শেয়ারবাজার

ডিএসইতে সাধারণ বীমা খাতের প্রান্তিক বিশ্লেষণ:মুনাফা কমেছে ২০ কোম্পানির

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১২ ১৭:৫৮:২১
ডিএসইতে সাধারণ বীমা খাতের প্রান্তিক বিশ্লেষণ:মুনাফা কমেছে ২০ কোম্পানির

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ বীমা খাতের মোট ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৮টি কোম্পানি ২০২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, এদের মধ্যে ২০টি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (EPS) কমে গেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায়। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় ও বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

এই কোম্পানিগুলোর আয় হ্রাস পাওয়ার পেছনে বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে ব্যয় বৃদ্ধি, বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশিত আয় না পাওয়া, প্রশাসনিক ব্যয়ের নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির স্থবিরতা অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে।

বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোর তালিকা ও বিশ্লেষণ

EPS হ্রাস পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স ও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে পড়েছে।

ঢাকা ইন্স্যুরেন্স গত বছর একই সময় যেখানে EPS করেছিল ৭৫ পয়সা, এবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ পয়সায় — ২৫ পয়সার উল্লেখযোগ্য পতন।

মেঘনা ইন্স্যুরেন্স EPS হারিয়েছে ২৯ পয়সা (৬৭ → ৩৮ পয়সা), যা কার্যকরভাবে প্রায় ৪৩% হ্রাস।

দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স EPS কমেছে ২৪ পয়সা থেকে ৫ পয়সায় — প্রায় ৮০% হ্রাস, যা আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য অশনিসংকেত।

EPS হ্রাসের বিস্তারিত তালিকা (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫ বনাম ২০২৪)

কোম্পানির নামEPS (২০২৫)EPS (২০২৪)পরিবর্তন
ঢাকা ইন্স্যুরেন্স ৫০ পয়সা ৭৫ পয়সা -২৫ পয়সা
মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ৩৮ পয়সা ৬৭ পয়সা -২৯ পয়সা
প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স ৩৮ পয়সা ৫৫ পয়সা -১৭ পয়সা
দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ৫ পয়সা ২৪ পয়সা -১৯ পয়সা
এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স ১.০৩ টাকা ১.২১ টাকা -১৮ পয়সা
অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স ৩৫ পয়সা ৫০ পয়সা -১৫ পয়সা
প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ৬১ পয়সা ৭৫ পয়সা -১৪ পয়সা
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স ১.৩৬ টাকা ১.৫০ টাকা -১৪ পয়সা
সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স ৪৩ পয়সা ৫৪ পয়সা -১১ পয়সা
রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স ৪৭ পয়সা ৫৬ পয়সা -৯ পয়সা
ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স ৩৯ পয়সা ৪৮ পয়সা -৯ পয়সা
পূরবী ইন্স্যুরেন্স ৩৩ পয়সা ৪২ পয়সা -৯ পয়সা
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ৩৯ পয়সা ৪৭ পয়সা -৮ পয়সা
নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স ৬৫ পয়সা ৭০ পয়সা -৫ পয়সা
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স ৪২ পয়সা ৪৫ পয়সা -৩ পয়সা
নিটল ইন্স্যুরেন্স ৩৯ পয়সা ৪২ পয়সা -৩ পয়সা
এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ২৯ পয়সা ৩১ পয়সা -২ পয়সা
কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স ৬২ পয়সা ৬৪ পয়সা -২ পয়সা
ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ২২ পয়সা ৩২ পয়সা -১০ পয়সা
প্রগতী ইন্স্যুরেন্স ১.১২ টাকা ১.১৩ টাকা -১ পয়সা

তথ্য সূত্র:ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের আয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০টি সাধারণ বীমা কোম্পানির মুনাফা কমে যাওয়ার এই চিত্র কেবল একটি তাৎক্ষণিক ব্যর্থতা নয়—বরং এটি খাতজুড়ে বিদ্যমান কাঠামোগত দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। প্রথমত, অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো দাবি নিষ্পত্তিতে অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে পারেনি। পলিসিধারীরা যখন ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেন, তখন সেই আবেদন সঠিক সময়ে পরিশোধ না হওয়ায় গ্রাহকের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ, গ্রাহকপ্রবণতা ও আস্থা কমে যায়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে প্রিমিয়াম আয়ের ওপর। দীর্ঘমেয়াদে এটি কোম্পানির আয় ও সুনামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দ্বিতীয়ত, অদক্ষ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনাও বড় একটি কারণ। বীমা কোম্পানিগুলোর রাজস্বের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম থেকে—যেমন: শেয়ারবাজার, সরকারি সিকিউরিটিজ কিংবা কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কিছু কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করে প্রত্যাশিত রিটার্ন অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ পোর্টফোলিও যথাযথভাবে বহুমুখীকরণ না করায় নির্দিষ্ট খাতে ক্ষতির প্রভাব পুরো আয় কাঠামোকে নড়বড়ে করে তুলছে।

তৃতীয়ত, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের ঘাটতি ও প্রশাসনিক জটিলতা সাধারণ বীমা খাতের মুনাফায় অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনো অনেক কোম্পানির ক্লেইম প্রসেসিং ম্যানুয়াল এবং সময়সাপেক্ষ, যার ফলে সেবা প্রদানের গতি কমে যায় এবং প্রশাসনিক ব্যয় বাড়ে। ডিজিটাল ক্লেইম ম্যানেজমেন্ট, অটোমেটেড রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ও ডেটা অ্যানালিটিকসের ব্যবহার সীমিত হওয়ায় কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনের অভাবে এই খাত দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং সময়োচিত সেবার দিক থেকে পিছিয়ে থাকছে।

কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন

বর্তমান প্রান্তিকের ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের সাধারণ বীমা খাতের একটি বড় অংশ এখনো আর্থিক ও কাঠামোগতভাবে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হবে একটি সুপরিকল্পিত ও বাস্তবভিত্তিক পুনর্গঠন পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারে তিনটি বিষয়: প্রথমত, পলিসিধারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা—নির্ভরযোগ্যতা এবং সময়মতো সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, দাবি নিষ্পত্তির গতিশীলতা বাড়ানো—যাতে পলিসি অনুযায়ী ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দ্রুত পাওয়া যায় এবং গ্রাহকের সন্তুষ্টি নিশ্চিত হয়। তৃতীয়ত, ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ—যার মধ্যে ই-সার্ভিস, ক্লেইম অটোমেশন এবং রিস্ক মডেলিংয়ের আধুনিকায়ন অন্তর্ভুক্ত।

এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে না পারলে, বর্তমান প্রবণতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে, যা শুধুমাত্র এসব কোম্পানির নয়, বরং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের বীমা খাতের আস্থাগত ও অর্থনৈতিক ভিত্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। সুতরাং, সময়োপযোগী সংস্কার ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত