বিশ্ব মা দিবস: ভালোবাসার শিকড়কে স্মরণ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ১১:০৭:১৩
বিশ্ব মা দিবস: ভালোবাসার শিকড়কে স্মরণ

সত্য নিউজ:“মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই / ইহার চেয়ে নামটি মধুর, তিন ভুবনে নাই।”
কবি কাজী কাদের নেওয়াজের এই চরণগুলো যেন পৃথিবীর সব সন্তানের মনের গভীর অনুভব। মা—এই একমাত্র শব্দেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব ভালোবাসা, স্নেহ, নির্ভরতা আর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ। আজ ১১ মে, বিশ্বজুড়ে উদ্‌যাপিত হচ্ছে সেই মায়ার প্রতীক, ভালোবাসার উৎস, ‘বিশ্ব মা দিবস ২০২৫’।

এক শব্দ, এক অনুভব: ‘মা’

‘মা’ শব্দটি ভাষা, অঞ্চল, সংস্কৃতি কিংবা ধর্মভেদে ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু এর মর্মার্থ সর্বত্রই অভিন্ন। পৃথিবীর প্রায় সব ভাষাতেই মাকে ডাকার শব্দে থাকে ‘ম’ ধ্বনি। ইংরেজির মাদার, হিন্দির মা, পাঞ্জাবির মাতাজি, জার্মানদের মুটার, পর্তুগিজের মায়ে কিংবা গ্রিকদের মানা—সবখানেই উচ্চারিত হয় এক ধ্বনি, এক অনুভব। যেন ভাষা আলাদা হলেও মা–ডাকের মাধুর্য চিরকালই একই রকম কোমল, হৃদয়ছোঁয়া।

মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা: ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি

সভ্যতার শুরু থেকেই মায়ের অবস্থান সর্বোচ্চ শিখরে। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’। হিন্দু ধর্মে মা ও জন্মভূমিকে স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। খ্রিষ্টধর্মে ‘মাদার মেরি’ হলেন ত্যাগ ও পবিত্রতার প্রতীক। বৌদ্ধধর্মে মাকে বলা হয় পুত্রের মঙ্গল ও ঋণের প্রধান উৎস। সব ধর্মই যেন এক কণ্ঠে বলেছে—মা কোনো ব্যক্তি নয়, মা এক আশীর্বাদ।

মা দিবসের পথচলা: ত্যাগ, সংগ্রাম ও ভালোবাসার ইতিহাস

বিশ্ব মা দিবসের সূচনা যাঁর হাত ধরে, তিনি অ্যানা জারভিস। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার এই মহিয়সী নারী নিজের মা অ্যানা মারিয়া রিভস জারভিসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১২ মে, ১৯০৭ সালে প্রথমবারের মতো ‘মা দিবস’ পালন করেন। তাঁর মা ছিলেন এক সমাজকর্মী, যিনি বিশ্বাস করতেন, মা ও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে সমাজে।

৩৭ বছরের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে জাতীয় ‘মা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে ১৯৬২ সালে এটি আন্তর্জাতিক দিবসের মর্যাদা পায়।

তবে মা দিবসের চেতনা নতুন নয়। ১৮৭০ সালে সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হাও বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের বেদনায় কাতর মায়েদের সম্মান জানিয়ে মা দিবসের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর আহ্বান ছিল—“জাতি, ধর্ম, বর্ণ নয়, মা–হৃদয় এক ও অভিন্ন”।

ভিন্ন দিনে, একই হৃদয়ে: বিশ্বের মা দিবস উদ্‌যাপন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মা দিবস ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালন করা হয়। যেমন কসোভোতে ফেব্রুয়ারির প্রথম রোববার, জর্জিয়ায় ৩ মার্চ, যুক্তরাজ্যে ৬ মার্চ, থাইল্যান্ডে ১২ আগস্ট। তবে অধিকাংশ দেশ, যেমন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর—মে মাসের দ্বিতীয় রোববারেই দিবসটি পালন করে।

মা দিবস: শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার উৎসব

আজকের এই দিনে সন্তানরা মায়েদের জন্য বিশেষ কিছু করেন। কেউ হাতে বানানো কার্ড দেয়, কেউ ছোট্ট উপহার, কেউ বা সময় কাটায় মায়ের পাশে। সাদা কার্নেশন ফুল—মা দিবসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। কারণ সাদা ফুল মায়েদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, শান্তি ও ত্যাগের প্রতীক।

মা—সময়ের অতীত, ভবিষ্যতের আলো

যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তির মধ্যেও একমাত্র ‘মা’–ই নিরন্তর আশ্রয়। তিনি শুধু সন্তান জন্ম দেন না, তিনি গড়েন সভ্যতা, তিনি রচনা করেন মানবিকতা। আজকের দিনে তাই শুধু উপহার নয়, চাই সম্মান, সময় ও উপলব্ধি। কারণ মা দিবসের অর্থ শুধু বছরে একদিন মা–কে মনে রাখা নয়, প্রতিদিন তাঁকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানানো।

বিশ্ব মা দিবস শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের আত্মার গভীরতম ঋণ স্বীকারের একটি দিন। মা শুধু জীবনদাত্রী নন, তিনি আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি, আমাদের পৃথিবী।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ