মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার

তবে কি বাহরাইনের বন্ধ দুয়ার খুলতে চলছে?

মোঃ মাহির তালুকদার আলম
মোঃ মাহির তালুকদার আলম
বাহারাইন প্রতিনিধ
মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৩ ২২:০৭:৪৪
তবে কি বাহরাইনের বন্ধ দুয়ার খুলতে চলছে?

অবশেষে প্রায় সাত বছর পর মধ্যপ্রাচ্যের দ্বীপ দেশ বাহরাইনে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এই শ্রমবাজারটি পুনরায় চালুর বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. রইস হাসান সারোয়ার।

গত ১ জুন বাহরাইনের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স সালমান বিন হামাদ আল খলিফার সঙ্গে রিফা প্রাসাদে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন রাষ্ট্রদূত সারোয়ার। তিনি সাক্ষাৎ শেষে জানান, বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বাহরাইনের শ্রমবাজার পুনরায় চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সালমান সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই বিষয়টি দ্রুত সমাধানে তাঁর মন্ত্রিসভার একজন সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত মো. রইস হাসান সারোয়ার এ সময় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শুভেচ্ছা বার্তা বাহরাইনের যুবরাজের কাছে পৌঁছে দেন। যুবরাজ সালমান বিন হামাদ আল খলিফা বৈঠকে বাহরাইনে কর্মরত বাংলাদেশি কমিউনিটির ইতিবাচক ভূমিকা ও কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন।

এ সময় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান এ.কে.এম. মহিউদ্দিন কায়েস। বাহরাইনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিষয়ক মন্ত্রী হামাদ বিন ফয়সাল আল মালকি, ক্রাউন প্রিন্সের আদালতের প্রধান শেখ সালমান বিন আহমেদ আল খলিফা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক হামাদ আল মাহমুদ।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের পর থেকে বাহরাইনে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন অনিয়ম, নিয়োগে জালিয়াতি ও শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের কারণে শ্রমবাজারে স্থবিরতা দেখা দেয়। এতে বাংলাদেশিদের জন্য ওই দেশে কাজের নতুন সুযোগ বন্ধ হয়ে যায় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তবে সর্বশেষ কূটনৈতিক আলোচনায় যে আশার সঞ্চার হয়েছে, তা সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় অর্জন হবে। এতে শুধু কর্মসংস্থানই নয়, রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় পরিবর্তন আনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


জাতিসংঘ ক্ষুব্ধ, স্পেন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি—গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসযজ্ঞ তীব্রতর

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ১০:১২:৩৫
জাতিসংঘ ক্ষুব্ধ, স্পেন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি—গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসযজ্ঞ তীব্রতর

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজা সিটির বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেছেন, “এখনই শহর ছাড়ো”। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক ইসরাইলকে “গণহত্যা”র দায়ে অভিযুক্ত করে বলেন, দেশটি একের পর এক “যুদ্ধাপরাধ” চালাচ্ছে এবং বেসামরিক লোকদের বাঁচার পথ বন্ধ করে দিচ্ছে।

জাতিসংঘের কড়া ভাষা

ভলকার টার্ক বলেছেন, গাজার ধ্বংসযজ্ঞ এখন “বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিচ্ছে”। তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) জানুয়ারির রায় অনুযায়ী ইসরাইলকে গণহত্যা প্রতিরোধে বাধ্য করা হয়েছিল, অথচ বাস্তবে তার উল্টো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

গাজায় বোমাবর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, রবিবার সকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজা সিটিতে অন্তত ৫০টির বেশি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং আরও ১০০ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। spokesman মাহমুদ বাসাল অভিযোগ করেন, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর শিবির সংলগ্ন আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়েছে, যাতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০–এর বেশি তাঁবু ধ্বংস হয়। গাজার তুফ্ফাহ ও আজ-জারকা এলাকায় ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে এখনও মরদেহ উদ্ধার করছে উদ্ধারকর্মীরা। স্থানীয়রা বলছে, মসজিদ ও খেলার মাঠও হামলার শিকার হয়েছে।

নিহত ও ক্ষুধাজনিত মৃত্যু

স্থানীয় হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, সোমবার একদিনেই কমপক্ষে ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ৩২ জন গাজা সিটির। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, খাদ্যসংকট ও অপুষ্টিতে দুই শিশুসহ আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ দিন ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন সাংবাদিক ওসামা বালুশাও। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় প্রায় ২৫০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন—সবাই ফিলিস্তিনি, কারণ ইসরাইল বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়নি। এটি আধুনিক ইতিহাসের সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত।

‘মানবিক এলাকা’ও নিরাপদ নয়

ইসরাইল গাজা সিটির জামাল আব্দেল নাসের সড়কের বাসিন্দাদের জন্য নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে বলেছে, তারা যেন শহর ছেড়ে দক্ষিণের আল-মাওয়াসিতে চলে যায়। অথচ এই আল-মাওয়াসিই বারবার বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছে। যেখানে আগে ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ ছিল, সেখানে এখন প্রায় ৮ লাখ মানুষ গাদাগাদি করে বসবাস করছে।

স্পেনের কঠোর পদক্ষেপ

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজ জাতিসংঘের সুরে সুর মিলিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইসরাইলে অস্ত্র বহনকারী জাহাজ ও বিমান স্পেনের বন্দর ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা বাড়ানো হবে এবং অবৈধ ইসরাইলি বসতিতে উৎপাদিত পণ্য আমদানিও নিষিদ্ধ করা হবে। সাঞ্চেজ আরও ঘোষণা দেন, যেকোনো ব্যক্তি যারা সরাসরি এই “গণহত্যা”য় জড়িত, তাদের স্পেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ও হামাসের প্রতিক্রিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, “এটাই হামাসের জন্য শেষ সতর্কবার্তা।” ওয়াশিংটন নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, যার অংশ হিসেবে ধাপে ধাপে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। তবে শর্ত রাখা হয়েছে—গাজার নতুন সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তবেই এই প্রত্যাহার সম্ভব হবে। হামাস এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, এটি আসলে ইসরাইলকে গাজার ওপর ভেটো ক্ষমতা দেওয়ার ফাঁদ।

পশ্চিম তীরে রক্তপাত

একই দিনে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের হামলায় ছয়জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হন। ইসরাইলি সেনা হামলাকারীদের হত্যা করে। এর পর ইসরাইলি বাহিনী পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের বিভিন্ন গ্রাম অবরোধ ও অভিযান চালায়।

জেনিনে অভিযানের সময় দুই কিশোর নিহত হয়। মানবাধিকারকর্মী মুস্তাফা বারঘুতি অভিযোগ করেন, ইসরাইল প্রতিবার এ ধরনের ঘটনা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে সমষ্টিগত শাস্তি দেয়, যার লক্ষ্য পশ্চিম তীর দখল ও জনসংখ্যা উচ্ছেদ।


ইসরায়েলে বাসে হামলা: হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, চলছে ব্যাপক অভিযান

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ১৪:৫৫:০২
ইসরায়েলে বাসে হামলা: হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, চলছে ব্যাপক অভিযান
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের জেরুজালেম শহরের রামোট জংশনের প্রবেশপথে একটি বাসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত এবং ২২ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) এই হামলা হয় বলে জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে।

এমডিএ জানিয়েছে যে, বন্দুকধারীরা ৬২ নম্বর বাসে উঠে যাত্রীদের ওপর গুলি চালাতে শুরু করে। পরে হামলায় জড়িত দুইজনকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এই ঘটনার পর জেরুজালেমের ভেতরে এবং বাইরের সব প্রবেশ ও বেরোনোর পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এমডিএ-র প্যারামেডিক নাদাভ তাইব বলেন, "আমরা গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। যখন আমরা পৌঁছাই, তখন রাস্তায় এবং বাসস্টপের কাছে ফুটপাতে অচেতন অবস্থায় মানুষ পড়ে থাকতে দেখেছি। মেঝেতে প্রচুর ধ্বংসযজ্ঞ এবং ভাঙা কাঁচ ছিল। আমরা আহতদের চিকিৎসা প্রদান শুরু করেছি এবং তাদের হাসপাতালে স্থানান্তর অব্যাহত রেখেছি।"

ইউনাইটেড হাতজালাহ মেডিকেল টিমও ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকজন আহতকে প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে যে, ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে ব্যাপক অভিযান চলছে। তবে হামলাকারীরা নিহত হয়েছে নাকি পালিয়ে গেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সুত্র: জেরুজালেম পোস্ট


গাজা নগরীর কেন্দ্রে প্রবেশ করছে ইসরায়েলি সেনারা

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৬ ০৮:৫২:২৯
গাজা নগরীর কেন্দ্রে প্রবেশ করছে ইসরায়েলি সেনারা
গাজা সিটিতে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী/ ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটির প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা দখলে নেওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল। এছাড়া, শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) গাজার সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম এই নগরীর একাধিক সুউচ্চ ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা, যার মধ্যে একটি ১২ তলা ও একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, তারা এখন গাজা নগরীর ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। ইসরায়েলি হামলা শুরুর আগে এই নগরীতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করতেন। গত মাসের শুরুর দিকে গাজা নগরী পুরোপুরি দখলের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার নগরীর উপকণ্ঠে বিমান ও গোলা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। তারা ধীরে ধীরে নগরীর কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বোমা হামলা চালিয়ে নগরীর দ্য ম্যানেজমেন্ট অব মুশতাহা টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েল। ভবনটিতে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। হামলায় অনেকে হতাহত হয়েছেন। গাজা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, শুক্রবার ইসরায়েলের হামলায় গাজা নগরীসহ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ৬৯ জন নিহত ও ৪২২ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।

ইসরায়েলের দাবি, ম্যানেজমেন্ট অব মুশতাহা টাওয়ারে হামাসের প্রতিরোধ যোদ্ধারা অবস্থান করছিলেন। কিন্তু টাওয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে হামাসের কোনো সদস্য ছিলেন না। ভবনটিতে অবস্থানকারীদের সবাই ছিলেন বেসামরিক ফিলিস্তিনি।

এদিকে, গাজা নগরীতে আরেকটি পাঁচতলা ভবনের বাসিন্দাদেরও সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ভবনটির একাংশ বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সামরিক বিশেষজ্ঞ ইলাইজা ম্যাগনিয়ার আল জাজিরাকে বলেন, নিজেদের সেনাদের হতাহতের সংখ্যা কমাতে গাজা নগরীর বহুতল ভবন লক্ষ্যবস্তু করছে ইসরায়েল। তবে বহুতল ভবন নিশানা করার অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। যেমন বেসামরিক বাসিন্দাদের ভীতসন্ত্রস্ত করা, যাতে তারা এই নগরী ছেড়ে চলে যান।

শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, গাজার নরকদ্বারের তালা এখন খুলে ফেলা হচ্ছে। দ্বারটি খোলার পর আর বন্ধ হবে না এবং ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম আরও বাড়বে।

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের ৭০০তম দিন পূর্ণ হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা শুরুর পর থেকে অন্তত ১৯ হাজার ৪২৪টি শিশু নিহত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ৫২ মিনিটে একটি শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে। নিহত শিশুদের মধ্যে নবজাতক ও এক বছরেরও কম বয়সীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। একই সময়ে গাজায় ১০ হাজার ১৩৮ জন নারী ও ৪ হাজার ৬৯৫ জন বয়স্ক মানুষ নিহত হয়েছেন। এর অর্থ, নিহতের মধ্যে নারী ও বয়স্ক মানুষ প্রায় ২৩ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নিহত হয়েছেন ২৯ হাজার ৯৭৫ জন বা ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে হামাস বা অন্যান্য ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা কত, তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে সম্প্রতি ইসরায়েলের ফাঁস হওয়া এক নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজায় নিহত ব্যক্তিদের প্রায় ৮৩ শতাংশই বেসামরিক মানুষ।

সূত্র: আল-জাজিরা


বিধ্বস্ত হচ্ছে একের পর এক মহল্লা, গাজায় এবার মানবিক সংকট চরমে

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ০৮:৫১:৪০
বিধ্বস্ত হচ্ছে একের পর এক মহল্লা, গাজায় এবার মানবিক সংকট চরমে
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় একদিনে অন্তত ৭৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। হামাসের দাবি, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে পুরো পরিবারকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে হত্যা করছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা তীব্র হামলা চালায়। এই ঘটনাকে হামাস ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সাবরিন আল-মাবহুহ আল জাজিরাকে জানান, “আমার ভাইকে তার ঘরেই হত্যা করা হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানসহ তার পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।” শেখ রাদওয়ান এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজনও এ হামলার শিকার হন। একটি স্কুলের তাঁবুতে গ্রেনেড হামলার ফলে আগুন ধরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা জাকিয়া সামি বলেন, “যদি গাজা সিটিতে আগ্রাসন বন্ধ না হয়, আমরা সবাই মরব। যারা শুধু দেখছে, কিছু করছে না—আমরা তাদের ক্ষমা করব না।”

বিধ্বস্ত হচ্ছে পুরো মহল্লা, বাড়ছে মানবিক সংকট

গাজার গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, গত তিন সপ্তাহে ইসরায়েল অন্তত ১০০ বার রোবট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো আবাসিক ব্লক ও মহল্লা ধ্বংস করেছে। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজা সিটিতেই মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার ১০০ মানুষ। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ সরেজমিনে জানান, “পরিস্থিতি প্রলয়ংকরী। পুরো মহল্লা একের পর এক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কয়েক দশকে যা গড়ে তুলেছিল, সবকিছু হারাচ্ছে। এটি এক দুঃস্বপ্ন।”

মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ বন্ধ থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক শিশুসহ ছয়জন অনাহারে মারা গেছে। চলমান অবরোধকালে ক্ষুধাজনিত কারণে এখন পর্যন্ত ৩৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৩১ জন শিশু। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ইসরায়েলের অভিযানে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাঁচ বছরের নিচে থাকা ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে মোট ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে। খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি গত আগস্টেই নিশ্চিত করেছে যে উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে, যা দ্রুত দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে।


মহাকাশে ইসরায়েলের নতুন নজরদারি: উৎক্ষেপণ হলো ‘ওফেক-১৯’

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৬:৪৯:১০
মহাকাশে ইসরায়েলের নতুন নজরদারি: উৎক্ষেপণ হলো ‘ওফেক-১৯’
ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েল সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে তাদের অত্যাধুনিক সামরিক গোয়েন্দা স্যাটেলাইট ‘ওফেক-১৯’। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় ইসরায়েলের পামলাচিম বিমানঘাঁটি থেকে ‘শাভিত’ রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে পাঠানো হয়।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের পরপরই স্যাটেলাইটটি সফলভাবে নির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করে এবং তথ্য প্রেরণ শুরু করে। একাধিক প্রাথমিক পরীক্ষাও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই সাফল্যকে শুধু প্রযুক্তিগত মাইলফলক নয়, বরং শত্রুদের জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা বলেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা সব সময়, সব পরিস্থিতিতে আমাদের শত্রুদের নজরদারিতে রাখছি।” কাটজ আরও জানান, এই সক্ষমতা আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার পথ খুলে দিতে পারে।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দৃশ্য রাজধানী তেলআবিবসহ আশপাশের অঞ্চলে সাময়িক আতঙ্ক তৈরি করে। অনেকে এটিকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেবে ভুল করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক পথচারী আকাশে ছুটে চলা রকেটকে বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছেন।

স্যাটেলাইটের সক্ষমতা ও ব্যবহার

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ওফেক-১৯’ একটি সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট, যা দিন-রাত যেকোনো সময় উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি ধারণ করতে সক্ষম। এটি ৫০ সেন্টিমিটারেরও ছোট বস্তু শনাক্ত করার ক্ষমতা রাখে। স্যাটেলাইটটি পূর্ণ কার্যক্রমে গেলে এর দায়িত্ব নেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখার বিশেষ ইউনিট ৯৯০০, যারা মূলত চিত্রভিত্তিক গোয়েন্দা কাজে বিশেষজ্ঞ।

এই উৎক্ষেপণ ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ কর্মসূচির অংশ, যার নেতৃত্বে রয়েছে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন অধিদপ্তর, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী। এর আগের বছর মার্চে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ‘ওফেক-১৩’। ‘ওফেক-১৯’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা রেখেছে ইসরায়েল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএআই)-এর বিভিন্ন বিভাগ।


 আর মানবিক মূল্যবোধ উপেক্ষা নয়: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত তুরস্কের

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ৩০ ০৮:৪২:৩৯
 আর মানবিক মূল্যবোধ উপেক্ষা নয়: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত তুরস্কের
ছবিঃ সংগৃহীত

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ঘোষণা দিয়েছেন যে, তার দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। একইসঙ্গে ইসরায়েলি বিমানকে তুরস্কের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি জানিয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের প্রতিবাদে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই খবর জানানো হয়।

শুক্রবার গাজা ইস্যুতে তুরস্কের জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখার সময় ফিদান বলেন, “গত দুই বছর ধরে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তারা পুরো বিশ্বের চোখের সামনে এই নৃশংসতা ঘটাচ্ছে।”

তুরস্ক গত বছরের মে মাসেই ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই সময় তারা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রবেশের দাবি জানায়। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার।

ফিদান বলেন, “আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করেছি। আমরা তুর্কি জাহাজগুলোকে ইসরায়েলি বন্দরে যেতে দিচ্ছি না। তাদের বিমানকেও আমাদের আকাশসীমায় প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি না।”

গাজা যুদ্ধ নিয়ে আঙ্কারা প্রথম থেকেই কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এই যুদ্ধকে গণহত্যা আখ্যা দিয়েছেন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

/আশিক


ইয়েমেনের সানায় ইসরায়েলের হামলা, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ২৮ ২১:২৫:৪৫
ইয়েমেনের সানায় ইসরায়েলের হামলা, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি
ছবিঃ সংগৃহীত

হুথি বিদ্রোহীদের দাবি, ইসরায়েল বৃহস্পতিবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হামলা চালিয়েছে। ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীটির ওপর চার দিন আগেও ইসরায়েল প্রাণঘাতী বোমাবর্ষণ করেছিল। হুথিদের সংবাদমাধ্যম আল-মাসিরাহ এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, ‘রাজধানী সানায় ইসরায়েলি হামলা’ হয়েছে, তবে বিস্তারিত তথ্য তারা জানায়নি।

অন্যদিকে, ইয়েমেনের সানায় হুথিদের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েল। এক সামরিক বিবৃতিতে ইসরায়েল জানায়, তাদের বাহিনী হুথি ‘সন্ত্রাসী সরকারের একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে’ সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলের দাবি, হুথিরা নিয়মিতভাবে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করছে এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে জাহাজগুলোতে আক্রমণ চালাচ্ছে। এসব হামলা ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করছে ও বৈশ্বিক নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা ব্যাহত করছে’। ইসরায়েল বলছে, হুথিদের এসব হামলার জবাবেই তারা সামরিক অভিযান চালাচ্ছে।

অপরদিকে, হুথিরা দাবি করে, ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তারা নিয়মিতভাবে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে।

ইসরায়েলের হামলায় গত সোমবার সানায় অন্তত ১০ জন নিহত ও ৯০ জনের বেশি আহত হয়েছিল বলে হুথি নিয়ন্ত্রিত শহরটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সেই সময় হুথিদের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর কথা বলেছিল, যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদও ছিল।

হুথিরা বুধবার ইসরায়েলে নতুন একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা সেটিকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই হুথিরা নিয়মিত ইসরায়েলের দিকে হামলা চালাচ্ছে এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। ২০১৪ সাল থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে হুথিদের হাতে। তারা ইরানের নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলবিরোধী জোটের একটি অংশ, যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

/আশিক


গাজার অবরোধের জবাবে ইয়েমেনের সামরিক অভিযান: আল-লিদ্দ বিমানবন্দরে হামলা

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ২৮ ১১:৩৮:৫৭
গাজার অবরোধের জবাবে ইয়েমেনের সামরিক অভিযান: আল-লিদ্দ বিমানবন্দরে হামলা
ছবিঃ সংগৃহীত

ইয়েমেনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: ইসরায়েলের আল-লিদ্দ বিমানবন্দরে আঘাত

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী অধিকৃত ইয়াফা অঞ্চলের আল-লিদ্দ বিমানবন্দরে সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। বুধবার (২৭ আগস্ট) এই উচ্চমাত্রার সামরিক অভিযানে হাইপারসনিক ‘ফিলিস্তিন-২’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে।

সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায় এবং ‘লাখ লাখ দখলদার ইহুদি’ আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

‘গাজার অবরোধের সরাসরি প্রতিক্রিয়া’জেনারেল ইয়াহিয়া সারি এই হামলাকে গাজায় চলমান অবরোধ, দুর্ভিক্ষ ও আগ্রাসনের সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যখন জাতিসংঘ গাজার মানবিক সংকটকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তখন ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ কমাতে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।

ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী এই হামলাকে ‘অত্যাচারিত ফিলিস্তিনি জনগণ ও প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন’ হিসেবে ঘোষণা করে। একইসঙ্গে তারা আরব ও ইসলামি বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানায়, গাজায় চলমান গণহত্যা ও অবরোধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে।

বিবৃতিতে ইয়েমেনকে ‘ঈমান ও প্রতিরোধের দেশ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলা হয়, “ইয়েমেন বিজয়ীদের ভূমি। যত বাধাই আসুক না কেন, ফিলিস্তিনের প্রতি দায়িত্ব পালনে ইয়েমেন কখনোই পিছু হটবে না।” ইয়াহিয়া সারির ভাষায়, “যতদিন না অবরোধ উঠে যায় এবং আগ্রাসন বন্ধ হয়, ততদিন পর্যন্ত ইয়েমেন গাজার পাশে থাকবে।”

/আশিক


গাজায় দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, ক্ষুধার বলি ৩১৩ জন

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ২৮ ০৮:৫৭:১৭
গাজায় দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, ক্ষুধার বলি ৩১৩ জন
ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলের অবরোধ ও হামলার কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জন অনাহারে মারা গেছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৩ জনে, যাদের মধ্যে ১১৯ জন শিশু।

বুধবার (২৭ আগস্ট) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) কর্মকর্তারা জানান, গাজার খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষ ‘মানবসৃষ্ট’ এবং ‘পরিকল্পিত বিপর্যয়’।

জাতিসংঘের উপ-মানবিক প্রধান জয়েস মুসুয়া বলেন, গাজা সিটির উত্তর-মধ্যাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এই দুর্ভিক্ষ দক্ষিণের দেইর এল-বালাহ ও খান ইউনিস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি জানান, বর্তমানে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহার ও মৃত্যুর মুখে রয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষে এই সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। মুসুয়া বলেন, “গাজায় কার্যত কেউ ক্ষুধার প্রভাবের বাইরে নেই।”

তিনি আরও জানান, পাঁচ বছরের নিচে অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩ হাজারেরও বেশি শিশু শিগগিরই প্রাণঘাতী অবস্থায় পড়তে পারে। তার মতে, “এটি কোনো খরা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফল নয়, এটি সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ—যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মৃত্যু, ধ্বংস ও বাস্তুচ্যুতির পরিণতি।”

ইসরায়েল ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) নামের দুর্ভিক্ষ পর্যবেক্ষণ সংস্থার গাজা সম্পর্কিত প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এডেন বার টাল প্রতিবেদনটিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ, অপেশাদার ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ঘাটতি রয়েছে’ বলে দাবি করেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইউএনএসসি-র বাকি ১৪ সদস্য আইপিসি-র কাজকে সমর্থন জানিয়ে যৌথ বিবৃতিতে ‘তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানায়।

মানবিক সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রধান ইঙ্গার আশিং নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তার মতে, “এটি পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ, মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। শিশুদের পদ্ধতিগতভাবে অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।” আশিং আরও জানান, গাজার ক্লিনিকগুলোতে এখন হাড়জিরজিরে শিশুদের নীরবতা বিরাজ করছে, কারণ তাদের কান্নার শক্তিও নেই।

তিনি বলেন, শিশুদের আঁকায় এখন আর শান্তি বা স্কুলে যাওয়ার আশা দেখা যায় না, দেখা যায় শুধু খাবারের আকুতি, এমনকি মৃত্যুর ইচ্ছাও। এক শিশুর আঁকায় লেখা ছিল: ‘আমি চাই জান্নাতে যেতে, যেখানে আমার মা আছেন। সেখানে ভালোবাসা আছে, খাবার আছে, পানি আছে।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ওয়াশিংটনে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, সাবেক মধ্যপ্রাচ্য দূত জ্যারেড কুশনারসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছেন। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধের ‘সুনির্দিষ্ট সমাপ্তি’ আশা করছেন। বৈঠকের বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন পরিকল্পনা স্পষ্ট না হলে গাজায় পুনরুদ্ধার কার্যত অসম্ভব হবে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, তারা দীর্ঘ মেয়াদে গাজায় সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখবে।

সূত্র: আল জাজিরা

পাঠকের মতামত: