স্বাস্থ্য কথন

দুশ্চিন্তা যেভাবে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি করে

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ২২:০৬:৪৭
দুশ্চিন্তা যেভাবে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি করে

দুশ্চিন্তা—শব্দটি শুনলেই মনে আসে এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই মানসিক চাপ আপনার শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে? আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, দীর্ঘমেয়াদি দুশ্চিন্তা ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয় এবং একাধিক জটিল শারীরিক রোগের জন্ম দেয়। Healthline ও Mayo Clinic-এর মতো বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাইটের তথ্যে এই বাস্তবতা বারবার উঠে এসেছে। নিচে আমরা তুলে ধরেছি দুশ্চিন্তার শারীরিক প্রভাব, কারণ ও প্রমাণ নিয়ে এক গভীর ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ।

দুশ্চিন্তার শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া

দুশ্চিন্তার সময় মস্তিষ্ক “ফাইট-অর-ফ্লাইট” সিস্টেম সক্রিয় করে, যেখানে হাইপোথ্যালামাস-পিটুইটারি-অ্যাড্রিনাল (HPA) অক্ষ এবং সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র জেগে ওঠে। ফলস্বরূপ, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল নিঃসৃত হয়। অ্যাড্রেনালিন তাৎক্ষণিক শক্তি ও রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে, আর কর্টিসল শরীরে গ্লুকোজ সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া উপকারী, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই হরমোনগুলোর অতিরিক্ত ক্ষরণ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, পরিপাক কার্যক্রম ও ঘুমসহ নানা প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।

হৃদ্‌যন্ত্র ও রক্তচাপের উপর প্রভাব

উদ্বেগে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, বুক ধড়ফড় করে, এমনকি ব্যথাও অনুভূত হতে পারে। ক্রমাগত দুশ্চিন্তা উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে, যা হার্ট অ্যাটাক ও করোনারি ধমনী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যাঁরা পূর্ব থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত, তাঁদের জন্য উদ্বেগ একটি বড় ট্রিগার হিসেবে কাজ করে।

পরিপাকতন্ত্রের ক্ষয়ক্ষতি

দুশ্চিন্তার কারণে হজম ধীর হয়ে যায়। এর ফলে পেটব্যথা, গ্যাস, বমিভাব, এমনকি ডায়রিয়া হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ ক্ষুধা কমায় এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS) বা পেপটিক আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের উদ্বেগের মাত্রা বেশি, তাঁদের পেটে ঘা হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া

স্বল্পমেয়াদী দুশ্চিন্তা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা বিপরীত প্রভাব ফেলে। কর্টিসল হরমোন ইমিউন কোষগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, ফলে ঠান্ডা-কাশি, সংক্রমণ ও ফ্লু-এর মত রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। এমনকি টিকার কার্যকারিতাও কমে যেতে পারে।

শ্বাসপ্রশ্বাস ও পেশী-স্নায়ুর জটিলতা

উদ্বেগের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়, অনেক সময় হাইপারভেন্টিলেশন হয়, যা মাথা ঘোরা ও ঝিমঝিম ভাব তৈরি করে। হাঁপানি ও COPD রোগীদের ক্ষেত্রে এই অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। পেশীগুলো ক্রমাগত সঙ্কুচিত থাকায় ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে ব্যথা দেখা দেয়, এবং তা থেকে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনও হতে পারে।

ঘুম ও ক্লান্তিভাব

দুশ্চিন্তা ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে। ফলে ঘুম না আসা, দুঃস্বপ্ন, কিংবা বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় ক্লান্তিভাব, শক্তিহীনতা এবং আরও উদ্বেগ তৈরি হয়—একটি দুষ্টচক্রের মতো।

দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগ: ক্রনিক রোগের ঝুঁকি

দুশ্চিন্তা ধীরে ধীরে শরীরে “নীরব বিষ” হিসেবে কাজ করে। এতে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হজমজনিত সমস্যা, সংক্রমণ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে। মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, ফলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তিও দুর্বল হতে পারে।

প্রমাণ ও গবেষণালব্ধ সত্য

২০১৬ সালে Celano et al.-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্বেগ বিকারে আক্রান্ত রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ২০১৫ সালের আরেক গবেষণায় আলসার, হাঁপানি ও হৃদরোগের সাথে উদ্বেগের সরাসরি সংযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালের স্টাডিতে প্রবীণদের মধ্যে উদ্বেগ ও হৃদরোগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে।

Psychosomatic উপসর্গসমূহ

দুশ্চিন্তা মূলত মানসিক হলেও তার বহিঃপ্রকাশ হয় দেহে। কিছু সাধারণ উপসর্গ:

  • পেটের সমস্যা: ব্যথা, ডায়ারিয়া, বমিভাব
  • মাথাব্যথা: টেনশন হেডেক বা মাইগ্রেন
  • ঘুমের সমস্যা: অনিদ্রা ও দুঃস্বপ্ন
  • হৃদযন্ত্রের উপসর্গ: বুক ধড়ফড়, ব্যথা
  • শ্বাসকষ্ট: শ্বাস আটকে যাওয়ার অনুভূতি
  • কম্পন ও পেশী টান: ঘাড় ও কাঁধে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা

এই উপসর্গগুলোর পেছনে যদি অন্য কোনও শারীরিক রোগ ধরা না পড়ে, তবে তা দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ভূত মনোদৈহিক উপসর্গ হতে পারে।

দুশ্চিন্তা মানসিক চাপের চেয়ে অনেক বেশি কিছু—এটি একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি। একে অবহেলা করলে তা কেবল মনের নয়, শরীরের প্রতিটি কোণায় দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই সময়মতো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা ও চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।


বুকে জ্বালাপোড়া সামান্য নয়, কখন বুঝবেন এটি প্রাণঘাতী সমস্যার সংকেত?

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৩ ১১:০১:৪৯
বুকে জ্বালাপোড়া সামান্য নয়, কখন বুঝবেন এটি প্রাণঘাতী সমস্যার সংকেত?
ছবিঃ সংগৃহীত

বুকে জ্বালাপোড়া বা হার্টবার্ন হলো এক ধরনের সাধারণ হজমজনিত সমস্যা, যা প্রায়শই মশলাদার বা তেলযুক্ত খাবারের কারণে হয়। এটি ঘটে যখন অম্লীয় পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসে। হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সৌরভ সেথি সতর্ক করেছেন যে হার্টবার্ন সাধারণত গুরুতর নয়, তবে দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বিপজ্জনক জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

হার্টবার্ন ও এসোফেজিয়াল ক্যানসার

ডা. সেথি বলেন, তিনি সম্প্রতি এমন এক রোগী দেখেছেন যিনি দীর্ঘস্থায়ী হার্টবার্ন ভুগছিলেন এবং পরে এসোফেজিয়াল ক্যানসার হয়েছে।

কারণ হার্টবার্ন হয় যখন নিচের খাদ্যনালী স্ফিঙ্কটার (Lower Esophageal Sphincter) ঠিকভাবে বন্ধ হয় না এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসে।

বিপজ্জনক জটিলতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অম্লীয় অ্যাসিডের পুনরাবৃত্ত এক্সপোজার খাদ্যনালীর লাইনে প্রদাহ ও ক্ষতি সৃষ্টি করে, যা বারেট’স এসোফাগাস নামক প্রাক-ক্যানসার পদার্থ তৈরি করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী হার্টবার্ন প্রায়শই গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD)-এর সঙ্গে যুক্ত থাকে।

প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার কৌশল

সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এসোফেজিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব এবং হার্টবার্নের উপসর্গও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। ডা. সৌরভ সেথির গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলো নিম্নরূপ:

১. শোয়ার ভঙ্গি মাঝে মাঝে হার্টবার্ন হলে বাম পাশে শুতে চেষ্টা করুন। বালিশ দিয়ে মাথা উঁচু রাখলে রাতের রিফ্লাক্স কমে।

২. খাবারের সময় রাতের খাবার ঘুমের ৩-৪ ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত। খাওয়ার পর কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা পরে শুতে যান।

৩. অল্প খাবার কম পরিমাণে কিন্তু ঘনঘন খেলে পাকস্থলীর চাপ কমে।

৪. ডায়েট হার্টবার্ন সৃষ্টি করা খাবার চিহ্নিত করে এড়িয়ে চলুন। ফল, শাক-সবজি এবং হোল গ্রেইনের উপর জোর দিন।

৫. বর্জন মদ ও ক্যাফেইন সীমিত করুন, কারণ এগুলো রিফ্লাক্স বাড়ায়। ধূমপান ত্যাগ করুন।

৬. ওজন স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা হার্টবার্ন কমাতে সাহায্য করে।

৭. ওষুধ প্রয়োজনে ওভার-দ্যা-কাউন্টার অ্যান্টি-অ্যাসিড ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে নতুন ওষুধ শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন

ডা. সেথি সতর্ক করেছেন, “যদি হার্টবার্ন স্থায়ী হয়, বিশেষ করে যদি খাওয়ার সময় গিলে খাওয়ায় সমস্যা বা খাদ্য আটকে থাকার অনুভূতি থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।” তিনি মনে করিয়ে দেন, সব রোগীর ক্ষেত্রেই ক্যানসার হয় না।

দ্রষ্টব্য এই তথ্য পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। সর্বদা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।


শীতে অতিরিক্ত শীত লাগে কোন ভিটামিন কম থাকলে এই সমস্যা বাড়ে জানেন কি

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১১ ২০:৫৪:০০
শীতে অতিরিক্ত শীত লাগে কোন ভিটামিন কম থাকলে এই সমস্যা বাড়ে জানেন কি
ছবিঃ সংগৃহীত

শীতকাল এলে অনেকেই অনুভব করেন, কম্বল বা চাদরের নিচে থাকা সত্ত্বেও হাত ও পা সারা সময় ঠাণ্ডা থাকছে। এমন অবস্থায় হাতে-পায়ে কাঁপুনিও দেখা দিতে পারে, এবং সাধারণ ধারণা শীতের কারণেই এমনটা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যাটি শুধুমাত্র শীতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি হতে পারে শরীরে ভিটামিন বি-১২ সহ অন্যান্য ভিটামিনের অভাবের কারণে।

গবেষণা এবং চিকিৎসকদের মতে

শরীরে ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি থাকলে অতিরিক্ত শীত অনুভূত হয়। বিশেষ করে হাত ও পা তেমনভাবে গরম হয় না।

এছাড়া আয়রনের অভাবও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে। তাই কেবল শীতকে দায়ী করা ঠিক নয়।

ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের উপায়

শরীরে ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি পূরণের জন্য খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন জরুরি।

বি-১২ এর উৎস: মাছ, মাংস এবং ডিমের কুসুম নিয়মিত খেলে ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি দূর করা সম্ভব।

ওমেগা-থ্রি: সামুদ্রিক মাছ খেলে শরীরে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও পৌঁছায়, যা ভিটামিন বি-১২ এর কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ভিটামিন ডি: এছাড়া দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার শরীরে ভিটামিন ডি পূরণের জন্য সহায়ক।

ঝিনঝিন ভাব ও করণীয়

শীতের সময় হাত-পা ঠাণ্ডা হওয়া ছাড়াও যদি ঝিনঝিন ভাব অনুভূত হয়, তবে সেটিও ভিটামিন ঘাটতির নির্দেশ দিতে পারে। তাই এই সমস্যা উপেক্ষা না করে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও প্রয়োজনীয় পরামর্শের মাধ্যমে শীতের সময়ে হাত-পা ঠাণ্ডা থাকার সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। শরীরের এই সতর্ক সংকেতগুলো জানার মাধ্যমে সহজেই সমস্যাটি প্রতিরোধ করা যায়।


থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে ৫টি ঘরোয়া পানীয় ক্লান্তি দূর করে ওজন রাখবে স্বাভাবিক

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১১ ১৯:১৫:৩৪
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে ৫টি ঘরোয়া পানীয় ক্লান্তি দূর করে ওজন রাখবে স্বাভাবিক
ছবিঃ সংগৃহীত

অল্প কাজেই ক্লান্তি, সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব, ওজন বেড়ে যাওয়া কিংবা হঠাৎ কমে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলো দেখলে অনেকেই সমস্যার উৎস বুঝতে পারেন না। চিকিৎসকদের মতে, এগুলো থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সাধারণ উপসর্গ। শরীরের বিপাকক্রিয়া থেকে শুরু করে হরমোন নিঃসরণ পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে এই ছোট্ট থাইরয়েড গ্রন্থি।

থাইরয়েড গ্রন্থিটি কখনো অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে, আবার কখনো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। ফলে নিয়মিত ওষুধের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করা জরুরি, যা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

পুষ্টিবিদদের মতে, কিছু সহজ ঘরোয়া পানীয় নিয়মিত পান করলে থাইরয়েডের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই ৫টি কার্যকর পানীয় সম্পর্কে।

১. ঈষদুষ্ণ পানিতে লেবুর রস ও এক চিমটে সৈন্ধব নুন

প্রতিদিন সকালে ঈষদুষ্ণ পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে হজমশক্তি উন্নত হয়। থাইরয়েডের রোগীরা প্রায়ই শরীরের আর্দ্রতা ও ক্লান্তিজনিত সমস্যায় ভোগেন। এই পানীয় আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং বিপাকক্রিয়া সচল রাখে। অন্যদিকে সৈন্ধব নুনে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়ক।

২. সজনে পাতার চা

সজনেপাতা বা মোরিঙ্গা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, জিঙ্ক এবং আয়রনের একটি চমৎকার উৎস। এই উপাদানগুলো থাইরয়েড হরমোনের সমতা বজায় রাখে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। নিয়মিত সজনেপাতার চা পান করলে হরমোনের অসামঞ্জস্যজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়।

৩. জিরে-ধনে-মৌরি ভেজানো পানি

পেট পরিষ্কার ও লিভার সুস্থ রাখতে জিরে, ধনে ও মৌরি ভেজানো পানি অনেক উপকারী। এই মিশ্রণ শরীরের টক্সিন দূর করে ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। লিভারের কার্যকারিতা সঠিক থাকলে থাইরয়েড হরমোনের T3 ও T4-এর মাত্রাও সঠিক থাকে।

৪. ডাবের পানিতে এক চিমটে দারচিনি

ডাবের পানি শরীরকে ঠান্ডা রাখে ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। এর সঙ্গে এক চিমটে দারচিনি মিশিয়ে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতাও উন্নত হয়। এটি একটি সতেজ ও প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক হিসেবেও কাজ করে।

৫. অশ্বগন্ধা গাছের ছাল ভেজানো পানি

আয়ুর্বেদে অশ্বগন্ধা বহু যুগ ধরে হরমোন ভারসাম্য এবং মানসিক চাপ কমাতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমায়। ফলে শরীর থাকে উদ্যমী ও মন থাকে প্রশান্ত।

হরমোনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ঘুম, সঠিক খাবার এবং মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি এই পানীয়গুলোকে দৈনন্দিন রুটিনে যুক্ত করা যেতে পারে। তবে যেকোনো ঘরোয়া উপায় গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভালো।

সূত্র : এই সময়


৬০ দিনে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি: জীবনযাত্রার চাপ কমাতে ৫টি বিশেষ খাবার

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১০ ১৮:৩৪:৫৬
৬০ দিনে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি: জীবনযাত্রার চাপ কমাতে ৫টি বিশেষ খাবার
ছবিঃ সংগৃহীত

আজকের ব্যস্ত জীবনধারা এবং সেডেন্টারি লাইফস্টাইলের কারণে মানবদেহে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। জাঙ্কফুডের বৃদ্ধি এবং চলাফেরার অভাবে লিভারের ওপর চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ফ্যাটি লিভার বা লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার সমস্যা এখন ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যেও ব্যাপক হারে দেখা যাচ্ছে। অথচ লিভার আমাদের শরীরের বিপাক হার নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টি শোষণ এবং টক্সিন নিঃসরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে। লিভারের যত্ন না নিলে শরীরের স্বাস্থ্য দ্রুত বিঘ্নিত হয়।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, খাদ্যতালিকায় ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টিতে সমৃদ্ধ কিছু খাবার নিয়মিত রাখলে লিভারের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তারা বলছেন, মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে লিভারের ফ্যাট গলানো যেতে পারে।

লিভারের যত্নে কার্যকর ৫টি খাবার

১. গ্রিন টি

গ্রিন টিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যাটেচিন রয়েছে, যা লিভারের ফ্যাট কমাতে বিশেষভাবে সহায়ক। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মলিকুলার সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার সারাতে গ্রিন টি দারুণ কার্যকর। দিনে দুই থেকে তিন কাপ গ্রিন টি নিয়মিত খেলেই লিভারের স্বাস্থ্য বজায় থাকে।

২. বিটের রস

বিটের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক যৌগ লিভারের কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। এটি লিভারে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করতে এবং লিভারের সামগ্রিক কার্যকারিতা উন্নত করতে অত্যন্ত সহায়ক।

৩. হলুদ

হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এটি লিভারসহ শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। নিয়মিত রান্নার খাবারে হলুদ রাখলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে।

৪. শাকসবজি

মৌসুম অনুযায়ী তাজা শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখা লিভারের জন্য অপরিহার্য। এই সময়ে বাজারে পাওয়া পালংশাক, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, বিনস ও ক্যাপসিকামের মতো সবজিগুলো লিভারের প্রদাহ কমায়, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করে এবং ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।

৫. রসুন

রসুনে আছে সালফার সমৃদ্ধ যৌগ, যা শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে এবং লিভারের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। নিয়মিত রসুন খেলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পাঁচটি খাবার সঠিক খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করলে মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব।

সূত্র : এই সময়


ক্যানসার চিকিৎসায় মহা সাফল্য: নতুন ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ১৪:১৯:৫৮
ক্যানসার চিকিৎসায় মহা সাফল্য: নতুন ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা
ছবিঃ সংগৃহীত

ক্যানসার চিকিৎসায় বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী অগ্রগতি অর্জন করেছেন। নতুন এক ধরনের ক্যানসার ভ্যাকসিনের প্রাথমিক মানবদেহে পরীক্ষায় শতভাগ সাড়া পাওয়ার দাবি করেছেন গবেষকরা, যা বিশ্বজুড়ে ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন এই ক্যানসার ভ্যাকসিন 'এন্টারোমিক্স' মানবদেহে প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা দেখিয়েছে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী রোগীদের টিউমার উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট হয়ে গেছে এবং কারও শরীরে কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

mRNA প্রযুক্তিতে তৈরি ভ্যাকসিন

গবেষকেরা জানিয়েছেন, 'এন্টারোমিক্স' ভ্যাকসিনটি mRNA প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই প্রযুক্তিই করোনা ভাইরাসের টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল।

গবেষকেরা আরও জানান, এই ভ্যাকসিনটি মূলত দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেয়, যাতে তা ক্যানসার কোষগুলোকে সঠিকভাবে শনাক্ত করে ধ্বংস করতে পারে। এর ফলে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি, যেমন কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের তুলনায় এটি অনেক বেশি নিরাপদ ও বুদ্ধিদীপ্ত বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সাফল্যের প্রত্যাশা

প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী রোগীদের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল খুবই সামান্য। প্রচলিত কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের তুলনায় এটি অনেক নিরাপদ বিকল্প হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

গবেষকেরা আশাবাদী যে, পরবর্তী ধাপের পরীক্ষাগুলোতেও যদি এই একই ধরনের ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়, তবে 'এন্টারোমিক্স' বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রেও সমান কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আবিষ্কার ক্যানসার চিকিৎসায় এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। এটি রোগের অগ্রগতি রোধ, ক্যানসার রোগীদের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে এই ভ্যাকসিনটি বিশ্বব্যাপী ক্যানসারবিরোধী লড়াইয়ে একটি অত্যন্ত কার্যকর অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।


হৃদরোগের ঝুঁকি কম বয়সে: হার্টের রক্তনালী বন্ধ হওয়ার ৭টি প্রাথমিক লক্ষণ চিনে সতর্ক হোন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১৮:২৯:৪৪
হৃদরোগের ঝুঁকি কম বয়সে: হার্টের রক্তনালী বন্ধ হওয়ার ৭টি প্রাথমিক লক্ষণ চিনে সতর্ক হোন
ছবিঃ সংগৃহীত

বর্তমানে কম বয়সের মধ্যেই হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, তীব্র মানসিক চাপ এবং অপর্যাপ্ত শারীরিক চলাফেরার মতো কারণগুলো সম্মিলিতভাবে হার্টের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্টের রক্তনালীগুলো ধীরগতিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া, যাকে করনারি আর্টারি ডিজিজ বলা হয়, তা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে সময়মতো শরীরের প্রাথমিক সংকেতগুলো চিনে সতর্ক হলে বড় ধরনের বিপদ এড়ানো সম্ভব এবং হার্টকে সুস্থ রাখা যায়।

হার্টের রক্তনালী বন্ধ হওয়ার ৭টি প্রাথমিক সংকেত

সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে শরীরের এই সাতটি প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি

১. বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করা

যখন হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, তখন বুকে চাপ, আঁটসাঁট ভাব বা অস্বস্তিকর ব্যথা অনুভূত হতে পারে। সাধারণত হাঁটাচলা, ব্যায়াম বা মানসিক চাপের সময় এই ব্যথা বা চাপ আরও বাড়তে পারে। বিশ্রাম নেওয়ার পরও যদি এই অস্বস্তি দীর্ঘসময় ধরে না কমে, তবে তা অবহেলা করা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।

২. হঠাৎ শ্বাসকষ্ট

সাধারণভাবে হাঁটা বা সিঁড়ি ওঠার মতো দৈনন্দিন কাজ করার সময় যদি হঠাৎ হাঁপিয়ে ওঠা বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তবে তা স্বাভাবিক নয়। এই ধরনের শ্বাসকষ্ট হার্টের রক্তপ্রবাহে ঘাটতির একটি গুরুতর ইঙ্গিত হতে পারে।

৩. অস্বাভাবিক ক্লান্তি

অপেক্ষাকৃত ছোট বা হালকা কাজ করেও যদি দ্রুত ক্লান্তি বা অতিরিক্ত দুর্বলতা অনুভূত হয়, তবে তা চিন্তার বিষয়। হার্ট যদি সঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে না পারে, তখন শরীর অতিরিক্ত শক্তি খরচ করে। এর ফলেই হালকা কাজেও অস্বাভাবিক ক্লান্তি দেখা দেয়।

৪. মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম ভাব

হার্টের রক্তনালীতে ব্লকেজ বা বাধা সৃষ্টি হলে তা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলস্বরূপ মাথা হালকা লাগা, চোখের সামনে অন্ধকার দেখা বা মাথা ঘোরা অনুভূত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এমন তীব্রতা দেখা দিতে পারে যে রোগী অজ্ঞান হয়ে যাওয়ারও ঝুঁকিতে থাকেন।

৫. অনিয়মিত বা দ্রুত হার্টবিট

হঠাৎ করে হৃদস্পন্দন দ্রুত বা এলোমেলো হলে তা হার্টের দুর্বলতার ইঙ্গিত হতে পারে। রক্ত সঞ্চালনে বাধা পেলে হার্টকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এর ফলে হার্টবিট অনিয়মিত হয়ে যায় এবং বুকে ধড়ফড় অনুভূত হতে পারে।

৬. শরীরের অন্য অংশে ব্যথা ছড়ানো

হৃৎপিণ্ডের সমস্যার কারণে সৃষ্ট ব্যথা অনেক সময় কাঁধ, হাত, গলা, চোয়াল বা পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত এই ব্যথা শরীরের বাঁদিকে বেশি অনুভূত হয়, তবে ডানদিকেও হতে পারে। এই ধরনের ব্যথাকে নিছক পেশির টান মনে করে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।

৭. হঠাৎ ঠাণ্ডা ঘাম

কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই যদি হঠাৎ ঠাণ্ডা ঘাম হয় এবং শরীর আঠালো বা ক্ল্যামি মনে হয়, তবে তা হার্টে চরম চাপের ইঙ্গিত দিতে পারে। যদি এই লক্ষণটি অন্যান্য উপসর্গগুলোর সঙ্গে একত্রে দেখা দেয়, তবে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই সতর্ক সংকেতগুলো উপেক্ষা করলে ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের মতো গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই দেরি না করে জীবনধারায় পরিবর্তন আনা এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।


বুক জ্বালা কমাতে ওষুধ নয়, ভরসা রাখুন প্রাকৃতিক পানীয়ে; জেনে নিন ৪টি কার্যকর উপায়

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৪ ১৫:০১:৪৩
বুক জ্বালা কমাতে ওষুধ নয়, ভরসা রাখুন প্রাকৃতিক পানীয়ে; জেনে নিন ৪টি কার্যকর উপায়
ছবিঃ সংগৃহীত

খাবারের পরে বুক জ্বালা করা, রাতে অ্যাসিডের টক স্বাদ অনুভব করা কিংবা যে অস্বস্তিকে আমরা সাধারণভাবে 'অজীর্ণতা' মনে করি, তা প্রায়শই শুধু সাময়িক অস্বস্তি নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি গ্যাস্ট্রো-ওসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা GERD-এর লক্ষণ হতে পারে, যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান একটি সমস্যা। যদিও ওষুধ প্রয়োগ এই রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর, শীর্ষস্থানীয় গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টরা পরামর্শ দিচ্ছেন কিছু ছোট ও প্রাকৃতিক পরিবর্তন, বিশেষ করে পানীয়ের মাধ্যমে, এই সমস্যা স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এখন কিছু প্রাকৃতিক পানীয় গ্রহণের সুপারিশ করছেন, যা পাচনতন্ত্রকে শান্ত করে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝুঁকি কমায়। পাচনতন্ত্রের জ্বালা কমাতে এই চারটি পানীয় অনেকের জন্য উপশমের চাবিকাঠি হতে পারে।

উপশমের চাবিকাঠি যে চারটি পানীয়

১. পেঁপে বা অ্যালোভেরা জুস: খাদ্যনালীর আস্তরণ শান্ত রাখে অ্যালোভেরা জুস দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প পাচন থেরাপিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি একটি অন্যতম কোমল ও প্রাকৃতিক সমাধান। একইভাবে, পাকা পেঁপে খাওয়া বা পেঁপে জুস পান করা GERD-এর উপসর্গ কমাতে সহায়ক। ২০২৩ সালের একটি গবেষণা 'Functional Food in Relation to Gastroesophageal Reflux' দেখিয়েছে, পেঁপে বা অ্যালোভেরা জুস খেলে খাদ্যনালীর (Asophagus) আস্তরণ শান্ত হয় এবং অ্যাসিডের ক্ষতিকর প্রভাব কমে।

ব্যবহারের উপায়: চিনি ছাড়া ১০০ মিলিলিটার অ্যালোভেরা জুস খাবারের পরে ধীরে ধীরে পান করুন। অতিরিক্ত মিষ্টি ধরনের জুস এড়িয়ে চলা ভালো।

২. আদা চা: প্রদাহ হ্রাস করে ও স্বস্তি দেয় আদা শুধুমাত্র একটি মশলা নয়, এটি একটি বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান, যা পাচন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং খাদ্যনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত আদা চা খাওয়া রিফ্লাক্সের প্রবণতা কমাতে সহায়ক হতে পারে। ২০২৫ সালে 'Nutrients'-এ প্রকাশিত একটি পাইলট স্টাডি দেখিয়েছে, আদা-ভিত্তিক প্রাকৃতিক পদার্থ অ্যাসিড হ্রাস, মিউকোসাল সুরক্ষা এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।

৩. বাদামের দুধ বা উদ্ভিদভিত্তিক দুধ: কম অ্যাসিডের বিকল্প সম্পূর্ণ দুধ বা পূর্ণ-চর্বিযুক্ত দুধ নিচের এসোফ্যাজিয়াল স্ফিঙ্কটারকে শিথিল করে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণা অনুসারে, বাদাম, ওট বা ফ্ল্যাক্স দুধের মতো উদ্ভিদভিত্তিক দুধ কম অ্যাসিডযুক্ত এবং সহজপাচ্য বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসকরা সকাল-বেলার ল্যাটের পরিবর্তে চিনি ছাড়া বাদামের দুধ বা ওট মিল্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।

৪. অ্যালকালাইন মিনারেল জল: অ্যাসিড নিরপেক্ষকরণ শরীরের অতিরিক্ত অ্যাসিডকে নিরপেক্ষকরণের মাধ্যমে পাচনতন্ত্রকে শান্ত রাখা প্রায়শই অবহেলিত হয়। ২০১৬ সালের একটি পাইলট ট্রায়ালে দেখা গেছে, হাইড্রোজেন কার্বনেট সমৃদ্ধ মিনারেল জল দৈনিক পান করলে বুক জ্বালার পুনরাবৃত্তি এবং সময়কাল উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।

ব্যবহারের উপায়: "বিকার্বনেট সমৃদ্ধ বা অ্যালকালাইন" লেখা লেবেলযুক্ত জল নির্বাচন করুন। দিনে ৫০০ মিলিলিটার জল ধীরে ধীরে পান করুন। ভারী খাবার বা রাতের নাস্তার পরে ২৫০-৩০০ মিলিলিটার পান করা বিশেষভাবে কার্যকর।

কেন এই পানীয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ

ওষুধের পাশাপাশি এই পানীয়গুলো GERD নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। এগুলো অ্যাসিডের সংস্পর্শ কমায়, খাদ্যনালীর আস্তরণ শান্ত রাখে এবং রিফ্লাক্সের কারণ বা ট্রিগার এড়াতে সাহায্য করে। ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, খাবারের সময়, ভঙ্গি এবং পানীয়ের সঠিক নির্বাচন চিকিৎসার সহায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই চারটি পানীয় চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়, তবে স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে সঠিক ব্যবহার করলে এগুলো অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, যদি সপ্তাহে দুইবারের বেশি বুক জ্বালা হয় বা রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, তবে দ্রুত গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। কারণ অচিকিৎসিত GERD গ্যাস্ট্রাইটিস বা বারেটস এসোফ্যাজিয়াসের মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে।

আপনি যদি বুক জ্বালা, রাতের অজীর্ণতা বা কফির প্রতি সহনশীলতার ক্রমবর্ধমান সমস্যায় ক্লান্ত হন, তবে ওষুধের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে অ্যালোভেরা জুস, আদা চা, বাদামের দুধ ও অ্যালকালাইন জল আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যনালীর লাইনিং শান্ত হলে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রিত হয় এবং শরীর নিজে থেকেই সুস্থ হতে পারে।


হালকা গ্যাস্ট্রিকও হতে পারে মারাত্মক ক্যানসারের ইঙ্গিত: প্রাথমিক উপসর্গ চিনুন ও সতর্ক হন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৩ ১৭:০২:০৮
হালকা গ্যাস্ট্রিকও হতে পারে মারাত্মক ক্যানসারের ইঙ্গিত: প্রাথমিক উপসর্গ চিনুন ও সতর্ক হন
ছবিঃ সংগৃহীত

দৈনন্দিন জীবনে হালকা পেট ফোলা, ঘন ঘন ঢেঁকুর ওঠা অথবা অ্যাসিডির মতো সমস্যাকে অনেকেই সাধারণ হজমের গোলমাল বা সাময়িক গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ভেবে গুরুত্ব দেন না। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, এই ধরনের নিয়মিত অস্বস্তি বা উপসর্গগুলো হজমের সাধারণ গোলমালের চেয়েও গুরুতর কিছুর ইঙ্গিত দিতে পারে—যা হতে পারে গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার যদি শুরুতেই ধরা পড়ে, তবে এর নিরাময় অনেক বেশি সহজ এবং কার্যকর হয়। তাই এই ধরনের গুরুতর রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে উপসর্গগুলো চিনে রাখা ও সময়মতো সতর্ক হওয়া জরুরি।

যেসব প্রাথমিক উপসর্গ এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়

বিশেষজ্ঞরা গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক সতর্ক সংকেত বা উপসর্গ চিহ্নিত করেছেন, যা দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ অস্বস্তি থেকে আলাদা:

১. অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া: অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ করার পরই যদি অস্বাভাবিকভাবে পেট ভরে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়, তবে তা স্বাভাবিক নয়। পাকস্থলীর ভেতরে টিউমার তৈরি হতে শুরু করলে তা হজম ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলীর ভেতরের জায়গা সংকুচিত করে। এর ফলে খাবার গ্রহণের প্রতি ইচ্ছা হ্রাস পায় এবং হঠাৎ করে শরীরের ওজন কমতে শুরু করে। এমন ধরনের শারীরিক পরিবর্তন টের পেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক।

২. বারবার গ্যাস ও অতিরিক্ত ঢেঁকুর: গ্যাস হওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া হলেও, যদি প্রায় প্রতিবার খাবারের পরই পেট ফুলে থাকে, লাগাতার অতিরিক্ত ঢেঁকুর উঠতে থাকে এবং পেটের মধ্যে এক ধরনের চাপ অনুভব করা যায়—তবে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের উপসর্গগুলো পাকস্থলীর ভেতরের আবরণে পরিবর্তন বা ক্ষত সৃষ্টির লক্ষণ হতে পারে, যা প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসারের ইঙ্গিত দেয়।

৩. হালকা হলেও নিয়মিত বমি বমি ভাব: সংক্রমণ, বাসি খাবার খাওয়া কিংবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া যদি কোনো ব্যক্তির নিয়মিত হালকা বা বারবার বমি বমি ভাব হতে থাকে, তবে তাকে সতর্ক হতে হবে। পাকস্থলীর প্রদাহ, অস্বাভাবিক মাত্রায় অম্বল বা অ্যাসিড তৈরি হওয়া, এবং মাঝে মাঝে অস্বস্তি আবার হঠাৎ করে তা বেড়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়কে নির্দেশ করতে পারে। এই ধরনের উপসর্গ কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়।

৪. অজানা কারণে আয়রনের ঘাটতি: শরীরে আয়রনের ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতা দেখা দেওয়াও হতে পারে গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত। অনেক ক্ষেত্রে নীরবে পাকস্থলী থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে, যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। এর ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি তৈরি হয় এবং অস্বাভাবিক ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া এবং নখ দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে।

৫. হঠাৎ খাবারে অসহিষ্ণুতা: আগে যে খাবার সহজেই হজম করা যেত, হঠাৎ করে সেই খাবার গ্রহণে অস্বস্তি শুরু হলে তা গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত মশলাদার খাবার গ্রহণ করলে যদি পেটে ব্যথা, ফোলাভাব, অস্বস্তি বা বমিভাব দেখা দেয়, তবে এটি পাকস্থলীর আস্তরণে কোনো ক্ষয় বা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের কারণে হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, যদি উপরের উপসর্গগুলো দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়, অথবা যদি শরীরের ওজন দ্রুত কমতে থাকে, খাবারে অরুচি দেখা দেয় কিংবা ঠান্ডা বা গরম যেকোনো খাবারেই সমস্যা হয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। রক্তস্বল্পতার লক্ষণ দেখা দিলেও অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে এন্ডোস্কপি, রক্ত পরীক্ষা বা স্ক্যান-এর মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়

রোগটি প্রতিরোধে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা গুরুত্বপূর্ণ। ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে। খাদ্যতালিকা থেকে অতিরিক্ত লবণ, ধোঁয়ায় সেঁকা খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস যতটা সম্ভব কম খেতে হবে। এর পরিবর্তে নিয়মিত ফল, সবজি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে যদি হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি (Helicobacter pylori) নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকে, তবে দ্রুত পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে, কারণ এটিও গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের অন্যতম ঝুঁকি বাড়ায়।

শরীর প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সংকেত দেয়—আমাদের কাজ শুধু সেই সংকেতগুলো সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া। ঘন ঘন পেট ফোলা, ঢেঁকুর, অস্বস্তি বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা করানোই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।


মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সমস্যাসমূহ: থেরাপি, ওষুধ ও মানসিক রোগ নির্ণয়ের “অযাচিত ক্ষতি”

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৮:৩৩:৪১
মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সমস্যাসমূহ: থেরাপি, ওষুধ ও মানসিক রোগ নির্ণয়ের “অযাচিত ক্ষতি”
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি গভীর সমস্যার ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে থেরাপি, ওষুধ এবং নির্ণয় মানুষকে সুস্থতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে নির্ভরশীলতার চক্রে আটকে রাখছে। মানসিক রোগ নির্ণয়, যা প্রাথমিকভাবে নির্ভরযোগ্য নয়, এখন মানুষের পরিচয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, পুনরুদ্ধারের একটি উপায় হিসেবে নয়।

যদিও থেরাপিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, সমষ্টিগত মানসিক স্বাস্থ্যের মান উন্নতি হচ্ছে না। বিশেষত ADHD এবং PTSD-এর মতো কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে ওষুধকে প্রথম পছন্দ হিসেবে নেওয়া হয়। ফলে মানুষ যে কৌশল ও শিক্ষা পেতে পারত যা তাদেরকে নিজে থেকে সহ্য ও প্রতিরোধ করতে শেখাত, তা আর শিখছে না। এই পরিস্থিতি মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার “ইয়াট্রোজেনিক প্রভাব” বা অযাচিত ক্ষতির দিকে ইঙ্গিত করে।

সাধারণ আচরণকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা

মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা সাধারণ মানসিক অবস্থাকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা রাখেন। উদাহরণস্বরূপ, দুঃখ, উদ্বেগ যা আগে স্বাভাবিক অনুভূতি হিসেবে বিবেচিত হত—এখন সমস্যার চিহ্ন হিসেবে দেখা হয়। মানুষেরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, কোনো নেতিবাচক অনুভূতি থাকা মানে ঠিক নয়, অথচ বাস্তবে এসব অনুভূতি আমাদের সুস্থতার সতর্কবার্তা।

পেশাদার মনোবিজ্ঞানে এর ইতিহাসও আছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৩ পর্যন্ত সমকামিতা মানসিক রোগ হিসেবে বিবেচিত হত। সম্প্রতি ২০২২ সালে ‘প্রলম্বিত শোক’ রোগ হিসেবে DSM-এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে “সাধারণ মানসিক অভিজ্ঞতাকে অতিরিক্ত রোগ হিসেবে দেখা” বা over-pathologizing-এর প্রবণতা বেড়েছে।

আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তাতেও মানসিক স্বাস্থ্য পরিভাষা ঢুকে পড়েছে। কেউ নিজেকে OCD বা ADHD বলছেন, আবার কেউ শারীরিকভাবে সাধারণ ঘুমের অভাবের জন্য ইন্সোমনিয়া বা সামাজিক অভ্যাসজনিত সমস্যার জন্য ‘সোশ্যাল অ্যাংজাইটি’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।

থেরাপি কি অত্যধিক রুটিন হয়ে গেছে?

সাধারণ অনুভূতিকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করার কারণে অনেকেই মনে করেন তারা থেরাপির প্রয়োজন, এমনকি যাদের প্রকৃত সমস্যা নেই তাদেরও। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি থেরাপি প্রায়ই স্বাভাবিক পুনরুদ্ধারের চেয়ে বেশি কার্যকর নয়। বিশেষ করে সিবিটি (কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি) রোগীর সমস্যা ব্যবস্থাপনার কৌশল শেখায়, মূল সমস্যার সমাধান নয়।

প্রফেসর রিচার্ড ফ্রিডম্যান বলেন, থেরাপি দীর্ঘমেয়াদে ডিজাইন করা হয়নি। থেরাপির মূল উদ্দেশ্য হলো রোগীকে সমস্যা মোকাবিলার কৌশল শেখানো। তাই, দীর্ঘমেয়াদি থেরাপি কখনও কখনও রোগীকে সমস্যার মধ্যে আটকে রাখে।

মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আটকে যাওয়া

বর্তমান মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্বাসনের চেয়ে ওষুধে বেশি নির্ভর করে। চিকিৎসকরা প্রায়ই “সহজ” রোগী বা দ্রুত সমাধানযোগ্য সমস্যার দিকে ঝুঁকছেন। এই প্রবণতা গুরুতর রোগীর পূর্ণ সহায়তা পাওয়া কঠিন করে তোলে।

উদাহরণস্বরূপ, PTSD রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন করছেন যে, দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস ওষুধ তাদের নিজেকে স্বাভাবিকভাবে সুস্থ হতে বাধা দিচ্ছে কি না। ADHD-এর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে শিশুদের প্রায় ৩১% বড় হয়ে এই রোগের লক্ষণ হারিয়ে ফেলে, তবুও অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে ওষুধ দেওয়া হয়।

অফবোর্ডিং পরিকল্পনার অভাব

মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা, ওষুধ বা থেরাপি শেষ করার একটি নির্ধারিত পরিকল্পনা প্রায়ই নেই। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস ব্যবহার শেষ করার সঠিক সময় চিকিৎসকরা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেন না। থেরাপির ক্ষেত্রেও এমবিসি (Measurement-Based Care) ব্যবহার খুব কমই করা হয়। প্রায় ৮৪% রোগী থেরাপি শেষ করে নিজে থেকে থেরাপি বন্ধ করেন।

মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও শোষণ

DSM-এর মানসিক রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়া “বৈজ্ঞানিকভাবে অর্থহীন” বলে অনেক গবেষক উল্লেখ করেছেন। ১৯৭৩ সালে স্ট্যানফোর্ডের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, স্বাভাবিক মানুষকে রোগী বানিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাদেরকে গুরুতর মানসিক রোগে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বড় মানসিক হাসপাতালগুলোর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান অভিযোগের মুখে পড়েছে যে, রোগীদের দীর্ঘ সময় ধরে অবৈধভাবে ধরে রাখা হয়েছে, শুধুমাত্র বীমা থেকে সর্বোচ্চ আয় করার উদ্দেশ্যে।

মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ন্যাভিগেশন

মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, তবে রোগী ও পরিবারকে সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসা, থেরাপি এবং ওষুধ শুধুমাত্র রোগ কমানোর জন্য নয়, পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।

পরামর্শসমূহ:

১. সতর্ক ও তথ্যনির্ভর রোগী হোন: নির্ণয় বা ওষুধ গ্রহণের আগে তথ্য জানুন, সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিকল্প চিকিৎসা জানুন।

২. আচরণগত কৌশল শেখা: ওষুধের পাশাপাশি কৌশলমূলক থেরাপি গ্রহণ করুন।

৩. সমর্থন ব্যবস্থা তৈরি করুন: পরিবার, বন্ধু বা সমর্থক গ্রুপের সঙ্গে থাকুন।

৪. সুনির্দিষ্ট পুনরুদ্ধার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: থেরাপি বা ওষুধের মাধ্যমে স্বাভাবিক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রা রাখুন।

মানসিক স্বাস্থ্য সেবা অপরিহার্য, তবে সর্বদা মনে রাখুন, “caveat emptor”—সাবধান হওয়া আপনার অধিকার।

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত

উড়ন্ত সরীসৃপের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে ধারণা বদল ৩২০টি ফাইটোলিথ পেলেন গবেষকরা

উড়ন্ত সরীসৃপের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে ধারণা বদল ৩২০টি ফাইটোলিথ পেলেন গবেষকরা

ডাইনোসরের যুগে আকাশে রাজত্ব করত বিশাল আকৃতির উড়ন্ত সরীসৃপ 'টেরাসর'। এই রহস্যময় প্রাণীদের বিভিন্ন প্রজাতি আবিষ্কৃত হলেও তাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে... বিস্তারিত