শহরের বুকে ‘গণপিটুনি’ ঢাবি শিক্ষার্থীদের! চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৭ ১৬:২২:১২
শহরের বুকে ‘গণপিটুনি’ ঢাবি শিক্ষার্থীদের! চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চাঁদনী চক মার্কেটের ব্যবসায়ীদের চরম অমানবিক আচরণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী। কাপড় কিনতে গিয়ে এক ছাত্রীকে হেনস্তা ও অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, দায়ের করা হয়েছে মামলা।

ঘটনা ঘটে সোমবার (২৬ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহেদুল ইসলাম, আয়াজুর রহমান এবং তাঁদের এক নারী সহপাঠী চাঁদনী চক মার্কেটে কাপড় কিনতে যান। দামাদামির একপর্যায়ে দোকানদার ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। সঙ্গে থাকা দুই শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করতেই উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ অনুযায়ী, দোকানের ম্যানেজারসহ আশপাশের দোকানদাররা দলবদ্ধ হয়ে দুই ছাত্রের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে শাহেদুল ইসলামকে একটি কক্ষে প্রায় ৪০ মিনিট আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়, দেওয়া হয় প্রাণনাশের হুমকিও।

খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং নিউ মার্কেট থানার সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ এবং বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষগণ। আহত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ঢাবি প্রশাসন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যবসায়ীকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং বাকি অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ।

ট্যাগ: ঢাবি

৮ হাজার পৃষ্ঠার প্রমাণ, হাজারো নিহত–আহত: শেখ হাসিনাদের বিরুদ্ধে রায়ে কী ঘটতে যাচ্ছে? সরাসরি দেখুন!

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১২:৪৪:৫২
৮ হাজার পৃষ্ঠার প্রমাণ, হাজারো নিহত–আহত: শেখ হাসিনাদের বিরুদ্ধে রায়ে কী ঘটতে যাচ্ছে? সরাসরি দেখুন!

জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের সময়কার দমন–পীড়নের ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় পড়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১-এর বিচারক বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ রায় পাঠ শুরু করেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ প্রসিকিউশন টিমের অন্যান্য সদস্যরা।

মামলাটিতে প্রসিকিউশন মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করেছে, যেখানে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার তথ্যসূত্র, ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠার জব্দতালিকা ও অন্যান্য দালিলিক প্রমাণ এবং ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার শহীদদের তালিকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, এসব নথি প্রমাণ করে যে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ দমনে অভিযুক্ত তিনজন পরিকল্পিত, পদ্ধতিগত এবং ব্যাপক মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন—বিশেষত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদেরও বিক্ষোভ দমনে ব্যবহারের জন্য সরাসরি নির্দেশ দেন। এসব নির্দেশের ফলেই দেশব্যাপী দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন এবং ২৫ হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী আহত, অঙ্গহানি বা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। তদন্তে এসব ঘটনাকে গণহত্যা, পরিকল্পিত হত্যা এবং অমানবিক নির্যাতনের শামিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ৫ আগস্টের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিনে আশুলিয়ায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা। অভিযোগ অনুযায়ী, সেদিন ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়, এরপর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়; এমনকি অন্তত একজনকে জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। প্রসিকিউশনের দাবি, এই ঘটনার নির্দেশও এসেছে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপির কাছ থেকেই, যা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের স্পষ্ট উদাহরণ।

রায় পড়া শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল চত্বরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মামলার সংবেদনশীলতা, অভিযুক্তদের সাবেক রাষ্ট্রক্ষমতার অবস্থান এবং নথিপত্রের বিশাল পরিমাণের কারণে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে। মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরাও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে উপস্থিত ছিলেন। আদালত–সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নথিপত্রের বিশালতা বিবেচনায় রায় সম্পূর্ণ পড়তে সময় লাগবে এবং রায়টির রাজনৈতিক ও আইনি গুরুত্ব বাংলাদেশের সমসাময়িক ইতিহাসে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

সরাসরি দেখুন:


বাড্ডায় দারোয়ান ও তাঁর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর রহস্যে ধোঁয়াশা

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৭:৩১:৪০
বাড্ডায় দারোয়ান ও তাঁর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর রহস্যে ধোঁয়াশা
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তর বাড্ডার একটি আবাসিক ভবনের কক্ষ থেকে এক দম্পতির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে তাদের পরিচয় পাওয়া গেলেও মৃত্যুর কারণ বা ধরন সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ ধারণা করছে, ঘটনাটি প্রায় এক সপ্তাহ আগে ঘটেছে।

রোববার (২ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, উত্তর বাড্ডার পূর্বাঞ্চল ৩ নম্বর রোডের ২ নম্বর গলির একটি বাড়ির ভেতরে ঘর থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়।

ওসি বলেন, মৃতদের পরিচয় পাওয়া গেছে পুরুষটির নাম সাইফুল ইসলাম (৩০), যিনি ওই ভবনের দারোয়ান হিসেবে কাজ করতেন। আর নারীটি সাইফুলের স্ত্রী শাকিলা, যিনি একই ভবনের ভাড়াটিয়া পরিবারের কাছে রান্নার কাজ করতেন। পুলিশ তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি মৃত্যুর সময়কাল ও সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধান করছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সকালে বাড়ি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে প্রতিবেশীরা সন্দেহজনক কিছু টের পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে বাড্ডা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘর থেকে স্বামী–স্ত্রীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে তখন ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মৃত্যু ২৫ অক্টোবরের পর কোনো এক সময় ঘটেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ ঘরে লাশ থাকায় তীব্র পচন ধরেছে।”

তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ও পুলিশের তদন্ত দল কাজ করছে। লাশ দুটি সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে তিনি জানান।

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যুর মামলা (ইউডি কেস) দায়ের করা হচ্ছে। তবে তদন্তে যদি হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়, তাহলে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে।

এদিকে, স্থানীয়দের মধ্যে ঘটনার খবরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, সাইফুল ও শাকিলা দম্পতি প্রায় তিন বছর ধরে ওই ভবনের নিচতলায় বসবাস করছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ বা সমস্যার কথা শোনা যায়নি বলে দাবি করেন অনেকে।

পুলিশ বলছে, তদন্তের স্বার্থে আপাতত বিস্তারিত কিছু জানানো যাচ্ছে না। তবে ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে করা হচ্ছে এবং মৃত্যুর প্রকৃতি নির্ধারণে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


রাশিয়ার অপ্রতিরোধ্য পারমাণবিক অস্ত্র পসাইডন ইউরোপের নিরাপত্তায় নতুন হুমকি

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০১ ২১:০৫:৩৩
রাশিয়ার অপ্রতিরোধ্য পারমাণবিক অস্ত্র পসাইডন ইউরোপের নিরাপত্তায় নতুন হুমকি
ছবিঃ সংগৃহীত

রাশিয়া সফলভাবে 'পসাইডন' নামের একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপার টর্পেডোর পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার এই ঘোষণা দেন। গ্রিক পুরাণের সমুদ্রদেবতা পসাইডনের নামে নামকরণ করা এই অস্ত্র সমুদ্রের নিচে ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় ঢেউ সৃষ্টি করে উপকূলীয় অঞ্চল ধ্বংস করার সক্ষমতা রাখে বলে দাবি করা হচ্ছে।

বিবিসি-র এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। পুতিনের দাবি, এ ধরনের বিধ্বংসী অস্ত্র বিশ্বের আর কোনো দেশের কাছে নেই। রুশ পার্লামেন্টের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য এই টর্পেডোকে ড্রোন ও পারমাণবিক টর্পেডোর সংমিশ্রণ বলে অভিহিত করেছেন; তার দাবি, এটি পুরো একটি রাষ্ট্রকে অচল করে দিতে সক্ষম।

পসাইডনের কথা প্রথমবার প্রকাশ্যে আসে ২০১৮ সালে; তখন বলা হয়েছিল এটি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে এবং পথ পরিবর্তন করতে সক্ষম, যা একে আটকানো প্রায় অসম্ভব করে তোলে।

এর আগে ২১ অক্টোবর রাশিয়া 'বুরেভেস্তনিক' নামের পারমাণবিক চালিত নতুন এক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষারও ঘোষণা দেয়; রাশিয়ার দাবি, এই ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের যে কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে পারে। ন্যাটো এই অস্ত্রটিকে 'এসএসসি-এক্স-৯ স্কাইফল' নামে চিহ্নিত করেছে। পসাইডন ও বুরেভেস্তনিক ছিল ২০১৮ সালে পুতিনের প্রকাশিত 'অজেয় অস্ত্রের' তালিকারই অংশ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়ার এসব ঘোষণা মূলত একটি রাজনৈতিক প্রচারণা। ব্রিটিশ রাশিয়া-বিশেষজ্ঞ মার্ক গ্যালিওটি বিবিসিকে বলেন, পসাইডন ও বুরেভেস্তনিক মূলত 'আর্মাগেডন অস্ত্র'—এগুলো ব্যবহারের অর্থ হবে পৃথিবী ধ্বংস। তিনি মনে করেন, এসব অস্ত্র 'সেকেন্ড-স্ট্রাইক' বা প্রতিশোধমূলক হামলার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।

অনেকে রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ২০১৯ সালে একটি রকেট ইঞ্জিন বিস্ফোরণে পাঁচ রুশ পারমাণবিক প্রকৌশলী নিহত হয়েছিলেন; ধারণা করা হয়, সেই বিস্ফোরণ বুরেভেস্তনিক প্রকল্পেরই অংশ ছিল। আন্তর্জাতিক কৌশল গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইএসএস জানিয়েছে, পারমাণবিক প্রোপালশন প্রযুক্তিতে রাশিয়ার এখনো বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি সংলাপ ভেস্তে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে; তারই পরপর পুতিনের এই অস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা আসে। বিশ্লেষক গ্যালিওটির মতে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং নিজের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করা।


রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর আজ: লগি-বৈঠায় পল্টনে পেটানো হয়েছিল মানবতা

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৮ ০৯:২১:২৩
রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর আজ: লগি-বৈঠায় পল্টনে পেটানো হয়েছিল মানবতা

রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর আজ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই দিনটি এক ভয়াবহ, বিভীষিকাময় স্মৃতি হয়ে আছে। ২০০৬ সালের এই দিনে রাজধানীর পল্টনে যা ঘটেছিল, তা শুধু রাজনীতির সহিংসতার উদাহরণ নয়, বরং মানবতার ইতিহাসে এক গভীর কলঙ্ক। প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা, মৃতদেহের উপর উল্লাস—এই দৃশ্য দেখে স্তব্ধ হয়েছিল পুরো দেশ, কেঁপে উঠেছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও।

২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে রাজনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছায়। ২৭ অক্টোবর রাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হয়। পরদিন, ২৮ অক্টোবর, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও জামায়াতে ইসলামীসহ চারদলীয় জোট একই এলাকায় পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করে। সকাল থেকেই রাজধানীর পল্টন-মুক্তাঙ্গন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হতে থাকে।

দুপুরের আগেই সংঘর্ষ শুরু হয়। বিজয়নগর ও তোপখানা দিক থেকে আসা আওয়ামী লীগের কর্মীরা লগি-বৈঠা হাতে জামায়াতের সমাবেশমুখী হয়। মুহূর্তেই চারদিক জুড়ে বোমা, ইটপাটকেল, অস্ত্রের ঝড় শুরু হয়।

দুপুরের পর পল্টনে ঘটে নির্মমতম দৃশ্য। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়, কয়েকজন মানুষকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী জসিম উদ্দিন ও মুজাহিদুল ইসলাম।প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মৃত্যুর পর তাদের দেহের ওপরও অমানবিক আচরণ করা হয়। সেদিনের সেই দৃশ্য শুধু দেশ নয়, বিদেশেও চমকে দিয়েছিল বিশ্বমানবতাকে।

সেই থেকেই “লগি-বৈঠা” শব্দটি বাংলাদেশের রাজনীতির অভিধানে যুক্ত হয় সহিংসতার প্রতীক হিসেবে।

ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে তখন ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকলেও সংঘর্ষ থামাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে পড়ে থাকে রক্তাক্ত দেহ। বিকেলের দিকে বিডিআর মোতায়েনের পরই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

পরদিন জামায়াতে ইসলামী পল্টন থানায় মামলা করে। মামলায় আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের ৪০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ২০০৭ সালে আদালতে চার্জশিট জমা হয়, যাতে শেখ হাসিনার নামও ছিল। পরে আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মামলাটি “জনস্বার্থে” প্রত্যাহার করা হয়। আইনি মহল ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেন, হত্যা মামলা বাদীর সম্মতি ছাড়া প্রত্যাহার সংবিধানবিরোধী ও বিচারব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক নজির।

নিহত জসিম উদ্দিনের স্ত্রী নারগিস আক্তার বলেছিলেন, “আমরা কার কাছে বিচার চাইবো? যারা হত্যা করেছে, তারাই এখন ক্ষমতায়।”আরেক নিহত মাসুমের মা শামসুন্নাহার রুবি বলেন, “আমার ছেলে আর ফিরবে না, কিন্তু চাই যেন আর কোনো মা এরকম না কাঁদে।” তাদের একটাই দাবি—দোষীদের বিচার হোক, সত্য প্রকাশ পাক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার সহিংসতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা হারানোর প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনার পর থেকেই প্রতিপক্ষকে ‘রাজনৈতিক শত্রু’ হিসেবে দেখার প্রবণতা আরও গভীর হয়। নির্বাচনী বা আন্দোলনকেন্দ্রিক সংঘর্ষে এখনো সেই লগি-বৈঠার ছায়া দেখা যায়।

রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়, রাজনীতিতে যখন মানবতা হারায়, তখন সভ্যতার মুখও রক্তে রঞ্জিত হয়। ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনার বিচার হয়নি। বরং এটি পরিণত হয়েছে “বিচারহীনতার সংস্কৃতি”-র প্রতীক হিসেবে। যতদিন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন বাংলাদেশের রাজনীতির বুক থেকে মুছে যাবে না “রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর”-এর দাগ।


ছবি, ভিডিও আর ভয়ের ব্যবসা: অনলাইনে হানিট্র্যাপের অন্ধকার দুনিয়া

মো: মনিরুজ্জামান
মো: মনিরুজ্জামান
গবেষক ও সাংবাদিক
অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৪ ২২:০৯:৪৩
ছবি, ভিডিও আর ভয়ের ব্যবসা: অনলাইনে হানিট্র্যাপের অন্ধকার দুনিয়া

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে মানুষের জীবনের গতি, ধরন ও আশেপাশের পরিবেশ। এখন এক ক্লিকেই হাজর মাইল দূরের কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায়, ছবি পাঠানো যায়, এমনকি ভিডিও কলে মুখোমুখি হয়ে একজন আরেকজনের ভালোমন্দের খোজ খবর নেয়া যায়। প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সহজ যোগাযোগ মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে, বাড়িয়েছে বন্ধুত্ব ও সাথে খুলে দিয়েছে সম্পর্কের নতুন পথ।

কিন্তু কিছু মানুষ প্রযুক্তির হাজারো ভালো দিকের মধ্যেও কিছু খারাপ দিক খুজে বের করছে। প্রযুক্তির এই সংযোগের আড়ালে গড়ে তুলেছে এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার জগৎযার নাম “হানি ট্র্যাপ”।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েক কোটি। আর এই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, টেলিগ্রাম এমনকি হোয়াটসঅ্যাপসব জায়গাতেই প্রতিদিন গড়ে তুলছে অসংখ্য নতুন সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব আর সেই সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব থেকে তৈরি হচ্ছে ভালোবাসার নতুন নতুন গল্প।

এই সম্পর্কের শুরুটা হয় খুব সাধারণভাবেএকটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, কিছু প্রশংসা, কিছু হাস্যরস, তারপর নিয়মিত কথা বলা। ধীরে ধীরে বিশ্বাস তৈরি হয়, মনে জন্ম নেয় অনুভূতি বা ভালোবাসার। কিন্তু সেই বিশ্বাসের ভেতর দিয়েই অনেকে হারাচ্ছেন জীবন, সম্মান, টাকা আর ভবিষ্যৎ।

ভালোবাসার অভিনয়ে প্রতারণা: কীভাবে ঘটে এই হানি ট্র্যাপ

একটি সাধারণ গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। যেখানে এক তরুণী ফেসবুকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পান এক তরুণের কাছ থেকে। কিছুদিন কথাবার্তা, মিষ্টি আলাপ, তারপর ধীরে ধীরে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। তরুণটি ভালোবাসার কথা বলে, নিজের একাকিত্বের গল্প শোনায়। তারপর আসে “বিশ্বাসের পরীক্ষা”—একটি ভিডিও কল, কিছু ব্যক্তিগত ছবি, কিছু ‘প্রাইভেট’ মুহূর্ত।

এরপর হঠাৎই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। সেই চেনা মানুষটাই হয়ে যায় অচেনা। সেই ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি আসে সেই মানুষটার কাছ থেকে, করা হয় টাকার দাবি। কেউ আবার জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করে। ভুক্তভোগী হয় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, পরিবারের ও সমাজে মুখ দেখাতে পারেন না।এইভাবেই প্রেমের অভিনয়ে তৈরি হয় ‘হানি ট্র্যাপ’।

বাংলাদেশে হানি ট্র্যাপের সাম্প্রতিক ভয়াবহ কিছু উদাহরণ

  • খুলনার প্রতারণা চক্র: প্রেম থেকে চাঁদাবাজি

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে খুলনায় ফেসবুক-ভিত্তিক এক হানি ট্র্যাপ চক্রকে আটক করে পুলিশ। তারা ভুয়া নারী প্রোফাইল খুলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও তরুণ চাকরিজীবীদের টার্গেট করত। ভিডিও কলে আপত্তিকর দৃশ্য ধারণ করে “ভিডিও ভাইরাল” করার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করত। তদন্তে জানা যায়, এই চক্রটি অন্তত ২৫ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে।

  • চট্টগ্রামের মেয়েদের দেহব্যবসায় নামানোর ফাঁদ

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে আরেকটি হানি ট্র্যাপ চক্রের সন্ধান মেলে, যারা মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে দেহব্যবসায় নামাতে বাধ্য করত। প্রেমের প্রলোভনে ফাঁদে ফেলে আপত্তিকর ছবি তুলত, পরে সেই ছবি ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে তাদের জোরপূর্বক হোটেলে পাঠানো হতো। পুলিশের তদন্তে জানা যায়, চক্রটি অন্তত আটজন তরুণীকে বিভিন্ন হোটেলে ব্যবহার করেছে এবং কয়েকজন হোটেল মালিকও এতে জড়িত ছিল।

  • রাজশাহীর কলেজছাত্রী: টিকটকের প্রেমে ধ্বংস

রাজশাহীর এক কলেজছাত্রী টিকটকের মাধ্যমে এক তরুণের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে সেই তরুণ ভিডিও কলে তাকে প্রতারণার মাধ্যমে আপত্তিকর অবস্থায় ধারণ করে। ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে তাকে ঢাকায় এনে দেহব্যবসায় জড়াতে বাধ্য করা হয়। পুলিশের অভিযানে মেয়েটি উদ্ধার হলেও সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

  • নারায়ণগঞ্জের নারী চক্র: ধনীদের টার্গেট

নারায়ণগঞ্জে র‍্যাবের হাতে ধরা পড়ে আরেকটি চক্র, যারা মেয়েদের ব্যবহার করে ধনবান পুরুষদের টার্গেট করত। তারা প্রেমের অভিনয় করে নির্জন স্থানে ডেকে নিত, পরে সহযোগীরা হাজির হয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিত।

  • ঢাকার প্রবাসী প্রতারণা: বিদেশিরাও নিরাপদ নয়

২০২৫ সালের মার্চে বনানী এলাকায় এক ব্রিটিশ নাগরিক অনলাইনে পরিচিত এক তরুণীর মাধ্যমে ফাঁদে পড়েন। দেখা করার নামে হোটেলে ডেকে এনে ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়। তিনি পুলিশকে জানান, “আমি ভেবেছিলাম এটি একটি সম্পর্ক, কিন্তু এটি ছিল পরিকল্পিত প্রতারণা।”

নারীদের শিকার বানানো নতুন কৌশল

কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরাই ফাঁদে পড়ছেন। ২০২৫ সালের জুনে নারায়ণগঞ্জে এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয়, যাকে প্রেমের মাধ্যমে প্রতারণা করে তার ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল। পরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে বিভিন্ন হোটেলে পাঠানো হয়। তদন্তে দেখা যায়, একটি সংগঠিত চক্র এই কাজটি করত, যারা নারী পাচারের সঙ্গেও যুক্ত।

হানি ট্র্যাপের নেপথ্যে কারা, কীভাবে কাজ করে এই চক্রগুলো

সাইবার অপরাধ দমন ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, অধিকাংশ হানি ট্র্যাপ চক্রই সংগঠিতভাবে কাজ করে। তাদের আলাদা বিভাগ থাকে

  • কেউ ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে আকর্ষণীয় ছবি পোস্ট দেয়,
  • কেউ অনলাইনে বন্ধুত্ব করে সম্পর্ক গড়ে তোলে,
  • কেউ আবার ভিডিও ধারণ ও ব্ল্যাকমেইলের দায়িত্বে থাকে।

তারা সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল, সামাজিকভাবে ভীত, ব্যাবসায়ী, চাকরিজীবী, প্রবাসী, ছাত্র বা গৃহিণীএধরণের মানুষদের টার্গেট করে।

ছেলেরা যেমন অপরাধী, মেয়েরাও তেমনি যুক্ত

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেখা গেছে, হানি ট্র্যাপ কেবল ছেলেদের অপরাধ নয়কিছু মেয়েও এখন এই চক্রের অংশ। ফেসবুকে আকর্ষণীয় ছবি ব্যবহার করে প্রেমের অভিনয় করে তারা ছেলেদের টার্গেট করছে। দেখা করার নামে নির্জন স্থানে ডেকে এনে সহযোগীদের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করছে।

২০২৪ সালের শেষ দিকে কুমিল্লা, ফেনী, ও নরসিংদীতে এমন তিনটি নারী চক্রকে গ্রেফতার করা হয়। তারা মূলত প্রবাসী পুরুষদের লক্ষ্য করত। অনলাইনে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে, পরে ভিডিও কলে কিছু ‘ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত’ ধারণ করত। এরপর বিদেশে থাকা ওই পুরুষদের কাছ থেকে নিয়মিত ডলারে টাকা আদায় করা হতো।

মানসিক ও সামাজিক ধ্বংস: শিকারদের জীবনের ভয়াবহ বাস্তবতা

হানি ট্র্যাপের শিকারদের অনেকেই সমাজে মুখ দেখাতে পারেন না। তাদের অনেকের সংসার ভেঙে গেছে, কেউ চাকরি হারিয়েছে, কেউ আবার আত্মহত্যা করেছে।

ঢাকায় এক নারী শিক্ষক ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আত্মহত্যা করেনকারণ, তার ব্যক্তিগত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রতারকরা অর্থ দাবি করছিল।

আরেকজন প্রবাসী শ্রমিক, যিনি সৌদি আরবে কাজ করতেন, অনলাইনে এক তরুণীর প্রেমে পড়ে নিজের পারিবারিক সব সঞ্চয় পাঠিয়ে দেনপরে জানতে পারেন, সেই প্রোফাইলের পেছনে ছিল একটি পুরুষ সদস্যের চক্র।

মনোবিজ্ঞানীদেরমতে, এসবঘটনারসবচেয়েভয়াবহদিকহচ্ছেমানসিকট্রমাভুক্তভোগীরাবিষণ্নতা, আত্মসম্মানহীনতাআত্মঘৃণায়ভোগেনকেউকেউপরিবারথেকেবিচ্ছিন্নহয়েপড়েন

আইনি বাস্তবতা ও প্রশাসনিক উদ্যোগ

বাংলাদেশে হানি ট্র্যাপ অপরাধের আওতায় আসে মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর অধীনে।

এই আইন অনুযায়ী

  • কারও অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও প্রকাশ বা ছড়ালে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে,
  • অনলাইনে ব্ল্যাকমেইল বা ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করলে তা সাইবার এক্সটরশন হিসেবে গণ্য হয়।

র‌্যাব, পুলিশ, ও বিভিন্ন সাইবার ক্রাইম ইউনিট এখন নিয়মিত এই চক্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। সম্প্রতি র‌্যাব-৩ এবং সাইবার ক্রাইম দমন টিম যৌথভাবে ৩০টিরও বেশি হানি ট্র্যাপ সম্পর্কিত মামলা তদন্ত করেছে।তবে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার জনসচেতনতা ও ডিজিটাল শিক্ষা। কারণ, অনেকেই এখনো জানেন না কোথায় অভিযোগ করতে হবে বা কীভাবে সাহায্য পাওয়া যায়।

হানি ট্র্যাপ থেকে বাঁচার উপায়

হানি ট্র্যাপ থেকে বাঁচতে হলে প্রয়োজন কিছু সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

  • অপরিচিত কাউকে বিশ্বাস করার আগে যাচাই করুন। অনলাইনে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পেলেই তা গ্রহণ করবেন না।
  • ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও কখনো পাঠাবেন না, এমনকি সম্পর্কের বিশ্বাসের জায়গা থেকেও নয়।
  • অজানা লিংক বা ফাইল ওপেন করবেন না, কারণ অনেক সময় এর মাধ্যমেও হ্যাকিং হয়।
  • যদি প্রতারণার শিকার হন, ভয় না পেয়ে অভিযোগ করুন।

জাতীয় হেল্পলাইন ৯৯৯ এ ফোন করতে পারেন অথবাসাইবার পুলিশ সেন্টার (ফেসবুক পেজ) অথবা র‌্যাবের সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে জানাতে পারেন। তবে প্রথমেই পরিবার বা ঘনিষ্ঠজনকে জানান। লজ্জা বা ভয় নয়, সহযোগিতা চাইতে হবে। ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়াতে হবে। স্কুল, কলেজ, ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ বিষয়ে শিক্ষাদান জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতামত: প্রযুক্তি নয়, দোষ মানুষের অপব্যবহারে

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রযুক্তি নিজে কখনো ক্ষতিকর নয়, বরং তার ব্যবহার ও অপব্যবহারের ওপরই নির্ভর করে।

ড. শামসুদ্দিন আহমেদ, মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষক বলেন

প্রেমের ফাঁদ নতুন কিছু নয়, কিন্তু এখন তা ডিজিটাল হয়েছে। আজকের তরুণ সমাজ অনলাইনে দ্রুত বিশ্বাস করে ফেলে, যার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।

সাইবার বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল ইসলাম বলেন

অপরাধীরা এখন আরও স্মার্ট। তারা ভুয়া লোকেশন, ভুয়া নম্বর, ও এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার করে। তাই প্রযুক্তিগত সচেতনতা বাড়ানোই একমাত্র উপায়।”

ভালোবাসার আড়ালে লুকানো ভয়

প্রেম মানে বিশ্বাস, সম্মান আর আন্তরিকতা। কিন্তু আজ সেই ভালোবাসাই অনেক সময় প্রতারণার মুখোশ পরছে। ডিজিটাল যুগে ভালোবাসা প্রকাশের ধরন পাল্টে গেছে, কিন্তু তার ঝুঁকিও বেড়েছে বহুগুণ।যখন সম্পর্কের শুরুতেই থাকে কৌশল, আর বিশ্বাসের জায়গায় থাকে ব্ল্যাকমেইলতখন সমাজ হারায় মানবিকতা।তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার, শিক্ষা দেওয়ার এবং সাহসিকতার সঙ্গে প্রতারণার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর।


বৈষম্যহীন ন্যায়বিচারের দাবি: গুমের ভুক্তভোগীদের কণ্ঠে বিচার, জবাবদিহিতা ও রাষ্ট্রীয় আস্থার প্রশ্ন

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৩ ১০:২১:০৫
বৈষম্যহীন ন্যায়বিচারের দাবি: গুমের ভুক্তভোগীদের কণ্ঠে বিচার, জবাবদিহিতা ও রাষ্ট্রীয় আস্থার প্রশ্ন

আওয়ামী লীগের সাড়ে পনেরো বছরের শাসনামলে গুম ও নিখোঁজের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে আবারও ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তার হাজিরা পরবর্তী সময়ে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ভুক্তভোগী ও পরিবারদের মধ্যে গভীর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

তাদের মতে, এটি কেবল বিচারিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং রাষ্ট্রের নৈতিক প্রত্যাবর্তনের একটি প্রতীক। তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে ন্যায়বিচার মানে প্রতিশোধ নয়, বরং বৈষম্যহীন আইন প্রয়োগের নিশ্চয়তা।

গুমের শিকার এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, “অভিযুক্তরা সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি নন, তারা ব্যক্তিগতভাবে অপরাধে জড়িত। তাদের অপরাধের দায় সমগ্র বাহিনীর ওপর চাপানো ঠিক হবে না।তিনি আরও বলেন, “যারা অপরাধ করেছে তারা শাস্তি পাক, তবে আদালতে নিজেদের বক্তব্য রাখার সুযোগও পাবে। এটিই ন্যায়বিচারের মূলনীতি।”তার বক্তব্যে প্রতিফলিত হয় একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান যেখানে প্রতিশোধ নয় বরং ন্যায্য বিচার ও আইনের সমান প্রয়োগই মুখ্য।

ভুক্তভোগী ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম আরমান প্রশ্ন তুলেছেন যে আটক অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা সুবিধা বা তথাকথিত “সাব জেল” ব্যবস্থা কার্যকর করা হচ্ছে কি না।তিনি বলেন, “যদি অভিযুক্তরা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করে বিচার প্রভাবিত করার সুযোগ পান, তাহলে ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।”

তার এই মন্তব্য ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতার গুরুত্ব তুলে ধরে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বহুবার উচ্চপদস্থ অভিযুক্তদের জন্য আলাদা সুবিধা প্রদানের নজির রয়েছে, যা জনগণের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ক্ষুণ্ণ করেছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী বলেন, “যারা বিদেশে পালিয়ে আছেন, তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে এনে আদালতের সামনে হাজির করা হোক।”এই দাবি শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক আহ্বান। আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে ইন্টারপোল সহযোগিতায় যদি পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, তবে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে আরও গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

আরমান আরও বলেন, “জনগণের রক্ষক সেনাবাহিনীকে আর কোনো দিন জনগণের মুখোমুখি করা যাবে না।”এই বক্তব্য রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্কের গভীরতর সত্য তুলে ধরে। যদি নিরাপত্তা বাহিনী নাগরিক নিরাপত্তার বিপরীতে দাঁড়ায়, তাহলে আস্থা ও বৈধতার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে তাই একটি সাধারণ বার্তা প্রতিফলিত হয় যে, রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং তাদেরকে শুধুমাত্র নাগরিক স্বার্থরক্ষার জন্য নিয়োজিত রাখতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান বলেন, “আজ আমরা যে বিচার প্রক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি, এটি জনগণের চাপ ও আন্তর্জাতিক সচেতনতার ফল। কিন্তু অনেক অপরাধী এখনো মুক্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “অভিযুক্তদের যেন অফিসার্স মেসের খাবার বা এসি রুমের আরাম না দেওয়া হয়। যেভাবে আমাদের আটক রাখা হয়েছিল, সেভাবেই তাদের রাখা উচিত।”

এটি প্রতিশোধ নয়, বরং ন্যায়ের ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান যেখানে আইন সকলের জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হবে।

এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় একটি বৃহত্তর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের বিষয়গুলো রাষ্ট্রের ওপর আস্থা দুর্বল করেছে।

এখন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম যদি সত্যিকারের নিরপেক্ষ হয়, তবে এটি রাষ্ট্রীয় আস্থা পুনরুদ্ধারের পথ উন্মুক্ত করতে পারে। অন্যদিকে যদি এখানেও রাজনৈতিক প্রভাব বা প্রশাসনিক পক্ষপাত দেখা যায়, তবে এটি আরও গভীর নৈতিক সংকট তৈরি করবে।

ভুক্তভোগীরা বারবার উল্লেখ করেছেন যে তারা কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, বরং অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চান। তাদের মতে, আইনের চোখে সবাই সমান হওয়া উচিতএই অবস্থানই আধুনিক বিচারব্যবস্থার মর্মবাণী। ন্যায়বিচার তখনই পূর্ণ হয়, যখন তা দৃশ্যমানভাবে সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়।

বর্তমান ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রমকে অনেক বিশ্লেষক দেখছেন একটি নতুন সামাজিক চুক্তির সূচনা হিসেবে। এটি কেবল অতীতের অপরাধের বিচার নয়, বরং রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের প্রক্রিয়া।যদি এই বিচার নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়, তবে তা একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অন্যদিকে, যদি বৈষম্য বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তবে তা রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তিকে আরও দুর্বল করবে।

গুম ও নিখোঁজের ইতিহাস বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্মৃতিতে এক গভীর ক্ষতচিহ্ন। আজ যখন সেই ক্ষত নিরাময়ের পথে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তখন ভুক্তভোগীরা বলছেন, “আমরা ন্যায়বিচার চাই, প্রতিশোধ নয়।”

তাদের আহ্বান শুধুমাত্র শাস্তি নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা। যদি এই বিচার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তবে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন নৈতিক সূচনা হতে পারে।


মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে রাতভর সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ, নিহত ১

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৩ ০৯:২৫:২৮
মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে রাতভর সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ, নিহত ১
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাহিদ (২৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতভর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের বাসিন্দারা ভয়ে ঘর থেকে বের হননি।

সংঘর্ষের সময় জাহিদ গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভোরে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “জাহিদের শরীরে ককটেল বিস্ফোরণের আঘাতজনিত ক্ষত ছিল, মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত চলছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জেনেভা ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের বিরোধ চলে আসছিল। বুধবার রাতের সংঘর্ষ সেই পুরনো দ্বন্দ্বেরই পরিণতি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, দুই পক্ষই দেশীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার করে। কয়েকটি দোকান ও বসতবাড়ির জানালায়ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ঘটনার পর রাত থেকেই মোহাম্মদপুর থানার বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য এলাকা ঘিরে ফেলে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত টহল জোরদার রাখা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসরত স্থানীয়রা বলেন, “এখানে প্রায়ই ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়, কিন্তু এবার ককটেল বিস্ফোরণ ও মৃত্যু ঘটায় সবাই আতঙ্কে আছে।” তারা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।


ইচ্ছেপূরণ প্রকল্পে নতুন বিতর্ক: বাতিলের সিদ্ধান্ত বদলে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৩ ০৯:০৬:৫৫
ইচ্ছেপূরণ প্রকল্পে নতুন বিতর্ক: বাতিলের সিদ্ধান্ত বদলে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংসদ সদস্যদের নিজস্ব এলাকায় উন্নয়নের নামে নেওয়া বিতর্কিত “ইচ্ছেপূরণ প্রকল্প” আবার আলোচনায়। সরকার পতনের পর প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হলেও এখন সেটির মেয়াদ এক বছর ও ব্যয় প্রায় ৩৯ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন২ নামের এই প্রকল্পের প্রাথমিক অনুমোদন ছিল ২০২২ সালের মার্চে, ব্যয় ধরা হয়েছিল ১,০৮২ কোটি টাকা। নতুন প্রস্তাবে ব্যয় দাঁড়াবে ১,৫০০ কোটি টাকাঅর্থাৎ অতিরিক্ত ৪১৮ কোটি।

বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রকল্প আবার সক্রিয় করার প্রচেষ্টা প্রশ্ন তুলছে নতুন সরকারের নীতিগত অবস্থান ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি নিয়ে। কারণ প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা অর্জনযেখানে মসজিদ, মন্দির, এমনকি স্থানীয় নেতাদের পারিবারিক কবরস্থান পর্যন্ত উন্নয়ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে৫০ কোটি টাকার বেশি প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাই বাধ্যতামূলক হলেও “ইচ্ছেপূরণ প্রকল্পে” তা করা হয়নি। প্রতিবেদনে একে প্রকল্পটির “সবচেয়ে দুর্বল দিক” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ফলে মাঠ পর্যায়ে অনেক কাজের প্রাক্কলন ভুল ছিল এবং কোথাও কোথাও অগ্রগতি প্রত্যাশিত হয়নি।

আইএমইডি সতর্ক করেছে, “স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব, সামাজিক বিরোধ, ও প্রশাসনিক দুর্বলতা প্রকল্পের সময়মতো সমাপ্তিতে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।” সংস্থাটি ভবিষ্যতের জন্য সুপারিশ করেছে, এ ধরনের প্রকল্প শুরু করার আগে প্রকৃত প্রয়োজন নির্ধারণ এবং ফিজিবিলিটি স্টাডি বাধ্যতামূলক করা উচিত।

পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, “প্রকল্পটি মূলত সংসদ সদস্যদের ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার ছিল।” তিনি জানান, “কেউ মসজিদ উন্নয়ন করেছেন, কেউ আবার ব্যক্তিগত কবরস্থান সংস্কার করেছেনএটা কোনো জাতীয় উন্নয়ন নয়, বরং রাজনৈতিক তুষ্টি।”

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত ছিল, যেসব কাজ শেষ পর্যায়ে আছে সেগুলো দ্রুত শেষ করে বাকিগুলো বাতিল করা হবে। কিন্তু এখন উল্টো ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে, যা প্রশাসনিক ধারাবাহিকতার প্রশ্ন তোলে।

এলজিইডির নতুন প্রস্তাবে দেখা গেছে, প্রকল্পের বরাদ্দ বণ্টনে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় সর্বোচ্চ ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ, যেখানে মেহেরপুরে বরাদ্দ মাত্র ৫ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বণ্টন উন্নয়ন পরিকল্পনার নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতিফলন।

এদিকে এলজিইডির যুক্তি হলো, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। তারা বলছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন ভাতা সংক্রান্ত নির্দেশনার কারণে প্রকল্পে “নতুন ইকনোমিক সাবকোড” অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন, যার জন্য বাজেট বাড়ানো আবশ্যক।

আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছেপ্রকল্পটি স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক টানাপোড়েনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। “যথাসময়ে কাজ শেষ না হলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব হবে না।” সংস্থাটি পরামর্শ দিয়েছে, অব্যবহৃত অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা ও ধর্মীয় অবকাঠামো উন্নয়নে পুনর্বিনিয়োগ করা হলে জনকল্যাণমূলক ফল পাওয়া যেতে পারে।

তবে প্রশ্ন রয়ে গেছেযে প্রকল্পটি শুরু থেকেই বিতর্কিত, যার উদ্দেশ্যই ছিল এমপিদের জনপ্রিয়তা বাড়ানো, সেটি নতুন ব্যয় প্রস্তাবে টিকে থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত? পরিকল্পনা কমিশনের এক সদস্য মন্তব্য করেন, “যদি এই প্রকল্পের নাম ‘ইচ্ছেপূরণ’ হয়, তবে তা নাগরিক উন্নয়নের নয়রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি।”

সূত্রঃ আমার দেশ।


মস্তিষ্কের ক্যানসার: যে ৫টি প্রাথমিক উপসর্গ অবহেলা করা উচিত নয়

অপরাধ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২১ ১৪:৪০:০৮
মস্তিষ্কের ক্যানসার: যে ৫টি প্রাথমিক উপসর্গ অবহেলা করা উচিত নয়
ছবিঃ সংগৃহীত

মস্তিষ্কে টিউমার এমন এক জটিল অবস্থা, যা অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না। তবে শরীর আগেভাগেই কিছু সতর্ক সংকেত দেয়, যা বুঝে নেওয়া গেলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। বারবার মাথাব্যথা, হঠাৎ বমি, আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা খিঁচুনি—এই লক্ষণগুলো কখনোই অবহেলা করা ঠিক নয়। কারণ এগুলো কেবল সাধারণ অসুস্থতার লক্ষণ নয়, বরং মস্তিষ্কে টিউমার গঠনের ইঙ্গিতও হতে পারে। টিউমার যত বড় হয়, তা মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে চাপ সৃষ্টি করে গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই ব্রেন টিউমারের প্রাথমিক উপসর্গ চিনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ছোট আকারের টিউমার শুরুতে তেমন কোনো উপসর্গ না-ও দেখাতে পারে। কিন্তু ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেলে নানা ধরনের শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়।

ব্রেন টিউমারের ৬টি বড় লক্ষণ

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল (BMJ)-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মাথাব্যথা, বমি, আচরণগত পরিবর্তন, ভারসাম্যহীনতা এবং দৃষ্টিজনিত সমস্যা হলো ব্রেন টিউমারের সবচেয়ে সাধারণ প্রাথমিক লক্ষণ।

১. মাথাব্যথা: ব্রেন টিউমারের সবচেয়ে সাধারণ ও প্রথম দিকের লক্ষণ হলো বারবার মাথাব্যথা। এর তীব্রতা সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে এবং সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধেও উপশম হয় না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এই ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। কাশি, হাঁচি বা ঝুঁকে পড়লে ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে।

২. বমি ও বমি বমি ভাব: অবিরাম বমি বা বমি বমি ভাব, বিশেষ করে মাথাব্যথার সঙ্গে থাকলে, তা মস্তিষ্কে বাড়তি চাপের ইঙ্গিত হতে পারে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা হঠাৎ নড়াচড়া করলে এই উপসর্গ আরও বেড়ে যেতে পারে।

৩. আচরণে পরিবর্তন: হঠাৎ রাগ বেড়ে যাওয়া, অস্থিরতা, মনোযোগের অভাব বা বিষণ্নতায় ভুগতে থাকা—এসব পরিবর্তনও মস্তিষ্কে টিউমারের প্রভাব হতে পারে। অনেক সময় এর সঙ্গে উদাসীনতা বা উদ্বেগও দেখা দেয়।

৪. স্মৃতি ও চিন্তাশক্তির দুর্বলতা: টিউমার মস্তিষ্কের চিন্তা, স্মৃতি ও সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। এর ফলে কথা ভুলে যাওয়া, মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা বা সহজ সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়।

৫. কথা বলায় সমস্যা: ব্রেন টিউমার মস্তিষ্কের ভাষা নিয়ন্ত্রণকারী অংশে প্রভাব ফেললে কথা জড়িয়ে যাওয়া, শব্দ খুঁজে না পাওয়া বা অন্যের কথা বুঝতে সমস্যা হতে পারে।

৬. খিঁচুনি বা শরীর কাঁপা: খিঁচুনি বা হঠাৎ অস্বাভাবিক নড়াচড়া ব্রেন টিউমারের অন্যতম স্পষ্ট লক্ষণ। এটি হালকা হাত কাঁপা থেকে শুরু করে পুরো শরীর জুড়ে ঝাঁকুনি পর্যন্ত হতে পারে। কখনও এর সঙ্গে বিভ্রান্তি বা অজ্ঞান হওয়ার ঘটনাও ঘটে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

মস্তিষ্কের টিউমার নিজে ব্যথা না দিলেও, এর ফলে মাথার ভেতরে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। হাত-পা বা মুখের একপাশে দুর্বলতা বা অবশভাবও টিউমারের কারণে হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব লক্ষণ সবসময় টিউমারের কারণেই হয় না। তবু যদি নতুন কোনো অজানা উপসর্গ বা আচরণগত পরিবর্তন দেখা দেয়, অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পদক্ষেপ। কারণ, ব্রেন টিউমার যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, চিকিৎসার সাফল্যের হার তত বেশি হয়।

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত