ঢাকা-চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট, খাবারও হোটেল নির্ভর

দেশব্যাপী চলমান গ্যাস সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বৈরী আবহাওয়ার কারণে। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সাগরে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক ও শিল্প খাতে গ্যাসের অভাব চরমে পৌঁছেছে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৮ জুন) থেকে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনালগুলোতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা কার্গো জাহাজগুলো ভিড়তে না পারায় রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য মজুত গ্যাসই সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে বুধবার সন্ধ্যায় সরবরাহ নেমে আসে মাত্র ২০ কোটি ঘনফুটে। যদিও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটে এবং সরবরাহ ৬০ কোটিতে উন্নীত হয়।
গ্যাস সরবরাহে ভয়াবহ ঘাটতিবর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা কমপক্ষে ৪২০ কোটি ঘনফুট। যেখানে বুধবার ও বৃহস্পতিবার মিলিয়ে সরবরাহ নেমে এসেছে প্রায় ২০০ কোটি ঘনফুটে। এর বড় একটি অংশ এলএনজির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় চাহিদা ও জোগানে তৈরি হয়েছে তীব্র ব্যবধান।
পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে দুটি নতুন কার্গো জাহাজ টার্মিনালে যুক্ত হয়েছে। এতে করে আজ (শুক্রবার) সকাল নাগাদ এলএনজি সরবরাহ ১০০ কোটিতে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
নগরজীবনে দুর্ভোগ, শিল্পে বিপর্যয়রাজধানী ঢাকার গোপীবাগ, আগারগাঁও, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনভর গ্যাস না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগীদের ক্ষোভ আর হতাশা উঠে এসেছে স্পষ্টভাবে।
গোপীবাগের ঝর্ণা রায় বলেন,“সকাল থেকে চুলায় গ্যাস ছিল না বললেই চলে। সন্ধ্যার দিকে একটু চাপ বাড়লেও, চুলা জ্বালানোর মতো গ্যাস আসেনি।”
চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া অঞ্চলের বহু শিল্পকারখানায় দিনভর উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। কোথাও কোথাও বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকার সানজিদা আক্তার জানান,“গ্যাস না থাকায় সারা দিনের রান্না হোটেল থেকে কিনে আনতে হয়েছে। সকাল-দুপুরের খাবারই রান্না করতে পারিনি।”
চাঁদপুর, কুমিল্লাসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় আবাসিক সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল বৃহস্পতিবার। চাঁদপুর শহরের মমিনপাড়ার গৃহিণী লাবণী বলেন,“সকাল ৯টার দিকেই গ্যাস আসা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। রান্না করতেই পারিনি।”
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক শফিউল আজম খান বলেন,“চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ২৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলেও তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৬ কোটিতে। এর ফলেই এমন সংকট দেখা দিয়েছে।”
পরিস্থিতির উন্নতি কতটা দ্রুত?সরকারি পর্যায়ে আশা করা হচ্ছে, আজ শুক্রবার (২১ জুন) সকাল নাগাদ এলএনজি সরবরাহ ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করতে পারবে। তবে যতক্ষণ না গভীর সমুদ্রে আবহাওয়া অনুকূলে আসে, নতুন কার্গো আমদানির স্বাভাবিক গতি ফেরানো সম্ভব নয়।
এমন অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস সংকট মোকাবেলায় বিকল্প উৎস এবং মজুত ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী পরিকল্পনা ছাড়া সমাধান আসবে না।
—আশিক নিউজ ডেস্ক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মুখোমুখি বিশ্ব শক্তিগুলো
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- এবার পাকিস্তানকে হামলার হুমকি দিল ইসরায়েল
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা