খুলনায় আ.লীগ নেতা লিয়াকতকে গণধোলাই

খুলনায় জনতার রোষানলে পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বেগ লিয়াকত আলী (৭০)। অতঃপর তাকে স্থানীয় থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে মহানগরীর ফুলবাড়ীগেট বাজারে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, বেগ লিয়াকত আলী দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়ে খুলনায় ফিরেছেন। এ সময় ফুলবাড়ীগেট এলাকায় তাকে চিনে ফেলেন স্থানীয় লোকজন, যাদের অনেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে ক্ষুব্ধ ছিলেন।
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে তিনি বাজারে কেনাকাটা করতে গেলে জনতা তাকে ঘিরে ধরে। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করে এবং ধাক্কাধাক্কি ও গণধোলাই দেয়। পরে খবর পেয়ে খানজাহান আলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
বেগ লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে জমি দখল, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক সহিংসতার একাধিক অভিযোগও দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয় ছিল।
২০১৩ সালেই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তবে প্রভাবশালী রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তিনি বেশ কিছুদিন আইনের নাগাল এড়িয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান।
খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, “স্থানীয় জনগণের হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হওয়ার পর আমরা তাকে থানায় নিয়ে আসি। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন এবং আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
ঘটনার পর ফুলবাড়ীগেট এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এমন একজন অপরাধীর প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো লজ্জাজনক। তার মতো যুদ্ধাপরাধের আসামিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা দরকার।”
বেগ লিয়াকত দীর্ঘদিন ধরে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তিনি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন।
দলের একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বেগ লিয়াকত এখন আর দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে যুক্ত নন। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় আমরা চাই, যারা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক।”
বেগ লিয়াকতের জনতার হাতে গণধোলাই এবং পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শুধু ব্যক্তিগত ঘটনা নয়, এটি যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে জনমনে গড়ে ওঠা দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া কতটা গতি পায়।
-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িতে সেনা অভিযান:উদ্ধার ইয়াবা ও ধারালো অস্ত্র!
- দ্বিতীয় দিনেও চলছে কোরবানি, কসাই না পাওয়ায় আজ জবাই অনেকের
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- তারেক রহমানের দেশেফেরার সম্ভাব্য সময় জানালেনমির্জা ফখরুল
- তারেক-ইউনূস বৈঠক: উত্তপ্ত রাজনীতিতে সম্ভাব্য টার্নিং পয়েন্ট?
- উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষোভ কি ভারতের কেন্দ্রীয় কূটনীতি পাল্টাবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- সাক্ষাৎ চাইলেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি, মুখ ফিরিয়ে নিলেন ড. ইউনূস
- ডিএসইতে সাধারণ বীমা খাতের প্রান্তিক বিশ্লেষণ:মুনাফা বৃদ্ধির শীর্ষে কারা?
- তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা