“বাংলা বললেই বাংলাদেশি?”: বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের হয়রানির অভিযোগ মমতার

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৫ ০৮:৩৩:৫১
“বাংলা বললেই বাংলাদেশি?”: বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের হয়রানির অভিযোগ মমতার

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ উত্থাপন করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছেন। তিনি জানান, দেশের কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান করা হচ্ছে এবং এমনকি বৈধ নাগরিকত্বের কাগজ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের আটক করে হেনস্তা করা হচ্ছে। কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, রাজস্থানে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ জন বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিককে একটি ভবনে আটক রাখা হয়েছে, যদিও তাদের কাছে ভোটার আইডি ও আধার সহ বৈধ নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র ছিল।

মমতা প্রশ্ন তোলেন, “বাংলা কি আজ অপরাধের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে?” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলা তো সেই ভাষা, যার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহাপুরুষরা তাঁদের চিন্তা ও আদর্শ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘটনায় এখনও অবগত নন। আমি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করব।” এর পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্যেও অতীতে বাংলা ভাষাভাষীদের সঙ্গে অনুরূপ বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।

মমতা জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্থানের মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “আমার জ্ঞানে, ১৯৭১ সালের আগে যারা ভারতে এসেছেন, তাঁরা সবাই ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত।” তিনি এও যোগ করেন যে, ভাষার ভিত্তিতে কাউকে ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা ভারতের সংবিধান ও বহুত্ববাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় এই প্রসঙ্গ প্রথম উত্থাপন করেন এবং অভিযোগ করেন, কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে সীমান্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষার উচ্চারণ, টান ও উপভাষাগত পার্থক্য রয়েছে। “তবুও কেউ যদি বাংলা বলে, তাকে বাংলাদেশি ধরে নেওয়া কি যুক্তিসঙ্গত?”—প্রশ্ন রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা আরও বলেন, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১.৫ কোটি অভিবাসী শ্রমিক কর্মরত, যারা বিভিন্ন রাজ্য থেকে এখানে কাজ করতে এসেছেন। “আমরা কখনও তাঁদের ভাষা বা আঞ্চলিক পরিচয় দেখে বৈষম্য করি না। তাহলে আমাদের রাজ্যের প্রায় ২২ লক্ষ শ্রমিক, যারা জীবিকার সন্ধানে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গেছেন, তাঁদের সঙ্গে এমন আচরণ কেন?”—উল্টো প্রশ্ন করেন তিনি। তাঁর মতে, “আমি অনেকবার বাংলার যুবসমাজকে বলি এখানেই কাজ করো, বাইরে যেও না। কিন্তু অনেক সময় মানুষকে জীবিকার জন্য বাইরে যেতে হয়। এটা কি তাঁদের অপরাধ?”

এই প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে মমতা একটি গভীর সাংবিধানিক ও মানবিক ইস্যু সামনে এনেছেন—ভাষা কি এখন নাগরিকত্বের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়াচ্ছে? তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “তাহলে কি তামিল ভাষাভাষীদের শ্রীলঙ্কায় ফেরত পাঠানো হবে? কিংবা নেপালি ভাষাভাষীদের নেপালে?” এসব প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন ভারতের ফেডারেল কাঠামোয় ভাষাগত বৈচিত্র্যের প্রতি যেভাবে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, তা শুধু রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চেতনার জন্য নয়, জাতিগত সংহতির জন্যও হুমকিস্বরূপ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা কেবল ভাষা বা অভিবাসনের ইস্যু নয়, বরং তা ভারতের জাতীয়তাবাদ ও প্রাদেশিক বৈচিত্র্যের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের প্রতিচ্ছবি। ‘অনুপ্রবেশকারী’ পরিচয়ের রাজনীতি যেভাবে ভাষার ভিত্তিতে নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে, তা দেশের সংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে বিপজ্জনক বার্তা দিচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরব প্রতিবাদ হয়তো এই ইস্যুকে আরও তীব্রভাবে জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে আসবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত