ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও হজের মর্মবাণী

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ১৩:২২:০৮
ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও হজের মর্মবাণী

সত্য নিউজ:পবিত্র কোরআনের ২২তম সুরা ‘সুরা হজ’, মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছিল এবং এতে মোট ১০টি রুকু ও ৭৮টি আয়াত রয়েছে। সুরা হজের প্রধান বিষয়বস্তু হজের বিধান, কোরবানির নির্দেশনা, কিয়ামতের ভয়াবহতা, আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি আহ্বান, এবং বিশ্বাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জীবনমূলক শিক্ষা প্রদান করা।

কিয়ামত ও সৃষ্টির শক্তি

সুরা হজের সূচনা কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে হয়েছে। আল্লাহ মানবজাতিকে সতর্ক করে বলেছেন যে, ‘হে মানবজাতি, পুনরুত্থান সম্বন্ধে তোমাদের সন্দেহ! আমি তো তোমাদের সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে, তারপর শুক্র থেকে, তারপর রক্তপিণ্ড থেকে...’। (সুরা হজ, আয়াত: ৫) এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ মানবজাতির সৃষ্টির নানা ধাপের উল্লেখ করেন, যা তাঁর অনন্ত শক্তি ও সৃষ্টিশক্তির পরিচায়ক।

এছাড়া সুরায় শিরককারীদের সমালোচনা করা হয়েছে এবং আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। মহানবী (সা.)-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী নবীদের (ইবরাহিম, নুহ, মুসা প্রমুখ) সম্প্রদায়ও তাদের নবীদের মিথ্যাবাদী বলেছিল এবং আল্লাহ তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন।

হজের বিধান

হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ এবং এটি শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলিমদের জন্য ফরজ। সুরা হজের আয়াত ২৭-এ হজের ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে: ‘মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে হেঁটে এবং দ্রুতগামী উটে চড়ে, দূরদূরান্তের পথ থেকে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ২৭) এই আয়াতটি হজের গুরুত্ব এবং এর ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

সুরায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, হজের সময় নির্ধারিত হয়েছে শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ মাসে, বিশেষত জিলহজের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত। এর মধ্যে মক্কার কাবা শরিফ, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফার স্থানগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হজের মাধ্যমে মুসলিমরা পাপমুক্ত হয়ে নবীনভাবে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে, যেমনটি মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করল এবং হজ অবস্থায় কথা ও কাজে পাপ থেকে বিরত রইল, সে হজ শেষে সেই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ঘরে ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৫২১)

কোরবানি ও তার গুরুত্ব

হজের সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোরবানি, যা জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করা হয়। সুরা হজের আয়াত ৩৪-এ বলা হয়েছে, ‘সব সম্প্রদায়ের জন্য আমি কোরবানির বিধান দিয়েছি...যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৪)

কোরবানি মানুষের ধর্মনিষ্ঠা এবং আল্লাহর কাছে ত্যাগের গুরুত্বকে তুলে ধরে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে ওদের মাংস বা রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের ধর্মনিষ্ঠা।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭) কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং এর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য করা।

বিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য

সুরায় বিশ্বাসীদের জন্য চারটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে: ‘যাদের হৃদয় আল্লাহর নাম করা হলে ভয়ে কাঁপে, যারা তাদের বিপদ-আপদে ধৈর্য ধরে ও নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তার থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৫) এই গুণাবলি বিশ্বাসীদের জীবনে আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তি এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ প্রকাশ করে।

ধর্মীয় ও সামাজিক নির্দেশনা

সুরা হজে নামাজ কায়েম, জাকাত প্রদান এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহকে মহানুভব অভিভাবক ও সাহায্যকারী হিসেবে অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। সুরার শেষে বলা হয়েছে, ‘তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছিলেন “মুসলিম”...তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও ও আল্লাহকে অবলম্বন করো। তিনিই তোমাদের অভিভাবক, এক মহানুভব অভিভাবক ও সাহায্যকারী।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৭৮)

এছাড়া সুরা হজে আল্লাহর শক্তির তুলনায় শিরককারীদের দুর্বলতা একটি উপমার মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে: ‘তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা তো কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না...আল্লাহ তো ক্ষমতাবান পরাক্রমশালী।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৭৩-৭৪)

সুরা হজ মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবনযাত্রার মৌলিক দিকগুলোর ওপর আলোকপাত করেছে। এটি মুসলিমদের আল্লাহর একত্ব, হজের গুরুত্ব, কোরবানি, নামাজ ও জাকাতের প্রয়োজনীয়তা এবং সমাজে সহানুভূতির পরিচায়ক হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। সুরা হজে বলা হয়েছে, আল্লাহর পথে চলা, তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং তার আদেশ মেনে চলা মানব জীবনের মূল উদ্দেশ্য।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ