অজান্তেই নীরবে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি—জেনে নিন মূল কারণ

বিশ্বব্যাপী হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৩ সালেই প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদ্‌রোগজনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এই মৃত্যুর বড় একটি অংশ তরুণ ও মধ্যবয়সীদের মধ্যে ঘটেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু মারাত্মক অভ্যাস—এই বিপদের পেছনে দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ট সার্জন ড. জেরেমি লন্ডন সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে এমন চারটি অভ্যাসের কথা জানিয়েছেন, যেগুলো তিনি নিজে কঠোরভাবে এড়িয়ে চলেন নিজের হৃদ্‌যন্ত্র সুস্থ রাখতে। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সাভানার সেন্ট জোসেফ ক্যান্ডলার হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে দেওয়া এই পরামর্শ হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রথমত, ধূমপান সম্পর্কে ড. লন্ডনের ভাষ্য অত্যন্ত কঠোর। তাঁর মতে, ধূমপান শুধু ফুসফুস নয়, হৃদ্‌যন্ত্রের জন্যও চরম ক্ষতিকর। এটি সরাসরি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও রক্তনালীর জটিলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই অভ্যাস থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসা উচিত।

দ্বিতীয়ত, মদ্যপানের বিরুদ্ধে তিনি শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, "মদের এক ফোঁটাও শরীরের জন্য নিরাপদ নয়।" শরীরের প্রতিটি কোষে এটি বিষ ছড়ায়। তিনি নিজেই বহু আগে মদ্যপান ত্যাগ করেছেন এবং সেটিকে জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তৃতীয় যে অভ্যাসটি তিনি এড়িয়ে চলেন, সেটি হলো কোল্ড ড্রিংকস বা কোমল পানীয়। তাঁর ভাষায়, এগুলো ‘তরল মৃত্যু’। এতে অতিরিক্ত চিনি থাকলেও পুষ্টিগুণ নেই বললেই চলে। এসব পানীয় ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

চতুর্থ ও শেষ অভ্যাসটি হলো ময়দা গ্রহণ। ময়দা একটি অতিপ্রক্রিয়াজাত শর্করাজাতীয় উপাদান যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। ফলে দেহে চর্বি জমে, ওজন বাড়ে এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তাঁর মতে, হার্ট ভালো রাখতে চাইলে খাদ্যতালিকা থেকে ময়দা বাদ দেওয়াই শ্রেয়।

ড. লন্ডনের পরামর্শ, “সতর্কতা ও সচেতনতাই হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার।” আমরা যদি দৈনন্দিন জীবনের এই চারটি ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারি, তবে সুস্থ হৃদয় আর দীর্ঘায়ু জীবন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব হয়ে উঠতে পারে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা