পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের নতুন মামলা!

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ০৯:৪৪:৩২
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের নতুন মামলা!

দেশের ব্যাঙ্কিং খাতে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে আলোচিত ব্যবসায়ী প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এবং আরো প্রায় ৫০ জনের বিরুদ্ধে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) দুটি পৃথক মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুটি মামলায় মোট ৫০ জনকে আসামি করা হবে। এই দুই মামলায় অন্তত ২৪ জন আসামির নাম উভয় মামলায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

প্রথম মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-

- সাদ মুসা গ্রুপের কর্ণধার ও সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক,

- মাহমুদ সাজিদ কটন মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোহসিন ও তার স্ত্রী শামীমা নারগিস চৌধুরী (চেয়ারম্যান),

- সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী,

- পি কে হালদার (সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক),

- ব্যাংকের সাবেক একাধিক পরিচালক এবং

- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ঋণ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনি ঋণ অনুমোদন এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার।

দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করা হয়নি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও গুদামের সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়নি। এমনকি ঋণ আবেদন পেয়ে মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

এই তথ্য প্রমাণ করে, ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সতর্কতার অভাব ছিল, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে মিথ্যা বা জাল তথ্য দিয়ে বড় ধরনের অর্থ আত্মসাতের জন্য।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পি কে হালদার পরিচালিত এই চক্রের অন্য সদস্যরা ব্যাংক পরিচালনায় নিয়োজিত ছিল এবং তারা একযোগে কাজ করে ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়াকে ভেজালমুক্ত ও নিয়মবিরুদ্ধ করেছে। গ্রাহকের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা না দেখে ঋণ অনুমোদন করায় ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা ‘কায়েম থাকা’ অজানা থেকে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতির এক সুপরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারী ঘটনা, যা দেশের অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও অর্থ উদ্ধার ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা হবে।

তিনি বলেন, “এই ধরনের অর্থনৈতিক অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। যারা দণ্ডিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঋণ জালিয়াতির এই ঘটনা ব্যাংকের আর্থিক স্বচ্ছতা ও বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করেছে। এতে ঋণ সংস্কৃতির প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়া ছাড়াও, ব্যাংকিং খাতের প্রতিযোগিতা ও উন্নয়নের পথে বড় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ তদারকি আরও জোরদার করতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মান বজায় রাখতে হবে।

সাউথ বাংলা ব্যাংকের এই ঋণ জালিয়াতির মামলায় পি কে হালদার ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দেশের আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বড় একটি ধাপ হবে। এটি শুধু একটি বিচারের বিষয় নয়; এর মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধের সংকল্প আরও দৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করছে সংশ্লিষ্টরা।

দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ সময়ের দাবি।

-অনন্যা, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত