ইংল্যান্ডে হতে পারে আইপিএলের বাকি ম্যাচ?

খেলা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ১৫:১৯:৩১
ইংল্যান্ডে হতে পারে আইপিএলের বাকি ম্যাচ?

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতের কারণে চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ২০২৫-এর আসর এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। এই পরিস্থিতিতে আইপিএলের বাকি অংশ আয়োজনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড ইতোমধ্যেই বিসিসিআইকে ইংল্যান্ডে আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলো আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

জানা গেছে, আগামী জুন মাসের শুরুতে পাঁচ ম্যাচের একটি টেস্ট সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড সফরে যাবে ভারতীয় জাতীয় দল। ওই সিরিজ শেষেই সেপ্টেম্বর নাগাদ ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ভেন্যুতে আইপিএলের অবশিষ্ট ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতের ভেতরে নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে আইপিএলের পুনরায় শুরু হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়ায় ইসিবি এই প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতের ভেতরে দ্রুত টুর্নামেন্ট পুনরায় শুরু করা সম্ভব না হলে এই প্রস্তাবই হতে পারে বিসিসিআইয়ের জন্য একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।

সাম্প্রতিক এই স্থগিতাদেশের পেছনে সরাসরি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ধর্মশালায় পাঞ্জাব কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যকার ম্যাচ চলাকালীন সময়ের একটি ঘটনা। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে হঠাৎ ফ্লাডলাইট বিকল হয়ে যায়, এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও আলো না ফেরায় খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দর্শকদের দ্রুত মাঠ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং পরদিন খেলোয়াড়দের বিশেষ ট্রেনে দিল্লিতে আনা হয়। বিসিসিআই পরে এক বিবৃতিতে জানায়, পরিস্থিতির পেছনে প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকলেও মূল উদ্বেগ ছিল নিরাপত্তা ঘিরে, আর সে কারণেই আপাতত সাত দিনের জন্য আইপিএল স্থগিত করা হয়েছে।

এই মুহূর্তে আইপিএলের ৫৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লিগ পর্বে আরও ১২টি ম্যাচ এবং প্লে-অফের ৪টি ম্যাচ বাকি রয়েছে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে গুজরাট টাইটান্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু—দুই দলই ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট করে অর্জন করেছে। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ২০ মে থেকে প্লে-অফ শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২৫ মে। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তনে এই সময়সূচি আপাতত অনির্দিষ্টকাল পিছিয়ে গেছে।

এই প্রথমবার নয়, এর আগেও ২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে আইপিএল মাঝপথে স্থগিত হয়েছিল। সে সময়ও ইসিবি আয়োজনের আগ্রহ দেখিয়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত বাকি ম্যাচগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্পন্ন হয়। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন—স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা সরাসরি এই সংকটের কেন্দ্রে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইংল্যান্ডে আইপিএল আয়োজন সম্ভব হলেও এর সঙ্গে যুক্ত আছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ইংল্যান্ডের আবহাওয়া ও পরিকাঠামো উপযোগী হলেও সেখানে ঘরোয়া মৌসুম ও অন্যান্য সিরিজ থাকায় সময় ও স্থান সংস্থান জটিল হতে পারে। সেই সঙ্গে, বিসিসিআইয়ের স্পনসর, সম্প্রচার অধিকার ও আর্থিক অংশীদারদের বিষয়ও নতুনভাবে সামঞ্জস্য করতে হবে। তবে নিরাপত্তার বর্তমান বাস্তবতায় বিদেশে আয়োজনই হতে পারে টুর্নামেন্ট শেষ করার একমাত্র পথ।

সব মিলিয়ে, আইপিএল বর্তমানে শুধু একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়, বরং এটি ভারতের অর্থনীতি, কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। ফলে, আইপিএলের বাকি অংশ কোথায় ও কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, তা শুধু ক্রীড়াপ্রেমীদের নয়—ভারতের বৃহৎ স্বার্থের প্রতিও গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ