হাসনাতের উপর হামলা: চারজন গ্রেপ্তার

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ০৫ ১১:১৯:৩২
হাসনাতের উপর হামলা: চারজন গ্রেপ্তার

সত্য নিউজ:গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। রবিবার (৪ মে) রাতে এ হামলার পর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করেছে। আটককৃতদের মধ্যে অন্তত দু’জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে—গাজীপুর মহানগর যুবলীগের সদস্য মো. নিজাম উদ্দিন এবং কাশিমপুর থানার শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের সভাপতি মাসুম আহমেদ দিপু। বাকিদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

জিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল ইসলাম সময় সংবাদকে জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজনদের আটক করে। তিনি বলেন, “হামলার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে।”

রাজনৈতিক সহিংসতার পুরনো লক্ষ্যবস্তু?

এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো হামলা নয়। এর আগেও রাজধানীর গুলিস্তান, মাতুয়াইল, এমনকি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। ২০২3 সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাকে টার্গেট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের।

হাসনাতের ওপর চলমান আক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। তারা বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের কিছু সদস্য কর্তৃক সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে আরও দুর্বল করে তুলছে।

হামলার দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল

হামলার পরপরই এনসিপি’র আরেক মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ফেসবুকে একটি পোস্ট করে ঘটনার বর্ণনা দেন এবং নেতাকর্মীদের হাসনাতকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পোস্টে লেখা হয়, “হাসনাতের গাড়িতে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী গাজীপুর এলাকায় হামলা চালিয়েছে। গাড়ির গ্লাস ভেঙে গিয়েছে, হাত রক্তাক্ত হয়েছে।” পোস্টের সঙ্গে লোকেশন ও ছবি যুক্ত থাকায় তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।

বিশ্লেষণ ও পরিপ্রেক্ষিত

অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার এই সময়ে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ওপর এমন হামলা জাতীয় নিরাপত্তা ও আইনের শাসনের প্রশ্ন তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেই কাউকে বারবার হামলার শিকার হতে দেওয়া গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজীপুরের মতো রাজনীতিকভাবে সংবেদনশীল এলাকায় সরকারি দলঘেঁষা অঙ্গ সংগঠনের সদস্যদের হামলার ঘটনায় নাম আসা উদ্বেগজনক। সরকার যদি এ ধরনের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত না করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও সহিংসতা ও অবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

নিরাপত্তা ও বিচার নিশ্চিতে দাবি

হামলার পরপরই গাজীপুর ও ঢাকায় এনসিপি ও ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ হয়েছে। হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। হাসনাতের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো না হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে তার হাত রক্তাক্ত দেখা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, তদন্তের অগ্রগতির ভিত্তিতে বাকিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। তবে হামলার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।


এই হামলা শুধু একটি রাজনৈতিক নেতার ওপর আক্রমণ নয়, এটি দেশের রাজনীতিতে সহিংসতার এক গভীর ও আশঙ্কাজনক ধারাবাহিকতারই আরেকটি সংযোজন। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব, সহনশীলতা ও ন্যায়বিচারের মানদণ্ড বজায় রাখা—এর বিকল্প নেই।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ