ্ঠে তাদের চেতনাগত অবস্থান ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার প্রকাশ। ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে এটি ছিল একটি স্পষ্ট বার্তা—বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে বাংলাদেশপন্থী হতে হবে। আর জাতীয় সংগীত কোনো দলের সম্পত্তি নয়, এটি জাতির ঐক্যের প্রতীক।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ