সংবাদ বিশ্লেষণ

চীনের কৌশলগত সহায়তায় পাকিস্তানের সামরিক শক্তির উত্থান: আঞ্চলিক শক্তির নতুন বিন্যাস

২০২৫ মে ১০ ২১:২৬:৪০
চীনের কৌশলগত সহায়তায় পাকিস্তানের সামরিক শক্তির উত্থান: আঞ্চলিক শক্তির নতুন বিন্যাস

সত্য নিউজ: পাহলগাম হামলা এবং পরবর্তীঅপারেশন সিঁদুর পর, চীনের বার্তা পরিষ্কার: বেইজিংয়ের সমর্থনে পাকিস্তান শুধু ভারতকে সমানভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম নয়, বরং তার সামরিক শক্তিতে ভারতকে অতিক্রম করতে পারে।অপারেশন সিঁদুর এখনও মাঠে চলমান, তবে যুদ্ধে কেবল সেনারা নয়, ন্যারেটিভ যুদ্ধে পাকিস্তান এখন চীনা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে সর্বাধিক প্রাধান্য পেয়েছে।

ওয়েইবোতে #Pakistan_shoots_down_6_Indian_jets হ্যাশট্যাগটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৯ কোটি ভিউ অর্জন করেছে, যা পাকিস্তানের জয়ী হওয়ার ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে। চীনের সংবাদমাধ্যম গুয়ানচা এবং ১৬৩ এ প্রকাশিত শিরোনামগুলো যেমন ছিল: "পাকিস্তান ৬টি ভারতীয় সামরিক বিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ৩টি রাফাল" এবং "পাকিস্তানের প্রথম যুদ্ধে জয়"—এসব শিরোনাম পাকিস্তানকে ভারতীয় সামরিক শক্তির সমকক্ষ হিসেবে তুলে ধরছে। এটি পাকিস্তানের শক্তি ও সক্ষমতার নতুন চিত্র ফুটিয়ে তুলছে।

এই পরিবর্তিত ন্যারেটিভের মাধ্যমে পাকিস্তান আর একটি দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবে নয়, বরং একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে চীনে চিত্রিত হচ্ছে। পাকিস্তান এখন ভারতকে চ্যালেঞ্জ করতে প্রস্তুত, যা চীনের সমর্থন এবং পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতির এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করছে। চীনের তৈরি প্রযুক্তি, যেমন PL-10 মিসাইলের সাথে JF-17 জেটের সংমিশ্রণ, পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি চীনের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ক্ষমতা প্রদর্শন করছে, যা সামরিক দক্ষতায় চীনের আত্মবিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করছে।

পাকিস্তানের উত্থান: আধুনিক ও শক্তিশালী সামরিক শক্তি

চীনে পাকিস্তান এখন শুধুমাত্র আত্মবিশ্বাসী নয়, বরং আধুনিক ও দ্রুত বিকাশমান এক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ওয়েইবোতে #India_opens_fire_on_Pakistan_without_provocation হ্যাশট্যাগটি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যা পাকিস্তানকে সম্ভাব্য উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত বলে চিত্রিত করছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত রাশিয়ায় চীনা সংবাদ মাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, "পাকিস্তান তার সকল ধরনের সামরিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে প্রস্তুত, এর মধ্যে পারমাণবিক ক্ষমতা রয়েছে।"

এটা নিশ্চিত করে যে পাকিস্তান, বিশেষত চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তার সাথে, ভারতীয় সামরিক শক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে সক্ষম। চীনের এই সহায়তা পাকিস্তানকে সামরিক শক্তি হিসেবে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করছে এবং অঞ্চলীয় নিরাপত্তা সমস্যায় ভারতকে একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উপস্থাপন করছে।

চীনের কৌশলগত সহায়তা: পাকিস্তান ও ভারতের সামরিক ভারসাম্য পরিবর্তন

চীনের সহযোগিতার মাধ্যমে পাকিস্তান এখন একটি আধুনিক ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সামরিক বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠছে, যা ভারতের সাথে সামরিক ভারসাম্য তৈরি করছে। ভারতের বিশাল সামরিক বাহিনী (১.৪ মিলিয়ন সক্রিয় সৈন্য এবং ২০২৫ সালের জন্য ৬.৮১ লাখ কোটি রুপি প্রতিরক্ষা বাজেট) সত্ত্বেও, চীনা সমর্থনে পাকিস্তান অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠছে। পাকিস্তানের আধুনিক বিমান, যন্ত্রপাতি, এবং মিসাইল সিস্টেমগুলো ভারতের পুরনো মডেলের বাহিনীর সাথে তুলনা করা হচ্ছে, যেখানে পাকিস্তানকে অধিক কৌশলগত ও সমন্বিত শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

চীনের সরবরাহ করা SH-15 হাউইটজার, J-10C ফাইটার জেট এবং YJ ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের সামরিক আধিপত্যের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারত, যদিও সংখ্যায় বড়, চীনের সহায়তায় পাকিস্তান একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আকাশবাহিনীর আধিপত্য চীনের প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও দৃঢ় হচ্ছে, যা ভারতীয় আকাশবাহিনীর শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।

চীনের পরিপূর্ণ সহযোগিতা: পাকিস্তান ও ভারতের সামরিক ভারসাম্য পরিবর্তন

চীন পাকিস্তানকে একটি শক্তিশালী সামরিক অংশীদার হিসেবে দেখছে, যা দীর্ঘকাল ধরে ভারতের বিরুদ্ধে কার্যকরী কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৬৫ সালে চীন পাকিস্তানকে J-6 ফাইটার জেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছিল, আজও পাকিস্তান চীনের সেনা এবং বিমান প্রযুক্তির সহায়তা লাভ করছে। চীন পাকিস্তানকে কৌশলগতভাবে শক্তিশালী একটি মিত্র হিসেবে প্রতিস্থাপন করছে, যা ভারতীয় সামরিক শক্তির বিপরীতে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী।

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে, চীনের সহায়তা পাকিস্তানকে একটি অত্যাধুনিক সামরিক শক্তিতে পরিণত করেছে, যা ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জ করছে। পাকিস্তান চীনা প্রযুক্তি এবং অস্ত্রের মাধ্যমে তার আকাশবাহিনীতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে, যা ভারতীয় সামরিক ক্ষমতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবন্ধক তৈরি করছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির নতুন বিন্যাস

চীনের পাকিস্তানকে দেওয়া সামরিক সহায়তা দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক ভারসাম্যকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে আনার পথ তৈরি করেছে। যদিও ভারতের সামরিক বাহিনী শক্তিশালী, চীনের সমর্থনে পাকিস্তান এখন ভারতকে সমানভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম। অপারেশন সিন্ধুর পর পাকিস্তানের সামরিক ক্ষমতা এবং চীনের প্রযুক্তিগত সমর্থন ভারতীয় শক্তির বিপরীতে একটি কার্যকরী প্রতিরোধ তৈরি করছে।

এখন চীনের সমর্থনে পাকিস্তান আর একটি দুর্বল রাষ্ট্র নয়, বরং একটি শক্তিশালী ও আধুনিক সামরিক শক্তি হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে। চীনের এই সমর্থন পাকিস্তানের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে, এবং ভারতকে এক নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করছে। চীন পাকিস্তানকে কেবল সামরিক সহায়তা করছে না, বরং তাকে একটি শক্তিশালী সামরিক প্রতিপক্ষ হিসেবে তৈরির মাধ্যমে ভারতীয় নিরাপত্তা নীতিতে এক নতুন বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।

ড. সানা হাশমি
তাইওয়ান-এশিয়া এক্সচেঞ্জ ফাউন্ডেশনের ফেলো, দি প্রিন্ট থেকে অনূদিত।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ