হজের গুরুত্বপূর্ণ দিন: মুজদালিফা থেকে মিনার পথে হাজিদের যাত্রা

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৬ ১০:০৮:২৭
হজের গুরুত্বপূর্ণ দিন: মুজদালিফা থেকে মিনার পথে হাজিদের যাত্রা

আজ ১০ জিলহজ, হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম দিন। ভোর থেকেই মুজদালিফা থেকে মিনার দিকে যাত্রা শুরু করেছেন লাখ লাখ হাজি। মুজদালিফায় রাত কাটানোর পর হাজিরা মিনায় পৌঁছে শুরু করেছেন শয়তানের প্রতীকী প্রতিরোধমূলক রীতি—জামরাতে পাথর নিক্ষেপ। ইসলাম ধর্মে এটি হজের অন্যতম আবশ্যিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

রাতভর মুজদালিফায় ইবাদত ও বিশ্রামের পর আজ সকালে হাজিরা কাফেলাবদ্ধভাবে মিনার দিকে যাত্রা করেন। মিনায় পৌঁছে তারা প্রথমেই ‘জামরা আল আকাবা’ বা বড় জামরার দিকে রওনা হন। সেখানে প্রতিজন হাজি সাতটি করে ছোট পাথর বা কংকর নিক্ষেপ করেন। এই রীতির মাধ্যমে হাজিরা শয়তানকে প্রত্যাখ্যান করার প্রতীকী ঘোষণা দেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে এটি পবিত্র হজের অন্যতম স্তম্ভ।

মুজদালিফা থেকে এই কংকর সংগ্রহ করা মুস্তাহাব বা উত্তম কাজ হিসেবে গণ্য হয়, যদিও অন্য স্থান থেকেও কংকর সংগ্রহ করা বৈধ। ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুসারে ১০ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর থেকে শুরু করে সূর্য ঢলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ করা মুস্তাহাব সময়। তবে জরুরি কারণে ১০ তারিখ রাত পর্যন্তও রমী (পাথর নিক্ষেপ) করা জায়েজ আছে।

সৌদি আরবের হজ কর্তৃপক্ষ এই দিনে লক্ষাধিক মানুষের একযোগে চলাচল এবং পাথর নিক্ষেপের স্থান জামারাতে ভিড় ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবক গাইডরা মিলিতভাবে হাজিদের নির্দিষ্ট রুট ধরে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল নিশ্চিত করছেন। মিনার রাস্তাগুলোতে কাঠামোগত সারি গঠনের মাধ্যমে হজযাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিশেষত, বৃদ্ধ ও অসুস্থ হাজিদের জন্য পৃথকভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাদের জন্য আরাফা ও মুজদালিফায় দীর্ঘ সময় অবস্থান ছিল শারীরিকভাবে বেশ কষ্টদায়ক।

পাথর নিক্ষেপের পর হাজিরা কোরবানি দেন, যাকে বলা হয় "দমে শুকর"। হজে তামাত্তু এবং কিরান পালনকারীদের জন্য এটি ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক। কোরবানির জন্য পশু আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে থাকে অথবা হাজিরা নিজে কোরবানি দেন কিংবা হজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা সম্পন্ন হয়। কোরবানি দেওয়ার পর হাজিরা মাথা মুণ্ডান (হালক) বা চুল ছাঁটান (কসর), যা হজের পরবর্তী অংশ।

এইসব কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর হাজিদের মক্কার মসজিদুল হারামে গিয়ে ‘তাওয়াফে জিয়ারত’ করতে হয়। এটি হজের ফরজ অংশ এবং এটিকে হজের তৃতীয় রুকন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই তাওয়াফ ১০ জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে সম্পন্ন করা উত্তম। যদি কেউ এই সময়ের মধ্যে তাওয়াফে জিয়ারত না করেন, তবে দম (পশু কোরবানি) দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।

সার্বিকভাবে, আজকের দিনে হাজিদের করণীয় হলো—মিনায় পৌঁছে জামরা আকাবায় সাতটি কংকর নিক্ষেপ, কোরবানি প্রদান, হালক বা কসর করা এবং এরপর মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত সম্পন্ন করা। এই চারটি কাজই হজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।

আজকের এই পবিত্র দিনে মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া ও আত্মবিশুদ্ধির এক বড় সুযোগ তৈরি হয়। একদিকে প্রতীকী শয়তানকে প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে নিজ জীবনের সকল মন্দ প্রবৃত্তিকে দমন করার অঙ্গীকার, অন্যদিকে কোরবানি ও তাওয়াফের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ—এই দুইয়ের সম্মিলনে আজকের দিনটি ইসলামী জীবনের এক সর্বোচ্চ রূহানী চর্চার পর্বে পরিণত হয়।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ