স্বাস্থ্য কথন
দুশ্চিন্তা যেভাবে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি করে

দুশ্চিন্তা—শব্দটি শুনলেই মনে আসে এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই মানসিক চাপ আপনার শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে? আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, দীর্ঘমেয়াদি দুশ্চিন্তা ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয় এবং একাধিক জটিল শারীরিক রোগের জন্ম দেয়। Healthline ও Mayo Clinic-এর মতো বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাইটের তথ্যে এই বাস্তবতা বারবার উঠে এসেছে। নিচে আমরা তুলে ধরেছি দুশ্চিন্তার শারীরিক প্রভাব, কারণ ও প্রমাণ নিয়ে এক গভীর ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ।
দুশ্চিন্তার শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া
দুশ্চিন্তার সময় মস্তিষ্ক “ফাইট-অর-ফ্লাইট” সিস্টেম সক্রিয় করে, যেখানে হাইপোথ্যালামাস-পিটুইটারি-অ্যাড্রিনাল (HPA) অক্ষ এবং সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র জেগে ওঠে। ফলস্বরূপ, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল নিঃসৃত হয়। অ্যাড্রেনালিন তাৎক্ষণিক শক্তি ও রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে, আর কর্টিসল শরীরে গ্লুকোজ সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া উপকারী, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই হরমোনগুলোর অতিরিক্ত ক্ষরণ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, পরিপাক কার্যক্রম ও ঘুমসহ নানা প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
হৃদ্যন্ত্র ও রক্তচাপের উপর প্রভাব
উদ্বেগে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, বুক ধড়ফড় করে, এমনকি ব্যথাও অনুভূত হতে পারে। ক্রমাগত দুশ্চিন্তা উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে, যা হার্ট অ্যাটাক ও করোনারি ধমনী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যাঁরা পূর্ব থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত, তাঁদের জন্য উদ্বেগ একটি বড় ট্রিগার হিসেবে কাজ করে।
পরিপাকতন্ত্রের ক্ষয়ক্ষতি
দুশ্চিন্তার কারণে হজম ধীর হয়ে যায়। এর ফলে পেটব্যথা, গ্যাস, বমিভাব, এমনকি ডায়রিয়া হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ ক্ষুধা কমায় এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS) বা পেপটিক আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের উদ্বেগের মাত্রা বেশি, তাঁদের পেটে ঘা হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া
স্বল্পমেয়াদী দুশ্চিন্তা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা বিপরীত প্রভাব ফেলে। কর্টিসল হরমোন ইমিউন কোষগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, ফলে ঠান্ডা-কাশি, সংক্রমণ ও ফ্লু-এর মত রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। এমনকি টিকার কার্যকারিতাও কমে যেতে পারে।
শ্বাসপ্রশ্বাস ও পেশী-স্নায়ুর জটিলতা
উদ্বেগের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়, অনেক সময় হাইপারভেন্টিলেশন হয়, যা মাথা ঘোরা ও ঝিমঝিম ভাব তৈরি করে। হাঁপানি ও COPD রোগীদের ক্ষেত্রে এই অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। পেশীগুলো ক্রমাগত সঙ্কুচিত থাকায় ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে ব্যথা দেখা দেয়, এবং তা থেকে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনও হতে পারে।
ঘুম ও ক্লান্তিভাব
দুশ্চিন্তা ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে। ফলে ঘুম না আসা, দুঃস্বপ্ন, কিংবা বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় ক্লান্তিভাব, শক্তিহীনতা এবং আরও উদ্বেগ তৈরি হয়—একটি দুষ্টচক্রের মতো।
দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগ: ক্রনিক রোগের ঝুঁকি
দুশ্চিন্তা ধীরে ধীরে শরীরে “নীরব বিষ” হিসেবে কাজ করে। এতে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হজমজনিত সমস্যা, সংক্রমণ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে। মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, ফলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তিও দুর্বল হতে পারে।
প্রমাণ ও গবেষণালব্ধ সত্য
২০১৬ সালে Celano et al.-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্বেগ বিকারে আক্রান্ত রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ২০১৫ সালের আরেক গবেষণায় আলসার, হাঁপানি ও হৃদরোগের সাথে উদ্বেগের সরাসরি সংযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালের স্টাডিতে প্রবীণদের মধ্যে উদ্বেগ ও হৃদরোগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে।
Psychosomatic উপসর্গসমূহ
দুশ্চিন্তা মূলত মানসিক হলেও তার বহিঃপ্রকাশ হয় দেহে। কিছু সাধারণ উপসর্গ:
- পেটের সমস্যা: ব্যথা, ডায়ারিয়া, বমিভাব
- মাথাব্যথা: টেনশন হেডেক বা মাইগ্রেন
- ঘুমের সমস্যা: অনিদ্রা ও দুঃস্বপ্ন
- হৃদযন্ত্রের উপসর্গ: বুক ধড়ফড়, ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট: শ্বাস আটকে যাওয়ার অনুভূতি
- কম্পন ও পেশী টান: ঘাড় ও কাঁধে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
এই উপসর্গগুলোর পেছনে যদি অন্য কোনও শারীরিক রোগ ধরা না পড়ে, তবে তা দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ভূত মনোদৈহিক উপসর্গ হতে পারে।
দুশ্চিন্তা মানসিক চাপের চেয়ে অনেক বেশি কিছু—এটি একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি। একে অবহেলা করলে তা কেবল মনের নয়, শরীরের প্রতিটি কোণায় দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই সময়মতো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা ও চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ইনসুলিনের দামে বৈষম্য: বন্ধের মুখে দেশীয় উৎপাদন
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীদের জীবন রক্ষাকারী অন্যতম ওষুধ ইনসুলিন উৎপাদনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এক বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ইনসুলিনের দামের তুলনায় বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ইনসুলিনের দাম দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় দেশীয় কোম্পানিগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে, যার ফলে উৎপাদন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ওষুধ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ২০০৭ সাল থেকে দেশে আন্তর্জাতিক মানের ইনসুলিন তৈরি করে আসছে। বিদেশি ওষুধের তুলনায় দেশীয় ইনসুলিন সাশ্রয়ী হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীরা ব্যাপকভাবে এটি ব্যবহার করে।
ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ১৪ বছর আগে দেশীয় ইনসুলিনের একটি ডোজের মূল্য ২২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং আজও সেই একই দামে এটি বিক্রি হচ্ছে। অথচ একই সময়ে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ইনসুলিনের দাম ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৬৩৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই অস্বাভাবিক মূল্য বৈষম্যের কারণে দেশীয় উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে, ইনসুলিন আমদানির জন্য দেশ থেকে প্রচুর ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে।
দেশে প্রায় ১৩ লাখ ডায়াবেটিস রোগী নিয়মিত ইনসুলিন ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ৬০ ভাগ দেশীয় ইনসুলিন এবং ৪০ ভাগ আমদানিকৃত ইনসুলিন ব্যবহার করেন। এই ৪০ ভাগ রোগীর পেছনে বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়, যেখানে দেশীয় ইনসুলিন ব্যবহারকারী ৬০ ভাগ রোগীর খরচ মাত্র ৩২ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ওষুধ শিল্প সমিতির মতে, দেশে উৎপাদিত ইনসুলিনের গুণগত মান উন্নতমানের। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এটি অনেক দেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ডা. জাকির হোসেন বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের বৃহত্তর স্বার্থে এই মূল্য বৈষম্য দ্রুত নিরসন করা জরুরি। অন্যদিকে ওষুধ বিক্রেতারা মনে করেন, প্রচুর ডলার বিদেশে যাওয়া বন্ধ করতে চিকিৎসকদের মানসিকতা পরিবর্তন করা এবং দেশীয় ইনসুলিনের ব্যবহার বাড়ানো জরুরি।
তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, জনস্বার্থে ইনসুলিনের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা বর্তমানে সরকারের নেই।
মূত্রের রঙের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত
আপনার মূত্রের রঙ আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হতে পারে, বিশেষ করে কিডনির কার্যকারিতা সম্পর্কে। সুস্থ কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল ছেঁকে মূত্র তৈরি করে, যা সাধারণত হালকা হলুদ থেকে অ্যাম্বার রঙের হয়। কিন্তু যখন কিডনি দুর্বল হতে শুরু করে, তখন মূত্রের রঙ, গন্ধ ও স্বরূপে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা দেয়। গাঢ় রঙ, ফেনাযুক্ত, লাল বা ঝাপসা মূত্র ক্রনিক কিডনি রোগ কিংবা আকস্মিক কিডনি আঘাতের মতো গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
কিডনি রক্ত থেকে টক্সিন দূর করে, শরীরের পানির মাত্রা, ইলেক্ট্রোলাইট ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। সুস্থ অবস্থায় মূত্র সাধারণত হালকা হলুদ থেকে অ্যাম্বার রঙের হয়ে থাকে, যা শরীরের হাইড্রেশনের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বর্জ্য পদার্থ জমে, মূত্রের রঙ ও পরিমাণ পরিবর্তিত হয়।
কিডনি ব্যর্থতার একটি সাধারণ লক্ষণ হলো গাঢ় বাদামী, চায়ের মতো বা কোলা রঙের মূত্র। এর পেছনে মূত্রে রক্তের উপস্থিতি, অতিরিক্ত পেশী ভাঙনের উপাদান, কিংবা কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়া থাকতে পারে। লাল বা গোলাপি মূত্র মূলত মূত্রে রক্ত থাকার কারণে হয়, যা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, পলিসিস্টিক কিডনি রোগ, সংক্রমণ বা আঘাতের কারণে হতে পারে। তবে বিট জাতীয় ফলমূল খাওয়ার পরেও লাল রঙ আসতে পারে; তাই ধারাবাহিক পরিবর্তন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ফেনাযুক্ত মূত্র সাধারণত প্রোটিন (বিশেষ করে অ্যালবুমিন) উপস্থিতির লক্ষণ, যা ক্রনিক কিডনি রোগের প্রাথমিক সংকেত। প্রস্রাবের ফেনা দীর্ঘস্থায়ী হলে ‘প্রোটিনিউরিয়া’ হতে পারে এবং এটি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। ঝাপসা মূত্র সাধারণত ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, কিডনি পাথর বা প্রদাহের সঙ্গে যুক্ত, যা মাঝে মাঝে দুর্গন্ধ বা প্রস্রাবে ব্যথা নিয়ে আসে। যদিও ঝাপসা মূত্র সব সময় কিডনি ব্যর্থতার লক্ষণ নয়, তবে চিকিৎসা না করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
অত্যন্ত স্বচ্ছ বা রঙহীন মূত্র সাধারণত শরীরের পর্যাপ্ত পানি পান করার ইঙ্গিত। কিন্তু ধারাবাহিক ফ্যাকাশে মূত্র হতে পারে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস বা ক্রনিক কিডনি রোগের উন্নত পর্যায়ের লক্ষণ। যদিও এটা সরাসরি কিডনি ব্যর্থতা নয়, অন্য কোনো উপসর্গ থাকলে পরীক্ষা করানো উচিত।
মূত্রের রঙ ছাড়াও কিডনি সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে পা বা গোড়ালি ফোলা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি, মুখে ধাতব স্বাদ, মনোযোগ কমে যাওয়া এবং মূত্রের পরিমাণ কমে যাওয়া। যদি এ ধরনের উপসর্গ ও অস্বাভাবিক মূত্রের রঙ দেখা দেয়, দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।
কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করার ক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে মূত্রের রঙ ও গন্ধ পরিবর্তিত হয়। এর পেছনে ক্রনিক কিডনি রোগ, আকস্মিক কিডনি আঘাত, গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন ও কিডনি পাথর অন্যতম কারণ।
হঠাৎ ও অজানা কারণে মূত্রের রঙ পরিবর্তন হলে, গাঢ় বা লাল মূত্র দীর্ঘদিন ধরে থাকলে, ফেনাযুক্ত মূত্র কয়েকদিন বেশি থাকলে, প্রস্রাবে ব্যথা বা অস্বস্তি হলে এবং অন্যান্য কিডনি সমস্যা লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সুস্থ কিডনি রক্ষায় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। পর্যাপ্ত জল পান করা, রক্তচাপ ও রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ (NSAIDs) কম ব্যবহার করা, লবণ ও অ্যালকোহল সীমিত করা, ধূমপান ত্যাগ করা, উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো সঠিক যত্ন ও চিকিৎসা কিডনি রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর।
প্রথমবারের মতো ৫ কোটি শিশু পাচ্ছে বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা
বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) অংশ হিসেবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শিশুদের জন্য টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছর ১১ মাস ২৯ দিন বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশু এই টিকা পাবে। গত ১ আগস্ট থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইপিআই প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, যেসব শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ নেই, তারা মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে।
আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ কার্যদিবস স্কুলগুলোতে ক্যাম্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। স্কুল ক্যাম্প শেষ হলে আরও আট দিন ইপিআই সেন্টারে গিয়ে স্কুলে না যাওয়া শিশুরাও টিকা নিতে পারবে। টিকা পেতে অনলাইনে https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv/ এই ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের পর ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করার সুবিধা রয়েছে। জন্ম নিবন্ধন সনদসহ নিবন্ধন করলে সরাসরি ভ্যাকসিন কার্ড পাওয়া যাবে।
টাইফয়েডের জন্য দেওয়া এই ইনজেকশনের এক ডোজ প্রাপ্ত শিশুকে তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে। গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সহায়তায় এই ভ্যাকসিন এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, টাইফয়েড জ্বর মূলত স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যা দূষিত খাদ্য বা পানি গ্রহণের মাধ্যমে ছড়ায়। এর উপসর্গের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া থাকে। অনেক সময় এসব লক্ষণ অস্পষ্ট হওয়ায় অন্যান্য জ্বরের সঙ্গে বিভ্রান্তি হতে পারে।
গ্যাভির সিএসও স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘টাইফয়েড ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ। বিশ্বব্যাপী শতভাগ নিরাপত্তা নিয়ে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও আগে এটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। করোনার আগে টাঙ্গাইলে পাইলট প্রকল্পে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর সরকার গ্যাভিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করে। আগে এই ভ্যাকসিন বেসরকারিভাবে পাওয়া যেত, এবার সরকার বিনামূল্যে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি শিশুকে এই ভ্যাকসিন দেবে।’
/আশিক
হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণ করে জীবনে ফিরুন প্রাণবন্ততা
হাইপোথাইরয়েডিজম একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যেখানে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। এই হরমোন শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে—যার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হৃদস্পন্দন, হজমসহ গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। হরমোনের ঘাটতি হলে শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
কারণ
হাইপোথাইরয়েডিজমের পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
অটোইমিউন থাইরয়েডাইটিস (হাশিমোটো রোগ): ইমিউন সিস্টেম থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করে, ফলে হরমোন উৎপাদন ব্যাহত হয়।
থাইরয়েড অপারেশন বা রেডিওথেরাপি: গ্রন্থি আংশিক বা সম্পূর্ণ অপসারণ কিংবা ক্যানসার ও হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন ব্যবহার হরমোন উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
আয়োডিনের ঘাটতি বা অতিরিক্ততা: হরমোন তৈরিতে আয়োডিন অপরিহার্য, তবে অতিরিক্ত বা ঘাটতি—দুই অবস্থাই ক্ষতিকর।
ওষুধের প্রভাব: লিথিয়াম বা অ্যামিওডারোনের মতো ওষুধ হরমোন উৎপাদন কমাতে পারে।
জন্মগত কারণ: কিছু শিশু জন্ম থেকেই পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি করতে অক্ষম।
লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গ অস্পষ্ট হতে পারে, তবে হরমোন ঘাটতি বাড়লে দেখা দিতে পারে—
অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
ওজন বৃদ্ধি
ঠান্ডা সহ্য না হওয়া
শুষ্ক ও খসখসে ত্বক
চুল পাতলা হওয়া ও পড়া
কোষ্ঠকাঠিন্য
মুখমণ্ডল ও চোখের নিচে ফোলাভাব
গলায় ফোলাভাব (গয়েটার)
মনোযোগ কমে যাওয়া ও স্মৃতিভ্রংশ
বিষণ্নতা
হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া
মাসিক অনিয়ম বা বন্ধ্যত্ব (নারীদের ক্ষেত্রে)
কর্কশ কণ্ঠস্বর
ঘুম ঘুম ভাব
সব রোগীর ক্ষেত্রে সব লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে; কারও উপসর্গ হালকা, কারও ক্ষেত্রে গুরুতর হতে পারে।
সম্ভাব্য জটিলতা
চিকিৎসা না হলে হাইপোথাইরয়েডিজম থেকে হৃদরোগ, গভীর অবসাদ, বন্ধ্যত্ব, গর্ভাবস্থায় জটিলতা এবং গুরুতর মাইক্সিডিমা (জীবনহানিকর অবস্থা) হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা হয়—
TSH বেশি হলে রোগের ইঙ্গিত
Free T4 কম থাকলে নিশ্চিত
Anti-TPO অ্যান্টিবডি পজিটিভ হলে অটোইমিউন কারণ বোঝা যায়
চিকিৎসা
হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা সাধারণত আজীবন চলে।
হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি: লেভোথাইরক্সিন প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন।
ডোজ নির্ধারণ: বয়স, ওজন, উপসর্গ ও পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ঠিক করা হয়।
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: প্রতি ৬-৮ সপ্তাহে রক্ত পরীক্ষা করে ডোজ সমন্বয়।
জীবনযাপন পরিবর্তন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, শরীরচর্চা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ।
থাইরক্সিন সেবনের নিয়ম
সকালে খালি পেটে (৬-৮টার মধ্যে) সেবন
খাওয়ার পর অন্তত ৩০-৬০ মিনিট কিছু না খাওয়া
পানি ছাড়া অন্য কিছু না পান করা
আয়রন, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টাসিড ইত্যাদির সঙ্গে অন্তত ৪ ঘণ্টা বিরতি রাখা
প্রতিদিন একই সময়ে ওষুধ খাওয়া
দুধ, কফি, সোয়া খাবার ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার আগে অন্তত আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করা
বিশেষ সতর্কতা
গর্ভবতী বা গর্ভধারণের পরিকল্পনা থাকলে চিকিৎসককে জানানো
ডোজ পরিবর্তনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
অতিরিক্ত ডোজে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অস্থিরতা, ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি হতে পারে—এসব হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।
ছয় বছর পর ড্যাবের ভোটযুদ্ধ আজ, চিকিৎসক মহলে উত্তেজনা
বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ছয় বছরেরও বেশি সময় পর আজ শনিবার আয়োজন করছে তাদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটন ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে নতুন নেতৃত্ব। ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিজন কান্তি সরকার জানান, কাউন্সিলের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ে ভোট শুরু হবে। এবারের নির্বাচন হবে পাঁচটি পদে—সভাপতি, মহাসচিব, সিনিয়র সহসভাপতি, কোষাধ্যক্ষ এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। মোট ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ১৩১ জন।
ভোটে মুখোমুখি হচ্ছে দুটি প্রধান প্যানেল—হারুন-শাকিল ও আজিজ-শাকুর। হারুন-শাকিল প্যানেল ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ড্যাবের নেতৃত্বে ছিল, যেখানে সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশীদ। অপরদিকে, আজিজ-শাকুর প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, যিনি ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।
হারুন প্যানেলে মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ডা. আবুল কেনান, কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. মো. মেহেদী হাসান এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে ডা. একেএম খালেকুজ্জামান দিপু।
অন্যদিকে, আজিজ প্যানেলে মহাসচিব পদে আছেন অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ডা. সাইফ উদ্দিন নিসার আহমেদ তুষার, কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. তৌহিদ উল ইসলাম এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে ডা. আবু মো. আহসান ফিরোজ।
দুই বড় প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ডা. ওবায়দুল কবির।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সর্বশেষ ড্যাব নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৪ মে, যেখানে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ডা. হারুনুর রশীদ এবং মহাসচিব হয়েছিলেন ডা. আব্দুস সালাম। গত বছর কমিটির মেয়াদ শেষ হলে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়, যা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ তৈরি করেছে।
-রাফসান
মিটফোর্ড সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় ভেজাল ওষুধের সাম্রাজ্য
ভেজাল ও নকল ওষুধ সেবনে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন— এমন তথ্য সামনে আসার পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে উদ্বেগ ও সমালোচনা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এসব ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে কিডনি বিকল, ক্যানসারসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এমনকি এসব ওষুধ মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠছে বলে তারা সতর্ক করেছেন।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত দুইটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ভেজাল ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়। এর পর বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক মহল, ওষুধ ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
বিশেষ করে রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড ওষুধ মার্কেটকে ঘিরে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব উঠে এসেছে। একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, এই সিন্ডিকেট শতাধিক সদস্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। এসব ওষুধ সারা দেশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামাঞ্চলে এসব ওষুধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন ব্যবসায়ী জানান, তিনি ২০ বছর মিটফোর্ডে ব্যবসা করেছেন। কিন্তু ভেজাল ওষুধ বিক্রির জন্য সমিতির চাপে পড়ে একপর্যায়ে দোকান গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, অনেক ওষুধ ব্যবসায়ী, এমনকি সমিতির কিছু নেতাও মাসোহারা নিয়ে এই অপরাধে জড়িত। বিশেষ করে ইনসুলিন ও অ্যান্টিবায়োটিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ নকল করে বাজারে ছাড়ছে তারা।
মিটফোর্ড থেকে পরিচালিত এসব কার্যক্রম বন্ধে মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট অভিযান চালালেও কার্যকর কোনো পরিবর্তন হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিপুল ভেজাল ওষুধ জব্দ করলেও বাজারজাত বন্ধ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।
আশির দশকে ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২ হাজারের বেশি শিশু মারা যাওয়ার স্মৃতি এখনো জাতির মনে গাঁথা। কিন্তু সেই ভয়াবহ ঘটনার পরও আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকর নজরদারি গড়ে ওঠেনি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি এবং ভেজাল ওষুধ সেবন নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা ছাড়া কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, হঠাৎ বা দীর্ঘমেয়াদে কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ এই ভেজাল ওষুধ। তিনি এসব ওষুধ বিক্রেতার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. শফি আহমেদ মোয়াজও একই কথা বলেন। তিনি মনে করেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
এক ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিদিন কত মানুষ ভেজাল ওষুধ খেয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রশাসনের কাছে নেই। এ বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা শ্যামলীর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ হাসপাতালের প্রধান উপপরিচালক ডা. আয়েশা বেগম বলেন, এসব ওষুধে রোগীরা জটিলতায় ভুগছেন, অথচ বাজারজাত বন্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেই।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএন হুদা বলেন, চুলকানি, দাদ ও খোসপাঁচড়ার মতো রোগেও ভেজাল ওষুধের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আমদানি করা প্রতিটি ওষুধ পরীক্ষার পরই বাজারজাত অনুমতি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
সাবেক ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলাহ মনে করেন, ভেজাল ওষুধ জব্দের পর তাৎক্ষণিক পরীক্ষার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এই নৈরাজ্য অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব।
/আশিক
মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতন হোন, চিনে নিন লক্ষণ ও প্রকারভেদ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, মানসিক রোগগুলি হলো এমন অবস্থা যা কোনো ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ বা আচরণে উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং সাধারণত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অসুবিধা বা যন্ত্রণার কারণ হয়। মানসিক রোগ বা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। ২০১৯ সালে বিশ্বের ৯৭০ মিলিয়ন মানুষ বা প্রতি আটজনের মধ্যে একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল উদ্বেগ ও বিষণ্নতা জনিত সমস্যা। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা জনিত রোগের সংখ্যা যথাক্রমে ২৬% ও ২৮% বেড়ে গিয়েছিল। যদিও মানসিক রোগের জন্য কার্যকর প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা বিদ্যমান, অধিকাংশ রোগী যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত থাকেন এবং তারা সামাজিক কলঙ্ক, বৈষম্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্মুখীন হন।
মানসিক রোগের বিভিন্ন প্রকার
উদ্বেগজনিত রোগসমূহ
২০১৯ সালে প্রায় ৩০১ মিলিয়ন মানুষ উদ্বেগজনিত রোগে ভুগছিলেন, যার মধ্যে ছিল ৫৮ মিলিয়ন শিশু ও কিশোর। উদ্বেগজনিত রোগে অতিরিক্ত ভয়, চিন্তা ও আচরণগত ব্যাঘাত থাকে যা ব্যক্তি জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। সাধারণ উদ্বেগ, প্যানিক অ্যাটাক, সামাজিক উদ্বেগ, বিচ্ছেদের উদ্বেগসহ বিভিন্ন ধরণের উদ্বেগজনিত রোগ রয়েছে। এসব রোগের জন্য মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা এবং প্রয়োজনে ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
বিষণ্নতা (ডিপ্রেশন)
২০১৯ সালে ২৮০ মিলিয়ন মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছিলেন, যাদের মধ্যে ছিল ২৩ মিলিয়ন শিশু ও কিশোর। বিষণ্নতা সাধারণ মেজাজের ওঠানামার চেয়ে ভিন্ন, এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং ব্যক্তি অধিকাংশ সময় দুঃখী, বিরক্ত বা অবসন্ন বোধ করে। অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে মনোযোগের অভাব, অপরাধবোধ, ভবিষ্যতের প্রতি হতাশা, আত্মহত্যার চিন্তা, ঘুম বা খাওয়ার অভ্যাসের পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি অন্তর্ভুক্ত। বিষণ্নতা আক্রান্তদের আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে চিকিৎসা ও ঔষধের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
বাইপোলার ডিজঅর্ডার
২০১৯ সালে ৪০ মিলিয়ন মানুষ বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভুগছিলেন। এই রোগে রোগী মনের অবস্থা পরিবর্তিত হয়, কখনো বিষণ্নতায় ডুবে যান আবার কখনো অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস বা রেগে যাওয়ার মতো ম্যানিক অবস্থায় চলে যান। ম্যানিক পর্যায়ে অতিরিক্ত কথা বলা, ঘুমের অভাব, আত্মবিশ্বাসের অতিরিক্ত বর্ধন, অস্থিরতা ও বেপরোয়া আচরণ দেখা যায়। বাইপোলার রোগীদেরও আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি থাকে। চিকিৎসায় মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষাদান, চাপ কমানো, সামাজিক কার্যকলাপ বাড়ানো এবং ঔষধ অন্তর্ভুক্ত।
পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি)
যুদ্ধ ও সংঘর্ষ এলাকার মানুষের মধ্যে পিটিএসডি’র প্রাদুর্ভাব বেশি। কোনো ভয়াবহ বা আতঙ্কজনক ঘটনা পরবর্তী সময়ে এটি বিকাশ লাভ করে। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে ঘটনার পুনরাবৃত্তি স্মৃতি, মেমরি এড়ানো, এবং বর্তমানেও হঠাৎ আতঙ্ক অনুভব অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘস্থায়ী এই অবস্থায় ব্যক্তি সামাজিক ও শারীরিক জীবনে সমস্যায় পড়ে। কার্যকর মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা রয়েছে।
সিজোফ্রেনিয়া
বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৪ মিলিয়ন মানুষ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত, যার জীবনকাল সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০-২০ বছর কম। রোগীদের বোধের ভারসাম্যহীনতা, বিভ্রান্তিকর ধারনা, দৃষ্টিভ্রম, অগোছালো চিন্তা ও আচরণ লক্ষ্য করা যায়। জ্ঞানীয় দক্ষতা হ্রাস পেতে পারে। ঔষধ, পরিবারের সহায়তা ও পুনর্বাসন চিকিৎসায় উন্নতি সম্ভব।
খাদ্যাভাসজনিত রোগ
২০১৯ সালে ১৪ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যাভাসজনিত রোগে ভুগছিলেন, যার মধ্যে ছিল প্রায় ৩ মিলিয়ন শিশু ও কিশোর। এগুলো হলো অ্যানোরেক্সিয়া নেরোভসা, বুলিমিয়া নেরোভসা ইত্যাদি। রোগীরা খাবারের প্রতি অস্বাভাবিক দৃষ্টি ও শরীরের ওজন নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন থাকেন। গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। পারিবারিক ও মনস্তাত্ত্বিক থেরাপি কার্যকর।
বিঘ্নকারী আচরণ ও সামাজিক ব্যাধি
২০১৯ সালে ৪০ মিলিয়ন মানুষ, যার মধ্যে অনেক শিশু ও কিশোর, কনডাক্ট ডিজঅর্ডার বা সামাজিক ব্যাধিতে ভুগছিলেন। এই রোগে ব্যক্তি অন্যের অধিকার বা সামাজিক নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে চলেন। চিকিৎসায় পারিবারিক ও শিক্ষাগত সহায়তা, সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
স্নায়ুবিকাশজনিত রোগ
এই রোগগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক, ভাষাগত, চলাচল ও সামাজিক দক্ষতায় দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করে। অটিজম, এডিএইচডি, বুদ্ধিমত্তার বিকাশজনিত ব্যাধি এগুলোর অন্তর্ভুক্ত। শিশুকাল থেকেই লক্ষণ দেখা যায়। মনস্তাত্ত্বিক ও চিকিৎসা পদ্ধতি, অকুপেশনাল থেরাপি, ভাষা থেরাপি এবং প্রয়োজনে ঔষধ ব্যবহৃত হয়।
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা
অধিকাংশ মানুষ মানসিক রোগের ঝুঁকি কম হলেও দারিদ্র্য, সহিংসতা, প্রতিবন্ধকতা ও বৈষম্যের মতো বিরূপ পরিবেশে যারা বসবাস করে, তাদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ব্যক্তিগত ও জেনেটিক কারণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও সামাজিক সহায়তা
বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয়, এবং প্রাপ্ত সেবার মান অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল। উদাহরণস্বরূপ, মাত্র ২৯% সিজোফ্রেনিয়া রোগী এবং এক তৃতীয়াংশ বিষণ্নতা রোগীই যথাযথ চিকিৎসা পান। সামাজিক, শিক্ষাগত, কর্মসংস্থান, বাসস্থান ও পারিবারিক সহায়তাও অপরিহার্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদক্ষেপ
ডব্লিউএইচওর মানসিক স্বাস্থ্য কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০৩০ সালের মধ্যে চারটি প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে:১. মানসিক স্বাস্থ্য নীতি ও নেতৃত্ব শক্তিশালীকরণ;২. সমন্বিত, সম্প্রদায়ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান;৩. মানসিক স্বাস্থ্য প্রচার ও প্রতিরোধ কৌশল বাস্তবায়ন;৪. তথ্য ব্যবস্থা, গবেষণা ও প্রমাণভিত্তিক নীতি উন্নয়ন।
ডব্লিউএইচওর ‘মেন্টাল হেলথ গ্যাপ অ্যাকশন প্রোগ্রাম (mhGAP)’ মূলত দরিদ্র দেশগুলিতে অ-বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার বিস্তার ঘটায়। এর মাধ্যমে চিকিৎসা প্রণালী এবং রোগ নির্ণয়ে কার্যকর সমাধান প্রদান করা হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের নাটকীয় ঘোষণা: বাতিল ২২টি mRNA ভ্যাকসিন প্রকল্প
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যনীতিতে নাটকীয় রদবদলের ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র এক বিবৃতিতে জানান, mRNA প্রযুক্তিনির্ভর ২২টি ভ্যাকসিন প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি প্রাণ রক্ষাকারী কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সেই প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে এবার প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলল হোয়াইট হাউস।
মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ (HHS) জানিয়েছে, BARDA (Biomedical Advanced Research and Development Authority) কর্তৃক পরিচালিত এসব প্রকল্পের মোট মূল্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। বাতিলকৃত প্রকল্পগুলোর মধ্যে মডার্নার বার্ড ফ্লু ভ্যাকসিনের গবেষণা ছাড়াও ফাইজার ও সানোফির একাধিক প্রকল্প এবং বিভিন্ন প্রাক-অনুমোদন চুক্তিও রয়েছে।
রবার্ট কেনেডি বলেন, "আমরা বিজ্ঞান বিশ্লেষণ করেছি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শুনেছি, তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই ভ্যাকসিনগুলো উপরের শ্বাসনালীর সংক্রমণ—যেমন কোভিড কিংবা ইনফ্লুয়েঞ্জা—থেকে কার্যকরভাবে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ।" তাঁর মতে, "এখন সময় এসেছে mRNA প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে এমন নতুন ভ্যাকসিন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করার, যা ভাইরাসের পরিবর্তনশীলতা সত্ত্বেও দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর থেকে যায়।"
উল্লেখযোগ্য যে, রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র গত দুই দশক ধরে ভ্যাকসিনবিরোধী নানা বক্তব্য ও তত্ত্ব ছড়ানোর জন্য সমালোচিত। স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। তিনি সরকারকে উপদেষ্টা দিচ্ছিলেন এমন একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে বরখাস্ত করে নিজস্ব মতাদর্শ অনুসারে নতুন সদস্য নিয়োগ করেন। সেই নতুন প্যানেল প্রথম সভাতেই একটি দীর্ঘকাল ব্যবহৃত ও নিরাপদ প্রিজারভেটিভ নিষিদ্ধ করে, যেটিকে দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টি-ভ্যাকসিন আন্দোলন লক্ষ্যবস্তু করে আসছিল।
আরও চমকপ্রদভাবে, কেনেডির উদ্যোগে এক নতুন গবেষণাও চালু হয়েছে, যেখানে ভ্যাকসিন ও অটিজমের মধ্যে সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করা হবে—যদিও এই তত্ত্ব দীর্ঘদিন আগে বৈজ্ঞানিকভাবে ভ্রান্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
mRNA ভ্যাকসিন সাধারণ ভ্যাকসিনের মতো জীবাণুর দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় সংস্করণ ব্যবহার না করে জিনগত বার্তা পাঠিয়ে কোষে এক ধরনের ‘ডামি’ ভাইরাস তৈরি করায়, যা ইমিউন সিস্টেমকে প্রকৃত জীবাণুর বিরুদ্ধে সুরক্ষা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। এই প্রযুক্তি দীর্ঘ গবেষণার ফসল হলেও কোভিড মহামারিকালে ট্রাম্প প্রশাসনের অপারেশন ওয়ার্প স্পিড প্রকল্পের মাধ্যমে এর বাণিজ্যিক বাস্তবায়ন দ্রুত সম্ভব হয়। প্রযুক্তিটির জনক বলে খ্যাত কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েইসম্যান ২০২৩ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই বৈজ্ঞানিক প্রগতির বিরুদ্ধে এক বিপজ্জনক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও কেনেডি আশ্বাস দিয়েছেন, "HHS সব মার্কিন নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিনকে সমর্থন করে। কিন্তু এখন আমরা mRNA‑এর সীমা ছাড়িয়ে আরও ভালো সমাধানের দিকে এগোচ্ছি।"
-জাহাঙ্গীর কবির, নিজস্ব প্রতিবেদক
হার্টের রিং: তিন কোম্পানির ১০টি স্টেন্টের দাম কমালো সরকার
হার্টের রিংয়ের দাম কমালো সরকার, সর্বোচ্চ কমেছে ৩৬ শতাংশ
হৃদরোগীদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা সামগ্রী করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের রিংয়ের দাম কমিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপনে রোববার (৩ আগস্ট) এ তথ্য জানায়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তিনটি কোম্পানির ১০ ধরনের স্টেন্টের দাম নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটিমাত্র স্টেন্টের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানভেদে প্রতি ইউনিট স্টেন্টের খুচরা মূল্য এখন সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে একেক ধরনের স্টেন্টে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। সর্বোচ্চ কমেছে ৩৬ শতাংশ।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আকতার হোসেন জানান, যেসব স্টেন্টের দাম কমানো হয়েছে সেগুলোর দাম আগে অনেক বেশি ছিল। সরকার নিয়ন্ত্রিত মূল্য নির্ধারণ কমিটি ধাপে ধাপে আরও কোম্পানির স্টেন্টের দাম পুনর্নির্ধারণ করবে। নতুন এই দাম আগামী সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হবে।
মেডট্রনিক, অ্যাবোট ভাসকুলার এবং বস্টন সায়েন্টিফিক—এই তিন কোম্পানির আমদানিকৃত রিংগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, জীবনদায়ী এই চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মূল্যনীতি থাকলে দাম অযাচিতভাবে বাড়ানো বা কমানো বন্ধ হবে। তবে তারা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন দামে স্টেন্ট সরবরাহ করবেন বলে জানান।
বাংলাদেশে হৃদরোগের চিকিৎসায় রিং পরানো একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। কারও হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হলে চিকিৎসকরা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি পদ্ধতির মাধ্যমে রিং স্থাপনের পরামর্শ দেন। এই পদ্ধতিতে সরু ক্যাথেটার দিয়ে ধমনীতে একটি ছোট জালাকৃতির স্টেন্ট স্থাপন করা হয়, যা রক্তনালী খোলা রাখে এবং হৃদপিণ্ডে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশে ব্যবহৃত স্টেন্ট বা রিং প্রায় সবই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত থেকে এসব রিং আসে। বিভিন্ন হাসপাতালে এসব রিংয়ের মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখা হয় এবং রোগীর পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসক নির্দিষ্ট রিং প্রতিস্থাপন করেন।
/আশিক
পাঠকের মতামত:
- কেউ বাঁচবে না: গাজা নিয়ে নেতানিয়াহুর চরম হুঁশিয়ারি
- বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে আয়ের ৬টি সহজ উপায়
- ঢাবির হলে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও বহাল থাকবে ছাত্রদলের কমিটিঃ রাকিব
- সাঈদীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী: আজহারীর আবেগঘন পোস্টে লাখো অনুসারীর চোখে জল
- জানে আলম অপুর ভাইরাল ভিডিও নিয়ে রহস্য, কেন ইশরাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ?
- রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
- হাঁসের মাংসের খোঁজে’ গুলশানে আসিফ মাহমুদ, যা বললেন চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে
- আজানের পর দরুদ ও বিশেষ দোয়া: হাদিসে ক্ষমা ও সুপারিশের সুসংবাদ
- জাতীয় নির্বাচনের সব রহস্য ফাঁস হবে আগামী সপ্তাহেই
- ভোলাগঞ্জে অবৈধ পাথর উত্তোলন, হাইকোর্টের কঠোর নির্দেশ
- নেতানিয়াহুকে ‘গ্রেফতারের’ ঘোষণা
- গুলশান চাঁদাবাজি ঘটনায় উপদেষ্টার সম্পৃক্ততা খোলাসা করা জরুরি: সালাহউদ্দিন আহমদ
- বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী মুদ্রা
- ১৪ আগস্ট ব্লক মার্কেটে বড় চুক্তি
- ১৪ আগস্ট ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশ শেয়ার
- ১৪ আগস্ট ডিএসইর দরপতনের শীর্ষ দশ শেয়ার
- ১৪ আগস্ট সেরা দশ লেনদেনকারী শেয়ার
- ধর্ষণ ও হত্যা করে গাছে ঝোলানো হলো ১৩ বছরের কিশোরীর লাশ
- পারমাণবিক শক্তির পর এবার পাকিস্তানের ‘রকেট ফোর্স’-শত্রুর জন্য কঠিন বার্তা
- ফুটবল খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে, স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাতে খুন
- ৪০০ কোটি টাকার বাজেট, ৬ হাজার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি ‘ওয়ার ২’
- খসড়ায় বড় ঘোষণা: সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পাবে ‘জুলাই সনদ’
- এক টাকা ঘুষ খেলেও ফাঁসি: ধর্ম উপদেষ্টার কড়া বার্তা
- বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে হ্যানোয়, দূষিত শহরের তালিকা থেকে ঢাকার স্বস্তি
- পুতিনকে ‘গুরুতর পরিণতির’ হুঁশিয়ারি দিলেন ট্রাম্প
- শহীদ ইয়াকুবের মায়ের মর্মান্তিক জবানবন্দি: নির্দেশদাতা হিসেবে হাসিনার নাম
- স্মার্টফোনে চার্জিং বিপ্লব: ১০ মিনিটেই ফুল চার্জ হচ্ছে ব্যাটারি
- সুষ্ঠু নির্বাচনও একতরফা হতে পারে: ব্যারিস্টার ফুয়াদ
- অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে ‘এ++’ দিয়েছেন শফিকুল আলম
- শেষ ১০ মিনিটের নাটক: টটেনহামকে হারিয়ে উয়েফা সুপার কাপ জিতল পিএসজি
- আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না ঢাকার যেসব এলাকায়
- গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা: একদিনেই নিহত শতাধিক
- লেস্টারের জার্সিতে বাংলাদেশি হামজা চৌধুরীর দুর্দান্ত গোল
- আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য: সর্বপ্রথম কি কলম নাকি আরশ?
- বৃষ্টির পূর্বাভাস:রংপুর, রাজশাহীসহ ৪ বিভাগে ভারী বর্ষণ
- ফিলিস্তিন, মিশর ও জর্ডানের অংশ নিয়ে ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ চান নেতানিয়াহু
- ভোলাগঞ্জে পথে পথে লুটের পাথরের স্তূপ
- তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবনের শঙ্কা
- জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপিকে চাপে রাখতে চায় এনসিপি
- ইনসুলিনের দামে বৈষম্য: বন্ধের মুখে দেশীয় উৎপাদন
- চট্টগ্রামে দুস্থদের পাশে বিএনপি: তারেক রহমানের নির্দেশে মানবিক সহায়তা প্রদান
- ধূমপান ছাড়তে বড়দের চুষনি, চীনে ভাইরাল এই পণ্যের চাহিদা আকাশচুম্বী
- মালয়েশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরলেন ড. ইউনূস: পেলেন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি
- ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে পুতিন-কিমের ফোনালাপ: কী বার্তা দিলো দুই নেতা?
- আবেদন ছাড়াই প্লট বরাদ্দ: রাজউক প্লট দুর্নীতি মামলায় আদালতে চাঞ্চল্যকর সাক্ষ্য
- আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে সুযোগ দিলে আবার অভ্যুত্থান: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
- দেশে রেমিট্যান্সের জোয়ার: আগস্টে প্রথম ১২ দিনে আয় বাড়ল ৩৪ শতাংশ
- পঞ্চগড় সীমান্তে ২৩ জনকে পুশ-ইন করল বিএসএফ
- ভোটের মাঠে এআই দিয়ে অপপ্রচার, ইসি কি পারবে তা ঠেকাতে?
- আমরা ইলেকশন চাই, সিলেকশন চাই না: জামায়াত নেতা ডা. তাহের
- "Black Skin, White Masks": উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদ ও মানসিক মুক্তির গভীর পাঠ
- জামায়াতের ‘পিআর’ কৌশলে নির্বাচন বিলম্বের অভিযোগ হাফিজ উদ্দিনের
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: ধ্বংসের ছায়া থেকে নতুন বিশ্বব্যবস্থার উত্থান
- ১৪ আগস্ট ব্লক মার্কেটে বড় চুক্তি
- পলাতক হারুন, বিপ্লবসহ ৪০ পুলিশ কর্মকর্তার বিপিএম ও পিপিএম পদক প্রত্যাহার
- চীনের অর্থনৈতিক নীরব বিপ্লব: পশ্চিমা একপক্ষীয় বিশ্বনীতির অবসানের সংকেত
- ১২০ বার পেছালো সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার শুনানি
- ঘণ্টায় প্রায় ১০০ উল্কা পড়ার মহাজাগতিক দৃশ্য বাংলাদেশ থেকে দেখার সুযোগ
- অবাধ লুটপাটে পাথরশূন্য হয়ে যাচ্ছে সিলেটের সাদাপাথর
- অনলাইনে কলেজে আবেদন: জানুন কলেজ চয়েজ পরিবর্তনের ধাপ
- বেতন বৈষম্য দূরীকরণে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনের ঘোষণা
- ভারতের পণ্যে উচ্চ শুল্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য সুবর্ণ সুযোগ নাকি সীমিত সম্ভাবনা?
- সম্মতি ছাড়া ৫ মিনিট ধরে চুমু, শুটিং সেটেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রেখা
- ড. মইন খান: ২০২৪ সালের বিপ্লব লুটেরাদের জন্য নয়
- দেব-শুভশ্রীর ‘ধূমকেতু’ গড়ল মুক্তির আগে রেকর্ড