উদ্বোধনের আগেই বঙ্গোপসাগরে বিলীন মেরিন ড্রাইভ

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ৩১ ১১:৪৮:৩০
উদ্বোধনের আগেই বঙ্গোপসাগরে বিলীন মেরিন ড্রাইভ

কুয়াকাটায় নির্মাণাধীন ১৩০০ মিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কের এক-তৃতীয়াংশ বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উদ্বোধনের আগেই সড়কটির এমন পরিণতিতে প্রকল্পের নকশা ও বাস্তবায়ন নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এ ঘটনায় গঠিত হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গোপসাগরের প্রবল ঢেউয়ে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই সড়কের এক বড় অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। কুয়াকাটা পৌরসভার হোটেল সিভিউ থেকে জাতীয় উদ্যানের ঝাউবন পর্যন্ত সৌন্দর্যবর্ধন ও পর্যটকদের চলাচলের সুবিধার্থে এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটি নির্মাণে ছিল চরম অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম। কোনো রকম ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়াই সমুদ্রের পানির স্তরে কাজ শুরু হয়। ফলে সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেই তা ধসে পড়ে।

৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয় কুয়াকাটা পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিনটি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—

  • মোল্লা ট্রেডার্স (মালিক: সগীর মোল্লা, পৌর শ্রমিকলীগের সদস্য-সচিব)
  • আবরার ট্রেডার্স (মালিক: বেলাল হোসেন, পৌর শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক)
  • এসএম ট্রেডার্স (মালিক: সাদ্দাম মাল)

এ তিন প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছে।

এসএম ট্রেডার্সের মালিক সাদ্দাম মাল দাবি করেন, তিনি সরাসরি কাজটি করেননি, সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছেন রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তিকে। তিনি স্বীকার করেন, প্রকল্পটি ছিল পৌরসভার একটি "অপরিকল্পিত সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প", যা সৈকতের ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর নয়।

সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কাজ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো হাত নেই। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি যেখানে ছিল, সেখান থেকে অন্তত ১০০ ফুট সাগরের দিকে সরে গেছে, যা তার আমলে পরিকল্পনার মধ্যে ছিল না। তিনি গাইডওয়াল নির্মাণের কথা ভেবেছিলেন, তবে তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

১৩০০ মিটার সড়কের এক-তৃতীয়াংশ বিলীন হওয়ার ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন,“কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ইয়াসীন সাদেকের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শুধু তদন্ত নয়—এই ভয়াবহ ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের শাস্তি এবং প্রকল্পে লুটপাটকারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সমুদ্রতীরবর্তী এই স্পর্শকাতর এলাকায় এমন প্রকল্প নেওয়ার আগে সঠিক সমীক্ষা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল। রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের কাজ পাইয়ে দিতে গিয়ে দুর্বল নির্মাণকাজ ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্তই এই বিপর্যয়ের মূল কারণ বলে মনে করছেন তারা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত